পুলিশ ও আমি – ১

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বুধ, ১২/০৩/২০০৮ - ১২:৩১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কথায় আছে শত্রুর সাথে বন্ধুত্ব করলেও কখনও পুলিশের সাথে বন্ধুত্ব করতে নেই। আমিও তাই পুলিশ থেকে সর্বদা দূরে দূরেই থাকার চেষ্টা করে এসেছি। কিন্তু পুলিশের সাথে আমার মনে হয় কোন পুর্বজন্মের সম্পর্ক রয়ে গিয়েছিল। তাই আমি না চাইতেও আমার বারবার খালি পুলিশের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হয়ে যায়।

পুলিশের সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়ে গেল বাচ্চাকালেই। আমি হয়তো তখন সপ্তম কি অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি। আমার এক বন্ধু আর আমি মিলে ঠিক করলাম যে, রাতের ঢাকা শহর দেখতে কেমন লাগে তা আমাদের দেখা উচিৎ। কিন্তু সমস্যা হলো এত রাতে বাসা থেকেতো বের হতে দেবেনা আমাদের বাবা-মারা। এই সমস্যার সমাধান কিভাবে করা যায় তাই নিয়ে আমরা দুইজন মিলে ভাবতে লাগলাম। আমরা দুইজনই ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে ফযরের নামায পড়ি। আমরা ঠিক করলাম, বাবা-মাকে বলতে হবে যে, আমরা দুইজন মিলে এখন থেকে মসজিদে গিয়ে নামায পড়তে চাই। কারণ, এতে আমাদের ২৭ গুণ অধিক সাওয়াব হবে। এমনিতেও আমরা নামায পড়ার জন্যতো উঠিই। তবে কেননা জামাতে নামায পড়ে ২৭ গুণ বেশি সওয়াব কামাই করি। বলা মাত্রই আমাদের বাবা-মারা রাজি হয়ে গেলেন। হয়তো তাঁরা ভেবেছিলেন ছেলেগুলা ভাল কিছু করতে চাচ্ছে, করতে দেয়া হোক। পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা ৭-৮ দিন একটানা ভোরবেলা উঠে মসজিদে নামায পড়তে গেলাম। ৭-৮ দিন পর আমাদের দুই জনেরই মায়েরা মূল দরজার চাবি বাইরে রাখা শুরু করে দিলেন, যাতে এত সকালে তাদের কষ্ট করে ঘুম থেকে উঠে আমাদের জন্য দরজা খুলে দিতে না হয়। তারপর এলো সেই বহু প্রতিক্ষীত দিন যেদিন আমরা দুইজন চুপিসারে দরজা খুলে রাত ১টার দিকে বের হয়ে গেলাম। আর এরই সাথে শুরু হলো আমাদের রাতের ঢাকা শহর দেখা অভিযান।

আমরা দুই বন্ধু ঢাকার এলিফেন্ট রোডে মিলিত হয়ে হাটা শুরু করলাম। এক সময় চলে গেলাম সাহাবাগ এলাকায়। সেখানে গিয়ে দেখি ফুলের দোকানগুলাতে ফুল বিক্রি শেষ হলেও কি জানি বিক্রি হচ্ছে। কাছে গিয়ে দেখি গাঁজা বিক্রি হচ্ছে। দেখেই আমার বন্ধুবর বলে উঠল,
- আজমীর চল।
- আরে ব্যাটা দাঁড়া। আমাদের স্কুলের বড় ভাই বলতেসিলেন যে উনি নাকি কই গাঞ্জা দেখসিলেন ২০ টাকা কইরা বেচতে। আর উনি আরও কয়েকজন সহ খান। এখানে দেখি ১২ টাকা কইরা। তাইলে চিন্তা কর যদি উনারা যদি ৫ জন কইরাও খান, তাহলে প্রতি রাউণ্ডে উনাদের ৪০ তাকা বাচতে পারে। আর আমরা উনাদের এখানকার সন্ধান দিতে পারি কিছু টাকার বিনিময়ে।
- তা মামা, তুমি কত টাকা নিবা এই information ভাইজানদের দেয়ার জন্যে?
- যত টাকা আমাদের আজকের এই অভিযানে খরচ হবে। তাহলে আমাদের আজকের ভ্রমণটা free হয়ে গেল।
- তোর এসব ধান্দাবাজি ছাইড়া চলরে বাপ, যা দেখার তাতো দেখা হইয়াই গেল। কখন আবার কি হয় কে জানে।
কি আর করা, আবার পথ চলা শুরু করতে হলো। এবার আমরা হাটতে হাটতে চলে এলাম ইস্টার্ন প্লাজার সামনে। সেখানে এসে দেখি ফুটপাথে অনেক লোকজন সারি দিয়ে শুয়ে আছে। আহারে, বেচারাদের কিছুই নাই গায়ে দেবার জন্য। দেখে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। ওই সময়টাতে খুব সিগারেট খেতাম বলে একটা সিগারেট ধরিয়ে ফেললাম, যাতে মন খারাপ ভাবটা ধোঁয়ার সাথে উড়ে যায়। সিগারেটের ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে চলে এলাম বাটা সিগনালের কাছে। উদ্দেশ্য এখান থেকে রিক্সা নিয়ে আজীমপুরের দিকে যাওয়া। আজীমপুরে যাবার আগে ভাবলাম এক প্যাকেট সিগারেট কিনে নিই। এখানেই হয়ে গেল গোলমালটা। একজন পুলিশ কন্সটেবল সোজা আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল,
- ওই ব্যাটা গাঞ্জুট্টি, রাস্তায় গাঞ্জা খাস কিলায়?
- দেখুন ভদ্রভাবে কথা বলুন। আমি গাঞ্জা খাইনা। আর এটা গাঞ্জা না, সিগারেট।
- বুঝলাম। তা আত রাইতে কোন ভদ্রলোকের বাইচ্চা ঘুইরা বেড়ায় আর সিগারেট খায়? তুই চল আমার সাথে থানায়। তারপর তোর বাপেরে ফোন কইরা বলিস তোরে ছুটাইয়া লইয়া যাইতে।
- (আমি এরই ফাকে সিগারেট ধরিয়ে ফেললাম) আমাকে ধরে নিয়ে যেতে পারেন। এতে আপনার ক্ষতি বৈ লাভ হবেনা। আমাদের বাবারা কি করতে পারেন সে কথা বাদই দিলাম। আমরা কি করতে পারি সেটা আপনাকে বলি। আপনি প্রতিদিন এখানে হাটেন, আর যখনই আপনার বাথরুম ধরে, আপনি পাশের এই বিল্ডিং এ যান। (এটা পুরাটাই ছিল অনুমান। সাধারণত হাবিলদাররা এক এলাকাতেই টহল দিয়ে থাকে বলে শুনেছিলাম। আর আশেপাশে আর কোথাও কিছু নাই একটি আবাসিক বিল্ডিং ছাড়া, যেখানে বাথরুম করা যেতে পারে।) আমি এই বিল্ডিং এর মালিকের ছেলে। আপনার কোন ধরনের বাথরুম আর করা লাগবেনা। বাকিটা আপনি বুঝে নেন।
- আরে ভাই, রাগেন ক্যান। আমিতো মস্করা করতেসিলাম। আপনেরা আগে কইবেনানা যে আপনারা নিজেদের লোক। তা ভাই এত রাতে বাইরে ক্যান।
- বাসার এসিটা নষ্ট হয়ে গেলতো, তাই গরম লাগছিল। তাই ভাবলাম বাইরে থেকে একটু হাওয়া খেয়ে আসি।
- ভাল ভাল। কিন্তু ভাই বেশী সময় বাইরে থাইকেননা। দিনকাল আবার ভাল যায়নাতো। বেশে রাইতে বাইরে থাকা ভাল না।
এই বলে হাবিলদার সাহেব চলে গেলেন। কিন্তু আমার বন্ধুটির ততক্ষণে ভয়ে আধ-মরা অবস্থা। তাই আমাদের ভ্রমণ সেখানেই শেষ করে বাসায় চলে আসতে হলো। সত্যি কথা বলতে গেলে অবশ্য আমিও বেশ ভয় পেয়েছিলাম।

আজমীর


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ওই টুকুন বয়সে আপনার মাথায় এত (কু) বুদ্ধি ছিল তো এখন কি অবস্থায় আছেন তা যদি একটু বয়ান করতেন......

আপনার পরবর্তী বয়ানের অপেক্ষায় রইলাম

কল্পনা আক্তার

..............................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

রায়হান আবীর এর ছবি

অনেক ছোট থাকতে একবার এক পুলিশ কে আমি ঠোলা বলে ডেকেছিলাম। তারপর ওই ব্যাটা আমারে এমন ঝাড়ি দিসিল যে আজ অবদি আমি এই জাতিরে ভয় পাই...'

---------------------------------
এসো খেলি নতুন এক খেলা
দু'দলের হেরে যাবার প্রতিযোগিতা...

ধুসর গোধূলি এর ছবি
পরিবর্তনশীল এর ছবি

আমার কিন্তু ''পুলিশ'' জিনিসটা তেমন একটা অ-খারাপ লাগে না
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

হায়রে গাঞ্জুট্টি আজমীর! এই গল্প আমারো অজানা ছিল। চলতে থাকুক।

অতিথি লেখক এর ছবি

আরে ইশতিয়াক, তুমিতো খালি বিদেশী পুলিশ কাহিনীই শুনে গেলা, দেশী পুলিশ কাহিনীও বহু আছে।

আজমীর

সাইফ তাহসিন এর ছবি

বস, আপনে নমস্য

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।