ধনঞ্জয় রাজকুমার
প থ
পথকে মালা পরিয়ে দাও
ওই পথের গর্ভ থেকেই আমাদের জন্ম হয়েছিল ।
রঞ্জিত সিংহ
আ জ ও সে আ সে
আর
বিধবা নদীটি এসেছিল
আমাদের উঠান পর্যন্ত।
মন্দ্রিত রৌদ্রের মতো কী শান্তি
স্বপ্ন দেখেছিল সে।
বিশ্রামহীন তিনরাস্তার কোন পুলিশপয়েন্টের মতো
উদভ্রান্ত এখন।
তৃষ্ণাথরথর বুক চাপরিয়ে কেঁদে কেঁদে
আমার কাছে চেয়েছিল দু'ফোটা জল
আমি নিরুপায় ভয়ে লজ্জায়
ঘরের ভেতর নিঃশব্দ বসেছিলাম
এখনও আমি ভিজে উঠি চোখে -
নিষ্তেজ আমি
এমন নিম্নজ!
আর
বিধবা নদীটি এসেছিল
আমাদের উঠান পর্যন্ত।
সন্তোষ সান্তান
স ম্প র্ক সি রি জ - ২
ইস্কপনের বিবির সাবঅল্টার্ন য়াবেরুনীর সৌন্দর্যে নিপুন এক কবিতা লিখে যাব,
এমন সময় হেতের তালু দাবী করে রাজসুলভ ভাগ্যলিপি। যে শিণ্পের টানে
একজন জন্মকবি দারিদ্রের সাথে সংসার পাতে, সেই নির্বাক শিল্প ছড়িয়ে থাকে
অতিচেতনায়, যুক্তির বাইরের কোন পৃথিবীতে। ইশ্বরের লীলা যেন মাকড়শার
জাল। ইশ্বরও এখন বৃদ্ধ। তাকেও স্ট্রাগল করে বাঁচতে হয়। আকাঙ্খায় পূর্ণ আজ
পিতলের বাটিখানা। প্রতি পদক্ষেপে বিধিনিষেধ, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ট্যাবু
সান্ধ্য আরতির মৃদঙ্গের তালে তালে নাচে নারীদের কন্ঠ। জয়দেবের গীত শুরু
হলে আসরের বৈষ্ণব-নামাবলী থেকে নেমে আসের অষ্টসখির প্রানধন কৃষ্ণ।
কৃষ্ণ, ময়ুরকন্ঠী রঙের নামবাচক এ বিশেষ্যের দ্বিতীয় অক্ষরটি যুক্তবর্ণ; "ষ" ও "ণ", এ
দুই ব্যঞ্জনের মাঝে ছোট্ট একটি ফাঁকও খুঁজে পেলাম না, যেখানে অনায়াসে
ঢুকিয়ে দেতে পারব বর্ণিল কিছু মানবতা। এদিকে "ক" খুব একলা, তার সাথে মিশে
আছে "ঋ" কার, একা থাকলে তার গায়ে মেখে দিতাম কনেরাঙা মমতা; আর
কলঙ্কিনী রাইয়ের জন্য খয়েরি রঙের কিছু স্মৃতি। কলঙ্কিনী রাই আসলে এমন
একটি নাম যার কোনো সর্বনাম নেই, আছে শুধু আকিঁবুকিহীন দুঃখীনি বিশেষন।
আমরা জানি, বিশেষ্যের সাথে বিশেষনের ব্যবহার আত্মিক তৃপ্তি এনে দেয়।
ঘোমটার মতো শাদা কুয়াশা পৃথিবী মায়ের কোলে ছড়িয়ে পড়লে অবুঝ
এ মন বৈষ্ণব-খড়ম, অহংকারী সানগ্লাস, অপরূপ কবিতা সব রেখে বৃন্দাবনের
দিকে সরে পা বাড়ায়।
*য়াবেরুনী - কাঁচুলি বিশেষ। আগে মনিপুরী মেয়েরা শরীরের উর্ধ্বাংশে ব্যবহার করতো।
*জয়দেব - আষাঢ় মাসে মনিপুরীদের কাঙ উৎসবের সময় কবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ গাওয়া হয়
ধনঞ্জয় রাজকুমার : আধুনিক বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী কবিতার জনক। জাতি, সংস্কৃতি, অতীত, ও শেকড়কে নিজের বিশাল কাব্যক্ষমতায় ধারন করেছেন। আশির দশক এবং তৎপরবর্তী কবিদের অধিকাংশ অনুসরন করেছেন তার পদাংক। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : হপনর বাবুয়ানি, ডিগল হাতহানল মোরে, ভিক্ষা দেনে এর আহিগিতৌ, হমাজি গাটর পানি ইত্যাদি।
রঞ্জিত সিংহ : নব্বই দশকের কবি। অরন্য রুপকল্প ও শান্ত সমাহিত বয়ানধরনের পাশাপাশি রাজনীতিশ্পর্শী এক গভীর হাহাকার তার কবিতায় ছুঁয়ে যায়। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : মোর ইমারঠার মোর প্রেমর কবিতা।
সন্তোষ সান্তান : নতুন শতাব্দীর কবি। প্রতিস্ঠান বিরোধিতার তার্কিক জায়গা থেকে হিইমারের মধ্য দিয়ে পেশ করেন কবিতা। বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী ভাষার মাসিক সাহিত্যপত্র নুয়া এলায় নিয়মিত লেখেন।
ছবি: শক্তিকুমার সিংহের পেইন্টিং
মন্তব্য
ভালো লাগলো।
লেখার নিচে আপনার নাম এবং তড়িত ডাক উল্লেখ করলে ভালো হয়।
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
অদ্ভুদ কবিতা।অনেক ভাল লাগল।এরকমই চলতে থাকুক।
--------------------------
eru
সুগন্ধ বিলোতে আপত্তি নেই আমার
বস্তুত সুগন্ধ মাত্রই ছড়াতে ভালবাসে।
আসলেই "অদ্ভুদ"
কিছু কারেকশান ছিল -
(১) শিরোনাম হবে "তিনটি সমকালীন বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী কবিতার অনুবাদ"
(২) ফন্ট একসাইজ ছোট হবে, নাহলে লাইন ভেঙে যাছ্ছে
(৩) ইস্কপনের - ইস্কাপনের -
(৪) হেতের তালু - হাতের তালু
(৫) * চিহ্ণিত লাইনগুলো ইটালিক হবে
বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী বাংলাদেশের প্রায় ষাট হাজার মানুষের মাতৃভাষা। এ ভাষায় যারা কথা বলে তাদের কাছে ভাষাটি ‘ইমার ঠার’ নামে পরিচিত যার অর্থ হলো ‘আমার মায়ের ভাষা’। বাংলাদেশের মৌলবীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ এবং সিলেট জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী জনগোষ্ঠির মানুষ বাস করে। ভাষাটি উত্তরপূর্ব ভারতের মণিপুর রাজ্যে সৃস্ট এবং এর ব্যাকরন বিশেষ করে ধ্বনিতত্ত ও শব্দকোষ মণিপুরী মৈতৈ ভাষা দ্বারা প্রভাবিত। এ ভাষার দুটি উপভাষা রয়েছে - রাজারগাঙ এবং মাদইগাঙ। বাংলাদেশে মাদইগাঙ ভাষাভাষীর সংখ্যা তুলনামুলকভাবে বেশী।
সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ
কুঙ্গ থাঙ
ই-মেইল:
নির্বাক শিল্প ছড়িয়ে থাকে
অতিচেতনায়, যুক্তির বাইরের কোন পৃথিবীতে। ....সন্তোষ সান্তান-এর কবিতাটি বেশ ভাল্লাগলো।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
প্রতিটি কবিতাই চমৎকার। আরো কবিতা হোক।
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
সত্যিই অস্ভূত ! বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী কবিতা অনুবাদেও অনেক ভালো লাগলো, অনুভূতির খুব সাবলীল প্রকাশ। চলুক।
নতুন মন্তব্য করুন