শেষমেশ ফ্রাইবুর্গ এর কারখানাটা আমার ঘাড়ে এসেই পড়ল। ঘাড়ে এসে পড়ল, নাকি একে ফেলা হল, সেই বিতর্ক এখন অবান্তর। আমাকে বেছে নিতে দিলে পুর্ব জার্মানীর চিপাচাপার এই কারখানাটা আমার পোর্টফোলিও তে নিতাম না, মাগ্না দিলেও না।
আমাকে ভুল বুঝবেন না। পুর্ব জার্মানী, বিশেষ করে স্যক্সনির বদনাম আমার কাছে পাবেন না। মহা সুন্দর এলাকা, সুন্দর মানুষজন। জার্মানীর আর কোথায় পনের ইউরোতে ভাল রাতের খাবার, আধা বোতল খাশা রিযলিং সমেৎ, পাচ্ছেন? ছুটি কাটানোর জন্য এর চাইতে ভাল কিছু পেতে হলে আল্প্স্ এর দক্ষিনে খুজতে হবে। কিন্তু এখানে কাজ হাসিল করা মহা হুজ্জত এর ব্যাপার। বেশ কয়েক যুগের আবদ্ধতা, কম্যুনিস্ট শসণ আর পুঁজিবিমুখ মানষিকতাকে ত আর কয়েক বছর এ ধুয়ে ফেলা যায় না। ড্রেসডেন এর ইলেক্ট্রনিক/সিলিকন শিল্প অবস্থার কিছুটা উন্নতি ঘটালেও আয়রোজগারের ব্যবস্থা কম, পোলাপান জাওয়ানীর হাওয়া লাগল কি ছুটল ধান্দায় – বেশীর ভাগ ই চলে গেল হাম্বুর্গ নইলে বার্লিনের তুর্কী, চেক আর পোলিশ দের গুস্টি উদ্ধার করতে, নয়ত একটু গায়ে গতরে হলে লেইস্টার স্কায়ার নইলে সোহোয় নাইটক্লাব এর বাঊন্সার হতে। ব্রাসেলস্ এর আমলাদের কাছে ইউরোপের অর্থনৈতিক মাথাব্যথার যে ফর্দটা থাকে, স্যক্সনি তার শুরুর দিকেই আছে বেশ কয়েকবছর ধরে।
এই কারখানায় দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা অতিদাহ্য তরলপদার্থ উচ্চচাপ আর উচ্চতাপ এ সর্বত্রই সুড়ুৎ সুড়ুৎ করে চলাচল করছে, সেখানের ৫০ মিটারের মধ্যেই অবস্থিত কেন্দ্রীয় পরিচালনাকক্ষকে ঘিরে আছে মাত্র ১৫ সেন্টিমিটার এর এক চিলতে ইটের দেয়াল। সারা কারখানাএ মাত্র চারটা অগ্নীনির্বাপন যন্ত্র, কারো মাথাএ হেল্মেট নাই, হুট হাট করে যে যখন খুশি আসছে যাচ্ছে। চিপাএ গিয়ে সিগারেট ফুকে আসছে। এই দুই হাজার সাত এ এসে কেউ এই ধাঁচের নকশা পাশ করতে পারে, এই ভাবে একটা জ্বলজ্যন্ত (আক্ষরিক) রিফাইনারি চালাতে পারে তা এইখানে না দেখলে বিশ্বাস হত না। একটু অনুচিত ভালোলাগাও ভেসে গেল মনের কোণ দিয়ে। মনে পড়ে, আমাদের চট্টগ্রাম এর ইস্টার্ন রিফাইনারি সেই কবে পঞ্চাশ এর দশকের বানানো। তাতেই মোটামুটি একই কাতার একটা কারখানায় কেন্দ্রীএ পরিচালনাকক্ষকে প্রায় দেড়শো মিটার দূরে রাখার পরেও তাকে ঘিরে দেয়া হয়েছে ৪৫ সেন্টিমিটার এর আর সি সি দিয়ে। আর ওইখানে পারলে যাক ত কোনো বান্দা হেল্মেট আর যথারিতি পাশ ছড়া...সিকিউরিটির সৈয়দ মঞ্জুর বুঝায় দিবে তার হাতের ডান্ডায় কয়টা গিড়া।
হেড অফিস এর ইঞ্জিনিয়ার দের সাফ কথা, সাড়ে তিন মিলিয়ন এর কম এই কারখানার সাস্থ্য, সুরক্ষা আর পরিবেশ সংক্রান্ত ব্যবাস্থাদি পশ্চিম ইউরোপের এর কাতার এ টেনে তোলা যাবে না। একেবার গোড়া থেকে শুরু করতে হবে, ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে ফ্লোর অপারেটর পর্যন্ত সবার উপযুক্ত ট্রেনিং দিতে হবে, আসবাব, কন্সট্রাকশন, ইন্সপেকশন – অনেক লম্বা লিস্ট্। সাড়ে তিন এর এক সেন্ট কমেও হবে না। আমি তহবিল এ মাত্র আড়াই নিয়ে ক্যলেন্ডার এর দিকে তাকিয়ে।
আগামি বাজেট সাইকেল শুরু হতে অনেকদিন বাকি......।
==
ইতি
দুর্দান্ত (ওলন্দাজপুর)
মন্তব্য
আরেক জার্মানবাসী!
স্বাগতম । তো ওলন্দাজপুর কেনো আবার?
-----------------------------------------
মৃত্যুতে ও থামেনা উৎসব
জীবন এমনই প্রকান্ড প্রচুর ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
নতুন মন্তব্য করুন