(নিরিবিলি)
কাগজপত্র হাতে পেয়েই বড় আপার বাসায় ফোন করলাম।বড় ভাগনী ফোন উঠালো।"চলে যাচ্ছি ভাগনী একদম নেটওয়ার্কের বাইরে।"সবাই খুব খুশি।ফোনটা রাখার আগে বড় আপা বললেন,"যাবার আগে একবার বাসায় আসিস।"যতটুকু আনন্দ নিয়ে ফোন করেছিলাম,ফোন রাখার পর মনটা তারচেয়ে বেশি খারাপ হয়ে গেল। অথচ এই দেশ ছাড়ার জন্য কিনা করেছি।ভিসা আর টিকিট ব্যগে ভরে বাড়ীর পথে রওনা দিলাম।বাড়ীর সবাই আমার যাবার কথা শুনে মহাখুশি।শুধু একজন জায়নামাযে বসে কেঁদেই যাচ্ছে।কাছে যেতেই প্রশ্ন "কবে যাবি?"।আমর উত্তর "সাত দিন আছে হাতে।"মা এবার শব্দ করে কেঁদে উঠেন।জন্মের পর থেকে এই একজন কখনো ছায়া,কখনো ভরসা,কখনো দোয়া হয়ে সাথে ছিলেন।কষ্ট তো জীবনে কম করেন নি।বাবা মারা যাবার পর থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত একাই চার ছেলে মেয়েকে মানুষ করেছেন।বড় ভাইয়া ডিপ্লোমা পাস করে সংসারের হাল ধরেন।বড় আপাও কৃতীত্বের সাথে মাস্টার্স পাশ করেন,ডাক্তার চাচার আর্থিক সহযোগীতায়।ছোরদিও ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যাবে কয়েক বছরে।বাকি শুধু আমি।সবাইকে নিরাস করে আমি পর পর দুইবার এইচ এস সি তে ডাব্বা মারি।ভাইয়া শাসন করতে করতে আমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দেন।বন্ধুদের সাথেও তেমন কথা হয় না।আগে যেমন নতুন কোন মেয়ে দেখলেই উঠে পড়ে লেগে যেতাম তার নাম ঠিকানা জানতে এখন এসবও ভালো লাগে না। পরিবারের সবার সাথেও অদৃশ্য দুরত্ব তৈরী হতে থাকে।
আমি কেমন যেন নিজের মধ্যে হারিয়ে যেতে থাকি।মা শুধু কাঁদেন আর বলেন,লেখা পড়া কি ছাড়ে দিবি?আমি নিজেও জানি না আমি কি করব।লেখাপড়া আমার আর ভালো লাগে না।মা আফসোস করে বলেন তুই তো কখনো এমন ছিলি না।আমকে নিয়ে ভাইয়া আপু সাবাই অনেক বেশী আশা করেছিলেন।হয়ত এস এস সি র রেজাল্ট ভাল ছিল বলেই তারা এত আশাবাদী ছিলেন।এভাবেই ছয় মাস কাটিয়ে দেই।এক বৈশাখে বড় আপা বাড়ীতে বেড়াতে এসে আমাকে ঢাকায় নিয়ে যান।এডমিসন নিয়ে নারায়নগঞ্জ মেরিন একাডেমীতে ভর্তি হয়ে যাই।আবিস্কার করি আমি হতাশাকে পেছনে ফেলে এসেছি।শুরু হয় নতুন জীবন।পাস করে চাকুরি পেয়ে যাই চিটাগাং। ছয় মাস চাকুরি করার পর,ছেড়ে দিয়ে আরও কতগুলো কোর্স করে নেই।তবে ছয় মাসে আমি একাকিত্বের নিরস স্বাদ টের পাই।এক-দুই মাস কারো সাথে যোগাযোগ থাকত না তখন।জাহাজের কেবিনের ছোট্ট জানালা দিয়ে শুধু নীল রঙ্গের একটা আকাশ দেখা যেত।
দেখতে দেখতে সাত দিন চলে যেতে থাকে।ভবি এক দুই মাস মার সাথে কথা না বলে থাকতে পারতাম না,ছুটি পেলেই আগে মায়ের কাছে চলে আসতাম এখন পৃথিবী ভ্রমনে যাচ্ছি ছয়-সাত মাস কারো সাথে কোন কথা হবে না!এদিকে মায়ের কান্নাকাটি বেড়ে যায়।তখন টিভিতে অনেক লঞ্ঝ ডুবির সংবাদ দেখে মায়ের ধারনা হতে থাকে আমিও ডুবে মারা যাব।অনেক কষ্টে সেদিন মাকে বুঝিয়ে ছিলাম ওই জাহাজগুলো অনেক নিরাপদ।উন্নত দেশের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।আর জাহাজ কখনো ডুবে না।
সাতদিন পর সবার কাছথেকে বিদায় নিয়ে চীন থেকে আমার যাত্রা শুরু হয়।জাহাজে জাহাজে ইঞ্জিনের ডাক্তারি করি।তেমন কোন কষ্ট নেই শুধু মাঝে মাঝে ইঞ্জিন রুমের প্রায় ১০০ডিগ্রী তাপমাত্রায় কাজ করতে হয়।দিনের বেশীর ভাগ অবসর তবে সহকর্মীদের সাথে কথায় কথায় ভালোই দিন কেটে যায়।সন্ধ্যায় কেবিনের সামনে এসে দাড়ালে পড়ন্ত সূর্যের আলো যখন চারিদিক নিরব করে দেয় তখন বুকের মধ্যে নিসংগতা মনে করিয়ে দেয় মা মনে হয় আজও কাঁদছেন।রাতে যখন ঘুম আসে না মনে পড়ে যায় কতদিন ঘুম না এলে মা মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পারিয়েছেন।আমি ঘুমানোর আগে কোনদিন ঘুমান নি।কোনদিন একবেলা না খেলে ঠিক খুঁজে বের করে খাওয়াতেন।কত দিন রাগ করে বাড়ী ফিরিনি,ঠিক খুঁজে বের করে আদর করে ঘরে নিয়ে
যেতেন।মনে হয় সেদিনের কথা,গাছ থেকে পরে গিয়ে ঠোঁট কেটে ফেলেছলাম সবাই কি বকা!মা আমাকে জড়িয়ে কেঁদেই যাচ্ছেন।মায়ের চোখে মনে হয় আল্লাহ পানি বেশীই দিয়েছে।মনে হতো মা আমার মতো দুষ্টু ছেলেকে এত আদর করেন কেন? ডেকের উপর চাঁদের আলোয় হাটি আর হিসাব করি কতদিন পর মার সাথে কথা হবে?মা, মা গো আমি ইচ্ছে করে জাহাজী হই নি,জীবন আমকে বাধ্য করছে।
মন্তব্য
ওরে নীল দরিয়া, আমায় দেরে দে ছাড়িয়া......
দারুন তো আপনি কি সত্যি সত্যি জাহাজী নাকি?? এখন কোথায় আছেন??
--
কৈলাশ
না রে ভাই আমি না।আমার ছোট মামা।
-নিরিবিলি
ভাল লাগল...
---------------------------------
এসো খেলি নতুন এক খেলা
দু'দলের হেরে যাবার প্রতিযোগিতা...
লেখা ভালো হয়েছে।
আরো লিখুন
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
ভালো লাগলো ।
-আমি লেখাটা পড়ি নি কীকরে
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভাল হয়েছে।নিয়মিত লিখতে থাকুন...
=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
LoVe is like heaven but it hurts like HeLL
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
দ্বিগুন উৎসাহে লিখব।
ধন্যবাদ
-নিরিবিলি
নতুন মন্তব্য করুন