লেখকঃ মুহাম্মদ
------------------------------
পৃথিবীতে এখন দিবসের ছড়াছড়ি। বছরের এমন কোন দিন খুঁজে পাওয়া যাবে না যা কোন না কোন দিবস হিসেবে কোথাও না কোথাও পালিত হয় না। তাই ফাঁকা স্থান খুঁজে পাওয়া বেশ কষ্টকর। পদার্থবিজ্ঞানীরা একটি নতুন দিবসের জন্য তাই উপযুক্ত ফাঁকা স্থান খুঁজে পায়নি। অবশ্য শুধু ফাঁকা হলেই তো হবে না, দিনটির বিশেষ কোন তাৎপর্য তো থাকতে হবে। অভিজিৎ রায়ের বইয়ের ফ্ল্যাপে একটি কথা পড়েছিলাম, তিনি মনে করেন বিজ্ঞান বা প্রযুক্তি বিষয়ে বড় বড় ডিগ্রি নেয়া আর সমাজকে বিজ্ঞানমনষ্ক হিসেবে গড়ে তোলা একেবারে ভিন্ন দুটি বিষয়। বিজ্ঞান জনপ্রিয় করতে হলে বড় বড় ডিগ্রির কোন প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন কেবল সহজবোধ্য ভাষায় তা উপস্থাপন করার। তাই কিছু পদার্থবিজ্ঞানী এমন একটা দিবস পালনের কথা ভাবছেন যে দিবসে সবাইকে পদার্থবিজ্ঞানী হতে উৎসাহিত করা হবে। বিষয়টা একটু খোলাসা করে বলা যাক,
সম্প্রতি “[url=http://en.wikipedia.org/wiki/Ratatouille_(film)]র্যাটাটুই[/url]” নামে একটি এনিমেশন চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের যৌথ প্রযোজনায়। কাহিনীর মূলমন্ত্র হচ্ছে, “এনিওয়ান ক্যান কুক”। অর্থাৎ যে কেউ রাঁধতে পারে। ফ্রান্সের এক প্রখ্যাত রাঁধুনির জবানিতে এমনটি বলা হয়েছে সেই মুভিতে। আসলেই তাই, আমরা শুধু শুধু মনে করি, না জানি বিষয়টা কি কঠিন। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে, আপেক্ষিকতা, কোয়ান্টাম মহাকর্ষ, স্থান-কাল শুনলেই দৌড়ে পালাই। মনে করি, আইনস্টাইনের সময়কার বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরাই যা বোঝেনি, আমরা তা বুঝবো কি করে। কিন্তু কথা সেখানেই। চাইলে যে কেউ বিজ্ঞানের যে কোন বিষয় বুঝে নিতে পারে। গাণিতিক জটিল সমীকরণগুলো বোঝার কিন্তু কোন দরকার নেই, প্রয়োজন কেবল বিজ্ঞানের জটিল কোন সমস্যার সাধারণ জ্ঞানটি লাভ করা যার থেকে পরবর্তীতে সে বিষয়ক সাধারণ সেন্স জাগ্রত হতে পারে। এই বার্তাটি পৌঁছে দেয়ার জন্যই নতুন এই দিবস যার নাম “টক লাইক আ ফিজিসিস্ট ডে”।
কসমিক ভ্যারিয়েন্স ব্লগে সিয়ান ক্যারল লিখেছেন, “পাইরেট্সদের পর্যন্ত নিজস্ব ভাষায় মানুষকে কথা বলানোর দিবস আছে। আর পদার্থবিজ্ঞানীদের থাকবে না কেন?” আসলেই “টক লাইক আ পাইরেট” নামে একটি দিবস আছে যা পালিত হয় প্রতি বছর ১৯শে সেপ্টেম্বর। “ককটেল পার্টি ফিজিক্স” নামের একটি পদার্থবিজ্ঞানী জোটের সদস্যরা তাই এই নতুন দিবসের প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আশাবাদী। দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ই মার্চ। গণিতবিদ বা গণিত অনুরাগীদের অজানা নয়, এই দিনটি গণিত ভুবনে “পাই দিবস” হিসেবে পালিত হয়। আরেকটি তাৎপর্য হল, এটি আইনস্টাইনের জন্ম দিবস। আর যায় কোথায়, বিশ্বভাবনার আমূল পরিবর্তন করেছেন যে বিজ্ঞানী তার জন্মদিনকেই তো সাধারণ পর্যায়ে সে ভাবনা ছড়ানোর উপলক্ষ্য হিসেবে নেয়া উচিত। এই বিজ্ঞানী গ্রুপ তাই এক পায়ে খাড়া। এ বিষয়ে তারা নিজেদের একটি বুনটলিপিও খুলে বসে আছে। উল্লেখ্য ২০০৮ সালে অর্থাৎ এবারই প্রথম দিবসটি উদ্যাপিত হবে। তারা অনুরোধ করেছেন, সবাই যেন নিজ নিজ প্রতিবেশে এই বার্তা ছড়িয়ে দেয়।
দিবস না হয় বানানো গেল। কিন্তু দিবস এলেই একটু ছুটি ছুটি ভাব এসে যায়। সেই সাথে সবাই মিলে তা উদ্যাপনের জন্য চাই উপহার সামগ্রী। উপহার নিয়ে সব চিন্তার সমাধান করে দিয়েছে পার্টিকেল জু। এই চিড়িয়াখানায় আছে জগতের তাবৎ সব অতিপারমানবিক কণার আদলে তৈরী পুতুল। চিড়িয়াখানার প্রাণীদের দেখা আপনি জঙ্গলে গেলে পেতেও পারেন। কিন্তু এই অদ্ভুত চিড়িয়াদের পার্টিকেল জু ছাড়া অন্য কোথাও দেখতে পারবেন না। সেই পার্টিকেল জু থেকে কোন একটি পছন্দের কণার নকশায় তৈরী করা পুতুল কিনে নিতে পারেন। বন্ধু বা আত্মীয়ের রকম ভেদে তা উপহার হিসেবে দিতে পারেন। আর কি কি করবেন তা আপনার পছন্দের ব্যাপার। তবে সময় ঘনিয়ে আসছেন, অচিরেই আরও সব ফন্দি-ফিকিরের সন্ধান পাবেন আশা করি।
এই দিবসের উদ্যোক্তাদের একটু কৃতজ্ঞতা জানিয়েই শেষ করছি। ককটেল পার্টি ফিজিক্স গ্রুপের মূলে আছেন জেনিফার উইলেট নামক একজন মার্কিন বিজ্ঞান লেখিকা। এই গ্রুপের সাথে একজন বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানীও যুক্ত আছেন যার নাম "টি দাশগুপ্ত"। তিনি বোস্টনের নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করেন। তারা ক্যালিফোর্নিয়ার প্যাসাডেনাতে দিবসটি পালন করছেন। গ্রুপের মূলনীতিই হল, “ফিজিক্স উইথ আ টুইস্ট”। মজার মজার সব উদাহরণের মাধ্যমে এবং কোন সমীকরণ ব্যবহার না করে পদার্থবিজ্ঞানকে তুলে ধরাই এখানে মুখ্য। স্থূল হলেও এ ধরণের উদাহরণ খুব কার্যকর। সবাইকে আন্তর্জাতিক “টক লাইক আ ফিজিসিস্ট” দিবসের আগাম শুভেচ্ছা।
মন্তব্য
চমৎকার লাগল। তবে সবাই মার্চের ১৪ তারিখ কেন 'পাই' দিবস হিসেবে পালন করে সেইটা বোধ হয় বলে দিলে, অনেকেই যারা জানেন না, তাদের উপকার হত।
এই ভেবে আমি শুধু একটু যোগ করে দিতে চাইছিঃ
'পাই' হল পৃথিবীর সবচাইতে পরিচিত, বহুল ব্যবহৃত এবং এখনো বিজ্ঞানীদের অস্বস্তিতে ফেলে দেয়া গাণিতিক সংখ্যা। এর মান হল
৩.১৪----- যেইটা আসলে ১৪ মার্চ হিসেবে দেখা যেতে পারে। অর্থাৎ, এই বছর ১৪ মার্চ কে লেখা যাবে ৩/১৪/২০০৮ (ইংরাজি কেতায়)।
কাজেই ঐ ৩/১৪ অংশটুকু যেহেতু পাই এর মানের সমান, সেই জন্য গণিতবিদেরা তাদের প্রিয় এই সংখ্যাটির জন্মদিন হিসেবে বেছে নিয়েছেন ১৪ মার্চ।
কী চমত্কার একটা ব্যাপার জানা হলো!
ধন্যবাদ, অনিকেত।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
বাহ দারুন একটা জিনিস জানা হল।
---------------------------------
এসো খেলি নতুন এক খেলা
দু'দলের হেরে যাবার প্রতিযোগিতা...
ইন্টারেস্টিং, ধন্যবাদ অনিকেত।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
মুহাম্মদ ভাই, আশা করি আমার এই গুস্তাখি মাফ করে দেবেন।
লজ্জায় ফেললেন। এভাবেই তো বিজ্ঞানের বিষয়গুলো কমিউনিটি ব্লগিংয়ে প্রকাশ পায়। সবাই নতুন নতুন তথ্য আর ধারণা দিবে। ধন্যবাদ, মজার একটা তথ্য জানানোর জন্য।
-----------------------------------
মুহাম্মদ
মুহাম্মদের জিমেইল ঠিকানায় একটি মেইল করা হয়েছে। অনুগ্রহ করে আবার ডায়াল করুন ... মানে, চেক করুন।
হাঁটুপানির জলদস্যু
জিমেইলে হাঁবোধক উত্তর দিয়ছি।
------------------------
মুহাম্মদ
চমৎকার লাগলো লেখাটি। ধন্যবাদ।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
বহুদিন থেকে আমি অনেককেই বলি আসেন একটা ভারবাহী দিবস বানাই
যেদিন আমাদের মতো সভ্যতার ভারবাহী নিরীহ জীবগুলো তাদের মৌলিক আচরণ করার অধিকার পাবে অন্তত কয়েক ঘণ্টার জন্য
ভাল লাগছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
"পাই দিবস" উপলক্ষ্যে একখানা টি-শার্ট পাওয়ার সম্ভাবনা জাগ্রত হৈতেছে। লেখাখানা চমৎকার হৈয়াছে।
কি মাঝি? ডরাইলা?
দারূণ
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...
চমৎকার পোস্ট। উদ্যোগটা খুবই ভালো লাগলো, এবং মুহম্মদকে অনেক ধন্যবাদ জানাই এটা আমাদের এখানে জানানোর জন্য।
"ফিজিক্স" নিয়ে অনেকেরই মারাত্মক ভিতি আছে। এই যে সহজবোধ্য ভাষায় এবং সহজবোধ্য উদাহরণে ফিজিক্সের কথা বলার আয়োজন, এটাই কিন্তু আসলে প্রয়োজন। প্রতিদিনের স্বাভাবিক জীবনের সাথে যদি বিজ্ঞানকে মিলিয়ে দেখি তাহলে ব্যাপারটা অনেক ইন্টারেস্টিং হয়। আমি নিজে ফিজিক্স-এর ছাত্রী হিসেবে প্রায় কুলাঙ্গার পর্যায়ের, তবুও কোথাও ফিজিক্স নিয়ে আলোচনা হচ্ছে অটোমেটিক আগ্রহ পাই শুনতে, জানতে। ১৪ মার্চ চেষ্টা করব একটা কিছু "লাইক আ ফিজিসিস্ট" করতে, বা বলতে।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
১৪ই মার্চে আপেক্ষিকতা নিয়ে একটা আনাড়ি পোস্ট দেয়ার ইচ্ছা আছে। আমি যা বুঝি আর কি। আপনিও একটা বিষয় নিয়ে পোস্ট তৈরি করে ফেলেন। সেই দিনটা পদার্থবিজ্ঞানেরই হোক।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
রকেট
---------------------------------
চোখের পাতায় হাত রেখে ওরা আমাকে স্বপ্ন দেখার যন্ত্রণা দেয়।
নতুন মন্তব্য করুন