***************উলুম্বুশ****************
****kamrultopu@yahoo.com****
**************************************
সে অনেক দিন আগের কথা। বলার ভঙ্গিটা রূপকথার মত হলেও একেবারে বাস্তব, নির্মম বাস্তব। তার আগে প্রমার পরিচয়টা দিয়ে দেই। প্রমা আমার ভাগনী হয় সম্পর্কে। আমি তখন সবে কলেজ থেকে বের হয়েছি। ভার্সিটি তে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। একদিন আম্মু এসে নিয়ে গেল লতায় পাতায় এক আপুর বাসায়। আমার খালাত ভাইয়ের চাচাত বোন। আপু বললেও অনেক বড়। বেশ বড় একটা অফিসের বেশ বড় একজন কর্মকর্তা। ওনার হাজব্যান্ড ও। গেলাম ওনার বাসায়। একেবারেই নতুন আমি সেই বাসায়। কিছুক্ষণ পরেই এসে হাজির হল ওনাদের ৩ মেয়ে। একজন আমার থেকে বড় , দ্বিতীয় জন আমার সমান আর ৩য় জন ছোট প্রমা। ছিলাম সেদিন ২ ঘন্টা। আমরা সবাই মিলে বেশ জমিয়ে আড্ডা দিয়েছিলাম। আমি যেহেতু বেশি কথা বলি আর সদ্য ক্যাডেট কলেজ থেকে বের হওয়া আমি সারাক্ষণই বকে গেলাম আমার নতুন পাওয়া ভাগনীদের সাথে। সবাই আমাকে কি সুন্দর করে মামা ডাকছিল, আমি অভিভূত। সেই বাসার পরিবেশটা আমার খুব ভাল লেগে গেল। বুঝতে পারলাম এই ৩ বোন খুবই টিপিক্যাল ঢাকার মেয়ে। ওরা পড়ালেখায় ভাল, ভাল স্কুল কলেজ ভার্সিটিতে পড়তে শিখেছে কিন্তু খুব একটা মানুষের সাথে মেশাটা রপ্ত করতে পারেনি। তাই আমার মত একজন বকর বকর মামা পেয়ে ওরা খুব খুশি।
এর কিছুদিন পরে ওই আপুর অনুরোধে ঢেঁকি গিলে প্রমাকে আমার পড়াতে হয় কিছুদিন। খুব সুন্দর করে মামা ডাকত ও।ওর অন্য দুই বোনের নামের সাথে মিলিয়ে আমি ওকে প্রমি ডাকতাম। তাই একদিন ওর ঝাড়ি ,"মামা বলেন আমার নাম কি?" ঘাবড়ে গেলাম আমি প্রমি বলে ডাকি যখন তখন বুঝতেই পারলাম ওর নাম প্রমি না। তখন থেকে ওর নাম হল প্রমি ওহহ না প্রমা। বেশিদিন পড়ানো হয়নি ওকে আমার। ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায়। এর পর একসময় ও এসএসসি পাশ করল। তখন আমার বিদেশ যাওয়া ঠিকঠাক। ভেবেছিলাম ওর পাশ উপলক্ষে একটা বই উপহার দিব। সেটা আর দেওয়া হয়নি। বিদেশ চলে আসলাম। খুব বুয়েটে পড়ার ইচ্ছা ছিল ওর। আর ক্যাডেট কলেজ সম্বন্ধে আগ্রহ। বুয়েটে কিভাবে ঢুকবে সেটা নিয়ে অনেক কথা বলত। আমিও তাকে বলতাম তোমার চিন্তার কিছু নেই, বড় দুই আপুর মত তুমিও বুয়েটেই পড়বা। যতবার ওর বাসায় যেতাম ততবারই প্রথম কথাটা শুরু করত "মামা..." বলে।
বিদেশে সকালে ঘুম থেকে উঠেই নেটে ঢুকে প্রথম আলো টা খুলি। সেদিন ও খুলেছি। পেপার পড়া ছাড়া সেদিন কোন কাজ ছিল না। টার্ম শেষ। ক্লাস নেই। তাই পুরা পেপারটাই খুটিয়ে খুটিয়ে পড়ছিলাম। ছোট্ট একটা নিউজে চোখ আটকে গেল। দেখলাম একটা কলেজ ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। অনেক দিনই এইসব খবর পড়ি। কিন্তু সেদিন নামটা দেখে বুকটা ফাঁকা হয়ে গেল। এ যে প্রমা। সাথে সাথে বাসায় ফোন করে বললাম খবর নিতে। আর মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছিলাম এ যেন অন্য কোন প্রমা হয়। কিন্তু নাম ঠিকানা কলেজের নাম সব যে মিল। তার কিছুদিন আগেই আমি ওদের বাসায় ফোন করেছিলাম। বড় দুটার সাথে কথা বলেছি। ওর তখন টেস্ট চলছিল। তাই ওর সাথে কথা হয়নি। আমাকে পরে মেইল করেছিল এই বলে যে, মামা সেদিন আপনার সাথে কথা বলতে পারিনি খুব খারাপ লেগেছে। আপুরা কি মজা করে আপনার সাথে কথা বলল। আমার যখন পরীক্ষা শেষ হবে তখন একবার ফোন করবেন।
ঠিক করে রেখেছিলাম আর কিছুদিন পরে যখন দেশে যাব আমার এই ভাগনীটার জন্য একটা উপহার নিয়ে যাব। কিন্তু সে আমার উপহার নিতে চায়নি। চলে গেছে । ভাইয়ার ট্রান্সফার হয়েছিল ইন্ডিয়াতে। উনি অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন সেখানে গিয়ে। তাই আপুও সেখানে গিয়ে বেশ কিছুদিন ছিলেন তখন। প্রায় ২-৩ মাস হয়ে যাওয়ার পর প্রমা যেতে চেয়েছিল সেখানে। এই নিয়ে আপুর উপর অভিমান করে চলে গেল ও। কি বোকা মেয়েটা। বুঝল না কিছুই। আমার প্রায়ই মনে হত কেন এই বোকামিটা করল ওর মত একটা বুদ্ধিমতী মেয়ে। আমি দেশে গিয়ে ওর বাসায় গিয়েছিলাম। আপু আমাকে দেখেই কান্না শুরু করেছিল। বারবার বলছিল আমার মেয়েটা তপুকে খুব পছন্দ করত। আজ আমার বাসাটায় কত আনন্দ হত আমার মেয়েটা থাকলে কত খুশি হত, আর আমি ভাবছিলাম কখন ভিতরের রুম থেকে একটা মুখ বের হয়ে আসবে বলবে "মামা..."।
আজ এতদিন পরে কাল রাতে ওকে স্বপ্ন দেখলাম। স্বপ্নে মামা বলে ডাকেনি। তাই ওর কথা মনে পড়ল খুব। কেমন আছে আমার ভাগনীটা। ভাল থেকো প্রমা যেখানেই আছ। তোমার গিফট টা আমার কাছে রয়ে গেছে। যেদিন আবার দেখা হবে সেদিন চেয়ে নিও কিন্তু।
মন্তব্য
মনটা খারাপ হয়ে গেল...
প্রমা ভাল থাকুক...
---------------------------
থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
প্রমা নিশ্চয়ই অনেক অনেক ভালো আছে!
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
নতুন মন্তব্য করুন