-(নিরিবিলি)
সুমিতের সাথে ওর বাসায় যাচ্ছিলাম।গেট দিয়ে ঢুকার সময় দেখলাম সুমিত তাদের সামনের গেটে একটা মেয়েকে ইশারায় কিছু বললো।খুব আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলাম মেয়েটা কে রে?বরবরই সুমিত সরাসরি কিছু বলে না।
-কেন মনে ধরছে?
-খারাপ না।অতিরিক্ত সাদা।
-আগুনও অতিরিক্ত।
-তুই জানলি কেমনে?তোর সাথে কিছু...।
-তা তো আছেই।
এরই মধ্যে সুমিতের ছোটভাই এসে বলে ভাইয়া তোমার ফোন।সুমিত ফোন রিসিভ করতে পাশের রুমে চলে যায়।ফিরে এসে খুব অস্থির কন্ঠে "শোন,মামা স্ট্রোক করেছে হাসপাতালে যেতে হবে।যাবি আমার সাথে?"সবকিছু ভুলে সুমিতের সাথে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মনে হলো সুমিত কাঁদছে।তাকিয়ে দেখি পুরা মেয়েদের মতো কাঁদছে চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পরছে।কি বলে সান্ত্বনা দিব বুঝতে পারছলাম না।কাধে হাত রেখে কিছু বলতে যাব,অমনি আমাকে জড়িয়ে কান্না শুরু করে দিল।"মামা চলে গেলে আমার যে কেউ থাকবে না।"মামা ছাড়া আপন বলতে মা আর ছোট ভাই।বাবা মারা যান সেই ছয় বছর বয়সে।আন্টি খুব ছোট একটা চাকুরি করেন।মামা বোনের ছেলেদের মানুষ করবেন বলে নিজে বিয়ে করেন নি।মামা খুব স্বপ্ন দেখতেন সুমিতকে ডাক্তার বানাবেন।
হাসপাতালে গিয়ে শুনি মামা ইমারজেন্সিতে আছেন।দ্বিতীয়বারের মতো স্ট্রোক করেছেন তাই বাহাত্তর ঘন্টা না গেলে কিছু বলা যাচ্ছে না।সেদিন রাতে আমরা হাসপাতালে রয়ে গেলাম।রাত মনে হয় প্রায় বারটা(হাতে ঘড়ি ছিল না)।ছোট চেয়ারে বসে আছি।তন্দ্রার মতো আসছিলো।তন্দ্রা ভাঙ্গলো একটা গুন গুন মায়া কান্নার শব্দে।শব্দ অনুসরন করে কেবিনটার পাশে দাঁড়াই।দরজাটা একটু খোলা ছিল।উঁকি দিব কি দিব না বুঝে উঠতে পারছিনা এমন সময় একজন বের হয়ে এলেন।চোখ দুইটা লাল টক টকে।প্রশ্ন করলাম কি হয়েছে?উনার কি মনে হলো আমাকে ভিতরে নিয়ে গেলেন।মেয়েটা দেখতে একদম মৌ এর মতো (আমার ছোট বোন)।চার-পাঁচ বছরের মেয়েটার খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।অক্সিজেন দিয়ে রেখেছে।মনে হলো যে নিশ্বাসটা ফেলছে এটাই হয়ত শেষ।চোখের কোনে পানি জমে আছে।ঠোঁট শুকিয়ে নীল হয়ে গেছে।লিওকোমিয়ায় মারা যাচ্ছে মেয়েটা।
না ওদের টাকা পয়সার কোন অভাব
নেই।অভাব 'o'নেগেটিভ রক্তের।বাবা মার সামনে তাদের ছোট্ট মেয়েটা মারা যাচ্ছে।মা করুন সুরে কাঁদছে আর মেয়ের যাবার প্রহর গুনছে।আর কিছুক্ষন পর পর বলছে,"তিথি সোনা কাঁদে না আমি তোকে আর কোনদিন মারব না।"মায়ের প্রলাপ রাতের দেয়ালে আঘাত খেয়ে ফিরে আসছে।।কেবিন থেকে বের হয়ে অনেকক্ষন লেগে গেল স্বাভাবিক হতে।ভেবে দেখলাম রক্ত দান তো পরের কথা আমি ত আমার রক্তের গ্রুপই জানি না।নিজেকে খুব স্বার্থপরদের একজন মনে হতে লাগলো।বিধাতা সম্পুর্ণ সুস্থ রেখেছেন অথচ মানুষ রক্তের অভাবে মারা যাচ্ছে।
বাহাত্তর ঘন্টা লাগে নি এর আগেই মামার জ্ঞান ফিরে এল।পরদিন সকাল নয়টার দিকে জ্ঞান ফিরলো।সারাদিন হাসপাতালে থেকে রাত নয়টায় বাসায় গেলাম।খেয়েদেয়ে অনেক ক্লান্তি নিয়ে ঘুমাতে গেলাম।কিসের ঘুম এটা ওটা ভাবতে ভাবতে চোখের সামনে ভেসে উঠে সেই মেয়েটির চোখ যার সাথে সুমিতের ইশারায় কথা হয়েছিল।খুব তীক্ষ্ণ ছিল চোখের দৃষ্টি।এক ঝলক দেখেওছিল আমাকে।সবুজ রঙ্গের জামাতে ভালই তো লাগছিল।সুমিতের সাথে ইশারায় মেয়েটা কি বলছিল?
সুমিত আর আমার বন্ধুত্ব প্রায় চার বছরের।ক্লাস নাইন থেকে শুরু।একসাথে সিগারেটে টান দেয়া শিখছি,স্কুল পালাইয়া বাংলা সিনামা দেখছি,মাইয়া পটাইছি।কিন্তু শালার সিগারেটের নেশা হয় নাই।জবরদস্তি করলে বলে,"মন টানে না দোস্ত।"মেয়েদের ব্যাপারেও তেমন উতসাহ ছিল না সুমিতের।সুমিত কি ছুপা রুস্তম!আসলে মেয়েটা কে?মেয়েটাকে সুমিতের পাশে ভাবতে আমার একটুও ভালো লাগছিল না।এভাবে ভাবতে ভাবতে রাতে কখন ঘুমিয়েছি বলতেও পারব না।
সকালে দেরি না করে সুমিতের বাসায় গিয়ে ওর মামার খোঁজ খবর নিচ্ছি,
-কি রে মামা কেমন আছেন?
উত্তর দেয়ার আগেই চঞ্চল পায়ে সেই রূপসী বালিকা সুমিতের কাছে এসে সুমিতের উদ্দেশ্যে বলে,
-"মামা,আম্মু তোমাকে ডাকছে।"
মন্তব্য
পড়লাম।
---------------------------------
এসো খেলি নতুন এক খেলা
দু'দলের হেরে যাবার প্রতিযোগিতা...
নতুন মন্তব্য করুন