আমার বয়স তখন ১৪। মায়ের ওপর রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। বাড়ি ফিরেছি দুদিন পর। বাড়িতে পা দিয়েই জানতে পারি মা অসুস্থ। বিছানায় শুয়ে আছেন। আমার রাগ তখনও কমেনি। তাই অসুস্থ জেনেও মাকে দেখতে যাইনি। ভেবেছি মাতো কদিন পরপরই অসুস্থ হন। আবার জ্বর হয়েছে হয়তো! ছোটবোন হঠাৎ বললো-তোর জন্য আমার মা অসুস্থ হয়েছেন। তুই আমার মাকে সুস্থ করে দে। তোর জন্য মা দু'দিন ধরে পানি পর্যন্ত খায়নি'। মুখের কথা নয় যেন বুলেট হয়ে ছোট বোনের কথাগুলো আমার বুকে বিঁধলো। দু'দিন ধরে আমি কিছু খায়নি- এই ভেবে মা না খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মায়ের কথা ভেবে মুহুর্তেই বুকটা ব্যথায় ভরে উঠলো। অভিমান ভুলে দ্রুত মায়ের মা ধরে ক্ষমা চাইলাম। মা আমাকে বুকে টেনে নিলেন। বোন খাবার নিয়ে এলে মাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করলাম। মা আমার হাত থেকে খাবার নিয়ে প্রথমে আমাকে খাওয়ালেন তারপর নিজে খেলেন। এ ঘটনা থেকে সন্তানের প্রতি মায়ের ভালবাসা সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা হয়েছে। মা যদি দু:খ পান- এই ভেবে আর কখনও মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করিনি। কখনও মন খারাপ হলেও মাকে বুঝতে দিতাম না। তবুও মা ঠিক বুঝে নিতেন। শুধু আমার মা নয় এই ঘটনার পর থেকে পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি অসীম শ্রদ্ধাবোধ জন্মে। একবার মায়ের জন্য একটা সুন্দর শাড়ি কিনেছিলাম। জেনে হোঁচট খেয়েছিলাম- বহু সাধ করে কেনা সেই শাড়িখানা মা একবারের জন্যেও পরেননি। একদিন মাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেসও করেছিলাম । মা যে উত্তর দিয়েছিলাম তাতে গর্বে আমার বুকটা ফুলে উঠে। বাড়ির ছোট-বড় সবাইকে না দিয়ে শুধু তাকে কাপড় দেওয়ায় মা সেটা পরেননি। মায়ের কথা শোনে বিস্মত হওয়া ছাড়া আমার কিছু করার ছিলনা!
কাজের জন্য সব মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে হয়। কিন্তু কখনই মাকে ভুলি না। আমার অস্তত্ব জুড়ে যে কেবল মা। জীবনটাকে যখন ব্যর্থ আবর্জনা মনে হয় তখন একমাত্র মায়ের কথা ভেবেই বেঁচে থাকার ইচ্ছে হয়। মা-ই যে ভালবাসার একমাত্র আশ্রয়স্থল।
লেখক : নেহার
ই-মেইল :
মন্তব্য
পড়লাম ...। মন খারাপ করা লেখা ।
মা' শব্দটা শুনলেই মনটা কেমন করে উঠে।
ধন্যবাদ!
নতুন মন্তব্য করুন