খুব ছোট বেলাতেই যখন পাশের বাড়ীর ছেলে মেয়েরা খেলে ক্রিকেট, ক্যারম, রান্নাবাটি অথবা পুতুল পুতুল। তখন নীরবেই কেন যেন অন্য এক খেলায় মাতি আমি। হয়তো তাদের মত স্মার্ট নই বলেই। অথবা ... কে জানে কেন? আমি খেলি ঈশ্বর ঈশ্বর!
ভোরে জানালার রেলিং বেয়ে সূর্যের আলো যখন চুইয়ে আসতে থাকে। তখন তার সাথে সাথে সার বেধে আসে লাল পিপড়ারা। জানালার ধারে বসে বসে ওদের পথ চলা দেখি। মাঝে মাজে তারা একজন আরেক জনের সাথে হ্যান্ডসেক করে। দুয়েকটা সৌজন্য মুলক কথা বার্তাও বলে বোধ হয়। আমি আরেকটু এগিয়ে যাই। তাদের কথা শুনতে না পেলেও কিছু মিছু একটা কল্পনা করে নেই। যেমন একটা পিপড়া হয়তো বলে, ভাই ওদিকে খাবার কেমন? এই পিপড়াটা উত্তর দেয়, ভালই তবে মিষ্টি না, একটা শুওপোঁকা। প্রথম পিপড়াটা একটু মন খারাপ করে। তার পরও এগিয়ে যেতে থাকে সে।
আর তখনই আমি হয়ে যাই[অথবা হতে চাই] তাদের ঈশ্বর। এক দৌড়ে মায়ের কাছ থেকে চিনির বয়ামটা নিয়ে আসি। আর প্রথম পিপড়া টার উপর ছেড়ে দেই কয়েক দানা চিনি। কখনো হয়তো পুরো এক চিমটি। এভাবেই লাইনের সব পিপড়া কেই চিনিদেই আমি। চিনি দিয়ে পিপড়াদের বেহেস্ত বানাই! কখনো হয়তো আমার চিনির ভারে মরবার হাল হয় কোন কোন পিপড়ার। তার পরও আমার চিনি দেওয়া থামে না। কি করবো আমি? আমি যে একজন ‘দয়ালু ঈশ্বর’!!
তার পর বড় হই। বড় হতেই থাকি[আসলে বয়স বাড়ে]। চিনির ঈশ্বরের ধৃষ্ঠতা আরো বাড়তেই থাকে। সে ঈশ্বর হতে চায়, কাগজের আর কলমের। তার অনুগ্রহ প্রাপ্তরা এখন আর শুধু পিপড়াই নয় মানুষও! কলমের খোচায় সাদা কাগজে মানুষ তৈরি করি। মানুষরা খায় দায়, ভালবাসে। চুম্বন আর আলিঙ্গন করে প্রিয় জন দের। কলমের দু খোঁচায় অথবা কীবোর্ডের কয়েকটা খট খটানিতেই মেয়েটা হয়ে যায় আরো রূপসী, তার পর আরো দয়ালু হই। রূপসীরা হয়ে যায় অপরূপা। ছেলেটার প্রতিও দয়ালু হই। সে সেই অপরূপা রমণীর আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তার ঈশ্বরের। আমি খুশি হই তার প্রতি। আমার দয়া বাড়তেই থাকে। তারপর কাহিনী তৈরি করি, তৈরি করি অজস্র মানুষ! আর তাদের জানা অজানা হাজার গল্প। ইট আর পাথর ভাঙ্গার মেশিন এসে জীবিকা কেড়ে নিয়েছিল সে রহিমের মার। সেও তাই পোলাও তুলে দেয় রহিমের মুখে। আমার কাগজ আর কলমের জগতে! সকালে সেভ্ করার সময় আয়নার দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি দেই। আয়নাতেও হাসতে থাকে একজন। একজন ‘দয়ালু ঈশ্বর’!!
তার পর হুঠ করেই কি যেন হয়। আয়নায় উকি দেয় আরো অজস্র মুখ। ঐ সে নসুমিয়া গতকালই যাকে না খাইয়ে দাড় করিয়ে রখেছিলাম ‘ন্যায্য মূল্যের’ লাইনে। মনের ভুলেই হয়তো সেই ন্যায্য মুল্যটাও দেওয়া হয়নি তার হাতে। নাকি গল্পের প্রয়োজনে?!! উকি দেয় নাম ভুলে যাওয়া আরো অনেক কাগুজে মুখ। দয়ালু ঈশ্বরও যাদের দয়া করেনি কখনো। এমনকি বানিয়ে রাখেনি কোন চিনির বেহেস্ত। চমকে ওঠায় কেটে যায় গালের এক পাশ!
বাইরের রাস্তা থেকে একঘেয়ে একটা ছন্দবদ্ধ সুরে কারা যেন কি বলতে থাকে। পঙ্গু আর ভাগ্যাহত মানুষগুলো। কর্কশ আর বিরক্তিকর ধ্বনিতে ঘোষনা করতে থাকে তাদের ‘দয়ালু ঈশ্বর’এর মহিমা। যে কিনা মনের ভুলে অথবা হয়তো অজানা কোন কাহিনীর প্রয়োজনেই অস্বীকার করেছে তাদের প্রতি দয়ালু হতে।
নিজের টেবিলে ফিরে যাই। আর আমার সেই কাগজ-কলমের জগৎ থেকে একটুকরো ছিড়ে নিয়ে চেপে ধরি কাটা মুখে। এক জন ‘দয়ালু ঈশ্বর’এর!!
বাইরের ধ্বনিটা চলতে থাকে। চলতেই থাকে...
======
স্পর্শ
মন্তব্য
দয়ালু ঈশ্বর, আমাদের প্রতি আরো সদয় হউন -
এমন সব লেখা আরো লিখতে থাকুন -
(দয়া মায়া জিনিষটা যদি আস্তে আস্তে বাস্তবতা থেকে বিদায় নিয়েই ফেলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম অন্তত virtual জগতে তো তা খুঁজে নিক? হলোই বা তা বিদ্রূপে মোড়া ?)
মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় মডরুদ্দিন আহমেদ রা কি গোপনে কোন টোপ ফোপ ছড়াচ্ছে নাকি, নাহলে ইদানিংকালে এতো সব ভালো ভালো অতিথি লিখিয়েরা উদয় হচ্ছে
কোথা থেকে? ( )
হায় হায়!! আমার লেখা যে সচলে ছাপা হচ্ছে সেটাই তো আমি জানিনা!! প্রতিবার একেক্টা পোস্ট দিয়ে দেখি প্রথম পাতায় আসেনি! হতাশ হয়ে ফিরে যাই।
লেখাটা আপনার ভাল লেগেছে জেনে আমার যার পরনাই ভাল লাগছে।
স্পর্শ
omg .... আপনার পিপরার কথাটা একদম আমার সাথে মিলে যায় আমি ছোটবেলায় এটা করতাম আমার কাছে একটা খেলার মত ছিলো .... খুব ভালো লাগলো আপনার লেখা
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
বাহ্!! আপনিও!!!
লেখাটা পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভালো লেগেছে শুনে আমারো ভালো লাগছে
স্পর্শ
প্রিয় অতিথি লেখক, স্পর্শঃ
লেখা ভালো লেগেছে।
একটা প্রশ্ন ছিল - লেখাটি কি অনুবাদ করেছেন? নাকি আপনার লেখার ধরনই এমন?
একটু ভিন্নরকম বাক্য গঠন মনে হলো, তাই জিজ্ঞেস করলাম।
প্রিয়, আনোয়ার সাদাত শিমুল
লেখা ভাল লেগেছে জেনে আমার খুবই আনন্দ হচ্ছে।
না অনুবাদ করিনি। লিখেছি।
আমি এমনিতেই ছাড়া ছাড়া বাক্যে লিখি।
কমা বা অন্য কোন যতি চিহ্ন এর চেয়ে দাড়ি আর আশ্চর্যবোধক চিহ্ন বেশী ব্যবহার করি।
বাক্য ছোট রাখতে ভাল লাগে, এই যা।
খেয়াল করলে দেখবেন প্রচুর বানানও ভুল করি।
আসলে আমার এই দুই বিষয় এ জ্ঞান কম আছে।
ভেবেছিলাম আমার কোন লেখাই বুঝি সচলে ছাপেনি। ছেপেছে দেখে ভাল লাগছে। আপনার জবাব দিতে দেরীও হল একই কারণে।
স্পর্শ
বস্ আপনিও সচলে আসলেন। খুশি হলাম। আপনার মত আমিও সচল হওয়ার অপেক্ষায় আছি...
রিজভী
---------------------------------------
কেউ যাহা জানে নাই- কোনো এক বাণী-
আমি বহে আনি;
লেখাটা আগেও কোথায় জানি পড়সি
ব্যাপক একটা লেখা। আরো লিখতে থাকেন।
সচলেশ্বর আপনার প্রতি খুব শিগগিরি দয়ালু হবেন বলে আশা করছি
---------------------------
থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
বৃক্ষ হইতে শিরীষ পুষ্প, রাখিয়া গেলাম।
...........................................................................
জগতে সকলই মিথ্যা, সব মায়াময়,
স্বপ্ন শুধু সত্য আর সত্য কিছু নয় ।
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
আরে! পিঁপড়ে প্রীতি পড়ে আমার ছোট ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল। বিশিষ্ট পিঁপড়ে গবেষক ছিল সে ছোটবেলায়। এমনকি আঁকতোও পিঁপড়ে খালি! লেখাটা পড়ে ছোটবেলার অনেক গল্প মনে পড়ে গেল। এমন গল্পকারই ভাল লাগে, যার লেখা আরো অনেক অনেক গল্প মনে করিয়ে দেয়।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
তিথীর লিঙ্ক পেয়ে পড়লাম। বেশ গল্প। ঠিক পিঁপড়েদের নিয়ে খেলা করার মাধ্যমে মানুষের ঈশ্বর হয়ে ওঠার উপরেই একটা ভিডিও দেখেছিলাম কিছুদিন আগে।
এই তিথী নামক শিশুটি মাঝে মধ্যে বেশ দারুণ কিছু লেখার লিঙ্ক দেয়...
ভালো লাগলো পড়ে...
নতুন মন্তব্য করুন