ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পর্ব-আড়াই।

জাহিদ হোসেন এর ছবি
লিখেছেন জাহিদ হোসেন (তারিখ: রবি, ১১/১১/২০০৭ - ২:১২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জহির আমাদের সাথে পড়তো না, কিনতু তার সাথে আমাদের বেজায় দোস্তি ছিল। সে প্রিলিমিনারীতে পড়তো মার্কেটিং বা ম্যানেজমেন্ট জাতীয় কোন এক বিভাগে, আর আমরা তো কঠিন সায়েন্সে।

আমার কোন এক রুমমেটের গ্রামতুতো পরিচয় নিয়ে একদিন আমাদের বৈকালিক চা-ডালপুরীর আড্ডায় এলো সে। প্রথম দিনেই সে আমাদের মাতিয়ে ফেলে, এবং আমরাও তার কাছে প্রিয় হয়ে পড়ি। আমাদের চেয়ে বয়েসে দু-এক বছরের বড় হলেও সেটা কোন ব্যাপার ছিলনা। সপ্তাহে তিন-চারদিন তার সাথে আড্ডা হোতই। যদিও আমরা একে অন্যকে 'তুমি' র বদলে 'আপনি' বলতাম, কিন্তু তাতে বন্ধুত্বের মাত্রা কমেনি।

সাধারণত: ছেলেরা পড়ার ফাঁকে চাকরি করে, জহির চাকরির ফাঁকে পড়তো। সে কাজ করতো সোনালী ব্যাংকে। মাঝে মাঝে দুপুরে তার অফিসে গেলে সে তাদের ক্যাফেটেরিয়ায় খাসীর মাংস সহযোগে ভাত খাওয়াতো।

একদিন গভীর রাতের বেলা জহির এলো আমাদের ঘরে। তার মুখভার, বললো, 'চলেন, চা খেয়ে আসি। গুরুত্বপূর্ণ আলাপ আছে।' রাত তখন প্রায় বারোটা, চা খাবার জন্য অতি উত্কৃষ্ট সময় ।
চা এলো, সিগারেট এলো। জহির চুপচাপ।
"কি ব্যাপার, জহির ভাই?"
"একটা সমস্যায় পড়েছি। ভয়াবহ সমস্যা। আমাকে বুদ্ধি দিতে হবে।"
"কি রকম সমস্যা শুনি?"
একটু লাজুক ভংগীতে মাথা নীচু করে বললো,"আমি মনে হয় প্রেমে পড়েছি।"
আমরা সবাই "সাবাস, সাবাস" বলে হৈহৈ করে উঠলাম। মধ্যরাতের ক্যাম্পাস আমাদের উল্লাসে কেঁপে ওঠে।
"ইয়ে তো বহুত খুশীকি বাত হ্যায়, জহির ভাই। লাড়কি কৌন হ্যায়?"
পরে যা জানা গেল তা হচ্ছে যে মেয়েটির নাম লুনা। জহিরের সহপাঠিনী। তাদের মাঝে ক্লাশের ফাঁকে টুকটাক কথা হয়। এইভাবেই চলছিল। জহির এখন বুঝতে পারছে যে সে ফেঁসে গেছে। পুরো বঁড়শিসুদ্ধ গিলে সে বসে আছে।
তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা হচ্ছে যে লুনা এর বিন্দু-বিসর্গও জানেনা। এখন জহির কিভাবে ব্যাপারটা লুনাকে জানাবে? এবং দ্বিতীয়ত: কিভাবে লুনাকে সে রাজী করাবে? আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সমস্যাদুটির সমাধান বের করা।
আমরা একে অন্যের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছি। প্রেমের ব্যাপারে আমাদের রুমমেটদের অভিগ্গতা জিরো। (পরে যদিও আমাদের একজন প্রেম করে বিয়ে করেছিল।)
আমাদের অনভিগ্গতার কথা বলতেই জহির খেপে গেল। "আপনারা সায়েন্স পড়েন, ব্রেইন ভাল। এই সমস্যার সমাধান না করতে পারলে পড়াশুনা বাদ দেন।"
এর উপর আর কোন কথা চলেনা। আমরা দুই দিন সময় নিলাম জহিরের কাছ থেকে। রুমে ফিরে বসলো হাইকম্যান্ডের মিটিং।

এখানে একটি কথা বলে রাখা ভাল। আমি যে সময়টির কথা বলছি, তখন ছেলেমেয়ের ভিতরে এখনকার মত এত বেশী খোলামেলা সম্পর্ক ছিলনা। মনের ভাললাগার কথাটি প্রিয় মানুষকে জানানোটাই ছিল এক বিরাট সমস্যা। প্রেম করাতে এ কারণে খুব বেশী ছেলেমেয়ে সফল হয়নি আমাদের সময়ে।

যাই হোক-অনেক বিবেচনার পর সিদ্ধান্ত হোল যে আমরা "কামার" স্ট্র্যাটেজীতে অগ্রসর হবো। কামার স্ট্র্যাটেজী হচ্ছে লোহাকে বাড়ি দেবার আগে তাকে নরম করতে হবে। যাতে এক বাড়িতেই কাজ হয়। অতএব, প্রথম কাজটি হচ্ছে লুনাকে ইমোশনালী দুর্বল করে ফেলতে হবে, তাহলে জহির যখন তাকে ভালবাসার কথা বলবে তখন যেন লুনা আর না বলতে পারে।

(বাকী অংশ পরের কিস্তিতে)


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

প্রিয় অতিথি লেখক, পৌনে তিন নম্বর গল্পটাও সংরক্ষিত হয়েছে। সেটি ভবিষ্যতে প্রথম পাতায় প্রকাশিত হবে। টেনশন করবেন না।

দ্বিতীয়ত, জ + ঞ = জ্ঞ।

ধন্যবাদ।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সুমন চৌধুরী এর ছবি

পড়ছি.....



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কামার পদ্ধতি কাজ করেছিলো তো?
-----------------------------------------
'প্রিয়তম পাতাগুলো ঝরে যাবে মনে ও রাখবেনা
আমি কে ছিলাম,কি ছিলাম--কেন আমি
সংসারী না হয়ে খুব রাগ করে হয়েছি সন্ন্যাসী
হয়েছি হিরন দাহ,হয়েছি বিজন ব্যথা,হয়েছি আগুন'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

গরম করে আবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো, পরেরটা তাড়াতাড়ি..

অতিথি লেখক এর ছবি

জ্ঞ লেখা শেখানোর জন্য ধন্যবাদ।
হাতে কাজ জমে গেছে একটু। চেষ্টা করছি তাড়াতাড়ি লেখার জন্য।
আপনাদের মতামতের জন্য ধন্যবাদ।

অমিত আহমেদ এর ছবি

বেশ তো! পরের পর্বতে যাই, নাকি?


ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল

সাইফ তাহসিন এর ছবি

এমন জায়গায় ঝুলাইলেন, আপনার দিলে মায়া দয়া নাই?
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।