মন খারাপের দিন গুলি...
নন্দিনী
মন ইদানিং ভাল যেন থাকতেই চায়না। মন জিনিষটা আসলে কি জানিনা। মন বলে কিছু আছে কিনা তাও বুঝিনা। সব-ই হয়ত মস্তিষ্কের ব্যাপার স্যাপার। আমাদের মুক্তমনা বন্ধু অভিজিৎ এর ভাল ব্যাখ্যা দিতে পারবেন হয়ত। তিনি বিজ্ঞানের কারবারী। কিন্তু সাধারণ বুদ্ধি দিয়ে এসব ব্যখায় যাওয়া আমার কর্মে কুলাবে না।
যেমন এখন ভীষন রকম মন খারাপ। এত বিচ্ছিরি একটা দিন। কাল রাত থেকেই শুরু হয়েছে লাগাতার ঝরঝর...
সাথে লাগাতার দমকা হাওয়া। এই হাওয়ায় প্রাণ জূড়ায়না,পিত্তি জ্বলে যায় !
সারা সপ্তার অপেক্ষা কখন আসবে শনি/রবিবার। বড় সাধের উইকএন্ড! কিন্তু হায় ! সাধের উইকেন্ড আমাকে বরাবরের মতই প্রতারণা করে। এক গাদা কাজ যে জমে থাকে উইকেন্ডের জন্য সেসব মনে হলেই শুক্রবারের বিকেল থেকে হাঁত-পা হিম হয়ে আসে। শনি-রবিবারের কল্পনার সুখ উড়ে যায় কর্পুড়ের মত। কিন্তু মাঝে মাঝে আমি গোয়ার্তুমি করি। এমনিতে বড়ই সুশীল! কিন্তু সেই সুশীলের ভিতর থেকে মাঝে মাঝে স্বভাব দোষে গোঁয়ারভাবটা চাগান দেয় ! যাকে কিনা আমি প্রাণপনে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে চাই...!
ভাবছিলাম, প্রাণখুলে কি আসলে লেখা যায় ! দেখলাম, আসলে কোথাও প্রাণখুলে কথা বলা যায়না! আমরা আসলে অনেক সময়-ই জানতে অথবা অজান্েত নিজের/নিজেদের দোষগুলো স্বীকার করতে চাইনা। নিজেদের দুর্বলতাগুলো চিহি¡ত করে তা প্রতিকারের উপায় না খুঁজে - শুধু ষড়যন্ত্র আর চক্রান্ত তথ্য খুঁজে বেড়াই। তাতে করে কাজের কাজ কিছু আসলে হয় কিনা আমার অন্তত জানা নেই...
এখানকার সিলেটিদের নিয়ে বলতে চেয়েছিলাম কিছু সত্যি কথা, কারণ আমি এদের-ই একজন। যা জানি ভিতর থেকে জানি, আমি এদের ই মাঝে বেড়ে উঠেছি, বিশাক্ত নিশ্বাস নিচ্ছি প্রতিনিয়ত এদের-ই মাঝে। আমার বেড়িয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই। চাইওনা ...!
অবশ্য ব্যতিক্রম ত আছেই। সবখানেই আছে। এ গুলো নিয়ম না। তাই ব্যতিক্রম নিয়ে আলোচনায় যাওয়ার কোন অর্থ হয়না। হ্যা এটা ঠিক-ই এখানে অনেকেই ছেলেমেয়েকে বাংলা শেখানোর জন্য স্কুল খুলেন,স্কুলে পাঠান । সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেন, সবই সত্যি। কিন্তু, তার চেয়েও হাজারগুন বেশী সত্যি মসজিদ ও ধর্মীয় শিক্ষার বাড়-বাড়ন্ত !
মসজিদগুলো কি যে রমরম করে চলছে এখানে , সে তুলনায় বাংলা স্কুল !
বাঁচ্চারা মনে হয়না খোদ বাংলাদেশে এমনকি সিলেটে বসেও এমন ধর্মমুখি, মসজিদ মুখি,মোল্লামুখি শিক্ষা নিচ্ছে ! আর মোল্লাদের হয়েছে পোয়াবারো !কচি কচি বাঁচ্চাগুলোকে স্কুল থেকে ফিরেই দৌঁড়াতে হচ্ছে মোল্লার কাছে। ৪/৫বছর বয়সের মেয়েগুলোর মাথাও হিজাবে হিজাবময় !হায়রে ধর্ম ! ‘ধর্ম’ যে মগজকে গিলে খেতে উদ্যত হয়েছে সে খেয়াল কবে হবে ! হবে কি আদৌ ...
আর মাশআল্লাহ ! প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের তো কথাই নেই ! দলে দলে নারীরা এর বাসায় তার বাসায় বয়ান শুনে বেড়াচ্ছেন আর মাথায় কার থেকে বেশী ভালমত হিজাব বাঁধবেন তার তালিম নিচ্ছেন ! সাইদীদের ব্যবসা হয়েছে রমরমা ! জামাতীরা নানা নামে নানা বেশে তৎপর ! এসব দেখেশুনে মাথা খারাপ খারাপ লাগে মাঝে মাঝে !অসুস্থ্য বোধ করি !
একটা কথা কিছু বলেছো তো রক্ষা নেই ! এরা সংখ্যায় এত বেশী ! তুমি একজন, একলা ! ভীষণ একলা !এখানকার সিলেটি নারী তোমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বলবে ‘শয়তান বেটি মাথাত কাপর দেয় না’!!!
তুমি তোমার বিশ্বাস নিয়ে নিজের মত আছ, কারো সাথে পাছে নেই, তুমি বিপ্লবী হওয়ার কোন স্বপ্ন দেখ না শুধু তোমার বিশ্বাস নিয়ে বাঁচতে চাও তবু তুমি পরিতাজ্য !তুমি তোমার
সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা দাওনি, ওরা নামাজ রোজা ব্যাপারে কোন জ্ঞান লাভ করেনি এটা লন্ডনী সিলেটি সমাজে কতবড় যে পাপ এবং পাপীর কাজ তা লিখে বুঝানো কষ্টকর !
যাই হোক লিখতে চেয়েছিলাম ঘোলাটে আকাশের কথা। মন খারাপের কথা, কি থেকে কি লিখলাম !সব কাজ কর্ম ফেলে বসে আছি গোঁয়ারের মত ! মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেই এমন করতে ইচ্ছে করে ... তবে স্বীকার করতে দ্বিধা নেই এই গোয়ার্তুমির মাশুলও গুনতে হয় ভালোমতই !
মাথার উপর ঘোলাটে আকাশ ! এত বিচ্ছিরি দেখতে ! দিনটার দিকে তাকিয়ে মন হতাশায় চেয়ে যাচ্ছে...
(৯/১১ এর পর কেমন করে ‘ধর্ম’ আঁকড়ে ধরার রোগ ডিজিজের মত ছড়িয়ে পরল এখানকার আকাশে-বাতাসে সেও আরেকটা মজার বিষয় ! নিজের চোখে দেখেছি, দেখছি কি করে কতকিছু বদলে গেল এই দেশে...
হয়ত এই ব্যাপারেও কিছু লিখতে পারি আগামীতে...)
মন্তব্য
চমৎকার লেখা।
এতদিন ধরে আমি খুব সুখী ছিলাম----সচলায়তনের 'অফিসিয়াল' বিষাদ্গ্রস্থ লোক হিসেবে কিছুটা খ্যাতিও অর্জন করেছিলাম। আমি প্রায় মনের আনন্দে ধরেই নিয়েছিলাম 'মন খারাপের দিনগুলো' কেবল আমার অধিকারে। আজ আপনি এসে বাগড়া দিয়ে বসলেন।
মনে হচ্ছে, আমি আমার 'ফর্ম' হারিয়ে ফেলছি। আরো বেশি বেশি করে মন খারাপ করতে হবে।
আপনার পরবর্ত্তি লেখার অপেক্ষায় রইলাম।
ব্রাদার,একটু খেয়াল কইরা। মন খারাপ করার লাইনে আরো অনেকেই আছে। দল থেকে বাদ পড়ার দুঃস্বপ্ন এখন থেকেই দেখা শুরু করে দিতে পারেন
=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=
LoVe is like heaven but it hurts like HeLL
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
ধন্যবাদ আপনাকে ॥ বিষাদগ্রস্ততা, হতাশা আমাকে ভাল মতই ঘিরে ধরেছে ইদানীং ! অথচ আমি হতাশাবাদী মানুষ ছিলামনা কোনকালে...
আশার আলো তো কোথাও দেখিনা আসলে...
না দেশে, না বিদেশে ...
নন্দিনী
যাবতীয় ধর্মের জন্মই হয়েছে মগজ গিলে খাওয়ার জন্য।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
100%একমত।
নন্দিনী
বিষাদগ্রস্ত হওয়া কোনো কাজের কথা নয়। বিষাদের কারণগুলিকে উপেক্ষা করতে (অন্তত একপাশে সরিয়ে রাখতে) শিখতে হবে। সাধ্যমতো লড়তে হবে। নাহলে ঐ বিষাদই একসময় আপনাকে খেয়ে ফেলবে। সেটা কিন্তু একেবারেই অর্থহীন। বরং ক্রুদ্ধ হওয়াটা অনেক সদর্থক, ভেতরের আগুন সচল থাকে এবং তা আপনাকে এগিয়ে নেয়।
ভাববেন না, জ্ঞান দিতে বসেছি। আমি এইভাবেই দেখি, তাই বলা।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
আপনি ঠিকই বলেছেন। আমি আপনার সাথে একমত । আগে ক্রোধটা ছিল বেশী, এখন দেখি তার বদলে কাঁন্না চলে আসে ! এও আরেক নতুন উৎপাত ! আমার চরিত্রের সাথে ঠিক খাপ খায় না !যদিও কারো সামনে কাঁদিনা...ভাব দেখাই don't care ! যাই হোক মনতব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
নন্দিনী
নতুন মন্তব্য করুন