৯৪ সালের দিকের কথা। আমি সাভার ক্যান্টনমেন্টে পাবলিক স্কুল ও কলেজে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। (৯৫ সালের এইচ এস সি)। পাশেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। কারনে - অকারনে দল বেধে চলে যেতাম ক্যাম্পাসে। লুকিয়ে অন্যের প্রেম করা (বিশেষ দৃশ্যগুলোর প্রতি ছিল আমাদের দুর্নিবার আগ্রহ) দেখা, আর মেয়েদের দেখা (কিশোর বয়সের ছেলেরা নাকি তাদের চেয়ে একটু বেশি বয়সের মেয়েদেরই বেশি পছন্দ করে) থাকতো আমাদের প্রধান কর্মকান্ড। এর মধ্যেও গল্প..হাসি... আলোচনা.. ঝগড়া সবই হতো বন্ধুদের মধ্যে। আর আলোচনা বলতে নারী বিষয়ক আলোচনাই সর্বাধিক গুরুত্ব পেতো নি:সন্দেহে। মাঝে মধ্যেই উঠতো রাজনীতির প্রস্ঙ্গ। নানা জনের নানা যুক্তি নানা বক্তব্য।
কিন্তু ক্যাম্পাসে গেলেই সব্ কিছুর মধ্যে একটি বিষয় আমাকে খুব টানতো। আর তা হলো দেয়াল লিখন। বিশেষ করে রাজনৈতিক শ্লোগান। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশমাইলের গেইটের ভিতরের দিকের দেয়ালের একটি শ্লোগান যতবার দেখতাম ততবার আন্দোলিত হতাম।
শ্লোগানটি ছিলে --- "প্রতিক্রিয়াশীলতা কখনো জাতীয়তাবাদের মিত্র হতে পারেনা - জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল"।
এখানে বলা রাখা উচিত দেশের অন্য প্রায় সব বিদ্যায়তনে এক ধরনের দুর্বৃত্ত ছাত্রদল নেতা নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থে এবং কখনো কখনো অর্থের বিনিময়ে মৌলবাদী সংগঠন শিবিরকে প্রতিষ্ঠিত করতে ভূমিকা রেখেছে। একমাত্র ব্যাতিক্রম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে এখনো ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ এক হয়ে লড়াই করে শিবির মোকাবেলায়।
২০০১ এ জামাতীদের সহায়তায় বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদেরও ভাব ভঙ্গি পাল্টে যেতে থাকে। জামাতীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে খালেদা জিয়ার ছবি্ ফেলে দিলে ছাত্রদল সভাপতি হুংকার দেন - আমরা ইচ্ছে করলে ছবি ফেলা নয় কাউকে ছিড়ে ফেলতে পারি। এরপরই প্রধানমন্ত্রী ডেকে ধমক দেন তাকে। ঠিক হয়ে যায় সব কিছু। আর জাতীয়তাবাদের মিত্র হয়ে কুখ্যাত সালেহীরা হত্যা করতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ধারার শিক্ষকদের।
এভাবেই ক্রমশ শিবিরের পদানত হয় ছাত্রদল। আর বুকের মধ্যে এক সাগর কষ্ট নিয়ে ইতিহাসের পাতায় ঠাই করে নেয় সেই ম্লোগান - "প্রতিক্রিয়াশীলতা কখনো জাতীয়তাবাদের মিত্র হতে পারেনা- জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল"।
কিন্তু প্রশ্ন হলো এভাবে জাতির সঙ্গে প্রতারণা আর কতকাল। মিথ্যে শ্লোগানে কখনো কখনো মানুষকে বিভ্রান্ত করে সাফল্য আসলেও চূড়ান্ত বিচারে নিশ্চয়ই প্রতারকের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী।
রাকিব হাসনাত সুমন
মন্তব্য
যে মেইল ঠিকানা ব্যবহার করে সচলায়তনে নিবন্ধন করেছিলেন, দয়া করে সেটি খুলে দেখুন।
হাঁটুপানির জলদস্যু
ধন্যবাদ হিমু ভাই। সচল হয়ে প্রথম মন্তব্য ।
স্বাগতম সুমন। আপনার জিমেইল ঠিকানাটি গুগলটকে যোগ করছি। মন খুলে লিখে যান, তবে সচলায়তনে আবার ২৪ ঘন্টায় ২টার বেশি পোস্ট করা যায় না।
হাঁটুপানির জলদস্যু
মিথ্যের পরাজয় ঘটাতে সত্যবাদীদেরও গুঢ় দায়িত্ব আছে বৈকি। নইলে এই বিভ্রান্তি সহজে যাওয়ার নয়।
অভিনন্দন সুমন!
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
নতুন মন্তব্য করুন