তারহীন ইথারে

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ১৮/০১/২০০৮ - ৪:১৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রায় দশ বছর হল বাংলাদেশ বেতারে উপস্থাপনার কাজ করছি। সপ্তাহের অবসর সময়ের খানিকটা ব্যয় করি সেখানেই। অনেক ভালোলাগা, অনেক সুখস্মৃতি তৈরি হয়েছে এসময়ে। খারাপ লাগার মত বিষয়ও কম নয়। সুযোগ পাবার আগে বেতার সমন্ধে একেবারেই ভিন্ন ধারণা ছিল।
ছোটবেলায় বাবাকে দেখতাম অফিস যাবার আগে নিয়মিত রেডিও শুনতে। আমার মাও শুনতেন। বোধহয় সেকারণেই সারাক্ষণ গুনগুন করে সুর ভাঁজতেন। গানের প্রতি ভালোলাগাটা তৈরি হয়েছে তখনই। সেসময় বাংলা ছবির কালজয়ী গানগুলোর জয়জয়কার।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি যখন সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি তখন সুমন ভাইয়ের পরামর্শে বেতারে অডিশন দিই। অডিশনের দিন ভাবতেও পারিনি টিকে যাবো। ১৩০ জনের মধ্যে সৌভাগ্যবান ৩ জনের একজন আমি। আমিই সবার চেয়ে বয়সে ছোট। মনে পড়ে ৫৫ বছর বয়েসী এক ভদ্রমহিলাও ছিলেন সে রেসে। আমি তো ভীষণ খুশি সুযোগ পেয়ে। ছোটবোনের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেলাম জীবনানন্দের কবিতা সমগ্র। বন্ধুদের তো বলেই ফেললাম-এবার আর হাতখরচার অভাব হবে না। বাস্তবতা হল প্রতি অধিবেশনে ডিওটির জন্য সম্মানী ৭৫ টাকা। আমি যারপর নাই হতাশ। আস্তে আস্তে জানলাম বেশিরভাগ মানুষই সেখানে যান তাদের ভালোবাসার কারণে। নাহলে সরকারের এত অবহেলার পরেও রেডিও টিকে থাকত কি না সন্দেহ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই আবৃত্তি সংগঠন স্বনন এর কর্মী ছিলাম। সে সুবাদে শুদ্ধ উচ্চারণের চর্চাও তখন থেকেই। রেডিওতে সরাসরি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ আমার আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছিল অনেকখানি। অর্থ উপার্জনের জায়গা সেটি নয় মোটেও। তারপরও অনেক কলুষ প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে আমাকে। অবাক হয়েছি শুধু সুযোগ পাবার জন্যে শরীরী ভালোবাসা বিনিময় করতে দেখে।
সরকারী প্রচার মাধ্যম হওয়াতে আমরা পারিনা স্বাধীনভাবে কাজ করতে। কিছু বেঁধে দেয়া নিয়ম মেনে কাজ করতে হয়। সীমিত স্বাধীনতার মধ্যে থেকেও আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করি বৈচিত্র রক্ষা করতে। তবে প্রমিত উচ্চারণের ক্ষেত্রে রেডিও সবসময় উৎসাহিত করে এবং সেটা মেনে চলা হয়। এখন ঢাকায় যে ক’টি এফ এম স্টেশন চালু সেসব জায়গায় ঠিক এর উল্টোটা ঘটতে দেখি। ওদের অনুষ্ঠানে গতি আছে, বিধিনিষেধের অতটা বালাই নেই। তাই বলে বাংলা আর ইংরেজির মিশেলে ভাষার অপপ্রয়োগ মেনে নেয়া যায় না। স্বাধীনতা মানেই স্বেচ্ছাচারিতা নয়। প্রশ্ন জাগে প্রতি বছর ৮ ফাল্গুন ঘটা করে প্রভাত ফেরিতে যাওয়া তবে কেন?

......................................
কামাল চৌধুরী (সচল হবার পথে...)


মন্তব্য

রেজওয়ান এর ছবি

"তাই বলে বাংলা আর ইংরেজির মিশেলে ভাষার অপপ্রয়োগ মেনে নেয়া যায় না।"

সত্যি বলেছেন। তবে এই ব্যাপারটির জন্য আমরাও হয়তো কিছুটা দায়ী।

উঠতি প্রজন্মের কাছে ইংরেজী এক্সেন্টে বাংলা বলা একটি স্টাইল। এটি যে শুনতে ভালো লাগে না তা চোখে আঙুল দিয়ে না দেখালে হয়ত এটিই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে কোন এক সময়। রেডিও কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই মান নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট থাকতে হবে। শ্রোতারা গণহারে প্রতিবাদ করলে তাদের পলিসি পরিবর্তন হতে বাধ্য।

আমার এক পরিচিত গীতিকার একদিন বলেছিলেন মেহেরীনের জন্যে গান লিখলাম একটা। আমি বলেছিলাম আপনার কথাগুলোকে যে মেহেরীন অপমান করে তার বিকৃত উচ্চারণ দিয়ে সেটি কি ভেবে দেখেছেন? তিনি বসে চিন্তা করে বললেন এভাবে তো ভেবে দেখি নি। সেরকম আমরাও সুযোগ করে দিচ্ছি।

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।