সুদূর প্রভাতের স্বপ্ন দেখে ওরা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ২৩/০৩/২০০৮ - ৬:৫৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

-নিরিবিলি

ছোট্ট প্রভা রেল লাইনের ওপর দৌড়ে যাচ্ছে পেছন পেছন সজলও দৌড়াতে দৌড়াতে ডেকে যাচ্ছে
-প্রভা দাঁড়া,আমার কথা শোন।পরে যাবি তো।
কে শোনে কার কথা প্রভা দৌড়ের গতি বাড়িয়ে দেয়।ফলাফল পা পিছলে পরে হাত পা কেটে একাকার।এমনিতে সজল খুব শক্ত মনের মানুষ শুধু ছোট বোনের গায়ে ফুলের টোকাটাও সহ্য করতে পারে না।সামাণ্য একটু কেটেছে এজন্য চোখের কোনে পানি জমে গেছে।
-তোকে না বললাম আমি কালকে তোকে লাল জামা কিনে দেব।
-তুমি আমকে মিথ্যা বলছ।প্রতিদিন বলো কিনে দিবা দেও না।আমি তোমার সাথে যাব না।
প্রভাটা অনেক অভিমানী সজল ভাবে।
-আজকে চাল কিনতে গিয়ে টাকা শেষ হয়ে গেছে।
-আমি কি ভাত খাইতে চাইছি নাকি।
-ঠিক আছে কালকে আর চাল কিনব না।তোর জন্য লাল জামা কিনে আনব।এখন ঘরে চল।
-সত্যি
-হু
বোনকে কোলে নিয়ে সজল ঘরে গিয়ে খুব সাবধানে প্রভার হাত পা ধুইয়ে রান্না করতে বসে।
এখন সজলের দিন এভাবেই কাটছে।সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রভাকে পাশের ঘরে রেখে কাজে যায়,ফিরে বিকালে।প্রভা ছোট হলেও ভাই বলতে সে অজ্ঞান।সারাদিন রেল লাইনে বস্তির অন্য বাচ্ছাদের সাথে খেলে,লাইনে কান দিয়ে ট্রেন আসার শব্দ শুনে,ডোবার ধারে বসে মাছ মারে আর ছেলেদের গুলতি দিয়ে পাখি শিকার দেখে।
আজ সজলের সন্ধ্যা হয়ে গেল ফিরতে। এসেই বোনকে নিয়ে চলে যায় জামা কেনার জন্য।টকটকে লাল জামা পেয়ে প্রভার খুশী কে দেখে।রাতে নতুন জামা পরেই ঘুমাতে গেল প্রভা।হঠাৎ মনটা খারাপ করে প্রশ্ন করে,
-ভাইয়া আমরা বাড়ি যাব না?এখানে আর ভালো লাগে না।মাকে কতদিন দেখি না।
কি বলবে বুঝে না সজল।চুপ করে থাকে।একসময় প্রভা ঘুমিয়ে যায়।সজলের চোখ ঝাপ্সা হয়ে আসে।মা সবসময় হাতে দুইটা বালা পরতো।অন্য রকম একটা আওয়াজ হতো তাতে।কেমন যেন নিরবে হাঁটত।পড়তে বসলে কখন পাশে আসে দাঁড়াত টেরও পেতাম না।সজলের মনে হতে থাকে বাতাসে মায়ের গায়ের গন্ধ ভেসে আসছে।জানালা দিয়ে সজল বাইরে আকাশ দেখার চেষ্টা করে।ঘুট ঘুটে অন্ধকার।সেই রাতের মতো,যেদিন ওরা মাকে ঘরে বন্ধ করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল।রাতের অন্ধকারে দাউ দাউ করে জ্বলছিল শুধু আগুনের শিখা।সেদিন কেউ শুনতে পায় নি মায়ের চিৎকার,কেউ এগিয়ে আসে নি দুইটি এতীম ছেলেমেয়ের
আবেদনে।প্রভাকে কি করে বুঝাবো মাকে তুই আর কোনদিন দেখতে পাবি না।সেদিনের প্রতিটা মুহুর্ত সজলের চোখে আজও ভাসে।আমাকে এক ঘরে আর মাকে আর এক ঘরে আটকে ওরা মায়ের ঘরে আগুন জ্বেলে দেয়।আমারই চোখের সামনে মাকে জ্বলতে দেখেছি আমি। নীল রঙ্গের আঁচল পুড়ে পুড়ে মা আমার ছাই হয়ে যাচ্ছিলো।করুন স্বরে বলেছিলাম আমার মা মরে যাচ্ছে কেউ ত বাঁচাও।কেউ আসেনি।শুধু মুখোশ পরা লোকটি বলেছিল,'বেশ্যাদের বেঁচে থাকতে নেই।'চিৎকার করে বলেছিলাম আমার মা তোদের জন্য আজকে বেশ্যা।আমার ত মা.........।
সজলের দিন থেমে থাকে না।শুধু ওদের নোংরা অতীত কেউ জানতে চায় না।এ জীবনের জন্য তাদের ত কোন দোষ নেই।তারপরও ওরা সুদূর প্রভাতের স্বপ্ন দেখে।

safina901@yahoo.com


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক কষ্ট... মন খারাপ

কল্পনা আক্তার



সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

রায়হান আবীর এর ছবি

কি আর বলতাম...
খুব সুন্দর লেখা।
---------------------------------
এসো খেলি নতুন এক খেলা
দু'দলের হেরে যাবার প্রতিযোগিতা...

অতিথি লেখক এর ছবি

থ্যাংকু

-নিরিবিলি

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

ভালো লাগলো।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

পরিবর্তনশীল এর ছবি

বড় আকারের একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।।।।
--------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

অতিথি লেখক এর ছবি

দীর্ঘশ্বাসই তো ফেলছেন,আর ত কিছু হয় নাই।আপনার লেখায় ত চোখের কোনে পানি জমে যায়।
-নিরিবিলি

রায়হান আবীর এর ছবি

কেম্নে কী? পরিবর্তনশীলের লেখা পইড়া কাইন্না পায় ক্যা?
---------------------------------
এসো খেলি নতুন এক খেলা
দু'দলের হেরে যাবার প্রতিযোগিতা...

অতিথি লেখক এর ছবি

শোনেন কান্না পায় না শুধু চোখের কোনে একটু পানি জমে।
-নিরিবিলি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- এতো এতো ভালো লেখিয়েদের বিচরণ সচলের আঙিণায়, সবাই খালি ঝাঁকাতে ব্যস্ত। বলি একটু আনন্দের লেখাওতো লেখা যায় নাকি!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

আর কইয়েন না! যে অবস্থা দেখতাছি, তাতে সচলায়তনের নাম পাল্টাইয়া বিষণ্ণায়তন রাখতে হইবো মনে হইতাছে মন খারাপ

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।