হলিউডের ইউনিভার্সাল স্টুডিও দেখার শখ আমার অনেকদিনের। কিন্তু ক্যালিফোর্ণিয়ায় এর আগে শুধু মন্টেরি-তে গিয়েছি কনফারেন্সে, লস এঞ্জেলেস পর্যন্ত যাওয়া হয় নি। অরল্যান্ডোতেও ইউনিভার্সাল স্টুডিওর একটা রেপ্লিকা আছে। ইস্ট কোস্টবাসীদের জন্য ওটাই হলিউড। শুনেছি এখন আরব দেশেও নাকি আরেকটা রেপ্লিকা বানানো হচ্ছে শেখদের টাকা খাওয়ার জন্য। লস এঞ্জেলেস কবে যাওয়া হয় অনিশ্চিত, তাই এবার অরল্যান্ডো গিয়ে দ্রষ্টব্যের তালিকায় ইউনিভার্সাল স্টুডিওটাও রাখলাম।
স্টুডিওতে ঢোকার আগেই মন খারাপ। মেলা টাকা টিকেটের পেছনেই বের হয়ে গেল। কে যেন একবার বলেছিল, আমেরিকার সিস্টেমটা এমনই এখানে টাকা যতই ইনকাম কর না কেন, সেটা আবার এখানেই খরচ হয়ে যাবে। পকেট খসানোর সব ধান্ধাবাজিই এখানে করা হয়েছে। গেটের সামনে বিশাল গ্লোবটা পার হয়ে কমপ্লেক্সের ভিতরে ঢুকতেই দেখি মেরিলিন মনরো আপা (নকল) তার বিখ্যাত বাতাসে উড়া ফ্রক (ওই যেটা নীচে দিয়ে বাতাস দেয়) পড়ে সবার সাথে পোজ দিয়ে ছবি তুলছেন। আমার গ্রুপের সবাই মেরিলিন মনরোর সাথে ছবি তোলার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ল। আমারো ছবি তোলার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু ছবি তোলার সময় আফা যেভাবে আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরছেন তাতে ভয় পেয়ে আর তুললাম না।
ছবি তোলা শেষ হলে আমরা প্রথম গেলাম টারমিনেটর-টু ছবির স্টুডিওতে। এক সময় শোয়ার্জনেগারের এই ছবিটা আমার খুব প্রিয় ছিল। শো এর আগে একটা ফাটাফাটি ডেমো দিল। ডেমো দেখেই ভড়কায়ে গেলাম, না জানি শো কেমন হবে। কিন্তু শো গতানুগতিক, টারমিনেটর মুভি থ্রি-ডিতে দেখালো কিছুক্ষণ, তারপর হঠাৎ স্ক্রীণের ভিতর থেকে নকল শোয়ার্জনেগার মোটর সাইকেল নিয়ে বের হয়ে এসে সোহেল রানা স্টাইলে মারামারি করল। মারামারি শেষে আবার স্ক্রিণে ঢুকে গেল।
এরপর গেলাম ‘শ্রেক’ দেখতে। স্টুডিওর বাইরেই শ্রেক আর ডাঙ্কি সবার সাথে পোজ দিয়ে ছবি তুলছে। পিচচি-পাচ্চাদের ওইখানে বেজায় ভিড়। কাছেই যাওয়া যায় না। এইখানেও ডেমোটা ভাল লাগল। শোটাও ভাল। শ্রেকের গল্পটা এখানে শ্রেক মুভিগুলোর চেয়ে অন্যরকম। দেখানো হল আবার ফোরডি-তে। ফোরডি মানে হল থ্রি-ডি মুভির সাথে কিছু কিছু অনুভূতির বাস্তব এফেক্ট দেয়। যেমন পায়ের নীচে দিয়ে ইঁদুরের পাল যাচ্ছে, তখন সীটের নীচে বাতাস দেয়, তখন মনে হবে সত্যি সত্যি আপনার পায়ের উপর দিয়ে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। সিনেমায় পানি ছিটকে পড়ার দৃশ্য আছে, আপনার গায়েও সামনের সিট থেকে তখন পানি এসে পড়বে, যেন আপনিই সিনেমার ভেতরেই আছেন। ফোরডি মুভি আমি আগেও দেখেছি স্যান এন্টোনিওর সি-ওয়ার্ল্ডে। আমার খুবই গা ঘিনঘিন লাগে এইসব এফেক্ট যখন দেয়। ‘আছিলাম বোকা, হইলাম বুদ্ধিমান’-এবার আর ভুল করলাম না। আগেই সিটের ওপর পা তুলে বসলাম যেন নীচে কিছু করতে না পারে, আর সিটের সামনে ফুটা খুঁজে কাগজ দিয়ে বন্ধ করে দিলাম, যেন পানি বের না হয়। কিন্তু বেশী লাভ হল না। এইবার পানির ছিটা দিল ছাদ থেকে। মুভিতে একটা দৃশ্য আছে শ্রেক আর ডাঙ্কিকে রাজার লোক তাড়া করছে, আর বেচারারা একটা ভাঙ্গা গাড়িতে চড়ে পালাচ্ছে। আমরা দর্শকরাও শ্রেকের সাথে গাড়ীতে দৌড়াতে লাগলাম। আমাদের চেয়ারগুলো বিকট শব্দে নড়াচড়া করে আর ঝাঁকি দিয়ে দৌড়ানোর এফেক্ট দিল। ঝাঁকি খাইতে খাইতে মনে মনে কইলাম, এত বুদ্ধি কইরা এমনি করে ধরাটা খাইলাম!
শ্রেক দেখা শেষ করে গেলাম ‘আর্থকোয়েক’ নামের একটা স্টুডিওতে। এইটাও খুব ভাল লাগল। এইখানে কাহিনী হচ্ছে আমরা একটা সাবওয়ে বা পাতাল রেলের যাত্রী। একদম সত্যি সত্যি, কোন মুভি না। টার্মিনাল দিয়ে ঢুকে আমরা একটা সাবওয়েতে উঠলাম। ট্রেন চলার পর ওইখানে নাকি একটা বিশাল ভূমিকম্প হবে। ট্রেনে উঠে আমি আল্লাহ-আল্লাহ শুরু করলাম কি হয় না হয়। ট্রেন প্রথমে ভালই চলছিল। একটু পরে বিশাল কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেল। বিদ্যুত চলে গেল। আশেপাশের সব কিছু ভেঙ্গে পড়তে লাগল। কোত্থেকে ফাটল দিয়ে ফ্ল্যাশ ফ্লাডের মত বন্যার পানিও চলে আসল। আমি ভয়ে চোখ ছোট করে আশে পাশে দেখি আর দাঁতে দাঁত চেপে ট্রেনের ঝাঁকুনি সহ্য করি- ‘ব্যাটারা তাড়াতাড়ি তামাশা বন্ধ কর, আর সহ্য হইতাছে না’। অবশেষে একসময় ভূমিকম্প থামল। আমরা সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। তবে আলো আসার পর যা দেখলাম তাতে খুবই হাসি পেল। বড় বড় যেসব পাথর ভেঙ্গে পড়ছিল দেখেছিলাম, ওইগুলা আসলে শোলার তৈরী। আর বন্যার পানি যেটাকে মনে করেছিলাম, ওইটা দেখলাম বাগানে পানি দেয়ার পাইপ দিয়ে ফাটলের মাঝখান থেকে পানি দিয়েছে। ভালই স্পেশাল এফেক্ট!
(চলবে)
আইডিঃ তানভীর আই
ই-মেইলঃ
মন্তব্য
আরো পড়ার ইচ্ছে রইল...
প্রকৃতিপ্রেমিক,
সচলায়তনে আমার প্রথম পোস্টে প্রথম মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। হঠাৎমনে হওয়াতে সামহোয়ারইনে দেখলাম ওখানেও আমার প্রথম পোস্টে প্রথম মন্তব্যটা আপনিই করেছিলেন। বিষয়টা নিতান্তই কাকতাল হলেও আপনার উদারতায় আমি সত্যিই অভিভূত।
--তানভীর
বলেন কী? তাই নাকি? এমন ঘটনা সহসাই কিন্তু হয়না। মজা পেলাম, বেশ। সামহয়্যারে আপনার ব্লগে দেখলাম সেই নাসা ভ্রমণের পোস্ট যেখানে আমি কমেন্ট করেছিলাম। সত্যিই অবাক কান্ড!
প্রবাস প্যাঁচালী 'র কি আর পরের পর্ব নাই ভাইয়া?
-স্বপ্নাদিষ্ট
=======================
যে জাতি নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করে না, আল্লাহ তার ভাগ্য পরিবর্তন করেন না।
নতুন মন্তব্য করুন