আজ সকালে সফল সাংবাদিক, গানের মানুষ সঞ্জীব চৌধুরী চলে গেলেন। তাঁর বয়স ছিলো মাত্র ৪৩ বছর। এমন চলে যাওয়া কি মেনে নেওয়া যায়?
আমি তখন ক্লাস টু'তে পড়ি। বাসায় ভোরের কাগজ রাখা হতো তখন। সম্ভবত প্রতি বৃহঃস্পতিবার ছোটোদের জন্য একটা পাতা বের হতো ওতে, ইষ্টিকুটুম। তাতে মাথাটা একটু খাটাও নাম দিয়ে নানারকম পাজল থাকতো। ওইটার সমাধান করা নিয়ে আমার ছিলো অপরিসীম আগ্রহ। প্রতি সপ্তাহে খবরের কাগজে আমার নাম থাকা চাই-ই। একদিন বাবা নিয়ে গেলো আমাকে ভোরের কাগজের অফিসে। সেইখানে সঞ্জীব চৌধুরীকে প্রথম দেখেছিলাম। বাবা কার সাথে যেন কথা বলছিলো। আমি এখানে ওখানে উঁকিঝুঁকি মারার চেষ্টা করছিলাম। উনি আমাকে দেখতে পেয়ে কোলে তুলে নিয়ে নিজের টেবিলে বসিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কী জন্য এসেছি। বললাম, মাথাটা একটু খাটাও এর সমাধান জমা দিতে। উনি অমনি বললেন, আচ্ছা, মাথাটা একটু খাটাও এর নাম পালটে মাথাটা একটু চুলকাও করে দিলে কেমন হয়? কারণ দেখো, মাথা খাটাতে গেলে মাথা গরম হয়ে যায়। তখন গরম মাথায় উকুনগুলি সব ছুটাছুটি করতে থাকে। তখন খুব মাথা চুলকায়। আর মাথা চুলকাতে চুলকাতে সমস্যার সমাধান করতে হয়। ওঁর কথা বলার ধরণে হেসে ফেলেছিলাম। তারপরে খুব গম্ভীর হয়ে বললাম, কিন্তু আমার মাথায় উকুন নাই, তাই আমার মাথা চুলকায় না। উনি খুব কাঁচুমাচু হয়ে বললেন, কিন্তু দেখো, আমার লম্বা চুলের মধ্যে উকুন আছে তো, তাই আমার খুব মাথা চুলকায়। এই বলে সত্যি সত্যি মাথা চুলকানো শুরু করে দিলেন!
বয়স বাড়ার সাথে সাথে ওঁর গানের সাথে পরিচয় হলো। ওঁর গান ভাল না বেসে কি থাকা যায়? কিন্তু যখনই ওঁকে টিভিতে দেখতাম বা ওঁর কথা শুনতাম, আমার মনে পড়ে যেতো, মাথাটা একটু চুলকাও-এর কথা। সাথে সাথে হেসে ফেলতাম আমি। মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম। আমার এই অসম্ভব প্রিয় মানুষটার সাথে যখন জীবনে দ্বিতীয়বার দেখা হবে, তাঁকে আমি অবশ্যই বলবো, কেমন করে জীবনে অনেকবার তিনি আমাকে হাসিয়েছেন।
বড়ো অকালে চলে গেলেন তিনি। এখন আর কেমন করে বলবো আমি এই কথাগুলি ওঁকে? আমার জীবনের সবচাইতে বড় অপ্রাপ্তিগুলির একটি হয়ে রইলো, জীবনে আর একটি বার ওঁর সাথে কথা বলতে না পারা। উনি ভালো থাকুন।
|
মন্তব্য
ছুঁয়ে কান্নার রঙ, ছুঁয়ে জোৎস্নার ছায়া !
ভালো থাকুন সঞ্জীব, যত আলোকবর্ষ দূরেই থাকুন না কেন !
-------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আপনার ছোটবেলা,আমাদের কারো কারো কৈশোর,অনেকের তারুন্য-এই মানুষটাকে ছুঁয়ে ।
আপনার লেখাটা ও ছুঁয়ে গেলো অনেক ।
সম্মানিত অতিথি, আপনার নামটা উল্লেখ করলেননা?
-----------------------------------------
ভালো নেই,ভালো থাকার কিছু নেই
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
লেখিকার আসল নাম জানা নেই, তবে "ভাগশেষ" ছদ্মনামে ব্লগস্পটে নিজের মনে লিখে চলে সে। কিছুদিন আগে পরিচয় হলো সচলায়তনের মাধ্যমেই। তার ব্লগস্পটের ঠিকানা-
http://bhagshesh.blogspot.com/
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
- এই গানটার সঙ্গে আমার কেমন জানি একটা স্মৃতি আছে।
প্রথম যখন ন-হণ্যতে পড়েছিলাম তখন এই গানটা কানের কাছে বাজতো। পরে যখন লা ন্যুই বেঙ্গলী পড়ি, তখন এই গানটাই ফিরে ফিরে আসতো অন্য একটা দ্যোতনা নিয়ে।
যাই পেরিয়ে সকাল দুপুর রাত, যাই পেরিয়ে নিজের ছায়া-
বাড়িয়ে দেয়া হাত!
সব পেরুনো হলেও হয়তো কোনদিনই আমার অজানা এই মানুষটাকে পেরুনো হবে না আমার।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধন্যবাদ সবাইকে, উত্তর দেওয়ার জন্য। সরি হাসান মোরশেদ ভাই, নিজের পরিচয় লিখতে ভুলে গিয়েছিলাম। তবে তিথি আপু কেমনে কেমনে জানি ধরে ফেলেছে আর পরিচয় দিয়ে ফেলেছে। আপু থ্যাঙ্ক ইউ!!
ধূসর গোধুলি আপু/ভাইয়া, আপনি ঠিকই বলেছেন, ওঁকে আর আমরা কেউই পার হয়ে যেতে পারবোনা।
সবাই ভালো থেকেন।
নতুন মন্তব্য করুন