হাসান মাঝি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ১৮/০৩/২০০৮ - ৩:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

- কাহিনী তো সেইরকম দোস্ত ! সচলে দিয়া দে ।
- হ , সচলে দিলেই ছাপব নাকি দেখ, আর ছাপলে পড়ে দেখুম একটা হাসাহাসি গ্যাঞ্জাম লাইগা গেসে ।
- আরে এইডা তো গ্যাঞ্জাম লাগানোরই জিনিস, লাগা লাগা গ্যাঞ্জাম লাগা ।
- খাড়া, তুই খালি আসস ঢোলের বারিতে !
- হি হি মামা... আমি হইলাম গিয়া "দ্য ইন্সপাইরেশন ইটসেলফ", আমি না ঠেললে তোরা কিছু করস ?

বন্ধুর সাথে কথাগুলো ছিল এইরকম, দেবো না দেবো না করে দিয়ে দিলাম লেখাটি, নিজগুনে ক্ষমা ঘেন্না করে দিবেন । গল্পটি আমার বাবার, অনেক কষ্টে এই গল্পটা তার থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল, তিনি এই গল্পটি করতে চান না । কাহিনীর কিছু এদিক ওদিক হতে পারে, তবে যতটুকু নিয়ে মূল গল্পটা তৈরী তা পুরোটুকু রাখার চেষ্টা করলাম । বাবার বলা গল্পটি ছিল এরকম...

তখন ১৯৬৬ হবে । সেন্ট গ্রেগরীতে কেমেস্ট্রি পড়াই, থাকি লক্ষ্মীবাজারের কোনায় টিচারদের মেসটায় । সন্ধ্যায় ওয়ারীর দিকে টিউশনি করাই দুটা । তখনো দোলাই খাল ছিল, খালের উপর পুল্টা একটু দূরে তাই সবাই এক ফুটা আনায় নৌকাতেই ওই পারে যেত । মাঝিদের সাথে বেশ একটা চেনা জানা হয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে একজন ছিল বুড়া মত হাসান মাঝি ।
তো সেদিন হাসান মাঝির নৌকাতেই উঠেছিলাম । যেখানে টিউশনি সেখানে রাতে খাবার দাওয়াত ছিল । হাসান মাঝিকে বললাম, "হাসান মাঝি, আজকে তো আমার আইতে একটু দেরী হইব, থাকতে পারবা দশটার পরে ?" সাড়ে আটটা নটার দিকেই মাঝিরা সব তাদের মহল্লায় চলে যেত । মাঝি বলল , " যান স্যার, আমি থাকুম নে, ওই ঘাটে আইসা ডাক দিয়েন, তাইলেই হইব " । তো আমি নিশ্চিন্ত হয়ে গেলাম পড়াতে । বের হতে একটু দেরীই হয়ে গেল, এগারোটার মত বাজে । পারে এসে দেখি কেউ নাই ওইদিকে, ডাক দিলাম " হাসান মাঝি-ই-ই...হাসান মাঝি আস নাকি ?" ভালমত দেখা যায় না দূরে এক কোনার ঘাটে দেখলাম আসছে একটা নৌকা, হাসান মাঝিই হবে । নৌকা ঠেকল পারে, হাসান মাঝিই, কিছু বলল না, আমিও উঠে পড়লাম । কথা বলার চেষ্টা করলাম "কষ্ট দিলাম মাঝিরে", হাসান মাঝি কিছু বলে না, কিছুটা বিরক্ত মনে হল ভাবভঙ্গি দেখে । যাহোক এই পারে নামলাম... রাস্তার দিকে মুখ ঘুরে পকেট হাতরাচ্ছি ফুটা পয়সার জন্য... পয়সা পেলাম...ঘুরে দেব মাঝিকে... তিন কি চার সেকেন্ডের ব্যাপার পুরাটা...ঘুরে দেখি আমার পিছনে বিশাল নৌকা সহ হাসান মাঝি হাওয়া !! পয়সা হাতে কতক্ষন ওভাবে ছিলাম জানি না, কারন এরকম ব্যাপার আমার সাথে আগে কখনো হয়নি, আমি আগিয়ে যখন দেখলাম কোথাও কেউ নেই, তখন জীবনে প্রথমবারের মত ভয় পেলাম, কিসের ভয় আমি জানি না, তাই ভয়টা বোধহয় এত বেশি ছিল । এক দৌড়ে চলে আসি মোড়ের দর্জির দোকানটায়, কলিফা পরিচিত আমাকে এভাবে ছুটে আসতে দেখে ধড়মড়িয়ে উঠল, বলল "কি হইসে স্যার!" আমি বসে দমটা নিয়ে বললাম পুরা ঘটনা । কলিফা শুনলো বেশ মনোযোগ দিয়ে, বলল "স্যার এই নদীতে কত ঘটনা দেখলাম, কত পোলাপান মইরা গেল এক্সিডেন্টে, আপনেগো কইলে তো বিস্বাস করেন না" আমি কিছুই বললাম না, কারন আমি এখনো কিছুই বিস্বাস করি না, যা পেয়েছি নিছক ভয় , চলে আসি মেসে ।

সকাল হলে কাউকে কিছু না বলে খুব সকাল চলে আসি মাঝিদের পাড়াটায় । খোঁজ করি হাসান মাঝির, মাঝিরা বলল , "স্যার হাসান মাঝি তো মারা গেল কালকে রাইতেই ! আটটার দিকে আসলো গা কাপাইয়া জ্বর, ধকল নিতে পারল না বুড়া, রাত নয়টার দিকেই মারা গেল ! " আমি কথা শুনলাম, বললাম, "তোমরা কেউ কি পরে আর নৌকা নিয়া বাইর হইস ?" ওরা বলল, "না, আমরা তো সব গেলাম হাসান মাঝিরে দাফন করতে, আর অত রাইতে কে বাইর হইব? "

সব দেখলাম, শুনলাম, কিছুই বুঝলাম না, চলে আসলাম । আমি এখনো এই ঘটনাটা নিয়ে চিন্তা করি, আমি এখনো এসব কিছুতেই বিস্বাস করি না , শুধু বোঝার চেষ্টা করি ওইদিন কি হয়েছিল !

- খেকশিয়াল


মন্তব্য

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- শিয়াল পন্ডিত, লেখাটা ভালো লেগেছে।
সব কিছুকেই হয়তো ব্যাখ্যা করা সম্ভব। কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে এমন কিছু থাকে যা খুব সাধারণভাবে দেখলে ব্যাখ্যা করা যায় না!

আপনার লেখা ঘটনাটাও ওরকমই কিছু হবে।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ , আমি এরকম কিছু একটা দেখতে চাই, যতই ভয় লাগুক না কেন ।
দেঁতো হাসি
- খেকশিয়াল

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- শিক্ষানবিস, লেখাটার একটা ব্যাখ্যা হয়তো দাঁড় করাতে পারবেন।

কিন্তু সুপার নেচারাল বলে যে জিনিষটা আছে সেটা বোধহয় একেবারেই অলৌকিক না। শুনেছি, এফবিআই-এর অনেক কেইস এরকম আনসলভড হয়ে ফাইলবন্দী হয়ে পড়ে আছে। যেগুলোকে "এক্স-ফাইলস" বলে তারা।

দেখতে আমিও চাই। কিন্তু সহ্য করতে পারবো কিনা বুঝতে পারি না। হয়তো ঠাশ করে ফিট ও হয়ে যেতে পারি!

কালকে "দ্য আই" ছবিটা দেখছিলাম। ভাবছিলাম, এমন একটা পরিস্থিতি দিয়ে যাওয়া আসলেই কষ্টকর। ঘুমালেই স্বপ্নে দেখা, চোখের ডোনারকে আয়নায় দেখা, সে একটা মেসেজ দিতে চায় সেটাকে ডিসাইফার করা! বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপার!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

বিপ্লব রহমান এর ছবি

হুমম। ...বানান ভুলগুলো বাদ দিলে লেখাটি খুব ভালো। নিয়মিত লিখবেন আশাকরি।


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

অতিথি লেখক এর ছবি

দুঃখিত, এইটা হল আমার বাংলা না চর্চা করার ফল, 'বিশ্বাস' করেন, এছাড়া অভ্রটিক ত্রুটি বাদে তেমন দোষ করি নাই আশা করি মন খারাপ

- খেকশিয়াল

সবজান্তা এর ছবি

এ ধরণের কাহিনীগুলি শুধু আগে শ্রেষ্ঠ ভূতের গল্প টাইপ সংকলনেই থাকতো। কিন্তু বাস্তবে এমন কিছু ঘটতে পারে আমার ধারণার বাইরে।

প্যারানর্মাল কার্যক্রম সম্পর্কে আমার কোন বিশ্বাস নেই, করতেও চাই না। আশা করি এর পেছনে কোন সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা আছে। তবে এ ধরণের গল্প শোনার জন্য চমৎকার।

কমরেড খেকশিয়াল, আপনিতো স্টিফেন কিং সহ অনেক বিখ্যাত হরর উপন্যাস পড়েছেন। তার মধ্য থেকে ভালো কিছু কি আমাদের জন্য কষ্ট করে অনুবাদ করে দিতে পারেন ?

ভালো থাকবেন।
-------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি নিজেও কাহিনীটা কাহিনীর মতই শুনেছি, প্যারানর্মাল পুরা নর্মাল যাই হোক শুনতে আসলেই মজা লাগে, আমার বাবা নিজেও এখানে অনেক কনফিঊসড, তাই এরকম একটা ঘটনা যার সাথে ঘটে আর সে যদি হয় ঘোর যুক্তিবাদী তখন তার হয় মাথা খারাপের দশা, নিশ্চয়ই বৈজ্ঞানিক ব্যাখা আছে, বিজ্ঞান কে আমি অনেক বড় মনে করি, সবকিছু নিয়েই বিজ্ঞান , এই বিশেষ জ্ঞানটা যে কবে আয়ত্ত্বে আসবে ওইটাই কথা ।

স্টিফেন কিং এর মূল গল্পগুলো খুঁজছি, অনুবাদ পড়ে বমি এসে গিয়েছিল, দু একটা বাদে ।

- খেকশিয়াল

পরিবর্তনশীল এর ছবি

জটিল একখানা ঘটনা
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

পড়লাম ।

অতিথি লেখক এর ছবি

ঘটনাটা শুধুই পড়লাম, ব্যাখ্যা কি হতে পারে- তার মিসির আলী টাইপের ভাবনা নাই বা ভাওব্লাম। এরকমটা বিশ্বাস করতে মন চায়ঃ ...হাসান মাঝি মরেই গিয়েছিল তবে সে যে স্যারকে কথা দিয়ে গিয়েছিল। সে কথাটি রাখতেই হয়ত তার আবার ফিরে আসতে হয়েছিল একটি বারের জন্যে এবং কথাটি রেখেই আবার চলে গেছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

এরকম ভাবতে কিন্তু বেশ লাগে কি বলেন ! হাসি

- খেকশিয়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

[ঘটনাটা শুধুই পড়লাম, ব্যাখ্যা কি হতে পারে- তার মিসির আলী টাইপের ভাবনা নাই বা ভাওব্লাম। এরকমটা বিশ্বাস করতে মন চায়ঃ ...হাসান মাঝি মরেই গিয়েছিল তবে সে যে স্যারকে কথা দিয়ে গিয়েছিল। সে কথাটি রাখতেই হয়ত তার আবার ফিরে আসতে হয়েছিল একটি বারের জন্যে এবং কথাটি রেখেই আবার চলে গেছে। ]

উপরের মন্ত্যব্যটি যে আমি করেছিলাম তার চিহ্ন রাখতে নিচে নাম ধাম লিখতে ভুলে গিয়েছিলাম।
হ্যা খেকশিয়াল---এমনটা ভাবতে আসলেই ভালো লাগে।

কালবেলা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।