লিখেছি: নায়েফ
________
এসাইনমেন্ট-প্রজেক্টের কাজে গ্রুপে কাজ করতে হতো ছাত্রজীবনে।একবার এরকম আমার দলে পড়ল বাপ্পা।তার মুল নামটা দিলাম না-এটুকু গোপন থাক।
বাপ্পাকে আমরা চিনতাম মোচুয়া নামে-কারণ অল্প বয়সেও তার পরিপাটি সুচালো গোঁফ ছিল-ছোট্ট শরীরে ডিপার্টমেন্টে দৌড়াদৌড়ি করত সারাদিন।হাতে সব রেফারেন্স বই- চরম মুখস্তবিদ।আগের রাতে সব পড়ে ক্লাসে আসত।স্যারের আগে আগে পয়েন্ট বলে দিত। মোটামুটি সবার কাছে বিরক্তিকর ক্লাসমেট হিসাবে পরিচিত ছিল।
তো - সেবার আমি যখন তার গ্রুপমেট হ্লাম পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কোর্সে- ঠিক করা হ্ল, এক শুক্রবারে তার বাসায় সিটিং হবে, প্রজেক্টের আউটলাইন ঠিক করে প্রপোজাল লেখা হবে। গ্রুপে আমি আর জামিল ভাই- আরেকটা মেয়ে ছিল, সে বাপ্পার বাসায় যাবে না, কোন কাজ করবে না- তবে কালার প্রিন্ট আউট এবং এজাতীয় খরচাপাতি সে দিবে।
শুক্রবারে ঠিকানা ধরে ধরে আমি - জামিল ভাই গেলাম ধানমন্ডির আলিশান বাসায়। নম্ব্অর ধরে গেটে টোকা মারতেই মোচুয়া গার্ড এল, বললাম- এটা কি বাপ্পা ভাইদের বাড়ি? গার্ড সালাম দিয়ে বলল- ছোট হুজুরের কাছে যাবেন?
জামিল ভাই আমার দিকে তাকায়,আমি জামিল ভাইয়ের দিকে- ছোট হুজুর কে?
আমরা আবার বললাম- বাপ্পা ভাই বাসায় আছে?
গার্ড মহা সম্মান দিয়ে ভেতরে নিয়ে গেল- সবাইকে বলতে লাগল, এই- ছোট হুজুরের মেহমান এসেছে, ছোট হুজুরের মেহমান এসেছে।
ঠান্ডা পানি দেয়া হ্ল।একটু পরে ভেতরে আরেক রুমে নিয়ে গেল-বড়লোকি ব্যাপার স্যাপার। যে রুমে গেলাম-সেটা অনেকটা মিটিং রুমের মত- একটা চৌকোনা টেবিল, দেয়ালের পাশে কালো লেদারের রিভল্বিং চেয়ার-ওপরে তোয়ালে দেয়া।সামনে দুটি চেয়ার- সেই চেয়ার দুটোয় আমি আর জামিল ভাই বসলাম।বাপ্পা ভাই আসে না। আসে না। আসলো আরো পনের মিনিট পরে। এসে সেই বড় চেয়ারে বিগ বসের মত বসলো, রিমোট চেপে এসি কমিয়ে দিল, - তারপরে হাতের মুঠি দুটো জড়ো করে টেবিলে রেখে বলল - 'জ্বী, বলুন- আপনাদের জন্য আমি কী করতে পারি?'
কথা শুনে মনে হচ্ছিল-বিশাল বড় বিজনেসমেনের কাছে আমরা গেছি ডীল নিয়ে,এখন ফাইনাল হবে।
আমি বললাম- আমরা তো প্রজেক্টের কাজ়ে এসেছি,আপনি জানার কথা-----
বাপ্পা ভাই বললেন- 'হ্যাঁ হ্যাঁ- তা তো অবশ্যই,আগে বলুন কী খাবেন- ঠান্ডা না গরম?'
জামিল ভাই তখন কড়ে আঙুল দেখিয়ে বললেন - 'বাথরুমটা কোন দিকে'?
বাপ্পা ভাই বললেন - 'জাস্ট এ সেকেন্ড'। সাথে সাথে কলিং বেল চাপলেন।
এক ভৃত্য দৌড়ে এল।সামনে হাত জড়োসড়, 'জ্বী ছোট হুজুর- বলুন'।
বাপ্পা ভাই বললেন-'আমার মেহমান বাথরুমে যাবে, নিয়ে যা।'
পরে শুনলাম - জামিল ভাই যতক্ষন টয়লেটে ছিল, বাইরে অই লোকটা দাঁড়ানো ছিল, বের হওয়ার পরে আর্মি কায়দায় সে লাইট ও অফ করছে।
এরপরে বাপ্পা ভাইর সাথে কাজ করা ছিল বিশাল কমিক। -কাজের ফাঁকে তার বাবার জমি জিরাতের গপ্পো, জামিল ভাই গুতা দিয়ে বলত - একটা বিয়ে করে ফেলেন বাপ্পা ভাই।
বাপ্পা ভাই বুঝত না যে তাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে।
গোঁফে আঙুল বুলিয়ে বলত - 'করবো?'
সেবার আমরা ক্যাম্পাসে ফিরে তার ছোট হুজুর নামটা রটিয়ে দিয়েছিলাম, এবং সবাই তাকে ছোট হুজুরই ডাকত।
ঈদের ছুটির পরে দেখি ছোট হুজুরের হাতে মেহেদি-আঙুলে আংটি।
জিজ্ঞেস করলাম, বিয়ে করসেন নাকি?
ছোট হুজুর লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিল।
জামিল ভাই জিজ্ঞাস করলো - ভাবী কী করে?
ছোট হুজুর বলল - স্কলাস্টিকায় পড়ে, ও লেভেল।
আমরা বললাম - একটু বেশি ছোট হয়ে গেল না?
ছোট হুজুর আগের হাসিটা আবার দিলেন।
পরে আরো কাহিনী আছে, সেটা আগামী পোষ্টে বলব।
মন্তব্য
বহুত খুব।আগামী পোস্টের আশায় রইলাম...।
-নিরিবিলি
তা হুজুরের শালি টালি ছিল না?
থাকলে তারা তো এখন বড়ো হয়ে যাবার কথা
-
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
মজা পাচ্ছিলাম। আগামী পোস্টের অপেক্ষায় .........
কালবেলা
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
তারপর ?
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
উলুম্বুশ
অনেকদিন নেট ছিল না। জায়গা বদলের জন্য। আজ নতুন নেট লাগার সাথে সাথে পড়তে আসলাম।অনেক নতুন লেখা। কোনটা ছেড়ে কোনটা পড়ি অবস্থা। প্রথমেই পড়ে ফেললাম ছোট হুজুরের কাহিনী। কিন্তু মনে হচ্ছে আসল মজা পরের পর্বে আসবে। অপেক্ষায় থাকলাম
তাপ্পরে?
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
আহারে জেলাসের কিছু নাই----------- সব হবে জীবনে------------জমি জিরাত----স্কলাসটিকা------
উদগ্রীব হয়ে বসে রইলাম পরের অংশের জন্য। দারুন।
ক্যামেলিয়া আলম
নতুন মন্তব্য করুন