পূর্বপাঠ্যঃ বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর.............. প্রশ্ন পর্ব-১
......যারা তর্কে বহুদূর যেতে চান,
তাদের উদ্দেশ্যে কিছু প্রশ্ন।
গত সংখ্যায় যাত্রা শুরু হয়েছিল, এবার পালা আরেকটু এগিয়ে যাবার। দেখা যাক কতখানি এগুনো যায়...........
প্রশ্ন পর্ব ২: আবারো প্রশ্ন হিসাবে না দিয়ে প্রসঙ্গটি কথোপকথন আকারে উপস্থাপন করছি.........
:আপনি যে চশমার কথা উল্লেখ করেছেন, তা ছাড়া কি উপায়? যে মনে করে, সে চশমা ছাড়াই জগত টিকে দেখছে, সেও কি আসলে কোন রূপ চশমা পড়া নেই?
:হুম, থাকতে পারে। যেহেতু, প্রতিটি মানুষই একটি নির্দিষ্ট পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠে- তাই সেই পরিমন্ডলের প্রভাব তার উপর থাকতে বাধ্য। সে বাচ্চাকাল থেকে যে ভাষা, যে কৃষ্টি, যে কালচারে বেড়ে ওঠে সেটাই তার মধ্যে অনেকাংশে গেথে যায়। কিন্তু, পার্থক্যটি হচ্ছে এই যে, একদল এ বিষয়টিতে সচেতন নয়, আরেকদল জানে- আসলে এই সে যেভাবে কথা বলে, যেভাবে চিন্তা করে, যে সামাজিকতা পালন করে- তাতে তার পারিপার্শিকতার ভূমিকা অনেক; সে এটাও মনে করে যে, এই তার জন্মের টাইম স্পেস সামান্য চেঞ্জ হলেই তার সমস্ত কিছুই অন্যরকম হতো। ফলে, অহেতুক সে তার জন্ম কেন্দ্রিক প্রাপ্ত বিষয় নিয়ে গর্ব বোধ করে না।
:অন্যসব কিছু জন্মের পর পাওয়াটা নিয়ে কিন্তু বলছেন না- তাহলে শুধু ধর্মের ব্যাপারে এটা খারাপ হলো কেন? এটা কি এইজন্যই না যে, অন্যকিছুর ক্ষেত্রে মানুষকে সেগুলো থেকে বিরত রাখতে পারবেন না, -মানুষকে অবশ্যই একটি ভাষা দিতে হবে, সে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট কালচারে বেড়ে উঠবে, এগুলোতে কিছুই করার নেই। এসবে সমস্যা না থাকলে- মানুষ যদি কোন ধর্মীয় পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠে, তাতে কি সমস্যা?
:ভাষা যেহেতু মানুষের মধ্যকার যোগাযোগের মাধ্যম, জ্ঞান বিনিময় ও সৃষ্টিরও মাধ্যম, সেটাকে অগ্রাহ্য করার উপায় নেই, কিন্তু- এই ভাষা স্থবির নয়- তা নদীর স্রোতের মতই চলমান। যুগযুগ ধরে অসংখ্য মানুষের সম্মিলিত ফল আজকের একটি ভাষা এবং আজকের ভাষাও একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসে থাকছে না। সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও তাই। আর, এসব- মানুষকে ততখানি চিন্তাগত ভাবে বদ্ধ করে না যতখানি ধর্ম মানুষকে করে। একজন মানুষ যত সহজেই তার আচার- আচরণ, কালচার, এমনকি কোন কোন দৃষ্টিভঙ্গিও পাল্টায়, ততো সহজে তার ধর্মীয় সংস্কার ত্যাগ করতে পারে না। ফলে এক্ষেত্রে ঐ চশমাটির প্রভাব অনেক বেশি মারাত্মক ও স্থায়ি। তাইতো, এই চশমা চোখে না ওঠাটাই কাম্য।
:কিন্তু আজ ক'জন মানুষকে পাবেন আপনার ঐ চশমা না পড়া? সবাই(হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া) কিন্তু ধর্মীয় পরিমন্ডলেই বড় হয়, বিশ্বাস নিয়েই বড় হয়, তার মানে কি এই- সবাই(হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া) কোন যুক্তি জানেন না, সবাই অন্ধ, সবাই সংস্কারগ্রস্ত?
:সবাই যদি এহেন ধর্মীয় পরিমন্ডলে জন্মগ্রহণ করে এবং তার চিন্তাজগতে তার প্রভাব থেকে থাকে তবে সবাইকে সেদিক দিয়ে বলতেই হবে সে বিষয়ে সে যুক্তি মানে না, সে অন্ধ, সে সংস্কারগ্রস্ত। বিজ্ঞানী রন্টজেন যখন এক্সরে আবিস্কার করেন, তার পরীক্ষার ফলাফল তিনি গ্রহণ করতে দেয়নি, তার প্রচলিত ধর্মীয় বিশ্বাস তাকে বলে, এটা সম্ভব না, কিন্তু তার বিজ্ঞানলব্ধ আবিস্কার তাকে বলে ধর্মে যা দেখেছো তা সত্য না। শেষ পর্যন্ত সে তার গবেষণাপত্র ধংস করতেও উদ্যত হয়। এখন, তার গবেষণা, তার অধ্যবসায়, তার অ্যানালাইসিস- এসব দেখে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, বিজ্ঞানের সেসব শাখায় সে যথেস্ট জ্ঞান রাখেন, যুক্তিবোধও আছে; কিন্তু ধর্মীয় বোধের ব্যাপারে সে ততখানিই যুক্তিহীন। আর তার ক্ষেত্রে যখন এই দুই বোধ মুখোমুখি হলো, তার যুক্তিহীনতা জয়যুক্ত হলো। অনেকের ক্ষেত্রে যুক্তি জয়ি হতে পারে। তবে বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে এই দুইবোধ মুখোমুখি হয়না।
:তাহলে বলছেন, সবাই অন্ধ? সকলের সম্মিলিত জ্ঞানের কি কোন মূল্য নেই?
:সবাইকে অন্ধ বললে- হাজার অন্ধের সম্মিলিত দেখার চেয়ে একজন ভালো চক্ষুঅ'লা মানুষের বেশি দেখার কথা নয় কি? আপনাদের ধর্মের আগমনের ইতিহাস দেখেন- যে সময় যে প্রবর্তকের হাত ধরে তা এসেছে, সে সময় তিনি কিন্তু সর্বপ্রথম একাই ছিলেন। তখনকার জন্য কি বলবেন, সকলের সম্মিলিত জ্ঞানের কি মূল্য নেই?
(চলবে)
মন্তব্য
আস্তিকতায় পরনির্ভরশীলতার পরম শান্তি।
নাস্তিকতায় স্বনির্ভরতার পরম শান্তি।
সংশয়বাদীতায় উদাসীনতার পরম শান্তি।
কোনকিছুতেই ক্ষতি নাই দেখি !
কি মাঝি? ডরাইলা?
নতুন মন্তব্য করুন