ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ্দ...
-হামানদিস্তা
অবশেষে হিন্দুস্তান হইতে ঘোড়া আসিল। তাহা হইলে সত্যিই কি তিনি ঘোড়া আকাশে উড়াইবেন? আমরা মূর্খের দল, ভাবিয়াছিলাম কথার কথা। এখন দেখিতেছি জেনারেল সাহেব নিছক কথার খাতিরে কথা বলেন নাই।
এই যেমন সেদিন বলিলেন, “কাদম্বিনী মরিয়া প্রমান করিয়াছিল সে মরে নাই, আমাদেরও কি ক্ষমতা লইয়া প্রমান করিতে হইবে যে আমরা এখনও ক্ষমতা লই নাই?“ মোক্ষম যুক্তি। সাংবাদিকেরা লাজওয়াব।
জেনারেল সাহেবের নিরপেক্ষতা লইয়াও দুষ্ট লোকে নানা কথা বলে। আমার কিন্তু মনে হয় তিনি দুই বড় দলের সব ‘দূর্নীতিবাজদের’ সমান শাস্তি দেয়ায় বিশ্বাসী। জেনারেল সাহেব বিলক্ষন জানেন, সরকার ‘দূর্নীতিবাজ’ ছাড়া কাউকে জেলে ঢুকায় নাই। আবার এরাই নির্দোষ প্রমানিত হইলে তিনিই নাকি সবচাইতে বেশী খুশী হইবেন। আমাদের দেশে আদালত এখন পুরাপুরি স্বাধীন । আমি দুষ্ট লোকের কথায় কান দিতেছিনা, তাহারা যাহাই বলিতে চায় বলুক। জেনারেল সাহেব ভুল প্রমানিত হইলেও নিরপেক্ষ বিচারে যদি নির্দোষ প্রমানিত হয়, আদালত ‘দূর্নীতিবাজদের’ ছাড়িয়া দিবে। আর ইহাতে তিনিই সবচাইতে বেশী খুশী হইবেন, সুতরাং আদালতের আর ভয় কি? কিন্তু দুষ্ট লোকে বিশ্বাস করিতে চায়না। জেনারেলের কথা সত্য প্রমান করিবার জন্য আদালত নাকি যাহা করিবার তাহাই করিবে, নির্দোষ প্রমানিত হইলেও নাকি জেলের ভাত খাওয়াইয়া ছাড়িবে। লোকের কথা শুনিয়া লাভ নাই, তাহারা যাহা খুশী তাহাই বলিতে পারে ।
দুষ্ট লোকের কাজই হইলো কথার মধ্যে খুঁত খোঁজা। শুধু কথার মধ্যে নয়, বইয়ের নামের মধ্যেও তাহারা গলদ খুঁজিয়া বাহির করে। প্রথমত, জেনারেল সাহেব যে বই লিখিতে পারেন ইহাই তাহাদের বিশ্বাস হইতে চায় না। দ্বিতীয়ত, বইয়ের নাম ‘নির্বাচিত সংকলন’ তাহাদের যারপরনাই অপছন্দের। সংকলন নাকি নির্বাচিতই, ইংরেজীতে যেমন ‘সিলেক্টেড কালেকশন্স’কথাটার কোন মানে হয়না, বাংলায়ও নাকি তেমনি ‘নির্বাচিত সংকলন’ কথাটা অর্থহীন। কি জানি বাবা, আমরা মূর্খের দল।
কিন্তু আমার মনে আসিতেছে অন্য কথা। আগেই বলিয়াছি জেনারেল সাহেব বিচক্ষণ ব্যক্তি, বইয়ের নামের মধ্য দিয়া হয়তো অন্য কিছু বলিতে চাহিয়াছেন। হয়তো তাঁহার পরবর্তী বইয়ের নাম হইবে, ‘সংস্কারোত্তর নির্বাচন’। (আমি জানি দুষ্ট লোকে বলিবে, সাজানো নির্বাচন।) আগাম আভাষ দিয়া রাখিতেছেন। নির্বাচন লইয়া জেনারেলের চিন্তার শেষ নাই। দেখিতে দেখিতে দুই হাজার আট আসিয়া পড়িল, দুইটি মাস চলিয়াও গেল, ডিসেম্বর আসিতে আর মাত্র নয় মাস বাকী। আরতো বলা যায়না, আরও একবছর আছে, দেখা যাক, কি হয়। ঘোড়া আকাশে উড়িবার আগেই অক্কা পাইবে, এমন আশা আর যুক্তিযুক্ত মনে হইতেছেনা। ঘোড়াকে আকাশে উড়াইতে না পারিলে কি হইবে এই চিন্তায় জেনারেল ব্যতিব্যস্ত। “আমাদের দুঃসময়” নামক দৈনিকে এই সমস্ত খবরই পাইতেছি। পত্রিকাটির নাম “জেনারেলের দুঃসময়” হইলেই মানানসই হইতো বেশী।
যাহাই হোক, একটা উপায় অবশ্য আছে। আমার মনে হয় জেনারেলও এই লাইনেই চিন্তা করিতেছেন। ঘোড়া আকাশে না উড়িলেও ডিম পাড়িতে পারে। ঘোড়ার ডিম্ব পাইয়া জনগণ নিশ্চয়ই খুশীতে আত্মহারা হইয়া যাইবে।
মনে হয় এই জন্যই দেশের শাসনব্যবস্থা লইয়াও তাঁহাকে ইদানীং মাথা ঘামাইতে দেখা যাইতেছে। আমাদের নিজেদের উপযোগী গণতন্ত্র আবিষ্কারের নেশায় তাঁহাকে পাইয়া বসিয়াছে। আমাদের জেনারেলের গুরুর গুরু, মানে ওস্তাদোকা ওস্তাদ, আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্র আবিষ্কার করিয়াছিলেন। সেই যুগেও দুষ্ট লোকেরা ছিল, তাহারা বলিত, ইহা মৌলিকও নহে, গণতন্ত্রও নহে। এখনও তাহারা এইধরনের কথাই বলিবে। তা বলুক।
সাধারণ মানুষ বা ব্লাডি সিভিলিয়ানরা দেশশাসনের কি বুঝে? তাহাদের বুদ্ধিসুদ্ধি সীমিত, সৃজনশীলতার কদর করিতে জানেনা। নতুন কিছুর কথা শুনিলেই তাহাদের মনে সন্দেহ মাথাচাড়া দিয়া উঠে। তাহারা ঘোড়ায় চড়ে, ডিমও খায়, কিন্তু ঘোড়ার ডিম কখনো দেখে নাই। নতুন জিনিষ, কিছুটা আপত্তিতো উঠিবেই। কিন্তু জেনারেল সাহেবের নিশ্চিত ধারণা, একবার এই ডিমের স্বাদ পাইলে তাহারা আর কোন ডিম খাইতে চাহিবেনা । “আমাদের দুঃসময়”ও এই ধরণের তত্ত্বই দেশবাসীকে বুঝাইবার চেষ্টা করিতেছে । ফরাসী আর বিলাতী জনগণ দুই ধরনের গণতন্ত্র চর্চা করে, আমরাই বা কেন আমাদের নিজস্ব ধাঁচের গণতন্ত্র চালু করিবনা ?
কিন্তু কে যেন মনে করাইয়া দিল, ওন ব্র্যান্ড অব ডেমোক্রসী চালু করিয়া আইয়ুব খানের পরিনতি শেষমেষ খুব একটা সুখের হয় নাই। ওদিকে ফাঁকিস্থানের মোশাররফ ভাইয়েরও অবস্থা ভাল বোধ হইতেছে না । থাইল্যান্ড, মিয়ানমারেও কি সব উল্টাপাল্টা ঘটনা ঘটিতেছে। ফৌজী শাসন লইয়া নানাজনে নানা কথা বলিতেছে। জেনারেল সাহেব একটু চিন্তায় আছেন বৈকি। মোশাররফ ভাইয়ের সহিত একটু বাতচিত করিবেন তাহারও উপায় নাই, ভাই পড়িয়াছেন দারুন বেকায়দায়। হিন্দুস্তান যাওয়ার আগে ভাইয়ের একটু পরামর্শ লইবার ইচ্ছা ছিল তাহাও সম্ভব হয় নাই। হিন্দুস্তানী ঘোড়া আনাতে ভাই বেজার হইলেন কিনা কে জানে।
কিন্তু ঘোড়া হিন্দুস্তানী হইলে কি হইবে, ঘোড়ার ডিম্বটি হইবে একেবারে আমাদের নিজস্ব ধাঁচের।
মন্তব্য
নিজস্ব ধাঁচের 'ডিম্ব'টি স্বদেশী কায়দায় মামলেট করিবার পর দেশবাসী স্ব স্ব অংশটি খাইবার সময় অকস্মাৎ ছুরি কাঁটা'র অভাব বোধ করিলে - এই লেখাটি ব্যবহার করা যাইতে পারে ------ ধারালো বইকি !
ভালো লাগলো
ঠিক্না! একদম ঠিক্না!
মানী ব্যক্তিদের পাৎলুনের ভেতর হাত ঢুকানো ঠিক্না!
কি মাঝি? ডরাইলা?
উলুম্বুশ
RAB এর ভয় নাই নাকি ভাই আপনার। এত সত্য কথা কিভাবে বলে ছিহ। আমরা তো সত্য চোখ বন্ধ করে রাখতে শিখেছি সেই ছোটবেলা থেকে আপনি কোথায় ছিলেন তখন।
দ্রোহী জেনারেলের ঘুড়াকে মাননীয় কইয়া তার সম্মান বাড়াইয়া দিলা কিন্তু ঘুড়ার কষ্ট বুঝলা না- ঘুড়ার হুগা ফাটায়া ডিম্ব বাহির করলো তার কোনো শোকরানা নাই সবাই ছুড়ি কাঁচি নিয়া আমলেট খায়-
এইভাবে দেশ চলতে পারে না-
-------------------------------------------------------
বাংলায় হাগি, মুতি, বাঁচি
------------------------------------
আমি তো গণে নেই বিচ্ছিন্ন একা
সঙ্ঘে সমুহে নেই সঙ্ঘমিতা।
- ছুঁরি কাঁচি নিয়া অমলেট খাবে না তো কি উহা সহকারে হুগায় গুতাবে?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভাই রাসেল (দরকার হলে ভ্রাতঃ, তাতঃ, পিতঃ, কি গুরু যে কোন সম্বোধনেই আপনার ক্রোধ প্রশমণে সচেষ্ট !) - প্রতিটা মন্তব্যে এতগুলা হাসির চিহ্ন দিলাম, তবুও মনে হচ্ছে আপনার বিরক্তি এড়াতে পারিনি। (দীর্ঘশ্বাস) - যাক কি আর করা - আমার ছুরি কাঁচি দিয়ে অমলেট খাবার প্রস্তাবনা নাহয় ফেরৎই নিলাম
তাও দাদা আসুন সন্ধি করি ?
নতুন মন্তব্য করুন