মাকে ভালবাসি বাবাকে ইচ্ছে করে না/ অন্তোজ
কোন এক শুক্রবারে আমার জন্ম, তাই বোধ করি শুক্রবারে নামাজ পড়তে যাবার ব্যাপারে আমার সব সময় অনীহা, কারন হচ্ছে এই দিন আমি যেন কোন কিছুই ঠিক মিলাতে পারি না। সবাই বলে শনিবার দিন খারাপ, কিন্তু আমার তো জন্মদিনটাই খারাপ। হয়ত আমার পিতা দায়ী। কারন উনি আমার জন্মদাতা। আমার বাবা রাগী, উনি নিজে যা ভালো বোঝেন তাই করেন। কখনো দেখিনি আমার পড়ালেখার ব্যাপারে খবর নিতে,কখনো দেখিনি আমাকে স্কুলে নিয়ে যেতে, কখনো তার পিঠে চড়তে পারিনি। কোন খেলনা পাইনি ছোটবেলায়, আর সবাইকে দেখতাম ৫ টাকার খেলনা হলেও হাতে থাকতো। স্কুলের গন্ডি পেরুতেই আমার মাঝে ক্রমশ পরিবর্তন আসলো, আমি আর উনাকে তোয়াক্কা করলাম না, তখন আমার মাকে সবচাইতে বেশি ভালবাসতাম, মা ছিলেন আমার সব। বাবাকে ক্রমশ দুরে ঠেলে দিচ্ছি এটা উনি বুঝতেই পারতেন না। আমি ও অতো মাথা ঘামাইনি। অস্টম শ্রেণীতে এসে একবার স্কুল পালিয়ে বাসায় চলে এসেছিলাম, ধরা খাওয়ার পর মাস্টার বললো তোমার অভিভাবকের বন্ড সই লাগবে(কারন সেটাই ছিল আমার শেষ সুযোগ ছাড়া পাবার)। বল্লাম আমার মাকে আনলে হবে, উনি বললেন না। পরে বল্লাম যদি কারো বাবা মৃত হন, তবে? আমার ক্লাসের বন্ধুরা সবাই থ হয়ে গিয়েছিল।
মাধ্যমিক পরীক্ষা দেব। মা খুবই টেনশনে আছেন। আমি বল্লাম আমি ভাল পরীক্ষা দেব, তুমি চিন্তা করো না। পরীক্ষা হলে গিয়ে দেখলাম সবার বাবা রা এসে সবাই কে সাহস দিচ্ছে, আর আমার বাবা তখন কোথাও কোন দেশে হয়ত পড়ে আছেন, হয়ত কোন ক্লায়েন্ট কে বোঝাচ্ছে কোম্পানীর পণ্যর গুণাবলী। পরীক্ষা দিলাম। ভাল পাশ ও করলাম। একদিন মায়ের মুখে শুনলাম আমার বাবা নাকি আমার এই পাশে খুশি হয়ে আমাকে ১০০০০ টাকা দিয়েছেন। থিক্কার এমন টাকায়। বাবার মমতা পাইনি পাশ করার পর টাকা দিয়ে কি হবে। কলেজের গন্ডিতে আসলাম। নতুন সব কিছু নতুন বন্ধু। গাড়ী করে কলেজে যাবার জন্য মা সব সময় চাপ দিত, কিন্তু আমি কখনোই তা ব্যবহার করি নি। সেই বন্ধুদের সাথে রিক্সায় করে ভাড়া শেয়ার করে গিয়েছি। গাড়ী ব্যবহার না করাতে বাবা খুবই রাগ হলেন। মাকে যা ইচ্ছে তা বল্লেন। রাগে দু:খে ঘর ছাড়লাম। অনেকদিন যাইনি, বাবাও আমাকে খোজেন নি। আমার মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে আবার ফিরে এলাম। কলেজ শেষ আমি যেন আস্তে আস্তে নিজের পরিধিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছি।
কখনো খাবার টেবিলে এক সাথ হয়নি। কখনো তার সাথে বাইরে যাইনি। তাকে বাবা বলে কবে ডেকেছি ভুলে গেছি। অনেকটা সময় পার করেছি এখনো পড়ালেখা করছি, তবু তার সাথের আগের সর্ম্পকটা রয়ে গেছে। মাকে প্রচন্ড ভালবাসি। তাকে আমার সকল দু:খ রাগ, অভিমান, সুখ সবি বলি, আমার মা আমাকে লুকিয়েও বাবার সাথে আমার মিল রাখতে চায়, ফোন করলেই বলে এই তো সেদিন তোর বাবা তোর কথা বলছিল। আমি মনে মনে বলি আহারে পাগলি, তোমার ছোট্ট ছেলেটা অনেক বড় হয়েছে এখন সে তোমার মন ভোলানো কথার সবই বুঝে।
চলছে এমনি। বাবার দীত্বিয় সংসারের খবর জানলাম কিছুদিন আগে। তেমন কোন অবাক হইনি। যে ভয়টা অনেক বছর ধরে ছিল তাই সত্যতে প্রকাশ পেয়েছে। আমার মা মেনে নিয়েছে, বাবাকে বেশি ভালবাসে তো তাই মেনে নিয়েছে সকল অন্যায়। আমিও তেমন কষ্ট পাইনি। শুধুই বলতে চেয়েছিলাম এমন কাপুরুষ কেন বাবা তুমি? সত্যটুকু আরো অগেই বলতে, তা হলে দু:খটা বোধ করি এতদিনে সয়ে যেত।
তাই তো মাকে ভালবাসি, বাবাকে ভালবাসা নয় ধিক্কার দিতেও ইচ্ছে হয়না....
অন্তোজ...
মন্তব্য
-----------------------------------------
ভালো নেই,ভালো থাকার কিছু নেই
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
পড়লাম। কী বলবো বুঝে পাচ্ছি না।
কোন মন্তব্য করতে ইচ্ছা করছে না, আসলে কি বলা উচিৎ বুঝতে পারছি না।
কি মাঝি? ডরাইলা?
মন কেমন করে উঠলো লেখাটা পড়ে।
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
কখন জানি জল গড়ালো চোখের কোণে . . . .
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
লেখাটি হৃদয় স্পর্শ করেছে।
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
মনটা খারাপ হয়ে গেল।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
বাবারা এমন কেন হয়? দোয়া করি আর সকলের বাবারা যেন এমন না হয়, আমি ছোট বেলা থেকে বাবা মার আদর যতটুকু পেয়েছি তা অনেক... কিন্তু অন্য কারো জীবনে এমন কেন হয়? লেখাটি যাকে নিয়ে লেখা তার অনুরোধে ব্যাপারটিতে কারো নাম প্রকাশ না করে লিখেছি... মন্তব্যগুলো পড়ার পর তার কান্না আর থামাতে পারি নাই। আসলে বলার ভাষা নাই।
সে আমার খালাতো ভাই, বর্তমানে আমেরিকায় আছে... বাবা থেকে ও নেই আর মাকে এতই ভালবাসে যে শুধুই মার কাছে যেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু দেশে গেলে কি হবে....
অন্তোজ...
আসলে ভাইয়া যে কারো জীবনে এমনটা হতে পারে... তার সাথে আমি ছিলাম বলে বুঝি কি কষ্টে তার জীবন কাটছে..
অন্তোজ...
সমবেদনা।
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
এমন কেন হয়?ভালো লাগে না।
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
মানুষ শুধুমাএ শিক্ষিত বা ভালপোশাকধারী হলেই হয়না, তার ভিতরে একটা সুন্দর মন ও মূল্যবোধ থাকতে হয়...
আর কিছু বলার নাই।
অন্তোজ....
::ত্রিকোণ তিথি::
কেন যেন অন্তোজের সেই ভাইটির মাথায় হাত রেখে বলতে ইচ্ছা করছে, "ভালো আছো ভাইয়া?"
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
নতুন মন্তব্য করুন