নো স্মোকিং

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১০/০২/২০০৮ - ১০:৫৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্লীজ কেউ সিগারেট খাবেন না। সিগারেটের প্যাকেটের গায়ের লেখাটা পড়েন নি?
"সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর"
লেখাটাকে তো একটুও বেল দেন না। আমি নিজে বলছি, সিগারেট খেলে হার্টের ক্ষতি হয়। বিশ্বাস হয় না আমার কথা??? তাহলে একটু কষ্ট করে আমার

এই কাহিনীটা পড়েন। তাহলেই বুঝতে পারবেন কেন বলছি।

আমি সিগারেট খাওয়া শিখেছি নিজ হাতে ভাত খেতে শেখার আগে। জানতাম, এটা খাওয়া নিষেধ। তাই নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি প্রবল আকর্ষণ থেকে আমার

স্মোকিং ক্যারিয়ারের শুরু ১৯৯১ সালে। তখন এক টাকায় ২০ টা বিড়ি পাওয়া যেত। খেতে খুব ভাল না লাগলেও খুব অ্যাডভেঞ্চার মনে হত ব্যাপারটা।

এর পর নিয়মিত না হলেও

দীর্ঘ বিরতিতে সিগারেট খেতাম। কোন বিশেষ উপলক্ষ্যে, যেমনঃ খালা বা নানুর বাড়িতে বেড়াতে গেলে।

1999 সালে ক্যাডেট কলেজে যাবার পর ক্লাস সেভেনে আমি দেখলাম, সিনিয়র ভাইয়ারা খুব ভাব মেরে সিগারেট খেতে যায় ৩ তলায়। আমাদের কলেজে

(মির্জাপুর) প্রতিটি হাউসের ৩ তলা ছিল একরকম পরিত্যাক্ত। শুধু তিনটি বাথরুম, টয়লেট আর বেসিন ছাড়া আর কিছু নেই ওখানে। ভাবলাম, এটা ১০০%

ত্রিল। এই চান্স মিস করা যাবে না। পদে পদে ধরা খাবার সম্ভাবনা। এরপর জীবনের প্রথম শিক্ষাসফরেই সিগারেট কিনে আনলাম। আমি পরে

জেনেছিলাম, সিনিয়র ভাইয়ারা হাউস বেয়ারা কিংবা গ্রাউন্ডসম্যান দিয়ে সিগারেট আনাত। আর তারা শুধু স্যারদের কাছে ধরা খাবার ভয়ে থাকত। আমি

দেখলাম, আমাকে বাঁচতে হবে স্যার আর ক্যাডেট দুদল থেকেই। নিজেকে মাসুদ রানার মত লাগছিল তখন। হা হা হা। এরপর খুব রাতে সাধারণত ৩টা

নাহয় ৪টার দিকে স্মোকিং করতে যেতাম, একা একা ৩ তলায়। ভূতের ভয় ছিল না বলে ৩য় তলাটা রাতের বেলায় আমার ভালই লাগত। কিন্তু একদিন

হঠাৎ আবিষ্কার করলাম, আমি অল্পের জন্য ধরা খাই নি আগের বার। কারণ, ভাইয়ারা রাত আড়াইটার দিকে স্মোকিং করতে যেত। আর আমি তিনটায়।

বাই চান্স যদি একবার, কারো সামনে পড়ে যেতাম, তাহলে কি যে হত ভাবতে এখনো ভয় লাগে।

তবে সত্যি কথা, ক্লাস সেভেনে আমি যা করেছিলাম, তা আমি ক্লাস ১২ এ উঠার পরে করতে সাহস পাই নি। এর কারণ কি, আমি বেশি ভীতু হয়ে গিয়েছি?

নাকি কলেজ অথারিটির strictness, আমি জানি না।

আর কলেজ থেকে চলে আসার পর সবাই সিগারেট খাওয়া শুরু করল। কিন্তু দেখলাম, কেউ কিছু বলে না সিগারেট খেতে দেখলে। তাই আমি সিগারেট এর

প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম। সিগারেট খেতে আর ভাল লাগে না এখন। ধরার কেউ নেই তো তাই। আজকের দিন আমার সিগারেট খাওয়ার হার এত কম

যে, এখন আমাকে নন-স্মোকারের দলেই ফেলে সবাই।

বহুত গ্যাঁজাইছি, এইবার আসল কাহিনী কইয়া ফালাই.....

ক্লাস ৮ এর মে দিবসে ০১.০৫.২০০০ (মনে আছে দিনটা কারণ ওই দিন মে দিবসের কারণে প্রেপ ছিল না) মাগরিব নামাজের পর শাহদাত (২০১৩) আড়াই

তলায় পড়ছিল। আমি চান্স এ ছিলাম, কখন সিগারেট খেতে যাব। ততদিন এ রিফাত (২০১৪), আলম(২০০৯), সাদী(২০১৯), শাহদাত(২০১৩) আরো

কয়েকজন আমার ব্যাপারটা জানত। আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন যাব, কারণ তিন তলায় ওয়ালী ভাই (১৮১৪), আরিফ ভাই (১৮০৬), মেহেদী

ভাই (১৮১৩) সহ তৎকালীন ক্লাস ১১ এর ভাইয়ারা সিগারেট খাচ্ছিল। উনারা কখন যাবেন আমি সেই জন্য অপেক্ষা করছিলাম। উনারা নামলেই আমি যাব।

আমাদের ইমিডিয়েট সিনিয়র শাকেরীন ভাই (১৯৪৮) তৎকালীন ক্লাস ৯ হঠাৎ দৌড়ে তিন তলায় গেল। একটু পরে দেখেলাম, ইলেভেন এর সবগুলা

ভাইয়া, শাকেরীন ভাই সহ তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে গেল। আমি ভাবলাম, এই বার আমার চান্স। তাড়াতাড়ি ৩ তলায় গিয়ে সবেমাত্র সিগারেটটা ধরিয়ে

আর্ধেকটা শেষ করেছি, এমন সময়, হাউস মাস্টার নূরুল হক স্যারের গম্ভীর গলা,

"অ্যাই শাহদাআআ.....আআআত, কি করছ ওখানেএএএএএ....??"
শাহদাত (২০১৩) আড়াই তলায় পড়ছিল। ((ও তখন প্রচন্ড সিরিয়াস সায়েন্স/আর্টসের ব্যাপার ক্লাস ৮ এ।
যদি মিস হয়ে যায়!!))

শাহদাত বলল, "পড়তেছি স্যার।"
স্যার জিজ্ঞাসা করলেন, "রুমে পড়ছ না কেন?"
শাহদাত বলল, "রুমে পড়াশোনার ডিস্টার্ব হয় স্যার।"
স্যার বলল, "তবুও এখানে পড়া যাবে না। যাও রুমে যাও।"

আর ওদিক আমার অবস্থা ভয়ের চোটে অস্থির। আমার হার্ট "জলদি চল" বাজাচ্ছে আমার বুকের ভিতরে। স্যার সিগারেটের গন্ধ তো পাবেই। আর পেলে

তিন তলায় আসবেই। কোন মিস নাই। আর স্যারের সামনে দিয়ে ছাড়া তিন তলা থেকে নামার আর কোন রাস্তা নাই। আজ sure ধরা খাইছি। আমি ঘামতে

ঘামতে শেষ। একবার ভাবি, বাথরুম ঢুকে লুকিয়ে থাকি। যতই ধাক্কা মারুক, খুলব না। কিন্তু ভেবে দেখলাম, শেষ পর্যন্ত ধরা পড়তেই হবে। আবার

ভাবলাম, সব স্বীকার করে মাফ চাব। কিন্তু ভেবে দেখলাম, ক্যাডেট কলেজে স্যাররা যতই বলুক, "কি করছ বল, তোমার কিছু হবে না" আসলে হয় তার

উল্টোটা। স্বীকার করে কোন লাভ নাই। চোখের সামনে যেন দেখতে পেলাম, আমার parents কে প্রিন্সিপাল অফিসে ডাকা হয়েছে। আমি কলেজ আউট।

ভাবলাম, যাই হোক, ভুলেও স্বীকার করব না কিচ্ছুই।

আধ খাওয়া সিগারেটটা অনেক আগেই ধ্বংস করে ফেলেছি। ওদিকে স্যার আড়াই তলা থেকে আস্তে আস্তে তিন তলায় উঠতেছে। আমি স্যারের জুতার খট্

খট্ আওয়াজ পাচ্ছি। শেষে একটা বুদ্ধি করলাম, শার্ট খুলে মাথায় আর মুখে বেধে নিলাম, যাতে আমাকে দেখলেও চিনতে না পারে স্যার। স্যার সামনে

আসার সাথে সাথেই স্যারকে ধাক্কা মেরে ঝেড়ে দৌড় দিব। আমি জানি জীবনেও আমাকে ধরতে পারবে না। তারপর যা হবার হবে। পালানোর পরে যদি

চিনে ফেলে আমাকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসা করে, আমি কোন কিছুই স্বীকার করব না।

স্যার তৃতীয় তলায় উঠে পড়েছে। মাথায় আর মুখে শার্ট বেঁধে On your marks পজিশনে আমি। স্যার দরজা খোলার সাথে সাথেই Get set and Go....

( বাকি অংশ রাত ১০ টার ইংরেজী সংবাদের পর)

scroll down

scroll down

(অর এক ছোটা সা ব্রেক কে বাদ.....)

হালকা করে চাপিয়ে রাখা দরজা খুলতে গিয়েও স্যার হঠাৎ কি মনে করে দরজা খুললেন না। আপন মনে বলতে লাগলেন, "আউয়াল (হাউস বেয়ারা) তো

সিগারেট খেয়ে জায়গাটা পুরো গন্ধ করে ফেলছে।" তার সব রাগ গিয়ে পড়ল আউয়াল ভাই (হাউস বেয়ারা) এর উপর। উনি তখন তিন তলার দরজার

ছিটকিনি বাইরে থেকে আটকে দিয়ে আউয়াল ভাইয়ের গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে নিচে নেমে চলে গেলেন। আমি সাময়িকভাবে বিপদ থেকে মুক্তি পেয়ে

ফ্লোরেই শুয়ে হাঁপাতে লাগলাম। Thank God, ব্যাপারটা তাহলে আউয়াল ভাইয়ের উপর দিয়ে গেল।

ঠিক তখন ডিনারের বেল দিল। এইবার??? এখন তো আরো বড় সমস্যায় পড়লাম, দরজা তো বাইরে থেকে আটকানো। ডিনারে না যেতে পারলে তো খবর

আছে। অনেকক্ষণ হয়ে গেল। স্যার শুনে ফেলার ভয়ে জোরে কাউকে ডাকতেও পারছি না। আর তিন তলাটাও এমন, না জানলে, তিন তলায় না উঠলে

কারো চোখেও পড়বে না আমাকে। আমি আবার ভয় পেলাম। এবার আর কোন দুষ্টুবুদ্ধিতে কাজ হবে না। আল্লাহকে ডাকতে লাগলাম। আল্লাহ ওইদিন

আমার প্রার্থনা শুনেছিলেন। একটু পরে আলম, সাদী আর রিফাত এসে দরজা খুলে দিয়ে আমাকে ধমকাতে লাগল, কি দরকার ছিল এখন সিগারেট

খাওয়ার?? ....যদি ধরা খাইতি??... এই সব বালছাল খাইয়া কি মজা পাস??....কলেজ আউট হওয়ার ভয় নাই তোর?? bla bla bla bla bla

আমার কানে আর কিছুই ঢুকছিল না। মুক্তির আনন্দে আমি তখন আত্মহারা।

পরে বুঝতে পেরেছিলাম যে, শাকেরীন ভাই ছিল ক্লাস ১১ এর ভাইয়াদের গার্ড। উনি নূরুল হক স্যারকে হাউসে আসতে দেখে দৌড়ে তিন তলায় গিয়ে ক্লাস

১১ এর ভাইয়াদের খবর দিয়েছিলেন যে, হাউস মাস্টার নূরুল হক স্যার হাউসে এসেছেন। নূরুল হক স্যার যে কতটা কড়া, তা মির্জাপুরিয়ানরা ভালই

জানে। আর সেটা শুনেই ক্লাস ১১ এর ভাইয়ারা পড়িমড়ি করে নেমে গিয়েছিল তিন তলা থেকে। আর আমি??? তাদের নেমে যেতে দেখে.....গিয়ে উঠলাম

তিন তলায়.... হা হা হা

ওইদিন টেনশনে আমার হার্টের আয়ু বিশ বছর কমে গিয়েছিল। বলেছিলাম না? সিগারেট হার্টের জন্য ক্ষতিকর। বিশ্বাস হল তো এবার?

কুচ্ছিত হাঁসের ছানা


মন্তব্য

রায়হান আবীর এর ছবি

smoking kills slowly, so what
Who is in hurry?

পরিবর্তনশীল এর ছবি

if smoking is not allowed in heaven
i shall not go...দেঁতো হাসি
---------------------------------
মহিব
ভাবসাব দেখে মনে হইল "উনি একজন মানুষ"

সুমন চৌধুরী এর ছবি

হাহাহা মজার...



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

লেখা ভাল হইছে, মজা পাইছি ...

আইইউটির ল্যান কি অথরিটি আবার কাইটা দিছে নাকি? (আমাদের সময় একবার দিছিল, ল্যানের তারে নাকি হলের সৌন্দর্য নষ্ট হয়, তাই!) ... নাইলে পুলাপান সব এওসি, ফিফা, ইউটি আর এনএফএস বাদ দিয়া ব্লগিং শুরু করল ক্যান? চোখ টিপি

................................................................................

স্বপ্নাহত এর ছবি

AOC হইতে ব্লগিং উত্তম। চোখ টিপি

=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
বুকের মধ্যে আস্ত একটা নদী নিয়ে ঘুরি

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

রায়হান আবীর এর ছবি

কথা ঠিক। কর্তৃপক্ষ গত মাঝখানে একবার লাইন কর্তন অভিযান চালাইছিল বটে। তবে এখন আবার সবাই লাগায়া নিছে। গত করেয়দিন ধরে নর্থ হলের সাথে যোগাযোগ বন্ধ আছে। সেইটা বড় কথা না, বড় কথা হলো সবাইরে নেটের নেশায় পাইছে।
Man can do what he wants, But he can't want what he wants

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।