এস এম মাহবুব মোরশেদ, হিমু, দিগন্ত, ভাস্কর, মুজিব মেহদী- সমকামীতার মতো একটা স্প র্ষকাতর বিষয় নিয়ে এরকম একটা কি বলবো - পরিণত আলোচনার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। আপনারা মোটামুটি বিষয়টার সব গুলো দিক নিয়েই কথা বলেছেন আমার সেখানে নতুন কিছু যোগ করার নেই। এই পোষ্ট টা লিখছি দুটা কারণে - প্রথমত কারুরই মনে হচ্ছে না কোন গে বা লেসবিয়ান কে খুব কাছ থেকে দেখার (আমি ভালো পরিচয় ইত্যাদি বুঝাচ্ছি না) অভিজ্ঞতা আছে, আর দ্বিতীয়ত কোন মেয়ে ব্লগার এই আলোচনায় অংশ নিচ্ছে না কেন এরকম একটা প্রশ্ন উঠেছিলো। আমার খুব কাছের একজন সমকামী। বাংলাদেশে বড় হওয়ার কারণেই হোক বা যে কারণেই হোক আমার নিজেরো খুব ভালো মতোই homophobia ছিলো - এটাকে অস্বাভাবিক এবং অন্যায় ভাবতাম। আমি আসলে এখন নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি। যখন প্রথম জানতে পারি যে আমার খুব প্রিয় একটা মানুষ সমকামী, আমি বাধ্য হই নিজের ভেতরের ছোট থেকে মেনে নেওয়া মূল্যবোধগুলোর মুখোমুখি হতে। এটা যদি দূরের কেউ হতো তাহলে আমিও হয়তো ব্যাপারটা আরো বহুদিন ওরকম ভাবেই দেখতাম। কিন্তু তখন সব social norm বা taboo র চাইতে বড় ছিলো তাকে এবং জিনিষটাকে বোঝার চেষ্টা করা। সমকামীদের সারাজীবন ই সমাজের সাথে যুদ্ধ করে যেতে হয় কিন্তু তাদের প্রথম বড় যুদ্ধ নিজেদের সাথে। নিজের কাছে স্বীকার করে নেয়া যে সে অন্যদের মতো ‘স্বাভাবিক’ না, সে এমন একটা কিছু যেটাকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখা হয়, তার এমন একটা ‘বিশেষত্ব’ আছে যে কথা জানতে পারলে তার সব প্রিয় মানুষগুলো তাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে - এটা কি পরিমাণ অসহণীয় কষ্টের হতে পারে তা হয়তো আমরা যারা কখনো এরকম ‘সব হারাবার’ ভয় এর মুখোমুখি হই নি তারা ঠিক বুঝতে পারবো না।
তারপর এদেশে আসার পর আমার বেশ বড়ো একটা গে লেসবিয়ান কমিউনিটির সাথে পরিচয় হয় এবং আমি আরো কি কি আবিষ্কার করি জানেন? সাধারণত সমকামীদের নিয়ে যে প্রচলিত ধারনাগুলো আছে - যে সমকামী ছেলেরা একটু ‘মেয়েলী’ হবে, হাত পা বেশী বেশী নাড়িয়ে কথা বলবে, অথবা heterosexual ছেলেদের তুলনায় বেশি ফ্যাশন সচেতন হবে, লেসবিয়ান মেয়েরা একটু ‘পুরূষালী’ হবে - এমন কোন কথাই নেই। ‘এরা’ ওরকম হয়, আবার হয় ও না। মানে আমি বলতে চাচ্ছি যে আমার চেনা অন্তত ৮০ শতাংশ ওরকম না- হতে পারে এটা হয়তো একটা খন্ড চিত্র মাত্র কিন্তু আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তাই।
তার চেয়েও বড়ো কথা যেহেতু এরা নিজেরা mainstream এর বাইরের মানুষ তাই এদের অন্যান্য প্রান্তিক মানুষগুলোর প্রতি একটা সহজাত সহানুভূতি থাকে। আমার চেনা সমকামীদের একটা বড়ো অংশ প্যালেষ্টাইন ইস্যু, মেয়েদের বিরুদ্ধে ভায়োলেন্স, নারীবাদ, পরিবেশ দূষণ, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদ, মানবাধিকার রক্ষা এবং আরও বিভিন্ন ধরনেরসামাজিক/ রাজনৈ্তিক বিষয় নিয়ে আন্দোলনে জড়িত। শুধু জড়িত বললে আসলে কম বলা হবে এদের অনেকের জন্য নিজের নিজের বিশ্বাসের বাস্তবায়নের চেষ্টা টাই জীবন। আমার চেনা একটা সাদা আমেরিকান ইহূদী লেসবিয়ান কি করে জানেন? প্যালেষ্টাইনে গিয়ে যখন ইজ্রায়েলিরা বিভিন্ন প্যালেষ্টানিয়ান বসতি উচ্ছেদ করার জন্য ট্যাঙ্ক নিয়ে আসে, মেয়েটা সেই ট্যাঙ্কের সামনে গিয়ে দাঁঁড়িয়ে থাকে, যেতে হলে ওকে পিষে এগোতে হবে। যেহেতু সে আমেরিকান নাগরিক তাই সত্যি সত্যি তাকে পিষে ফেলে না, খালি ইজরায়েলি জেলে নিয়ে দিনের পর দিন ফেলে রাখে। মেয়েটাকে আমেরিকায় ফেরৎ পাঠানো হয়, মেয়েটা আবার যায়।
সমকামীতা সম্পর্কে আমি খুব বেশী কিছু হয়তো জানি না , কিছু সমকামী সম্পর্কে কিছু জানি - সেটাই লিখলাম। ওদের অনেকের কাছে আমার একটা ব্যক্তিগত ঋণ আছে - দৃষ্টিটাকে নিজের বাইরে প্রসারিত করার শিক্ষা আমি প্রথম ওদের কাছেই পাই।
স্নিগ্ধা
মন্তব্য
খুব গুছিয়ে লেখা পোস্ট। ধন্যবাদ।
হাঁটুপানির জলদস্যু
চমৎকার গোছানো লেখা।
সমকামী নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা অনেকটা এইরকম:
টিভি/ম্যুভি দেখে দেখে আমার ধারণা হয়ে গিয়েছিল লেসবিয়ান মেয়েগুলো দেখতে খুব সুন্দর হয়।
আমেরিকায় আসার দ্বিতীয় দিনে ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে যাচ্ছিলাম রিপোর্ট করার জন্য। শর্টকাট মারার উদ্দেশ্যে একটা পার্কের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম। একটা চিপার দিকে তাকাতেই হঠাৎকরে দেখলাম দুটো বালিকা একে অপরকে জাবড়ে ধরে চুমু খাচ্ছে! দৃশ্যটা আমার মতো হাভাতে বাঙালীর জন্য সহ্য করাটা একটু কঠিনই ছিল বৈকি!
সেদিন বুঝতে পারলাম, টিভিতে বা সিনেমায় যা দেখি তার সবই ভুল। লেসবিয়ানরা সুন্দরী হবেই, এমন কোন বাধ্যবধকতা নেই।
আমার নিজের কোন সমকামী বন্ধু-বান্ধবী নেই। তবে আমার বন্ধুরা, যাদের সমকামী বন্ধু-বান্ধব আছে, তাদের কাছে শুনেছি সমকামীরা বন্ধু হিসাবে অসাধারণ হয়।
কি মাঝি? ডরাইলা?
চমৎকার লেখাটির জন্য ধন্যবাদ। আপনার এই লেখাটির পরবর্তী লেখার ধারাকে খানিক বদলে দেবে। সময় পেলে আলোচনা করব।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
সমকামী বন্ধু আমার আছে। আর সমকামীতা নিয়ে ভ্রান্ত ধারনা আমারও ছিল কানাডা আসার আগে। পাতানো খালাতো বোনের লেখা ভাল লেগেছে।
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
আমার চেনা সমকামীদের একটা বড়ো অংশ প্যালেষ্টাইন ইস্যু, মেয়েদের বিরুদ্ধে ভায়োলেন্স, নারীবাদ, পরিবেশ দূষণ, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদ, মানবাধিকার রক্ষা এবং আরও বিভিন্ন ধরনের সামাজিক/ রাজনৈ্তিক বিষয় নিয়ে আন্দোলনে জড়িত। শুধু জড়িত বললে আসলে কম বলা হবে এদের অনেকের জন্য নিজের নিজের বিশ্বাসের বাস্তবায়নের চেষ্টাটাই জীবন।
গে ও লেসবিয়ানদের প্রতি আমার কখনোই অশ্রদ্ধা ছিল না, তবে তাদের শ্রদ্ধা করবার পরিসরও খুঁজে পাই নি। স্নিগ্ধার লেখায় সে পরিসরের সন্ধান মিলল।
...................................................................
অসংখ্য 'নেই'-এর ভিড় ঠেলে
জ্বলজ্যান্ত 'আছে' খুঁজে পাওয়া হলো আসল ফকিরি
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
ভালো ভালো কথা বলার জন্য সবাইকে অনেক ধন্যবাদ । লেখাটা একটু বেশী personal/emotional হয়ে গেছে, কিন্তু সেটা অনেকটা ইচ্ছাকৃ্ত, এই লেখার পরের পর্বগুলো পড়ে হয়তো কখনো queer theory র সমাজবিজ্ঞানীয় ব্যখ্যাট্যাখ্যা নিয়ে আলোচনা করা যাবে।
(অমিত, শেষ পর্য্যন্ত ‘খালাতো বোন’ ? ঃ))
স্নিগ্ধা
স্নিগ্ধার ফোকাস পয়েন্টগুলো ভালো লাগলো।
(অফটপিক: তাকে সচল করা হোক) ।
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
নতুন মন্তব্য করুন