আমি সচলায়তনে নতুন। এখনো রেজিষ্টার্ড হইনি। তবুও সবার লেখা পড়ে নিজেকে সংবরণ করতে না পেরে অতিথি লেখক হিসেবেই চালিয়ে যাচ্ছি। লেখক হিসেবে আমি তেমন উৎকৃষ্টমানের নই। তবুও জরুরী অবস্থা আর কারফিউ এর মধ্যে পড়ে আমার যে বেহাল দশা হয়েছিলো তার স্মৃতি আপনাদের সাথে ভাগাভাগি না করে পারলাম না।
মঙ্গলবার(২১ আগস্ট,২০০৭) রাতে টিউশনি থেকে আর ফিরতে পারিনি হলে। দেখি পলাশী এলাকা রণক্ষেত্র। অনেক ধাওয়া আর ধোঁয়া খেয়ে মোহাম্মদপুরে বন্ধুদের এখানে চলে এসেছিলাম। বুধবার(২২ আগস্ট,২০০৭) সকালে উঠে ফোন পেলাম যে ক্লাস হবে না। আমি মোটামুটি মাঞ্জা মেরে কার্ড খেলে একটা ঘুম দেবার আয়োজন করছিলাম। কিন্তু খবর এল হল ভ্যাকান্ট এর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কী আর করা। যথারীতি রওনা। সঙ্গে আমার দুই সহচর-মিঠুন আর মন্টা। কিন্তু রিকশা বা সিএনজি যাকেই যেতে বলি সেই বলে -মাফও চাই ,দোয়াও চাই। শেষ ভরসা আদি আর অকৃত্রিম চরণ যুগল। মনে হল -বন্ধু তোমার পথের সাথীকে চিনে নিও-গানটি মনে হয় চরণবাবুকে নিয়েই লেখা হয়েছে। এহেন গঠনমূলক চিন্তা আমার মাথায়ই থেকে গেল নিউমার্কেট পৌঁছে। দেখি সে এক নরক! দিলাম ঝেড়ে দৌড় নিউমার্কেটের পিছন দিয়ে। অনেক ঘুরে হলে যখন পৌঁছেছি হলে তখন হল প্রায় ফাঁকা। প্রসঙ্গত বলি আমি বুয়েটের আহসানউল্লাহ হলে থাকি। আমার অন্যান্য ঘনিষ্ট কেউ হলে নাই দেখে ব্যাগ আর সিপিইউ নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে গেলাম নিউ পল্টন এ আমার বোনের বাসায়। সব কাজ শেষ করতে করতে প্রায় ৮টা বেজে গেছে। কারফিউ শুরু হয়ে যাবে যাবে এমন অবস্থা। আমরা আবার ফিরব মোহাম্মদপুর। রিকশা পেলাম-মোটে ৫০ টাকা আর কি! রাইফেলস স্কয়ারের কাছে এলে প্রহরীরা রিকশা থামালো । হুকুম হল হেঁটে যেতে হবে...চলছি তাই । কিন্তু পড়বি তো পড় মালির ঘাড়েই। সামনেই বি ডি আর টহল । তারা আর জায়গা পান নি...একেবারে রাস্তার উপর লেফট রাইট করছিলেন। আমাদের মত আরও ৪-৫ জন অযাচিত অতিথি কে পেয়ে তারা খুশি হলেন বলেই মনে হল! একেবারে ওয়েস্টার্ন স্টাইলে আমাদের উদ্দেশে ভেসে এলো HALT. সাথে সাথে আমরা কয়জন একেবারে ছবি...যেন পোস্টারে আঁকা। গায়ের লোমও নড়ছে না।কখনো তো এমন পরিস্থিতিতে পড়িনি...এত খারাপ ছিলাম না কখনও। তারপর শুরু হল গালিবর্ষণ-কি মধুর! আমারও মনে হল বাল্যকালে শেখা গালিগুলো একটূ practice করব নাকি! কিন্তু এতোবড় বুকের পাটা মনে হয় আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটও এমন পরিস্থিতিতে দেখাতে পারতেন না। তো আমি আর কী করি...নির্দেশ মত বসলাম রাস্তায়। আমরা তিন জন ছাত্র ছাড়া বাকি সকলেই নিম্নবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষ। যিনি আমাদের উদ্দেশ্যে মধুবর্ষণ করছিলেন তিনি আমাদের তিনজন কে আলাদা করে নিলেন...এবং যথারীতি তার স্বভাবসুলভ ব্যবহারে সম্বোধন করে নিজের কাছে ডেকে নিলেন। আমার মনে হল-ধরণী দ্বিধা হউ-মাইরের থেকে বাঁচার জন্য আমার রামপত্নী সীতার মত নারী হতেও আপত্তি নেই। কিন্তু নেতা তখন বাবুর্চির কাজ করে এমন এক হতভাগাকে ২য় দল থেকে ডেকে আনলেন কাছে এবং তার বিগত ১৪ প্রজন্মকে রমণ করার ইচ্ছে প্রকাশ করতে করতে তাকে একেবারে সাপমারা মারলেন। বলাই বাহুল্য তার হাতের মজবুত লাঠিটি ইহলীলা সংবরন না করা পর্যন্ত তিনি নিদারুন দক্ষতায় কাজটি চালিয়ে গেলেন। আমি থ হয়ে দেখলাম লোকটার কান্না আর প্রভুর আস্ফালন। হ্যাঁ...আমাদের প্রভু তখন তিনি যিনি কিনা প্রহার করছেন...কারন নেক্সট এ আমাদের পালা...তার অনুগ্রহ তখন দরকার। ঈশ্বর আছেন কিনা আমি সেই প্রশ্নে যাব না...কিন্তু তখন আমার এটা মনে এসেছিলো যে সত্যি যদি তিনি থাকতেন তো -আল্লাহ ,আল্লাহ -করতে থাকা লোকটিকে বাঁচাতেন। আমার মনে হল ঐ মার যদি আমাদের ৩জন কে সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয় তাহলেও আমার জন্য লেকের "জিয়া চত্বরের" পাশেই কাল একটা চত্বর খুলতে হবে। একটু স্বান্ত্বনা পেলাম আর কি! কিন্তু প্রভুর দয়া হল...হয়তো ছাত্র দেখে আর ঝামেলা বাড়াতে চাইলেন না। কিন্তু আমাদের সম্বোধন করলেন বড় জটিল সব ভাষায়...যা আমি এত বড় হয়েও রপ্ত করতে পারিনি। আমরা ছাত্ররাই নাকি সকল নষ্টের গুরু...সকল কুকর্মের কর্মী...দেশের সকল সমস্যা। আরো যা যা বললেন তা বাণী চিরন্তনী বইয়ে ছাত্র বিষয়ে যোগ করতে পারলে আর কেউ ছাত্রই হতে চাইবে না। তারপর হুকুম হল সোজা নাক বরাবর হাঁটা দিতে...পিছে চাইলেই গুলি...আমি ভাবলাম এই বুঝি ক্রসফায়ার এ পড়লাম। পিছনে পড়ে থাকলো আরও ৩-৪ জন হতভাগা...বুঝলাম তাদের আপ্যায়নটা ওই বাবুর্চির মতই হবে। আমরা তিন জন চললাম হেটে...তারপর রাস্তায় অনেক চিপা গলি পেরিয়ে...হেঁটে...দৌঁড়ে...ঘুরে মোটামুটি ধানমন্ডি এলাকার মানচিত্রের উপর একটা পি এইচ ডি ডিগ্রী নিয়ে যখন বাসায় পৌছি তখন রাত ৯টা। হ্যাঁ...বেঁচে আছি রে ভাই।
তবে একটা জিনিস আমার মাথায় ঢুকছে না...গোলমাল আমাদের মানে ছাত্রদের সাথে...কিন্তু ঐ নিরীহ খেটে খাওয়া মানুষগুলো মার খেলো কেন। আমি ভাই রাজনীতি বুঝিনা...কিন্তু যে নিয়ম সাধারণ মানুষকে এইভাবে treat করতে শেখায় সেটা কতটা বাস্তবসঙ্গত, সবাই ভেবে দেখবেন আশাকরি।
কালো জাদুকর
মন্তব্য
এই ব্লগে নতুন আগমন । কামনা করছি যে ,সম্মানিত কর্তৃপক্ষ এবং সদেস্য বৃন্দ আমায় গ্রহন করবেন ।
সাহায্য নয় , কামনা থাকবে সহোনশীলতা , সহানুভূতি , সহমর্মিতা ।
কামনা___
বনহুর
নতুন মন্তব্য করুন