(নটরডেম দিয়ে লেখালেখি শুরু করেছিলাম, এরপর নিঝুমের অনুরোধে স্কুলকে হালকা উল্লেখ করেও একটা লেখা দিলাম, এখন চিন্তা করছি, ইউনিভার্সিটি নিয়ে না লিখলে ইউনিভার্সিটির বান্দরগণ মাইন্ড করতে পারে, তাই আজকের লেখা জাহাংগীরনগর ইউনিভার্সিটি নিয়ে)
(যে কথা বুঝে নিতে হবেঃ লেখার স্টক শেষ হয়ে যাচ্ছে...)
জাহাংগীরনগরে ভর্তি হবার পর খুশি হব না দুঃখিত হব বুঝতে পারলাম না। কারন, বন্ধু বান্ধব বেশির ভাগই হয় বুয়েটে নাহয় মেডিকেলে, আর আমি মুখপোড়া গিয়ে পরলাম জাহাংগীরনগরে। বন্ধুমহলে আমার ইজ্জত নিয়ে টানাটানি। যাহোক, আমি এটাকে অস্থায়ী ব্যবস্থা হিসাবে নিলাম, পরের বছর অন্য কোথাও চলে যাব, এইরকম চিন্তা ভাবনা। ভর্তি হয়েছি ইংরেজী বিভাগে। প্রথম দিনেই সব বান্দরগণের সাথে পরিচিত হলাম। ঢাকার পোলাপানদের অলিখিত আলাদা গ্রুপ হয়ে গেল, শুধু মেয়ে হলে ঢাকার বাইরের হলেও চলবে...এই আরকি।
জাহাঙ্গীরনগরে ক্লাস হওয়াটাই একটা অস্বাভাবিক ঘটনা। তাই আমাদের দিন কাটতে লাগলো বনে বাদাড়ে ঘুরে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে অনেকের প্রেম হয়ে গেল, আবার ২ সপ্তাহ পরে সে প্রেম ভেঙ্গেও গেল, আবার ৩য় সপ্তাহে নতুন প্রেম হচ্ছে, আবার ভাংছে...(বিন্যাস ও সমাবেশের প্র্যাক্টিকাল চলছে আরকি!)।
যাহোক, কিছুদিন পরে আমাদের ক্লাসের এক মেয়ের বাবা মারা গেল। ধরা যাক, তার নাম রিয়া। তো রিয়া ততদিনে ৩য় বা ৪র্থ প্রেম করছে। তখনকার বয়ফ্রেন্ড আবার এক সিনিয়র ভাই (ক্লাস মেটদের সাথে প্রেম করা শেষ)। তো রিয়া কাঁদতে কাঁদতেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করল। আমরা ও ঠিক করলাম আমরা সবাই যাব ওর গ্রামের বাড়িতে। কিছু আতেল আবার এটাও চিন্তা করল, রিয়ার বাবা মারা গেছে, এখন যদি ওর ফ্যামিলি ওর বিয়ের কথাবার্তা শুরু করে দেয়? কাজেই আমাদের উচিত হবে ওর বর্তমান প্রেমিককে সাথে করে নিয়ে যাওয়া, আর সুযোগ বুঝে তাকে রিয়ার পরিবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া...যাতে ওর ফ্যামিলি অন্য কোথাও কথাবার্তা শুরু করে না দেয়। ওই সিনিয়র ভাই এই টাইপের প্রস্তাবে কিছুটা ঘাবড়ে গেল মনে হয়। কারন তাদের প্রেমের বয়স ২ সপ্তাহের বেশি না, আর কে না জানে জাহাংগীর নগরের প্রেমের আয়ু বেশিদিনের না।এখনই জামাই হবার প্রস্তুতি হয়তো তার ছিল না...কিন্তু তারপর ও সে ও বিসমিল্লাহ বলে রাজী হয়ে গেল।
আমরা যথারীতি চাদা তোলা শুরু করে দিলাম। রিয়ার গ্রামের বাড়ি হচ্ছে কুমিল্লার চাঁদপুরে। ঠিক হল, আমরা দুপুরের দিকে ক্যাম্পাস থেকে সবাই রওয়ানা দিব। রওয়ানা দেয়ার আগে একজন বললো, মরা বাড়ি যাচ্ছি, কোথায় থাকতে হয় না হয় ঠিক নাই, খাবার দাবার জুটে কিনা ঠিক নাই...তাই চল সবাই রওয়ানা দেয়ার আগে যে যত পারি পেটপুরে খেয়ে নিই। অতি উত্তম প্রস্তাব। ঢুকলাম এক হোটেলে, খেলাম সবাই রাক্ষসের মত (চাঁদার টাকা বলে কথা!)...যখন আর পেটে জায়গা নেই, তখন বের হলাম। আগামী ১ দিন আর কোন খাওয়া না হলেও চলবে। চাপলাম বাসে, গন্তব্য সায়েদাবাদ। সায়েদাবাদে গিয়ে টিকেট কাটলাম সবাই। বাস ছাড়তে দেরি আছে। তো আমরা চিন্তা করলাম শুকনা কিছু খাবার কিনলে কেমন হয়? যেতে যেতে রাস্তায় খেলাম, বা চাঁদপুরে গিয়ে খাবার দাবার না জুটলে ওগুলা খেলাম। কিনলাম আরেক দফা চানাচুর, বিস্কুট ইত্যাদি। বাস ছাড়ে না এখনো, তাই আমরা সবাই সময় কাটাতে চানাচুর বিস্কুট খেতে লাগলাম। অতঃপর বাস ছাড়ার আগেই যা কিনেছিলাম সব শেষ। যাহোক, আমাদের পেট তো ভরা! আগামী ১ দিন না খেলে ও চলবে!
চাঁদপুর পৌছাতে পৌছাতে সন্ধ্যা। মেয়েরা বায়না ধরল, তাদের ক্ষুধা লেগেছে, তাদের কিছু কিনে দাও। কিনলাম আরেক চোট চানাচুর, তারপর রিক্সা করলাম ৭/৮ টা। অতঃপর রিক্সায় যেতে যেতে চানাচুর সব খতম।
রিয়াদের বাড়ি পৌছাতে পৌছাতে রাত ৮ টা। ততক্ষণে লাশ দাফন হয়ে গেছে। নিশ্চুপ বাড়ি। আমরা যাওয়ার পর রিয়ার আত্নীয় স্বজন ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল। আমাদের বসার ব্যবস্থা করল, হাত মুখ ধোয়ার ব্যবস্থা করল, অবশেষে ওদের পাশের বাড়িতে আমাদের জন্য একটা ঘর ঠিক করল সবাই মিলে থাকার জন্য (রিয়ার চাচার বাড়ি)। সবাই ওই ঘরে গেলাম, একটু পর আবার দেখি চা নাস্তা আসলো, আমারা মোটামুটি অবাক, কারন সারা রাস্তা খাবার দাবার জুটবে না ভেবেই সবাই ইচ্ছামত খেয়েছি। যাহোক, খাবার যখন নিয়ে এসেছে, তখন আর কি করা, সবাই মিলে খেলাম একটু একটু করে (ওই সময় আমাদের পেট একেবারে যার পর নাই ভরা...খেতে সবারই কষ্ট হচ্ছে)। যাহোক, কষ্ট করে হলেও আমরা মোটামুটি খেলাম, ২/১ তা বিতল পোলাপান পুরা ই শেষ করতে চেয়েছিলো, বাকিরা তাদের ধমক দিয়ে ক্ষান্ত করলো। আমাদের তখন হাস ফাস অবস্থা। এক বেলায় এত খাওয়া হয়েছে,বলার মত না।
তো আমরা ওই রুমেই বসে গল্প গুজব করছি, রিয়ার প্রেমিক কে নিয়ে কি করা যায় প্ল্যান করছি, আধ ঘন্টা পর দরজায় টোকা...বাজানরা... রাতের খাবার রেডি...কখন খাইতে চান বইলেন!!! আমরা একে অন্যের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি। হাসবো না কাঁদব বুঝতে পারছি না। আমরা খাবার নিয়ে ভদ্রতা করার মত পোলাপান না, কিন্তু এখন আমাদের পিটালেও আমাদের খাওয়ার মত অবস্থা নাই। ছাইরা দে মা কাইন্দা বাঁচি অবস্থা। আমরা বললাম, না খালাম্মা, আমাদের নিয়ে চিন্তা করা লাগবে না, আমাদের পেট ভরা, আমরা আজকে আর কিছু খাব না।
উনি বলেন, না, তোমরা রিয়ার বন্ধু, এতদুর থেকে কষ্ট করে আসছো, কিছু খাবা না, এটা কি করে হয়? ক্ষুধা না থাকলে এখন খেও না, পরে খেও। তখন রুমের ভিতরের মেয়েরা বলছে আমাদের, যে যা পার, এখনই খাওয়া ভাল, নাহলে পরে খামাখা উনাদের আবার আমাদের জন্য কষ্ট করতে হবে। কি আর করা, আমরা আবার খেতে বসে গেলাম!
খাওয়া দাওয়া শেষ করে দেখি আমাদের নড়ার শক্তি নেই। একজন আরেকজনকে ডাকছি আমাদের ধরে উঠানোর জন্য।
সবাই খেতে খেতে ভয়ানক ক্লান্ত! আমরা প্রাণপণে চেষ্টা করছি গাম্ভীর্য বজায় রাখতে, কিন্তু এতগুলা পোলাপান একসাথে থাকলে এটা হয় নাকি! একটু পরেই শুরু হল আড্ডা আর হাসাহাসি। আমরা যেখানে আছি, সেটা মুল বাড়ির বাইরে হওয়ায় রক্ষা, কেউ আমাদের শুনতে পারছে না। কিন্তু আমারাও কিছুটা অপরাধবোধে ভুগছি, এখানে এভাবে হাসাহাসি করা ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু হাসি চাপতে গেলেই আর বেড়ে যায়। একটু পর রিয়া আসলো আমাদের দেখতে, আমারা হাসাহাসি বন্ধ করলাম, কিন্তু বেশিক্ষণ পারলাম না...আধা ঘন্টা পর দেখা গেল রিয়াও আমাদের সাথে হি হি করে হাসছে।
অতঃপর সবাই তওবা করে ঘুমাতে গেলাম (ভোর আনুমানিক ৪ টায়)।
(রেনেট)
মন্তব্য
- সো স্যাড!!!
বিশেষতঃ দানাখানার পর্যায়টা।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আর এখন না খেয়ে দিন কাটাই। আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম...
~রেনেট
হে বঙ্গ ভান্ডারে তব বিবিধ রঙ্গ
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
ধন্যবাদ অলৌকিক ভাই ও তারেক ভাই।
~রেনেট
রেনেট দ্রুত সচল হবে এই আশা করছি।
-------------------------------------------------------
শেষ কথা যা হোলো না...বুঝে নিও নিছক কল্পনা...
---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন
সবই নিঝুমের দোয়া!
~রেনেট
চল চল চল
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
আইডিয়া দেন জনাব...আমার স্টক শেষ...
~রেনেট
রেনেট, তুই মাহ্মুদ কাজী কে নিয়ে এবং তার করুন পরিণতি নিয়ে
একটা লেখা দে প্লিজ।তুই ওর অনেক কাছের মানুষ ছিলি।আজীবন ফার্স্ট সেকেন্ড হইসস।কাজীর কথা শুনলে সচলের সবাই চমকে উঠবে।এক্টা লেখা দে।কোন তথ্য জাতীয় হেল্প লাগ্লে আমি করব।
---------------------------------------------------------
শেষ কথা যা হোলো না...বুঝে নিও নিছক কল্পনা...
---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন
হুমম...লিখতে পারি...চিন্তা ভাবনা চলছে...সেই সাথে সময়ের টানাটানি। মডুরা ছাপালে হয়!
~রেনেট
ভালো লেগেছে।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
বেশ তো খাবার রঙ্গ!
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
শিমুল আপা ও জলিল ভাই, অসংখ্য ধন্যবাদ।
~রেনেট
এটাই হয়, আগেও দেখেছি! বান্দরেরা একসঙ্গে জুটলেই হাসির ফোয়ারা বের হয়। এত হাসি কোত্থেকে আসে কে জানে!
--------------------------------
কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
নতুন মন্তব্য করুন