একটু আগেই বিকেল ফুরিয়েছে। করছে সন্ধ্যার নিকষ অন্ধকার। কী যেন মনে হচ্ছে আমার, কী যেন ভাবছি। কোথায় যেন যাওয়ার কথা ছিল, কোথায় যেন যাওয়া হয় নি। অফিস থেকে বেরোব, জানলার পাশে গাছের পাতা আমায় যেন ডেকে জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাচ্ছ মৃদুল?
সেই শহুরে গাছের না দেখা কোটরে এসে বাসা বেঁধেছে কোনো এক পথভোলা ঝিঁঝিঁ পোকা, তারও সেই একই প্রশ্ন আমার কাছে, কোথায় চললে নির্বাক তরুণ?
পথে নামতেই মনে হল এই গলিটির প্রতিটি ঘাস, আশপাশের দেয়ালের প্রতিটি ইঁট যেন জীবন্ত। তাদের প্রত্যেকের শ্বাসপ্রশ্বাসের আওয়াজও আমি শুনতে পাচ্ছি।
কে যেন আমার দিকে বিষন্ন চোখে তাকিয়ে আছে। ভালো করে বুঝতে না বুঝতেই সে চোখ নামিয়ে নিল। মনে হল, তারও সেই একই প্রশ্ন, কোথায় চলেছি আমি?
কী আশ্চর্য, দিন শেষে কোথায় ফিরবে একজন মানুষ? তার তো আশ্রয় আছে একটা, নিজস্ব এক ঠিকানা। তাহলে এই প্রশ্ন কেন?
সেটাই আমি চেঁচিয়ে জানালাম... সেই গলির ভেতরে দাঁড়িয়েই!
আরো একটা লোক হেঁটে আসছিল আমার পেছন দিক থেকে। সে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকাতে তাকাতে দ্রুত পা চালিয়ে এগিয়ে গেল। ভয় পেয়েছে।
কে যেন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
ধুত্তোর! আর সওয়া যায় না। আমিও ঐ লোকটার মতোই পা চালিয়ে চলে এলাম প্রধান সড়কে। গাড়ির প্যাঁ-পোঁ, রিকশার টিঙটিঙানিতে ভরপুর জীবনের আয়োজন!
এই তো এখানে আমি, এই যে বাড়ি ফিরছি! ঐ যে আমার চেনা পথ! চেনা যানবাহন! চেনা শব্দ! আমি ফিরে যাচ্ছি আমার নিজের চিরপরিচিত ঘরে। সেখানে না হলেও যেতাম কোনো বন্ধুর বাড়িতে বা পার্কে, আড্ডায় মাত করে ভাসিয়ে দিতাম এই সন্ধ্যার বিষন্নতা! কোথায় কিসের অভাব আমার?
হাসিমুখে বাড়ি ফিরছি আমি, কিন্তু, কিন্তু তারপরও...
কোথায় যেন একটা শূন্যতা...
বুকের ভেতরে একটা ফাঁকা ফাঁকা ভাব...
কারা যেন অনেক দূরে চিতকার করে কাঁদছে, ওগো, তুমি এলে না... কতদিন বসে আছি, কিন্তু কেউ আসে না...
যাওয়া হয় নি আমার সেখানে...
কোথায় যেন...
আমি মনে করতে চেষ্টা করছি, কিন্তু পারছি না...
মন্তব্য
এই বিশাল পৃথিবীতে এতজন থাকতেও কখনো কখনো এমন একাই পথ চলতে হয়, একাই ফিরতে হয়, যাপন করতে হয় জীবন.........অথচ কেউ একজন সাথে থাকলেই পারত?কেন যে থাকে না? থাকলে কি ই বা এমন ক্ষতি হত?
k.kalbela@gmail.com
নতুন মন্তব্য করুন