বিসিএসে কোটা পদ্ধতি নিয়ে নানা কথা হচ্ছে গত কিছুদিন ধরে। প্রশ্ন উঠেছে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য নিয়েও। কারন আন্দোলনের উদ্যেক্তারা নাকি দেশবিরোধী মৌলবাদী গোষ্ঠীর প্রেতাত্মা। ড. আনোয়ার হোসেন বলেছেন শিবির আর ছাত্র মুক্তি নামক দুটি মৌলবাদী সংগঠন এ আন্দোলনের পিছনে সক্রিয় এবং তাদের মূল উদ্দেশ্য মুক্তিযুদ্ধ কোটা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে উপহাস করা।
আবার ছাত্রদল..ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন সহ কিছু ছাত্র সংগঠন বলেছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা অবিকৃত রেখে পুরো কোটা সিস্টেমে পরিবর্তন আনার কথা। ড. আনোয়ার তার এক বক্তৃতায় বলেছেন জেলা কোটা রাখার প্রয়োজনীয়তা নেই। কিন্তু নারী ও আদিবাসীদের কোটা সংখ্যা বাড়ানো উচিত।
বিষয়টি নিয়ে আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে যা বুঝেছি তাতে করে বলা যায
কোটা পদ্ধতিতে একটি পরিবর্তন দরকার। আর সেজন্যই আমার নিন্মরূপ প্রস্তাব :
১. বিসিএস সহ সরকারী চাকুরীর কোন পরীক্ষায় মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সংগঠন জামায়াত, শিবির, হরকতুল জিহাদ, জেএমবি, হিযবুত তাহরীর সহ মৌলবাদী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কেউ অংশ নেয়ার যোগ্য হবেনা।
২. পরিবারের একজন সদস্যও যদি সরাসরি একাত্তরে বাংলাদেশের বিরোধিতা করে তাহলে সেই পরিবারের ছেলে বা মেয়ে সরকারী চাকুরীর যোগ্য হবেনা। অর্থাৎ বাবা বা মা যদি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী হয় তাহলে তার ছেলে বা মেয়ের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে।
৩. এজন্য যুদ্ধাপরাধী, ৭১ এ পাকিস্তানকে সমর্থনকারী দল, সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গের তালিকা বিসিএস সহ সরকারী চাকুরীর বিজ্ঞাপনের সঙ্গে প্রকাশ করা হবে।
৪. জেলা কোটা থাকবেনা।
৫.মুক্তিযোদ্ধা কোটা অন্তত আরো ১০ বছর অব্যাহত রাখা।
৬. আদিবাসী ১০% ও নারী কোটা আরো ৫% বাড়ানো হোক।
রাকিব হাসনাত সুমন
মন্তব্য
প্রস্তাবে একমত।
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
সব প্রস্তাবের সঙ্গে একমত। কিন্তু --
কে কে এই সব মৌলবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত, তা প্রমাণ হবে কি করে?
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
আমাদের পাসপোর্ট করার সময় এমনকি বিসিএসে উত্তীর্ণ হবার পর চাকুরীতে প্রবেশের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়....... । এ ধরনের সরকারী পদক্ষেপের মাধ্যমেই ্নিশ্চিত হওয়া সম্ভব সম্ভাব্য বি্সিএস ক্যাডার তার ছাত্রজীবনে এ ধরনের সমাজবিরোধী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কিনা।
সুতরাং বিজ্ঞাপন প্রকাশের সময় আবেদনের যোগ্যতাবলীতে দেয়া হবে যে মৌলবাদী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা অযোগ্যতা হিসেবে পরিগণিত হবে।
পরে যারা উত্তীণ হবে তাদের ভেরিফিকেশন রিপোর্টকেই চূড়ান্ত বলে ধরা হবে।
এটা খুব একটা কঠিন হবেনা। কারন পদ্ধতিটি এখনই রয়েছে। বিসি্এসে উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়। ওই ধরনের ভেরিফিকেশনের রিপোর্টে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৌলবাদী সংগঠবনর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল কি-না ছাত্রজীবনে তা যথাযথ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখে রিপোর্ট দেয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিলেই একটি সমাধান আসবে।
তবে এর আগে সরকারী চাকুরীর বিজ্ঞাপনে এ শর্তটির কথা স্পষ্ট করে উল্লেখ করতে হবে।
এখন কেউ কেউ হয়তো বলবেন পুলিশ বা সরকারী উচ্চ পর্যায়ে তো জামাত আর বিএনপি।
আমার কথা হলো আগে সিদ্ধান্ত হোক মৌলবাদী ও বাংলাদেশ বিরোধীরা সরকারী চাকুরীতে অযোগ্য হবেন । তারপর আরো অনেক উপায় আলোচনা করে বের করা যাবে।
রাকিব হাসনাত সুমন
উলুম্বুশ
বাকি সব মতের সাথে একমত। কিন্তু এটা ঠিক মেনে নিতে পারছিনা। আমার জানা মতে এমন কিছু লোক আছে যারা তার যুদ্ধাপরাধী আত্মীয়কে ঘৃণা করে। বাবার জন্য ছেলের শাস্তি পাওয়াটা কি ঠিক?
যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন দোষটা তাদের। ছেলে মেয়েরা কেন তার প্রায়শ্চিত্ত করবে?
আমার জানা মতে বাংলাদেশে জামায়াত বা এ ধরণের সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত লোকের সংখ্যা কম নয়। সবাইকে সরকারী চাকুরিতে অংশ নিতে না দেয়ার অর্থ তাদের নাগরিক অধিকার বঞ্চিত করা। তাই প্রথমে যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে তাদের নাগরিকত্ব সিজ করা। কিন্তু এতো লোকের পুনর্বাসন হবে কিভাবে? ব্যাপারটা কিন্তু মোটেই সহজ নয়।
আমার প্রস্তাব এরকম:
১। সকল যুদ্ধাপরাধীকে চিহ্নিত করা।
২। চিহ্নিত সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার করা।
৩। বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ও স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে এমন সব রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর উপর সরকারী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।
এবারে আপনার পয়েন্টগুলো ব্যাখ্যা করছি:
১। আমার দেয়া ৩ নম্বর পয়েন্ট বাস্তবায়িত হলেই হবে।
২। একেবারেই একমত নই।
৩। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হলে এটাও হয়ে যাচ্ছে।
৪, ৫, ৬ এর সাথে একমত।
---------------------------------
মুহাম্মদ
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
আমার মন্তব্য হয়তো বর্তমানকে রিপ্রেজেন্ট করবে না, তবে ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনা কি হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে মতামত পেশ করা যায়।
গ্রোস অর্থে, এ ধরণের কোটা পদ্ধতি দেশের অর্থনীতির জন্য খারাপ। বাবা মুক্তিযুদ্ধ করেছে বলেই একজন অপেক্ষাকৃত কম কোয়ালিফাইড ব্যক্তির বেশি গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হওয়াটা দেশকে বাঁশই দেয়। জেলাভিত্তিক পদ ভাগাভাগিও একই কাজ করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বা অপেক্ষাকৃত কম উন্নত এলাকার লোকদেরকেও কোটা দিয়ে টেনে তোলার কাজটা দেশের উন্নতির সাথে যায় না। কারণ, এতে প্রতিযোগিতার সুস্থ পরিবেশটা হারায়। আমাদের দেশের অনবরত বাঁশ খেয়ে যাওয়ার জন্য সুস্থ প্রতিযোগিতার অভাবটা একটা বড় কারণ।
এখন প্রশ্ন হলো, দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের কোয়ালিফিকেশনের বৈষম্য দূর করা যায় কিভাবে? এক্ষেত্রে একটাই উপায়, তাদেরকে শিক্ষার সুযোগ করে দেয়া। দায়িত্বটা রাষ্ট্রের। একইভাবে শহরকেন্দ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা বা কর্মসংস্থান সিস্টেমেও পরিবর্তন আনা দরকার। সারা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যদি বিকেন্দ্রিভূতভাবে সারা দেশের এবং বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের ওপর সুষমভাবে নির্ভর করে, তাহলে দেশের ওভারঅল উন্নয়ন অনেক বেশি হওয়া স্বাভাবিক। (রিলেটেড একটা বিশালায়তন পোস্ট)
যুদ্ধাপরাধী সমস্যার সমাধানে তাদেরকে চাকুরী বঞ্চিত করার অ্যাপ্রোচ সঠিক বলে মনে হয় না। এর সমাধান করার অন্য অনেক 'মৌলিক' উপায় থাকাই স্বাভাবিক।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
হ, এইচএসসির পরে এক দোস্ত সেনাবাহিনীতে (কমিশন বলে সম্ভবত) ভর্তি পরীক্ষা দিছিলো। তার ফর্ম দেইখা বুঝলাম, ওখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রেফারেন্স। সিস্টেমটা এমনভাবে করা যে সাধারণ পাবলিকের জন্য ওখানে ঢোকা প্রায় অসম্ভব।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তো হতেই হবে। কিন্তু বিসিএস বা সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে বিষয়টা শুধু যুদ্ধাপরাধ-এর দৃষ্টি কোন থেকে না দেখে অন্য ভাবেও দেখা যায়।
যেমন যিনি ৭১ এ সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের বিরোধীতা করেছেন জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই তাকে ও তার ঘনিষ্ঠদের বাংলাদেশ সরকারের সরকারী চাকুরীতে যোগদানের সুযোগ দেয়া উচিত না। কারন রাষ্ট্রদ্রোহী বা রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত নয় এমন কাউকে কিন্তু সরকারী চাকুরীতে যোগ দিতে দেয়া হয়না। যদিও বঙ্গবন্ধু সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত, পরবর্তীকালে সামরিক শাসন আর মৌলবাদ প্রভাবিত দলগুলোর রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার কারনে যুদ্ধাপরাধী সহ বাংলাদেশ বিরোধীদের অনেকে ইতোমধ্যেই সরকারী চাকুরীর উচ্চপর্যায়ে রয়েছেন। কিন্তু এটি তো চূড়ান্ত সত্য যে একাত্তরে যারা বাংলাদেশের বিরোধিতা করে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছে তারা চিহ্নিত রাষ্ট্রদ্রোহী।
আবার পুলিশ ভেরিফিকেশন (তা চাকুরীর জন্যই হোক আর পাসপোর্টের জন্যই হোক) রিপোর্টে কিন্তু একটি লাইন থাকেই-- "উনি রাষ্ট্র বিরোধী কাজে লিপ্ত ছিলেননা"। এমনকি এটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশংসাপত্রেও উলেলখ থাকে।
সে কারনেই আমি যুদ্ধাপরাধী সহ বাংলাদেশ বিরোধী ব্যক্তি ও তাদের ছেলে মেয়েদের সরকারী চাকুরীতে অযোগ্য ঘোষনার প্রস্তাব করেছি।
রাকিব হাসনাত সুমন
এরকম ঘোষণার কিছু সাইড-এফেক্ট আছে। উপরের কিছু মন্তব্যে কেউ কেউ সমস্যাগুলো বলেছেন। যেমন, যুদ্ধাপরাধীরা ছেলেমেয়ারা এদেশের নাগরিক হলে নাগরিক অধিকারেরও দাবিদার হয়। অতএব, এরকম ঘোষণা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। এবং এটা বাস্তবায়িত না হলে দেখবেন তারা একলাফে আরো অনেক কিছু দাবি করে এগিয়ে যাচ্ছে। আরেকটি বড় সমস্যা হলো, তখন দেখবেন যুদ্ধাপরাধীর ছেলেমেয়েরাই পুলিশের কাছ থেকে উলটা সার্টিফিকেট পাচ্ছে। আমি সমস্যাগুলো বললাম।
নীতিগতভাবে দেশের জন্মের বিরোধিতাকারীদেরকে নাগরিক সুবিধা দূরে থাক, তাদের নাগরিকত্ব বাতিলের পক্ষপাতি।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আপনার হাস্যকর দুই নম্বর প্রস্তাবটা দেখে বাকী ভালো প্রস্তাবগুলো থেকে দৃষ্টি সরে যাচ্ছে। সরি...
বাবা-মা পাপ করলে সন্তান কু-ফল ভোগ করবে।
ব্যাপারটা আমার কাছে হাস্যকরই লাগল।
বলতে বাধ্য হলাম।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
নতুন মন্তব্য করুন