আমি ভুত । শহরের এক কোনায় একটি ভাঙ্গা বাড়িতে থাকি । নিজেকে কখনো দেখি নাই, কেউ বলেনি আমি দেখতে কেমন। তবে হ্যা, মাঝে মাঝে জনসমক্ষে বের হয়ে গেলে আমাকে দেখে মানুষের চেচামেচিতে বুঝেছি দেখতে কিম্ভুত-ই হব । আমি মনে করতে পারি না জীবিতাবস্থায় কে ছিলাম, কেমন ছিলাম, কোথায় থাকতাম । শুধু মনে মনে পড়ে এক মুখের কথা, একটি মেয়ে, খুব সুন্দর । সে যে কে ছিল, কেনই বা তাকে মনে পড়ে কিছুই বুঝি না । সন্ধ্যা হলেই অন্যান্য ভুত পেত্নীদের সাথে চড়তে বেরোই শহরের নানা কোনে, মানুষকে ভয় দেখাতে বিন্দুমাত্র আগ্রহ হয় না, আমার সময়টা কাটে মানুষ দেখে। তারা কি করে, কই যায়, কি খায়, এগুলি দেখেই অনেক মজা লাগে । একদিন নাকি মানুষ ছিলাম । ভাবতেই অবাক লাগে !
ভুত হিসেবে আমার কোন কাজই নেই । অন্যদের দেখি মনের সুখে মানুষকে ভয় দেখায় , কিছু আছে আবার ঘাড়ে চড়ে বসে কাটিয়ে আসে কিছুদিন, এসে নানা মজার গল্প বলে তাদের, একবার তালতলার পেত্নীটা ভর করেছিল এক বাড়ির ঝির ঘাড়ে । আমরা সব গিয়েছিল তখন মজা দেখতে, ঝির ঘাড়ে তাল্লু পেত্নী কত নখরাই না করল ! এরে মারে ত তারে ধরে, একে কামরে দেয় ত ওর কান টানে, ওঝা একটা এসেছিল ঝাড়তে, তাল্লুটা ওঝাকে প্রথমেই দিয়েছিল মুখে ঘুরিয়ে এক লাথি, তারপরেই ঝিকে ছেড়ে দৌড় । সবাই জিজ্ঞেস করেছিল, ওভাবে ভাগলি কেন ? ওঝাকে ভয় পাস ? তাল্লু বলেছিল, বলিস কি, ওইটা কে ছিল জানিস ? ওইটা ত আমার মরদ রে ! শালা মরে নি এখনো, ওর জন্যেই ত গলায় দড়ি দিলাম ! সবাই কি সুন্দর তাদের কথা মনে করতে পারে, আমি কেন পারি না? ধুত!
মানুষ দেখতে মজা লাগে ঠিকই, কিন্তু ভর করতে যাব ? ভাবতে ভয়ই লাগে! যদি কিছু হয়ে যায় ? আমি যেখানে থাকি সেখানে গরীব কিছু লোক ছাড়া কেউ থাকে না, রাতে পাড়ার ছোকড়ারা আসে নেশা করতে, মনের সুখে ছাই-পাশ খেয়ে চলে যায় সকাল হলে । একদিন এক রাতে আমি মেয়েটিকে দেখলাম । ওদিন কুয়াশা ছিল বেশ, দূর থেকেই দেখছিলাম একটা মেয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে হেটে আসছিল এইদিকেই, চৌকাঠ পেরিয়ে যখন আমার সামনে, চমকাই নি এতটুকু, কেন জানি মনে হচ্ছিল ওর আসার-ই কথা । রাতে আমাদের দেখার সম্ভাবনা প্রবল, আমি অন্ধকারে মিশে গিয়ে ওকে দেখতে থাকি । দেখি সে কি জানি খুজছে, এদিক ওদিক তাকালো তারপর দৌড়ে চলে গেল পাশের ঘরে । আমি এবার চমকে উঠি ! ওটা তো আমারই ঘর ! ছায়া ধরে ধরে পিছু নেই ওর, দেখে সে হাতড়ে বেড়ায় পুরান আসবাব, কোনার সিন্দুক সরিয়ে খুড়তে থাকে মাটি, আমি দেখছিলাম মুখ হা করে ! মাটি খুড়ে আস্তে আস্তে বেরোতে থাকে হাত, জামা, কাধ, মুখ , আমি অবাক হয়ে চিনতে পারি আমাকে !
এতো আমি !
সব মনে পরে যায়, সব ! রাগে দুঃখে আরেকবার মরতে ইচ্ছা করছিল তখন, মেয়েটা কাঁদছিল হাউ হাউ করে, এহ্ নেকামি ! থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বের হয়ে আসি বাড়িটা থেকে, আর এতদিনে বুঝতে পারি, ভুত শুধু মানুষেরই হয় !
- খেকশিয়াল
মন্তব্য
*উলুম্বুশ
আরে ভাইয়া কাহিনিটা বললেন না যে। কি মনে পড়ে গেল। মানে মরার কাহিনিটা। ঐটা শোনার আশায় ছিলাম দেখি শেষ হয়ে গেল।
লগ ইন করলাম, কমেন্ট দেবার জন্য।
ভূতের গল্প ভালো হয়েছে। তবে হয়তো আরো লম্বা করা যেত। এটিকে অনায়াসেই বড় গল্প করা যেতে পারে বলে আমার মনে হচ্ছে। একটা চেষ্ঠা দিয়ে দেখুন না।
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
উলুম্বুশ, ফারুক হাসান ধন্যবাদ আপনাদের মন্তব্যের জন্য, এই গল্পটা এই পর্যন্তই থাক, পরে দেখি লেজুড় দিয়ে অন্যকিছু করা যায় কিনা ।
- খেকশিয়াল
- মেয়েটার এট্টা বৃত্তান্ত সাথে মেরে ভূত বানানোর পেছনের কারণ- দিলে জম্পেশ বৈ কম্পেশ হতো না!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
খেকশিয়াল... দারুণ লিখেছেন।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
লেখাটা দারুনভাবে শুরু হয়েছে। এবার টেনে লম্বা করুন।
কি মাঝি? ডরাইলা?
সবাইকে ধন্যবাদ ! টেনে লম্বা করার ইচ্ছা আছে , দেখি কি করা যায়
- খেকশিয়াল
দারুন লাগলো। জাঝা
আমি জানি না সবাই কেন গল্পটা বাড়াতে বলছে, আমার হিসেবে যতটুকু আছে অসাধারণ আছে। শেষটাও ভালো লাগলো।
দীর্ঘদিন ধরে সচলের পাইপলাইনে আছেন। আশা করবো সচল কতৃপক্ষ দ্রুততম সময়ে আপনাকে সচলে করে তুলবেন।
-------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
ধন্যবাদ কমরেড, আমিও বলি যে এই গল্পটা আর টানাটানির দরকার কি, এই গল্পটাতে একটা বার্তা দিতে চেয়েছিলাম, করলে পরে অন্যকিছু করা যাবে ।
- খেকশিয়াল
নতুন মন্তব্য করুন