জুয়েল বিন জহির
"ছাং ক্রেংছাদা ইক্হংগো
দালা প্রেংয়াগা আচাক মারেং কলা
নি নি ঞা ঞা লিকহো তুংহে..."
(চাক গানের অংশ বিশেষ; ভাবানুবাদঃ চৈত্র মাসে জুম কাটি/দালা গ্রামের চাক,মারমা,মুসলমান/আমরা সবাই সমান কাজ করি/জ্যৈষ্ঠ মাসে ধান রোপন করি/ চারা বড় হলে/ আমরা সবাই খুশিতে আত্মহারা...।)
......................................................................................
"ওন্টে পাচ্চো পাইরি পুদবাকী
ওন গাল্লে কাড়কা চাব্-ই"
(কুরুখ ভাষার একটি ধাঁধাঁ; ভাবানুবাদঃ একটা বুড়ি সকাল সন্ধ্যায়
একগালে দাঁতন চিবায়। উত্তরঃ চুলা)
......................................................................................
"খেংগরং বেইয়া দিম্ দিম্ দিম্
তরে না দিলে কারে দিম
লগে সমায্যা গরি নিম
দিম্ দিম্ দাদা দিম্ দিম্ দিম্ দিম্।"
[চাকমা ছড়া;ভাবানুবাদঃ খেংগরং বাজায় দিম্ দিম্ দিম্/ তোকে না দিলে কাকে দিম/সঙ্গে সাথী কারে নিম/দিম দিম (দেবো দেবো) দাদা দিম দিম দিম (দেবো দেবো দেবো)]
......................................................................................
রাঙা খাড়ি কালা পেল
বিসুম গেলে ও চিগোন বইন
ম'-এ ন' দিচ্ গেল্।(তনচঙ্গ্যা গানের অংশ বিশেষ। ভাবানুবাদঃ রাঙা খাদি কালো পাড়/ ও লক্ষ্মী হাঁচি পেলে/ দিও না গাল।)
......................................................................................
"জালিক গিথাং ফালানি দংআ থাংখা খলাচি
বারাশাড়ি রানাদে রেবো নোনো আন্তিচি।"
(মান্দিদের আচিক ভাষায় শেরেনজিং পালার দুটি লাইন;ভাবানুবাদঃ মরিচ বেঁচে তিরিশ টাকা আছে আমার কাছে/ভালো শাড়ি কিনে দেব চল যাই বাজারে)
............................................................................................................................................................................
মায়ের ভাষার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ৫২'র ভাষা আন্দোলনে বীর শহীদদের আত্মদান বাঙালি জাতির এক অনন্য গর্বের বিষয়। পৃথিবীর বুকে আমরা বাঙালিরা এক ভিন্ন নজীর হাজির করেছি মাতৃভাষার জন্য রাজপথে রক্ত ঢেলে ( অবশ্য ১৯৯৬ সালের ১৬ মার্চ ভারতের বরাক উপত্যকায় বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষার স্বীকৃতি আদায়ের আন্দোলনে সুদেষ্ণা সিংহ শহীদ হয়ে মাতৃভাষার প্রতি মানুষের অকৃত্রিম মমত্ববোধকে আবারো আমাদের সামনে তুলে ধরেন)। আমরা গবির্ত সেই বীর শহীদদের অসামান্য আত্মদানে। তাদের অসামান্য আত্মত্যাগের ভেতর দিয়ে আমরা আমাদের মায়ের ভাষাকে ঘিরে আজকে এক স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিক। একজন বাঙালি হিসেবে এ আমার বুক ফুলানো এক ব্যাপার। মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষার জন্য বীর শহীদদের সেদিনের আত্মত্যাগ আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। ১৯৯৯ সালে আমাদের বাঙালির মহান ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে অনুমোদন দেয় ইউনেস্কো। বাঙালির একুশ আজ সবার। স্বাধীন দেশের একজন নাগরিক হিসেবে এ আমার বিরাট অহংকার। কেননা মাতৃভাষার প্রতি মানুষের নাড়ির বন্ধন কতটা মজবুত, কতটা গভীর হতে পারে তা সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারেরা নিজেদের তাজা রক্ত বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করছি সেই অকুতোভয় বীর শহীদের। এই বীর শহীদসহ বাংলার সংগ্রামী জনতা সেদিন দেখিয়ে দিয়েছিলেন নিজের মায়ের ভাষা একটি জাতির কত বড় এক ধন। ৫২ সেই উত্তাল সময়ের পথ ধরে ৭১এ বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম। লাখো শহীদ, আর অগণিত মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এলো নতুন ভূখণ্ড; বাংলা ভাষা-ভাষীদের নিজেদের রাষ্ট্র-বাংলাদেশ। আমরা পেলাম আমাদের নিজস্ব সংবিধান। আমাদের সংবিধানে আমাদের অনেক প্রত্যাশারই প্রতিফলন ঘটল। আবার অনেক কিছুই থেকে গেল দৃশ্যময়তার আড়ালে। সেই আড়াল এই স্বাধীন ভুখন্ডের প্রায় ৪৫টি ভিন্ন ভিন্ন জাতিসমূহের অস্তিত্বকেই গ্রাস করে নিল। বাঙালি জাতির বাঙালিত্বের সাংবিধানিক দৃশ্যময়তার পাশে কোন ঠাইই মিলল না এই ভূখণ্ডের বৈচিত্রময় চাকমা, মারমা, ককবরক, লালেং, মৈতৈ, ঠার, কুরুখ, সান্তাল, আচিক, হাজং, রাখাইন, খুমি, ম্রো, মাহাতো, মুণ্ডা, খাসিয়া, সিং, বিনধ, পাহাড়িয়া, পাঙ্খো, লুসাই, চাক, তনচঙ্গ্যা, লাইমি, রাজবংশী প্রভৃতি ভাষা-ভাষী মানুষের আপন আপন মায়ের ভাষার কথা; আপন আপন জাতিগত অস্তিত্বের কথা। বহুজাতিক বা বহু ভাষাভাষীর রাষ্ট্রে বরাবরই সংখ্যার বিবেচনায় প্রান্তিক ভাষা সমূহ কোণঠাসা অবস্থায় থাকে। সেখানে বৃহত্তর জাতির ভাষা বা তাদের সুবিধা মতন অন্য কোন ভাষা প্রধান হয়ে উঠবার এবং জোরপূর্বক একভাষিকতা চাপানোর একটা অসৎ প্রবণতা প্রায়ই দেখা যায়। বুর্জোয়া জাতি রাষ্ট্র সমূহে এই প্রবনতা অত্যন্ত প্রকট হলেও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায়ও তার অনুপস্থিতি দেখতে পাইনি। কেননা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নেও রুশ ভাষার জৌলুস আর বিস্তারের বিপরীতে লেট, এস্তোনিয়াসহ অন্যান্য ভাষার অবস্থা ছিল ম্রিয়মান। কিন্তু নিজ মায়ের ভাষার জন্য ত্যাগের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী বাঙালি জাতির বাংলাদেশ রাষ্ট্রে এর অবস্থা ভিন্নতর হওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক। আমরা বাঙালিরা প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ স্তর পর্যন্ত নিজেদের মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারলেও অপরারাপর জাতিসমূহের আপন আপন ভাষায় প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার ব্যবস্থাতো দূরের কথা, তাদের ভাষা সমূহের কোন স্বীকৃতিই আমরা দিতে পারিনি সাংবিধানিক ভাবে। প্রান্তিক জাতি সমূহের আপন বর্ণমালায় আপন আপন ভাষা চর্চার কোন পদক্ষেপই রাষ্ট্রীয় ভাবে নিতে পারিনি স্বাধীনতার এতবছরেও। পারিনি সেই ভাষা সমূহের বিকাশের জন্য নুন্যতম কোন ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু মায়ের ভাষার অস্তিত্বকে সমুন্নত রাখার যে চেতনাকে ধারণ করে আমাদের সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারেরা বুক চিতিয়ে রাজপথে অসামান্য দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন সেই শহীদের আত্মত্যাগের ধারাবাহিকতার বিনিময়ে পাওয়া আমাদের এই বাংলাদেশে অপরাপর ভাষা সমূহের দুরবস্থা কী কোন ভাবেই কাম্য হতে পারে? আমরা কী পেরেছি আমাদের ভাষা শহীদদের প্রতি যথাযথভাবে শ্রদ্ধা জানাতে? একই জনপদের অন্য জাতির মায়ের ভাষার প্রতি উদাসীনতা বজায় রেখে আমাদের ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর তরিকাটা কী সঠিক হতে পারে? বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সকল জাতির সকল মানুষের আপন আপন মায়ের ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সার্বিক বিকাশের পথকে সংহত করার মধ্য দিয়েই কী আমাদের ভাষা শহীদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে না?
মন্তব্য
(বিপ্লব)
পাহাড়িরা আমাদের dark side of the moon। না দেখাই রীতি হয়ে গেছে। এই বিষয়ে বিপ্লব ভাইয়ের কন্ঠ আবশ্যক। মধুপুরের আদিবাসীদের নিয়ে তাসনিমও খুব ভাল লিখেছিল মনে পড়ে। ওর লেখা থেকে -
"Here goes an open invitation: come and see the game, visit one of the most attractive zoos in Bangladesh, spread over 478 square kilometres of land that is home to the largest sal forest in the world. On display: more than 25,000 Mandi and Koch adivasis."
আমাদের কাছে চিড়িয়াখানার জন্তু ওরা। জাতীয় কোন দিবসে স্টেডিয়ামে চিত্তাকর্ষক ট্রাইবাল ড্যান্স থাকা যেমন আবশ্যক।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
মতামতের জন্য ধন্যবাদ
বাংলাদেশে বাংলা ভিন্ন অপরাপর ভাষা সমূহের প্রতি উদাসীনতা বজায় রেখে কী ভাষা শহীদদের প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব?
সম্ভব নয়। "পশ্চাতে রেখেছ যারে, সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।"
=============
"কথা বল আমার ভাষায়, আমার রক্তে।"
সহমতের জন্য ধন্যবাদ।
আসলেই ভাবনায় ফেলে দেয়
লেখক কে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাতে চাই।
এমন করে কখনই ভাবিনি।
আসলে ভাবার সময় চলে যাচ্ছে।
আন্চলিক ভাষা যেমন বরিশাল,চট্টগ্রাম,নোয়াখালী,সিলেট ইত্যাদি নিয়েও ভাবার অবাকাশ আছে।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
আর আঞ্চলিক ভাষা নিয়েও ভাবনার যথেষ্ট অবকাশ আছে।
একটা প্রশ্ন ... চাকমা, মারমা, ককবরক, লালেং, মৈতৈ, ঠার, কুরুখ, সান্তাল, আচিক, হাজং, রাখাইন, খুমি, ম্রো, মাহাতো, মুণ্ডা, খাসিয়া, সিং, বিনধ, পাহাড়িয়া, পাঙ্খো, লুসাই, চাক, তনচঙ্গ্যা, লাইমি, রাজবংশী প্রভৃতি ভাষাভাষী মানুষের মুখের ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি কিভাবে দেয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
পাহাড়িদের নিজেদের অঞ্চলেও তো সে-ই একই চাপিয়ে দেয়া ভাষার দাপট, বান্দরবানের প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলে যেমন মারমা ভাষা হচ্ছে লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা। আমি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে বলছি এ কথা।
আজ যদি চাকমা, মারমা, ককবরক, লালেং, মৈতৈ, ঠার, কুরুখ, সান্তাল, আচিক, হাজং, রাখাইন, খুমি, ম্রো, মাহাতো, মুণ্ডা, খাসিয়া, সিং, বিনধ, পাহাড়িয়া, পাঙ্খো, লুসাই, চাক, তনচঙ্গ্যা, লাইমি, রাজবংশী, প্রতিটি ভাষাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হয়, তাহলে কি প্রত্যেককে আমরা তাদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিতে পারবো? সেই মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা অর্জন করে যখন একজন খাসিয়া বা একজন বম আপনার কাছে এসে হাজির হবেন, আপনি কি তার যোগ্যতা যাচাই করতে পারবেন? আপনি তো শিখেছেন নিজের মাতৃভাষা, কপালগুণে সেটা রাষ্ট্রভাষা। আপনার কী যোগ্যতা আছে একজন চাকমা, মারমা, ককবরক, লালেং, মৈতৈ, ঠার, কুরুখ, সান্তাল, আচিক, হাজং, রাখাইন, খুমি, ম্রো, মাহাতো, মুণ্ডা, খাসিয়া, সিং, বিনধ, পাহাড়িয়া, পাঙ্খো, লুসাই, চাক, তনচঙ্গ্যা, লাইমি, রাজবংশীর মাতৃভাষায় অর্জিত শিক্ষার যোগ্যতা যাচাইয়ের? আপনি কি তাদের সবার ভাষা শিখেছেন? পারবেন আপনার উল্লেখ করা ২৪টি ভাষায় আলাদা করে এঁদের যোগ্যতা যাচাইয়ের ব্যবস্থা করতে? পারবেন একজন চাকমার পাশের টেবিলে একজন সাঁওতাল সহকর্মীকে বসিয়ে নিজেদের মাতৃভাষায় কোন কাজ করাতে?
১৯৪৮ সালে যে উর্দু ভাষাকে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা ছিলো, সেটি পাকিস্তানের কোন অঞ্চলের ভাষাও ছিলো না। বাস্টার্ড পাঞ্জাবিরা পাঞ্জাবি ভাষায় কথা বলতো, সিন্ধিরা সিন্ধি ভাষায়, বালুচরা বালুচ ভাষায়, পাঠানরা পশতু ভাষায়। তাহলে কেন উর্দু? ধর্মীয় জোশের ঠ্যালায়। কারণ হিন্দুস্তানের লোকজন দেবনাগরীতে হিন্দি লেখে, পাকিস্তানকে তার কওমী রওশন দেখাতে হবে, আনো নাস্তালেখ হরফে উর্দু, যে উর্দু আদপে হিন্দুস্তানের রাজধানীর লোকজনের জবান। সেই উর্দুকে শুধু বাঙালিদের কাঁধেই চাপানো হয়নি, গোটা পাকিস্তানের কাঁধেই চাপানো হয়েছিলো। আজকে যদি আপনি বলেন, আমরা বাংলাকে পাহাড়িদের ওপর সেই একইভাবে চাপিয়ে দিয়েছি, তাহলে আমি বলতে পারি, শুধু পাহাড়ি না, আমরা বাংলা ভাষাকে গোটা বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দিয়েছি। আপনি কেন পাহাড়িদের ছড়াগুলির সাথে সিলেটি, চাটগাঁইয়া, নোয়াখাইল্যা ছড়া যোগ করেননি? ফেনির একজন বাংলাদেশীর কি অধিকার নেই মাতৃভাষায় লেখাপড়া করার? আমরা কি ফেনির ভাষাকে কোন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়েছি? বরিশাইল্যা ভাষায় কোন প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা-উপকরণ লেখা হয়েছে?
হাঁটুপানির জলদস্যু
মন্তব্যের জন্য উত্তম ঝাজা
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
মতামতের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি হিমু। প্রান্তিক জাতি সমূহ ও তাদের আপন আপন মায়ের ভাষার স্বীকৃতি দেয়া উচিৎ সাংবিধানিক ভাবেই।
মাধ্যমিক স্তরের কথা পরে ভাবি, আমরা কী প্রাথমিক স্তরে এই রাষ্ট্রের সকল জাতির জন্য তাদের মায়ের ভাষায় পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে পেরেছি? না, পারিনি। আর এটা খুব অসম্ভব বলেও মনে হয় না। ভারতে খাসি, মৈতৈ, লুসাই, আচিক, সান্তালী প্রভৃতি ভাষায় প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্তও পড়াশোনার ব্যবস্থা রয়েছে। আর আমি বলছি না যে, বাংলাদেশে বসবাসরত জাতিসমূহের বাংলা ভাষা শেখার দরকার নেই। বাংলাটা শিখবে তবে সেটা প্রাথমিক স্তর থেকেই হওয়া উচিৎ বলে মনে করি না। এটা ভিন্ন ভাষী একটা শিশুর কাছে কী মনস্তাত্ত্বিক চাপ নয়? নিজের মায়ের ভাষার মধ্য দিয়ে শিশুটি যখন তার নিজস্ব সংস্কৃতির আলো-বাতাসে জ্ঞানার্জন করতে সমর্থ হবে তখন তার শিক্ষার ভিত্তিটা কী শেকড় আকড়ানো হবে না? আর মাধ্যমিক বা উচ্চ পর্যায়ে এসে সে যখন বাংলা বা আন্তর্জাতিক কোন ভাষা রপ্ত করবে তখন তার যোগ্যতা যাচাই করা কোন সমস্যা হবে বলে আমার মনে হয় না। তখন কাউকেই যোগ্যতা নির্ধারণের মহান (!) দায়িত্ব পালনের জন্য ২২-৩০টা ভাষা শেখার প্রয়োজন পড়বে না।
আপনি বাংলা ভাষার বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার কথা বলেছেন। হ্যাঁ, আঞ্চলিক ভাষা নিয়েও আমাদের ভাববার যথেষ্ট অবকাশ আছে। আর ফেনীর-বরিশালের ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিতো আছেই [“প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা”-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, প্রথমভাগ, ৩ নং অনুচ্ছেদ, ২০০০সালের ৩১ ডিসেম্বর সংশোধিত] আপনি যদি এই সমস্ত আঞ্চলিক ভাষা কে বাংলা থেকে স্বতন্ত্র কোন ভাষা হিসেবে বুঝে থাকেন তাহলে সেটা ঠিক নয়। ভাষাতাত্ত্বিকেরা এগুলোকে বাংলা ভাষারই বিভিন্ন উপভাষা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আর হ্যাঁ, আমি এখানে বাংলা ভিন্ন অপরাপর ভাষার সমূহের কথা বলা চেষ্টা করেছি, তাই বাংলার বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা সমূহের নমুনা হাজির করিনি।
আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।
আদিবাসীদের ভাষা নিয়ে কিছু বলতে পারছিনা।
আমরা কী পেরেছি আমাদের ভাষা শহীদদের প্রতি যথাযথভাবে শ্রদ্ধা জানাতে?[i]
আমার মনে হয় সামান্যই। কারণ, আমরা এখনও উনিকোড বাংলা লেখা শিখিনি। একটা standard keyboard এর জন্য বছরের পর বছর পার করে দিয়েছি। পারলে বাংলা কীবোর্ডের টুটি চেপে ধরি।
হিমু আর লেখক উভয়ের সাথেই আমি আংশিক একমত। আমার বক্তব্য -
১) রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলার কোনো বিকল্প নেই বাংলাদেশে।
২) অন্যান্য সব ভাষাকে - বা যে যে ভাষা অন্তত কয়েক হাজার বক্তা পাওয়া যাবে, তাদেরকে দেশীয় ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। এর জন্য সংবিধানে কোনো নতুন আর্টিকেল যোগ করা যায়। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে এইসব ভাষাগুলোকে লুপ্তপ্রায় ভাষা হিসাবে সংরক্ষণ করার জন্য সরকারী বাজেটের কিছু অংশ এদের পেছনে ব্যয় করা বাধ্যতামূলক করা উচিত। বাংলা থেকে সাহিত্য এই সব ভাষায় বা উল্টটা করার জন্য টাকা ব্যয় করা যেতে পারে।
৩) প্রথম ভাষা হিসাবে বাংলা ছাড়া অন্যান্য ভাষায় টেক্সটবুক অন্তত প্রাইমারী লেভেল অবধি থাকা দরকার। হাইস্কুল থেকে সবাইকে নাহয় বাংলায় পড়ানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
মতামতের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি হিমু।
প্রান্তিক জাতি সমূহের ও তাদের ভাষার স্বীকৃতি দেয়া উচিৎ সাংবিধানিক ভাবেই।
মাধ্যমিক স্তরের কথা পরে ভাবি, আমরা কী প্রাথমিক স্তরে এই রাষ্ট্রের সকল জাতির জন্য তাদের মায়ের ভাষায় পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে পেরেছি? না, পারিনি। আর এটা খুব অসম্ভব বলেও মনে হয় না। ভারতে খাসি, মৈতৈ, লুসাই, আচিক, সান্তালী প্রভৃতি ভাষায় প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্তও পড়াশোনার ব্যবস্থা রয়েছে। আর আমি বলছি না যে, বাংলাদেশে বসবাসরত জাতিসমূহের বাংলা ভাষা শেখার দরকার নেই। বাংলাটা শিখবে তবে সেটা প্রাথমিক স্তর থেকেই হওয়া উচিৎ বলে মনে করি না। এটা ভিন্ন ভাষী একটা শিশুর কাছে কী মনস্তাত্ত্বিক চাপ নয়? নিজের মায়ের ভাষার মধ্য দিয়ে শিশুটি যখন তার নিজস্ব সংস্কৃতির আলো-বাতাসে জ্ঞানার্জন করতে সমর্থ হবে তখন তার শিক্ষার ভিত্তিটা কী শেকড় আকড়ানো হবে না? আর মাধ্যমিক বা উচ্চ পর্যায়ে এসে সে যখন বাংলা বা আন্তর্জাতিক কোন ভাষা রপ্ত করবে তখন তার যোগ্যতা যাচাই করা কোন সমস্যা হবে বলে আমার মনে হয় না। তখন কাউকেই যোগ্যতা নির্ধারণের মহান(!) দায়িত্ব পালনের জন্য ২২-৩০টা ভাষা শেখার প্রয়োজন পড়বে না।
আপনি বাংলা ভাষার বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার কথা বলেছেন। হ্যাঁ, আঞ্চলিক ভাষা নিয়েও আমাদের ভাববার যথেষ্ট অবকাশ আছে। আর ফেনীর-বরিশালের ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিতো আছেই [ “প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা”-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, প্রথমভাগ, ৩ নং অনুচ্ছেদ, ২০০০সালের ৩১ ডিসেম্বর সংশোধিত] আপনি যদি এই সমস্ত আঞ্চলিক ভাষা কে বাংলা থেকে স্বতন্ত্র কোন ভাষা হিসেবে বুঝে থাকেন তাহলে সেটা ঠিক নয়। ভাষাতাত্ত্বিকেরা এগুলোকে বাংলা ভাষারই বিভিন্ন উপভাষা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। আর হ্যাঁ, আমি এখানে বাংলা ভিন্ন অপরাপর ভাষার সমূহের কথা বলা চেষ্টা করেছি, তাই বাংলার বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা সমূহের নমুনা হাজির করিনি।
আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।
আংশিক সহমত। অনেকখানি দ্বিমত।
একজন আদিবাসী শিশুকে বাংলা ভাষা মাধ্যমিক স্তরে এসে শিখতে গেলে মানসিক চাপ থাকবে না বলে আপনি কেন মনে করছেন? আমি মাধ্যমিক স্তরে এসে আরবী শিখতে গিয়ে ভয়ঙ্কর মানসিক চাপের মধ্যে ছিলাম দুই বছর। যে বাংলা ভাষা শেষ পর্যন্ত একটি আদিবাসী শিশুকে আপনি শিখিয়েই ছাড়বেন, সেটি প্রাথমিক স্তরে নয় কেন? বরং তার পাঠ্যসূচীতে আপনি পরিবর্তন আনুন, তার পরিচিত পৃথিবীর কথা সেখানে লেখা থাক।
যোগ্যতা নির্ধারণের মহান দায়িত্ব সম্পর্কে আপনার মনে ব্র্যাকেটবন্দী প্রশ্নচিহ্নের উদয় হলেও এটিকে সবচেয়ে মহান দায়িত্ব বলেই আমি মনে করি। এর অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সমস্ত সম্ভাবনা বিনষ্ট হচ্ছে।
একজন আদিবাসীকে বাংলা ভাষা দেরিতে শিখিয়ে আপনি তাকে আরো বড় অর্থনৈতিক বিপদের দিকেই ঠেলে দেবেন বলে আমি মনে করি।
আমি বলছি না যে আদিবাসীদের ভাষাকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দেয়া হোক। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে তাদের ভাষার আরো সুললিত চর্চা হোক, গ্রন্থ রচিত হোক, সাহিত্যের চর্চা হোক। বান্দরবানে দেখেছি বমদের বই রোমান হরফে লেখা, মিশনারিদের উৎসাহে। বাংলা ভাষাভাষীদের মনোযোগের অভাবেই রোমান হরফ যীশুর পদচিহ্ন অনুসরণ করে পৌঁছে গেছে পাহাড়ে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
লেখার জন্য জুয়েল বিন জহিরকে (বিপ্লব) এবং আন্তরিক ধন্যবাদ।
আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে:
১. রাষ্ট্রীয়ভাবে আদিবাসীভাষার স্বীকৃতি দেওয়ার আগে প্রয়োজন আদিবাসীদেরই সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া। এটি করা গেলে, আদিবাসী ভাষা, সংস্কৃতি, রীতি-নীতি, ঐতিহ্য, তথা অধিকার সবই রক্ষা পাবে। অবশ্য এ জন্য প্রকৃত দেশপ্রেমিক গণমুখি সরকারের মানসিকতাও প্রয়োজন।
২. দেশের সব আদিবাসী দ্বিভাষী; অর্থাৎ নিজ নিজ ভাষার বাইরে তাদের ব্যবহারিক ভাষা হচ্ছে বাংলা। অন্তত প্রাথমিক স্তরে আদিবাসী শিশুর নিজ মাতৃভাষায় লেখাপড়ার সুযোগ সৃষ্টি করা গেলে শিশুর মনোস্তাত্ত্বিক বিকাশ ছাড়াও আদিবাসী ভাষার দৃঢ়ভিত্তি সৃষ্টি হবে।
আর এটি হতে হবে আদিবাসী নেতাদের পরামর্শে প্রধানত সরকারি উদ্যোগে। এ জন্যও প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। নইলে পরে শিশুশিক্ষায় আদিবাসী ভাষায় লেখাপড়া করার কার্যকারীতা হারিয়ে ফেলবে।
৩. আরো পরে যদি সম্ভব হয়, তবে অন্যান্য সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক স্তরে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে আদিবাসী ভাষায় সাহিত্য বা অন্য কোনো বিষয় সংযুক্ত করা যেতে পারে। চাকমা রাজা ব্যরিস্টার দেবাশিষ রায়ের কাছে শুনেছি, মিজোরামে মাধ্যমিক স্তরেও এমনটিই করা হয়েছে।
৪. এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এ আমার একটি বিশেষ প্রতিবেদন রয়েছে, ইংরেজীতে এখানে। সামহোয়ারিনে আরেকটি লেখা এখানে ।
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
বিপ্লব রহমানকে আন্তরিক অভিবাদন। আপনার সাথে মন্তব্যের সাথে একমত।
ধন্যবাদ।
জুয়েল বিন জহির
মতামত প্রকাশের জন্য হিমু আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।
হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন, মাধ্যমিক স্তরে এসে বাংলা শিখতে এলেও আদিবাসী শিশু চাপের মুখে পড়বে; তবে সেটা কী প্রাথমিক স্তরের মত অতটা ভয়ঙ্কর রূপে আবির্ভূত হবে তার কাছে? আর আদিবাসী শিশুকে বাংলা শিখিয়েই ছাড়ব এমনটাতো আমি কখনোই বলিনি।
দেরিতে বাংলা শেখার সাথে অর্থনৈতিক বিপদের সম্পর্কটা একটু খোলসা করবেন কী?
আপনার বক্তব্যের শেষাংশের সাথে একমত।
জুয়েল বিন জহির
-এটা আমাদের দেশেও ধারণা। ধারণা মানে এখানে লোকে অর্থনৈতিক বিপদের ভয়ে আর মাতৃভাষায় শিক্ষা আদৌ না দিয়ে পুরোপুরি ইংরেজী মিডিয়ামেই পাঠিয়ে দেয়। সুতরাং ...
আপনি যদি অর্থনৈতিক বিপদের কথাই বলেন, তাহলে ইংরেজী কি দোষ করল? ছোটো থেকে মিশনারীদের কাছে ইংরেজী পড়লেই হল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
একটা ছোট অংশ কিন্তু তা-ই পড়ে। বিরিশিরির ওয়াইএমসিএতে একবার ছিলাম, সেখানে আদিবাসী তরুণীদের তুখোড় ইংরেজি শুনে ভড়কে গিয়েছিলাম।
অর্থনৈতিক বিপদের ব্যাপারটা জটিল কিছু না। আদিবাসীরা কোন বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বাস করেন না, বাংলাদেশের বাকি অর্থনৈতিক কাঠামোর সাথেই তারা যুক্ত। ভাষা শুধু সংস্কৃতির ব্যাপারই না, খুব শক্তিশালী একটা অর্থনৈতিক হাতিয়ারও। মাধ্যমিক স্তরে এসে একজন আদিবাসী শিশু বাংলা শিখতে শুরু করলে সেই হাতিয়ার তার ওপর প্রয়োগ করবে মধ্যস্বত্বভোগীরা। এমনিতেই তাদের প্রতিনিয়ত চাপের মুখে রাখা হচ্ছে, সেই চাপের মোকাবেলা করার শক্তিটুকুও কেড়ে নেয়া হবে যদি তাদের বাংলার ভিত দুর্বল হয়।
আমরা প্রাথমিক স্তর থেকেই ইংরেজি শিখি। সেটা কি কোন ভয়ঙ্কর মানসিক পীড়া দেয় আমাদের?
হাঁটুপানির জলদস্যু
আমার ধারণা আপনি যেটা শেখেন সেটা হল দ্বিতীয় ভাষা ইংরেজী। আমিও বলেছি দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে বাংলা ও ইংরেজী - দুইই রাখা যেতেই পারে আদিবাসীদের জন্য সিলেবাসে। কিন্তু প্রথম ভাষা নিজের মাতৃভাষা হওয়া ভাল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আমার ব্যক্তিগত মতামত এরকম:
১। উপজাতিদের জীবনযাত্রার মান ও তাদের সার্বিক উন্নয়ন না হলে ভাষার উন্নয়নও হবে না। আমাদের ক্ষেত্রে যেমন, নিজেরা উন্নত নই বলে বাংলা পৃথিবীর ৭ম ভাষা হওয়া সত্ত্বেও বিস্তৃতিতে পিছিয়ে পড়েছে। তাই আমাদের প্রাথমিক কাজ আদিবাসী সবাইকে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে আসা।
২। মূল এই কাজটির সাথে সাথে ভাষা নিয়ে কাজ করতে হবে। সবগুলো ভাষায় বর্ণমালা, ব্যকরণ ও সাহিত্য (যদি থাকে) ছাপানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রাথমিক ভাবে তারা এগুলোর মাধ্যমে নিজ ভাষায়ই পড়াশোনা করতে পারে। সাথে সাথে বাংলা ও ইংরেজিটা শিখতে থাকবে। পরবর্তীতে ক্লাস সিক্স থেকে বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা শুরু করবে।
৩। সবগুলো ভাষার ডিজিটালীকরণ আবশ্যক। ইউনিকোডে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে খুবই ভাল হয়। উল্লেখ্য, সবচেয়ে প্রভাবশালী চাকমা ভাষাও এখন পর্যন্ত ইউনিকোডে অন্তর্ভুক্ত হয় নি।
------------
মুহাম্মদ
মতামত প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ।
জুয়েল বিন জহির
নাস্তিকের ধর্মকথা
====================>>
প্রথমেই লেখককে অনেক ধন্যবাদ, সুন্দর পোস্টের জন্য এবং শুরুর চমতকার সংগ্রহটির জন্য।
এবারে হিমু ও লেখকের মধ্যে যে বিষয়ে দ্বিমত, সেটি নিয়ে আমার মতামতটি জানাচ্ছিঃ
->মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক/মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাটা হওয়া উচিত। সেটা আদিবাসীদের লুপ্ত ভাষা হিসাবে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে নয়- তাদের অধিকার হিসাবেই
->পাশাপাশি তাদের বাংলা ও ইংরেজীও শেখানো দরকার, তবে দ্বিতীয় ভাষা শেখানো কখন থেকে শুরু হলে ভালো, সেটাও কিন্তু দেখার বিষয়
->রাষ্ট্রীয়ভাবেই তাদের মর্যাদার বিষয়ে নজর দেয়া দরকার, কোনোভাবেই তাদের দেশের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসাবে উপস্থাপন করা ঠিক নয়।
মতামতের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
জুয়েল বিন জহির
লেখার শুরুতে দেওয়া আদিবাসী গান ও ছড়াগুলো এককথায় -- দারুন। @ জুয়েল বিন জহির।
তবে বিনীতভাবে বলছি, এর কয়েকটির ভাবানুবাদে বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ....
যেমন:
ছাং ক্রেংছাদা ইক্হংগো,দালা প্রেংয়াগা আচাক মারেং কলা,
নি নি ঞা ঞা লিকহো তুংহে...
চাক গানের অংশ বিশেষ; ভাবানুবাদঃ চৈত্র মাসে জুম কাটি/দালা গ্রামের চাক,মারমা,মুসলমান/আমরা সবাই সমান কাজ করি/জ্যৈষ্ঠ মাসে ধান রোপন করি/ চারা বড় হলে/ আমরা সবাই খুশিতে আত্মহারা...।
এখানে শব্দটি হবে: কহ্লা , কলা নয়। রাখাইন, মারমা, চাক, ম্রোসহ বিভিন্ন আদিবাসী ভাষার এই শব্দটির সাধারণ অর্থ -- বাঙালি, কোনোক্রমেই মুসলমান নয়।
কহ্লা কথাটির উৎস বার্মা ভাষা। এর আক্ষরিক অর্থ, কুলি। ধারণা করা হয়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বার্মায় যখন রেল লাইন পাতা হচ্ছে, তখন ভারতবর্ষ থেকে ব্যপক সংখ্যায় জনসাধারণ বার্মায় পাড়ি জমান ভাগ্যান্বেষনে। অনেকে বাঙালি কাজ নেন রেল লাইন বসানোর। সেই থেকে বাঙালিদের কহ্লা বা কুলি হিসেবে বর্মী ভাষায় চিহ্নিত করা হতো। ক্রমে কহ্লা = বাঙালি হয়ে দাঁড়ায়।
খেংগরং বেইয়া দিম্ দিম্ দিম্, তরে না দিলে কারে দিম,
লগে সমায্যা গরি নিম, দিম্ দিম্ দাদা, দিম্ দিম্ দিম্ দিম্।...
চাকমা ছড়া;ভাবানুবাদঃ খেংগরং বাজায় দিম্ দিম্ দিম্/ তোকে না দিলে কাকে দিম/সঙ্গে সাথী কারে নিম/দিম দিম (দেবো দেবো) দাদা দিম দিম দিম (দেবো দেবো দেবো)...
'খেংগ্রং' হচ্ছে চাকমাদের ঐতিহ্যবাহি বাঁশি। চাকমা ভাষায় সাধারণ অর্থে তুমি বা আপনি সম্বোধন নেই। বেশিরভাগ সময়ই সম্বোধন হচ্ছে -- তুই। তবে ছোট, সমবয়সী ও বড়দের ক্ষেত্রে 'তুই' সম্বোধন করা হলেও একটি বিশেষ টান ব্যবহার করে সম্বোধনের পার্থক্য করা হয়।
তাই এখানে ভাবানুবাদে তুমি সম্বোধনটি বাঞ্চনিয়। আর 'লগে সমায্যা গরি নমি' কথাটির ভাবানুবাদ 'সাথে সঙ্গী - সাথী নেবো' --এরকম হতে পারে।
রাঙা খাড়ি কালা পেল, বিসুম গেলে ও চিগোন বইন,
ম'-এ ন' দিচ্ গেল্। ...তনচঙ্গ্যা গানের অংশ বিশেষ। ভাবানুবাদঃ রাঙা খাদি কালো পাড়/ ও লক্ষ্মী হাঁচি পেলে/ দিও না গাল।..
এখানে 'বিসুম গেলে ও চিগোন বইন' কথাটির ভাবানুবাদ 'ও লক্ষ্মী হাঁচি পেলে' না হয়ে 'বিষম খেলে ও ছোট বোন' হতে পারে।
পাহাড়ের একাধিক ভাষায় পারদর্শি বমনেতা জুমলিয়ান আমলাই আমাকে এই সব ভাবানুবাদে সহযোগিতা করেছেন। ধন্যবাদ।
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
বিপ্লব রহমানকে আন্তরিক অভিবাদন। এই মন্তব্যটির জন্য আমি আপনার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। চাক গান, চাকমা ছড়া আর তনচঙ্গ্যা গান ও এগুলোর ভাবানুবাদ বিপ্রদাশ বড়ুয়া সম্পাদিত পার্বত্য চট্টগ্রামের সাহিত্য ও সংস্কৃতি-থেকে নেয়া হয়েছে।
ত্রুটিগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য আপনার প্রতি আবারো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আপনার এরকম সহযোগিতা যে কাউকে লিখতে উৎসাহ যোগাবে নিশ্চিত।
ভালো থাকবেন।
শুভেচ্ছাসহ
জুয়েল বিন জহির
নতুন মন্তব্য করুন