ভালোবাসা মেড ইজি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১৭/০২/২০০৮ - ৫:১০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক
- দ্যাটস অলরাইট, আই আন্ডারস্ট্যান্ড......., আই উইল বি ওয়েটিং রাইট হিয়ার........, সি ইউ সুন, রাখছি এখন।
একটু বিরক্ত হয়ে মোবাইলের লাইন কেটে দিয়ে ঘড়ি দেখে শাহানা। একটা দশ। মিনিট দশেক আগে থেকে অপেক্ষা করছে। আহসান সকালে গিয়েছিলো তার প্রোডাকশন সাইটে। সেখান থেকে ফোন করেছে। জরুরী মিটিংএ আটকে গেছে হঠাৎ করে। মিটিং থেকে দু'মিনিটের জন্য বেরিয়ে তার সাথে মোবাইলে কথা বলে দুঃখ প্রকাশ করলো তার দেরী হচ্ছে ব'লে। ওকে দোষ দেয়া যায় না। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সফল ব্যবসা নিজেই দেখাশোনা করার কারণে ভীষন কর্মব্যস্ততার মাঝে কাটে ওর সারাদিন। সাইট থেকে অফিসে ফেরার পথে তার সাথে এখানে দেখা করার কথা। মনে হচ্ছে আরো ঘন্টা খানেক বসে থাকতে হ'তে পারে। সংগে ড্রাইভার আছে গাড়ীসহ, চাইলেই কোথাও থেকে ঘুরে আসা যায়। বা উল্টোদিকের ফুল দোকানে গিয়ে ফুল দেখে সময় কাটানো যায়। এই কফি আর হালকা খাবারের দোকানটিতে ব'সে থাকতে অবশ্য খারাপ লাগছেনা। ভীড় খুব বেশী নেই। পরিবেশটিও মোটামুটি ভদ্র। শাহানাই প্রস্তাব করেছে এখানে লাঞ্চ আওয়ারে দেখা করতে। আহসানের অফিসের কাছাকাছি হওয়ায় তার সময় বেশী নষ্ট হয়না তাতে।

কোনার টেবিলে দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসে থাকলেও শাহানা বুঝতে পারে দোকানদার লোকটি এবং অন্য ক্রেতারা বারবার তাকে আড়চোখে পরখ করে নিচ্ছে। সে ছাড়া আর যে পাঁচ-ছয়জন ক্রেতা তিনটি টেবিল নিয়ে বসে আছে, খাওয়া দাওয়া করছে, কফিতে চুমুক দিচ্ছে, গল্প করছে, তারা সবাই পুরুষ। যদিও দোকানদারটি সহ এরা সবাই ভাব করছে যে তার মত একজন ঝলমলে সুন্দরি একা বসে কফি খাচ্ছে তাতে তাদের কিছু যায় আসেনা, তারা সবাই কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে তাকে নিয়ে ভাবছে। সে কে, কার জন্যে অপেক্ষা করছে অনুমান করার চেষ্টা করছে। কোন সন্দেহ নেই যে এদের মধ্যে কেউ কেউ তাকে নিয়ে মনে মনে কিছু নোংরা চিন্তাও করছে। মনে মনে হাসে। পুরুষ সে ভালো করেই চেনে। তার মত মেয়েকে পুরুষ চিনতে হয়। এই দোকানদার আর ক্রেতাদের কারো আলাদাভাবে চোখে পড়ার মত কোনো বৈশিষ্ট নেই। এদের কাজ শুধু দেখে যাওয়া আর মনে মনে কামনা করা।

তবে কিছু পুরুষ আছে যারা রুপ আর সুন্দর গড়ন নিয়ে জন্মায়। না চাইতেই মেয়েদের সান্নিধ্য পায় এরা অন্য পুরুষদের চেয়ে বেশী। সুন্দরি মেয়েরাও তাদের কামনা করে, পাশে রাখতে পছন্দ করে। কিন্তু সৌন্দর্য ছাড়া অন্য কোনো গুণ না থাকায় এরা মেয়েদের ধরে রাখতে পারেনা। প্রাক্তন প্রেমিক শাহেদ সেরকম একজন। তাকে ধরে রাখতে পারেনি সে। অন্যদিকে মুষ্ঠিমেয় কিছু পুরুষ হয় একই সাথে সফল এবং সুদর্শন। তারাই সত্যিকারভাবে মেয়েদের কাম্য। তার স্বামী আহসান ঠিক তেমন একজন। সব মেয়ে চাইলেই তাদের পায় না। কিন্তু শাহানা সেই সব মেয়েদের একজন যে তাকে টোপ গিলিয়ে বিয়ের বাঁধনে বাঁধতে পেরেছে মাস ছয়েক আগে।

আহসানের সাথে শাহানার পরিচয় এক সময়ের সহপাঠী রাহেলার সূত্র ধরে। রাহেলা সেসময় আহসানের অফিসে তার ব্যক্তিগত সহকারীর কাজ করতো। একবার তার অফিসে দেখা করতে গিয়ে আহসানের সামনে পড়ে যায় সে। তাকে এড়িয়ে যাবার ক্ষমতা বেশীর ভাগ পুরুষের নেই। আহসানেরও ছিলো না। সেই নিজ থেকে এগিয়ে এসে পরিচয় করে। পরিচয় থেকে ভালো লাগা, প্রেম, আহসানের কিছু আত্মীয়ের সাথে পরিচয়, তারপর পারিবারিক উদ্যোগে বিয়ে। আহসান সবসময় সবাইকে গর্ব ক'রে বলে কেমন ক'রে তারা প্রথম দেখায় একে অপরের প্রেমে পড়েছে, লাভ এ্যাট ফার্স্ট সাইট। প্রথম দেখায় প্রেমে পড়া অবশ্য তার দিক থেকে শুধু। শাহানার দিক থেকে প্রেমে পড়াটি ছিলো অনেক হিসেব-নিকেশের।

বিয়ের পর থেকে রাহেলার সাথে যোগাযোগটা বন্ধ হয়ে গেছে, আসলে শাহানাই বন্ধ করেছে। স্বামীর ব্যক্তিগত সহকারীর সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রাখা, একসাথে চলাফেরা করা শোভন নয় বলেই মনে করে সে। তাদের সম্পর্কটি অবশ্য খারাপ হ'তে শুরু করেছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোতেই। সেসময় রাহেলার সাথে তাদের দু'বছরের সিনিয়র শাহেদের কিছু ঘনিষ্টতা ছিলো। রাহেলার ভাষ্য অনুযায়ী তারা একে অন্যকে ভালোবাসতো। কিন্তু সে মনে করে সেটা আসলে ছিলো ভালোলাগা, ভালোবাসা নয়। রাহেলার মত সাধারণ দেখতে একটি মেয়েকে শাহেদের সত্যিকারভাবে ভালোবাসার কথা নয়। তাই সে শাহেদকে কাছে ডাকতে দ্বিধা করেনি, এতে দোষের কিছু দেখেনি। তাছাড়া শাহেদ ছিলো ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে সুদর্শন ছেলে। ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে সুন্দরি মেয়েটি সবচেয়ে সুদর্শন ছেলেটিকে চাইবে এতে বিশ্মিত হবার কী আছে। আর বলা বাহুল্য, তাকে ফিরিয়ে দেবার ক্ষমতা শাহেদের ছিলো না।

কিন্তু রাহেলা বুঝতে চায়নি সেসব। এমন ভাব করেছে যেনো সাত রাজার ধন কেড়ে নেয়া হয়েছে তার কাছ থেকে! কান্নাকাটি করেছে, বস্তির মেয়েদের মত ঝগড়া করেছে তার সাথে! এমনো বলেছে যে 'তুইতো শাহেদকে বিয়ে করবিনা, শেষ পর্যন্ত কোনো পয়সাওলাকে বিয়ে করবি।' খুব বিরক্ত হয়েছিলো শাহানা। সে কি করে না করে সে তো তার ব্যাপার। আর তাছাড়া ক্লাসের সব মেয়েই শাহেদকে পছন্দ করতো। তাই ব'লে সে তাদের সবার কথা চিন্তা করবে তার নিজের কথা চিন্তা করার আগে? রাহেলার মত লোভী মেয়েরা সারাজীবন স্বপ্ন দেখে শাহেদের মত ছেলেদের সাথে প্রেম আর আহসানের মত ছেলেদের বিয়ে করার। কিন্তু বাস্তবে একটি গড়পড়তা ধরণের প্রেমিক বা স্বামী নিয়েই তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়। রাহেলার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি এবং ঘটবেনা। এসব ঘটনার পর রাহেলা তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলো কিছুদিনের জন্যে। পরে অবশ্য নিজের ভুল বুঝতে পেরে নিজেই আবার সব কিছু স্বাভাবিক করে নিয়েছিলো। কিন্তু সে সব কিছু স্বাভাবিক ক'রে নিলেও তার সেদিনের বাড়াবাড়ি শাহানা সহজে ভুলে যেতে পারেনি। আক্রোশ পুষে রেখেছিলো মনের মধ্যে। আর আহসানকে বিয়ে করার পর রাহেলাকে শিক্ষা দেয়ার সুযোগ এসে যায় তার হাতে। বিয়ের মাস দুই পরে তার চাপাচাপিতে রাহেলা চাকরীটি হারায়। দ্যাট ওয়াজ জাস্ট এ মাইলড লেসন ফর হার।

আহসান যখন এসে গিয়েছিলো হাতের মুঠোয়, তখন শাহেদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিলো শাহানাকে। শাহেদ একটি সুদর্শন রোমান্টিক ব্যর্থ ছেলে। পড়ালেখা শেষ ক'রে ছোটখাটো একটি হাজার দশেক টাকা বেতনের চাকরি ছাড়া আর কিছু যোগাড় হয়নি ওর। বলতো, বিয়ের পর শাহানা যদি কাজ করে কিছুদিন, তবে দু'জন মিলে ঢাকা শহরে একটি সংসার দাঁড় করানো আর কত কঠিন। বলতো, শাহানার সারা জীবন কাজ ক'রে যেতে হবে না, শুধু সে নিজে একটা ভালো কাজ না পাওয়া পর্যন্ত। মুচকি হাসতো সে শুধু, কিছু বলতোনা। তাকে নিয়ে ঘর করার স্বপ্ন দেখেছিলো শাহেদ। প্রতিস্রুতি সেও দিয়েছিলো। কিন্তু সে নিশ্চিত শাহেদ এখনো কোনো ছোটোখাটো কাজ করছে, এবং তাই ক'রে যাবে সারা জীবন।

শাহানা পড়ালেখা করেছিলো ঠিকই, তবে তা চাকরী-বাকরী করার উদ্দেশ্যে নয়। সবসময় তার ইচ্ছে ছিলো নিজের রূপ আর শরীর কাজে লাগিয়ে সচ্ছল মোটা আয়ের কাউকে বিয়ে করে দারোয়ান, ড্রাইভার, চাকর-বাকর নিয়ে আরামে আয়েসে নির্ঝঞ্জাটে জীবন কাটাবে। কখনো কোনো কিছুর অভাব বোধ থাকবেনা। ঠিক তেমনি থাকছে সে এখন। বিয়ের পরে হানিমুনে গিয়েছে আমেরিকায়, মাস দু'তিনেকের মধ্যে যাবে ইউরোপ দেখতে, আহসান কথা দিয়েছে; নতুন একটি গাড়ী কেনা হয়েছে শুধু মাত্র তার ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যে, দেশে বিদেশে শপিং ক'রে বেড়াচ্ছে। বাংলাদেশের ক'টা মেয়ে পারে এমন। শুধু তাই নয়, আহসান সবসময় তার মন যুগিয়ে চলতে আপ্রাণ চেষ্টা করে। মাথায় তুলে রাখে। স্বাদ-আহ্লাদ পূরণ করতে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এই যেমন দেখা করতে দেরী হচ্ছে ব'লে তারও মাশুল আদায় ক'রে নেবে শাহানা। হয়তো সন্ধ্যায় দামী কোনো জাঁকজমক রেষ্টুরেন্টে নিয়ে যেতে বলবে। চাইলেই নিয়ে যাবে জানে সে। আহসানের সাথে এই কফির দোকানটায় দেখা করার উদ্দেশ্যও শপিং। ঘরে সময় কাটছেনা ব'লে শপিং করতে মন চাইছে। হাতের টাকা ফুরিয়ে আসায় আরো কিছু টাকা দরকার। সময়ের অভাবে আহসান আর সে এখনো একটি জয়েন্ট ব্যাংক একাউন্ট খুলে উঠতে পারেনি। তাহলে টাকাগুলোর জন্যে এখানে এসে ব'সে থাকতে হ'তো না।

শাহেদকে বিয়ে করলে এসব কিছু হবার সম্ভাবনা ছিলোনা। তাই তাকে ফিরিয়ে দিয়ে আহসানকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিলো বাধ্য হয়ে। বেচারা কষ্ট পেয়েছিলো। অনেক অনুনয় বিনয় সাধাসাধি করেছিলো। কিন্তু আবেগের বশে কোন সিদ্ধান্ত নেয় না সে কখনো। শাহেদের মত ছেলেরা দুঃখ নিয়েই বেঁচে থাকে। তাকে না পাওয়ার দুঃখ তার অন্যান্য অনেক না পাওয়ার দুঃখের সাথে যোগ হয়ে থাকবে। এতে মন খারাপ করার কিছু নেই। এই প্রতিযোগীতার পৃথিবীতে কেউ জিতবে কেউ হারবে, সেটিই স্বাভাবিক। নিজের রূপ আর বুদ্ধি যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে নতুন ক'রে জীবন শুরু করার ঠিক সিদ্ধান্তটি সেদিন নিতে পেরেছিলো বলে সে এখন একটি বিত্তবান স্বামীর পায়ে শেকল পরিয়ে সুখে থাকছে। আপন মনে হাসে সে। ভালোই লাগে। নিজের প্রতি এক ধরনের গর্ব আর গোপন শ্রদ্ধাবোধ করে।

---
দুই
বারোটি গোলাপের যা দাম হবার কথা তার চেয়ে অনেক বেশী দাম রাখলো। দোকানটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আর কাঁচ দিয়ে ঘেরা ব'লে হয়তো। তাতে কিছু যায় আসেনা অবশ্য। ফুলগুলো খুব সুন্দর আর তরতাজা।

দোকান থেকে বেরিয়ে শাহেদ ঘড়ি দেখে। একটা পাঁচ। একবার ভাবে উল্টোদিকের কফি শপ থেকে এক কাপ কফি খেয়ে নেবে। তারপর মত পাল্টে রাহেলার অফিসের দিকে হাঁটতে শুরু করে। অসুস্থতার কথা ব'লে আজ অফিসে যায়নি তার সাথে দেখা করবে বলে। ওর বাসা কখনো চিনতোনা, তবে অফিসটা কোথায় সেটা জানা আছে। দ্রুত হেঁটে গেলে পৌঁছতে আধ ঘন্টার বেশী লাগার কথা নয়।

শাহানা সব কিছু ভেঙ্গে দেবার পর বেশ কয়েকবার ভেবেছে রাহেলার সাথে দেখা ক'রে ক্ষমা চাইবে। কিন্তু সাহস ক'রে উঠতে পারেনি। যাকে ছেড়ে গিয়েছে একবার শুধু মাত্র আরেকজনের রূপের জন্যে, তার কাছে ফিরে যাওয়া সহজ নয়। বুকের মধ্যে কেমন যেনো একটি দুরুদুরু ভাব হয়। তারপরও সিন্ধান্ত নিতে পেরে ভালো লাগছে। সে যদি তাকে আরেকবার সুযোগ দেয়, তাহলে নতুন করে জীবন শুরু করবে আবার। বুকের দুরুদুরু ভাবটা উপেক্ষা ক'রে দ্রুতপায়ে হেঁটে সে আবাসিক হোটেলটি পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যায়।

---
তিন
- ক'টা বাজে দেখতো।
- ঠিক একটা।
- তোমার যাবার সময় হ'য়ে এলো।
- হুম।
- আমার আর এইভাবে লুকিয়ে হোটেলে দেখা করতে ভালো লাগেনা। নিজেকে খুব স্বস্তা মনে হয়।
- আমার কাছে? তোমাকে আমি এত ভালোবাসি তারপরেও?
- কিন্তু আমি তোমার ঘরে উঠতে চাই যে?
- তোমাকেতো বলেছি ডার্লিং, আমার উকিল ডিভোর্সের কাগজপত্র তৈরী করছে। আর ক'টা দিনের মধ্যে সব কমপ্লিট হয়ে যাবে। তারপর আমি পুরোপুরি তোমার।
- ঠিক তো?
-আই প্রমিস ইউ। আগে যদি জানতাম তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো তাহলে ওই বিচটাকে বিয়েই করতাম না। তখনতো সবসময় তোমার সাথে একটু ঘনিষ্ট হ'তে গেলে এড়িয়ে যেতে। বলতে তুমি আরেকজনকে ভালোবাসো।
- তখন তাই ভেবেছিলাম। বুঝতে পারিনি যে মনে মনে তোমাকে এতোটা ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তোমার বিয়ের পর প্রথম বুঝতে পারি। আর তারপর তোমাকে অফিসে প্রতিদিন দেখার সুযোগটিও যখন হারালাম তোমার বউ এর কারণে তখন সত্যিকারভাবে বুঝতে পারলাম।
- আমিও তোমাকেই মনে মনে চেয়েছিলাম সবসময়। তারপর ছাঁটাই হয়ে যাবার পর তুমি যখন ফোন ক'রে কাঁদলে, আর জানালে তোমার ভালোবাসার কথা, তখন বুঝেছিলাম ভুল ক'রে ফেলেছি। তোমার মত ক'রে ও আমাকে ভালোবাসে না। কখনো বাসবেনা। তোমার মত ক'রে কেউ পারবে না। আই লাভ ইউ সো মাচ!
- আই লাভ ইউ টু।
- বাট, ইটস নেভার টু লেট। ডিভোর্সটি মিটে গেলে আমরা আবার নতুন ক'রে জীবন শুরু করবো।
- তোমার কিন্তু দেরি হয়ে যাচ্ছে। ও ব'সে আছে তোমার জন্যে।
- থাকুক ব'সে। তোমার পাশে শুয়ে থাকতে ভালো লাগছে। দাঁড়াও ওকে ফোন ক'রে ব'লে দিই যে প্রোডাকশন সাইটে জরুরী মিটিং এ আটকে গেছি, দেরী হবে।

রাহেলাকে হালকা ক'রে চুমু খেয়ে বিছানায় উঠে বসে মোবাইলে শাহানার নাম্বার টিপতে শুরু করে আহসান। রাহেলা উদাস চোখে তাকিয়ে থাকে তার নগ্ন পিঠে। শাহেদের কথা মনে পড়ে। শাহানা আর শাহেদের ভাঙ্গাভাঙগির কথাটি যেদিন শুনেছিলো, মনে মনে ভেবেছিলো শাহেদ আবার ফিরে আসবে তার কাছে। অপেক্ষা করেছিলো কিছুদিন, সে আসেনি। এখন মনে হয় আসলেও সে আর তাকে ফিরিয়ে নিতে পারতোনা। যে তাকে ছেড়ে গিয়েছে শাহানার মত একটি মেয়ের জন্যে, সে তাকে সত্যিকার ভাবে কখনোই ভালোবাসেনি। হি ওয়জ জাস্ট এ্যাজ শ্যালো এ্যাজ এভরি আদার ম্যান। কিন্তু ওর প্রতি তার ভালোবাসা তারপরেও যেনো লুকিয়ে আছে মনের গভীরে কোথাও , হঠাৎ হঠাৎ উঁকি দেয়। এসব নিয়ে ভাবার আর কোনো মানে হয় না। ওকে ভুলে গিয়ে নিজের জীবন নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সে নিজে আহসানকে কতটা ভালোবাসে সে বিচার পরে করা যাবে, আহসানতো তাকে সত্যিই ভালোবাসে। বিসাইডস, দিস উইল রিয়েলি টিচ দ্যাট বিচ এ লেসন।

--------------------------------------
শামীম হক


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

শেষের চমকটা ভালো লাগলো খুব। চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ শিমুল আপনার স্বতস্ফুর্ত ফিডব্যাকের জন্যে।
- শামীম হক

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- খাইছে। এটাতো চতুর্ভূজীয় প্রেম দেখি। সামান্তরিক প্রেম।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

অতিথি লেখক এর ছবি

ধুসর গোধূলি, পেঁচানোটা বোধ হয় একটু বেশী হয়ে গেলো। পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।
- শামীম হক

হিমু এর ছবি

এক.

শাহানা যদি আহসানের সাথে একই ডিপার্টমেন্টে পড়ে থাকে, তাহলে রাহেলার অফিসে গিয়ে প্রথম দ্যাখা হলো কেন? ডিপার্টমেন্টে আহসান কি ঘাস কাটতো? চোখ থাকিতে অন্ধ!

দুই.

দু'টো মেয়ের কথা বললেন, দু'জনেই দেখছি দুষ্টু কিসিমের। ভালো, ভালো ...।

তিন.

গল্পটা পড়ে ভালো লাগলো। আপনার কাছ থেকে নিয়মিত অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

স্নিগ্ধা এর ছবি

পড়িয়ে হিসেবে একটু মাতব্বরী করি? শেষটা একটু বেশী তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে। শাহানার আকর্ষণ যদি এতোই
অদম্য, অপ্রতিরোধ্য হয়ে থাকে তাহলে তার মাত্র ছয়মাসের ‘নতুন’ স্বামী শুধুমাত্র ভালোবাসা’র জন্য সাদামাটা রাহেলাকে বেছে নেবে - এটা একটু কেমন যেন। এই ব্যাপারটাকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য আরেকটু ক্ষেত্র প্রস্তুত করলে ভালো হতো - আহসানের শাহানাকে নিয়ে হতাশা বা বিরক্তি বা এধরনের কিছুর আভাস...

তারপরও ভালো তো বটেই!

অতিথি লেখক এর ছবি

হিমু,
শাহানা এবং রাহলা আহসানের সাথে নয়, বরং শাহেদের সাথে এক ডিপার্টমেন্টে পড়তো। গল্পের কোথাও কি ভুল ক'রে শাহেদের জায়গায় আহসান বলেছি? তাহলে দয়া ক'রে ধরিয়ে দেবেন কোথায়।
আর দুষ্ট মেয়েদের কথাতো আপনার লেখা পড়ে পড়েই শিখলাম। হাসি
ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।

স্নিগ্ধা,
মাতব্বরীর জন্য ধন্যবাদ। কেউ মাতব্বরী না করলে আমার লেখার দুর্বলতাগুলো আমার জানা হবে না। সাদামাটা একজনের জন্য খুব আকর্ষণীয় একজনকে ছেড়ে যাওয়াটা খুব অসম্ভব নয় অবশ্য। তবে আপনার সাথে একমত যে আহসানের শাহানাকে নিয়ে হতাশা বা বিরক্তির আভাসটা বোধহয় ফুটে উঠেনি ঠিকমত। ধরিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ।

হিমু এর ছবি

উঁহু, আমারই ভুল। দ্বিতীয়বার পড়ার সময় টের পেয়েছি। শাহেদ মোটেও ঘাস কাটেনি।

তবে "সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে" কথাটা বেশ অনুভব করা যায় গল্পটা পড়ে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অমিত আহমেদ এর ছবি

গল্পের প্লটটা কিন্তু জব্বর! পড়ে খুব মজা পেয়েছি। শেষের চমকটা আসলেই চমকে দিয়েছে।

তবে স্নিগ্ধার সাথে আমি একমত। গল্পটায় আরো বিস্তৃতি এনে একটা ক্ষেত্র তৈরির প্র্যাস থাকলে আরো ভালো হতো।

সচলে নিয়মিত লিখবেন আশা করি।

অতিথি লেখক এর ছবি

হিমু, ঠিক আছে, ধন্যবাদ।

অমিত আহমেদ, মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ। আপনার আর স্নিগ্ধার পরামর্শ মাথা পেতে নিলাম।

- শামীম হক

বিপ্লব রহমান এর ছবি

কিভাবে যেনো এই লেখাটি চোখ এড়িয়ে গিয়েছিলো। অনেক দেরীতে হলেও বলছি @শামীম হক।

আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে:

আপনি কিন্তু দারুন লিখেছেন! কি চমৎকার গল্পের প্লট... একেকটি চরিত্র এবং তাদের দ্বন্দ্ব-সংঘাত, বিচিত্র প্রেম ও ঘৃণা! পুরো গল্পটি একেবারে ঠাঁস বুননে গাঁথা!

এ সবেই বাইরে, চরিত্রগুলোর আরেকটু সংলাপ, দৃশ্যের বর্ননা--ইত্যাদি থাকলে গল্পটি পুরোপুরি উৎতে যেতো।

নিয়মিত লিখবেন প্লিজ। ...


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।