• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

বিদ্যাসাগর স্যারের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ০১/০৪/২০০৮ - ১:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সচলায়তনে নটরডেম নিয়ে স্মৃতিচারন করতে গিয়ে এক ভয়ঙ্কর দুঃখজনক খবর জানলাম। আমাদের সবার প্রিয় বিদ্যাসাগর স্যার নেই। খবরটা শুনে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি। যার রেফেরেন্সে শুনলাম (সম্ভবত সবজান্তা), মনে প্রাণে চাইতে লাগলাম তার রেফারেন্সে কোন কারণে কোন ভুল আছে, সে ঠিক শুনে নাই, বা টাইপ করতে গিয়ে ভুল করেছে...ইত্যাদি ছেলেমানুষী আশা। তাই পুরোপুরি নিশ্চিত হবার জন্য দেশে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করলাম, অনেকে আমার কাছ থেকেই প্রথম শুনলো, কিন্তু শেষ-মেষ আসলেই নিশ্চিত হলাম, স্যার আর নেই।
আক্ষেপটা এই কারণে, স্যার অনেক ভালো এবং মজার মানুষ ছিলেন। আক্ষেপটা এই কারণে, স্যারের বয়স এমন কিছু হয়নি যে তাকে চলে যেতে হবে। আক্ষেপটা এই কারণে, আবার বাংলাদেশে গিয়ে যখন সিদ্ধেশরী কালী মন্দিরের সামনে দিয়ে যাব, জানবো, স্যার আর এই বাসাটাতে নেই।
স্যার কে ঘিরে অনেক স্মৃতি...কলেজে, তার বাসায়। মূলত ২য় বর্ষে তার কাছে প্রাইভেট পরতে যাওয়ার সময় থেকেই তার সাথে যোগাযোগ শুরু। আর এ সি দাস স্যার স্ট্রোক করার পর বিদ্যাসাগর স্যার কিছুদিন আমাদের গ্রুপে ক্লাস ও নিয়েছিলেন। তার বাসার রুম টা আর কখনো ভরে উঠবে না ছাত্র ছাত্রীদের কোলাহলে, কলেজে ও পড়বে না আর তার পদচিনহ।
মনে আছে, ফেয়ার ওয়েলের দিন যখন সব শিক্ষকরা একসাথে এলেন আমাদের ক্লাসরুমে,তখন এক ছাত্র ছবি তুলতে চাইল। সবাই প্রস্তুত, শুধু বিদ্যা সাগর স্যার বললেন...আরে, দাঁড়াও, কর কি? আগে একটু চুলটা আচড়িয়ে নিই। বলেই তিনি সবার সামনে পকেট থেকে চিরুনী বের করে মাথা আচড়ানো শুরু করলেন, আর ক্লাসে হাসির রোল উঠলো (স্যারের মাথায় বিশাল টাক)।
স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে যেত শয়ে শয়ে ছাত্র ছাত্রী। এমনকি জায়গার অভাবে কিংবা স্যারের সময়ের অভাবে (নতুন ব্যাচ শুরু করার) হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হত অনেককেই । তার জনপ্রিয়তা এমন, যে তিনি যদি প্রাইভেট পড়ানোর জন্য ভর্তি পরীক্ষাও নিতে চাইতেন, তাও বোধহয় ভিড় উপচে পরতো।
টাকা কামাতে সবাই পছন্দ করে। স্যারের প্রাইভেট পড়ানোর অন্যতম উদ্দেশ্য হয়তো টাকা রোজগারই ছিল, কিন্তু তা এক মাত্র উদ্দেশ্য ছিল না। আমাদের কাছে তিনি প্রায় প্রায়ই বলতেন, আর পারছেন না, এত ব্যাচ পড়াতে পড়াতে তিনি টায়ার্ড। তারপর ও পড়িয়ে যাচ্ছেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। যাদের তিনি মানা করে দিতেন, তাদের পড়াতে গেলে হয়ত তার আর রাতে ঘুমানই লাগতো না। আর আজ স্যার চলে গেলেন চির নিদ্রায়, যেখানে তাকে আর কেউ বিরক্ত করবে না, কেউ আর কেমিস্ট্রির সমস্যা নিয়ে যাবে না।
স্যারের জীবন যাপন ছিল অনেকটা ছাত্র আর অভিভাবকের হাতে বাধা। স্যার একদিন বলছেন কিছু অভিভাবকের দিকে ইঙ্গিত করে...ঢাকা শহরে এমন অনেক অভিভাবক আছেন, যাদের কাজই হচ্ছে টিচার থেকে টিচারদের বাসায় দৌড়ান। কিংবা অযথা গৃহ শিক্ষক পরিবর্তন করা। হয়তোবা ছাত্র বা ছাত্রী পড়ছে ভিকারুন্নেসার কোন শিক্ষক কিংবা শিক্ষিকার কাছে, সেখানে আলোচনায় শুনলেন বিদ্যাসাগর স্যারের প্রশংসা, পরের দিন সেই গার্জিয়ান তার বাসাই এসে হাজির। তার ছেলেকে বা মেয়েকে পরাতে হবে। না করতে পারবেন না, ইত্যাদি।
স্যার বলতেন, আমি বুঝি না, এসব গার্জিয়ান কি খোজে? আরে বাবা আমি ত কেমেস্ট্রিই পড়াই, অন্য কিছু তো না! কিন্তু না, ওইসব গার্জিয়ানদের ধারণা, এইখানে বুঝি কেমেস্ট্রির পাশাপাশি উর্দুও পড়ানো হয়! এই চল ,চল, বিদ্যা সাগর স্যারের কাছে যাই...না জানি কি মিস করিয়া ফেলিতাছি!
আমি ভিকারুন্নেসার অনেক টিচারদের গল্প শুনেছি, যারা বাসায় রোল কল করতেন, কিংবা মাসের এক তারিখ পেরিয়ে গেলে সবার সামনে নাম ধরে ডাকতেন আর টাকার কথা জিজ্ঞেস করতেন, এতটাই আমানবিক ব্যবহার আছে কারো কারো। সেই তুলনায় বিদ্যাসাগর স্যার মোটেই এরকম ছিলেন না। অন্তত নটরডেমের ছাত্রদের সাথে তো নয়ই। তিনি আমাদের বলতেন, আরে তোমরা আমাদের নিজেদের ছাত্র, তোমাদের নিয়ে চিন্তা করি না। তোমরা টাকা মেরে খাবে না, এই বিশ্বাস আমার আছে। কত কত ছাত্র নিজ দায়িত্বে এমনকি ইন্টার পরীক্ষার পর ও গিয়ে স্যার কে টাকা দিয়ে এসেছে।
স্যার বলছেন একদিন মজা করে...আরে তোমাদের টাকা আমি নিতে ভুলে গেলেও তোমরা ঠিকই নিজ উদ্দেগেই আমাকে দিয়ে যাবে, আমার চাইতে হবে না। গত বছর কি হয়েছে শুন...এক ছাত্র (নটরডেমের) আমাকে টাকা পরিশোধ করে নি, আমি ও কোন হিসাব রাখি নি, আমি জানিও না, যে আমি ওর কাছে টাকা পাই। পরে প্র্যাক্টিকাল পরীক্ষার দিন ওই ছেলে আমার কাছে আসছে ভাইভা দিতে, আর ভয়ে কাপছে। আমি জিজ্ঞেস করি, এই ছেলে, তোমার কি হয়েছে? ছেলে বলে, স্যার, আমি ভুলে আপনার সব টাকা দেই নাই। আমি অবশ্যি কালকে আপনার টাকা দিয়ে যাব। (ছেলেটি ভেবেছে স্যার তাকে মনে রেখেছে, আর তার প্র্যাক্টিকাল পরীক্ষায় হয়তোবা স্যার কোন উনিশ বিশ করবেন)। স্যার মোটামুটি আকাশ থেকে পড়লেন। তো স্যার আমাদের বলছে... so, টাকা না পেলে আমি কোন দুশ্চিন্তায় ভুগি না, বরং তোমরাই টাকা না দিয়ে থাকলে আমার পিছন পিছন টাকা নিয়ে দৌড়াবা, বা আমাকে না পেলে খুজতে থাকবা আকাশে বাতাসে...
এখন এসবেরই উর্ধে চলে গেছেন তিনি। নটরডেমের ভবিষ্যত ছাত্ররা বঞ্চিত হবে তার রসালো গল্প থেকে, তার সহজ সাবলীল লেকচার থেকে।
একে একে চলে গেলেন টেরেন্স স্যার, মনোরঞ্জন স্যার, বিদ্যাসাগর স্যার । একে একে জ্বলজ্বলে সব তারা খসে পরছে নটরডেমের আকাশ থেকে।
নটরডেমের ভবিষ্যত ছাত্রদের জন্য আমার ভারী দুঃখ হয়। তারা জানতে ও পারবে না, কি পরিমাণ আনন্দ নিয়ে আমরা ক্লাস করেছি।
নটরডেম তারপর ও ভালো রেজাল্ট করবে ঠিকই, কিন্তু ক্লাস রুমের সেই প্রাণোচ্ছল শিক্ষকগুলো আর তারা পাবে কিনা আমি জানি না।

(রেনেট)


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

:(

অতিথি লেখক এর ছবি

স্যারের জন্য শ্রদ্ধা।
-
নায়েফ

রাতুল এর ছবি

স্যারের সেই বিখ্যাত ডায়লগ গুলো এখনো কানে আসে
স্যার বইয়ের important বিষয় গুলি দাগাতে গিয়ে প্রায়ই
"এইডি পড়নের কাম নাই, এইডি তুমরা বুঝবা না!!"

অতিথি লেখক এর ছবি

এই লেখাটা লিখেছি রাত ২ টার সময়, পরেরদিন সকাল ৮ টায় পরীক্ষা। স্যারের জন্য কিছু লিখতেও মন চাইছিল, আবার পড়াও শেষ করতে হবে, এরকম দোটানার মধ্যে লিখেছি। বেশ কিছু বানান ভুল আর অগোছালো বাক্য চোখে পড়ছে এখন। এজন্য দুঃখিত।
~রেনেট

অতিথি লেখক এর ছবি

বিদ্যাসাগর স্যার নটরডেম চেস ক্লাবের মডারেটর ছিলেন। তো একদিন আমি স্যার কে বললাম , স্যার চলেন এক গেম খেলি আপনার সাথে। তর্জনীর সেই বিকট তুড়ি মেরে স্যার বললেন "রিফাত ও (রিফাত বিন সাত্তার) আমারে হারাইতে পারে নাই, আর তুমি কই থেইকা আইছ?"(পরে জানলাম স্যার খেলেনই নাই)। বলেই হো হো করে হাসি। স্যার বললেন, "আরি মিয়া খেলতে পারলে কি আমারে কেউ মডারেটর বানাইতে পারে? "।

সত্যি, এমন একজন দিলখোলা মানুষকে যারা স্যার হিসেবে পায়নি তাদের অনেক দূর্ভাগ্য। স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা রইল।

জাফরী

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

বিদ্যা মল্লিকের একটা মজার ডায়লগ মনে পড়লো ...

ফার্স্ট পেপারে চ্যাপ্টার দুই বা তিনে হাজারির বইয়ে শ্রোডিঙ্গার ইকুয়েশন সম্পর্কে খুব কম কথায় দুয়েক লাইন লেখা ছিল ...

স্যার সেইটা দেখায়ে বললেন, "এইটা তোমরা কেউ পড়বা না, কারণ পড়লেও বুঝবা না, বুঝলেও এইটা পরীক্ষায় আইবো না, আইলেও কেউ লিখবা না, লিখলেও নাম্বার পাইবা না ... তাই আমি এইডা পড়ামু না :))"

এসির চেয়ে উনার ক্লাশ বেশি ভাল লাগতো ... গুহর ক্লাস পাই নাই আমরা (আমিও গ্রুপ টুতে আছিলাম) ... আর মনোরঞ্জনের পড়ানো ভাল্লাগতো না ...
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

"এইটা তোমরা কেউ পড়বা না, কারণ পড়লেও বুঝবা না, বুঝলেও এইটা পরীক্ষায় আইবো না, আইলেও কেউ লিখবা না, লিখলেও নাম্বার পাইবা না ... তাই আমি এইডা পড়ামু না"
দারুণ তো !
কথাটা মনে ধরেছে !!

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ কিংকর্তব্যবিমূঢ়, মজার ডায়লগটি মনে করিয়ে দেয়ার জন্য। তার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত উপভোগ করতাম। স্যারের কথা বলার স্টাইলটাই ছিল মজার। যাই বলতেন, তাই মজা লাগতো।
~রেনেট

তন্ময় এর ছবি

আমি নটরডেমের ছাত্র না কিন্তু স্যারের কাছে ফার্স্ট ইয়ারে পড়েছিলাম। সেই ৯০ দশকের প্রথম দিকে তখন স্যার থাকতেন আরামবাগে- নটরডেমের পেছন দিকটায়। এত ভাল পড়াতেন স্যার। দারুন দিলখোলা মানুষ ছিলেন তিনি। সাজেশন তখন খুব চলত। সেটা খুব গুছিয়ে দিতেন তিনি। মনে আছে আমাদের ব্যাচের এক ছেলে মাসের ১২ দিনের মধ্যে ১/২ দিন এসেছিল। তারপর মাসের টাকা দিতে গিয়ে সে স্যারের বিশাল বকা খেয়েছিল।
শ্রদ্ধা আর লজ্জায় টাকার খামটা আর স্যারের দিকে এগিয়ে দিতে পারেনি।

তাঁর বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করছি।

অতিথি লেখক এর ছবি

অরূপ লিখেছেন:
আরে এইটা কি অ্যাভোগাড্রো জাফরী নাকি? কি খবর?

হ্যা দোস্ত, আমি। নামটা তোর এখনও মনে আছে!!!

তানিম এহসান এর ছবি

স্যারের জন্য শ্রদ্ধা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।