প্রতিদিন ঠিক এক ইঞ্চি করে একা হচ্ছি আমি । একা Ñ বিস্ময়কর রকম একা।
যা আমি চাইনি Ñ যা আমি চাইনা।
এই সেদিনও মিথ্যের আবরণে নিজেকে ঢেকে নিয়ে হাজির হতাম মায়ের কাছে। বানিয়ে বানিয়ে একগাঁদা কথা বলে মিথ্যে
স্বান্তনা নিয়ে আদায় করতাম পাখি হয়ে উড়বার। কখনও দীঘির কৃষ্ণ জলে পা ডুবিয়ে Ñ কখনও সংসদের সিড়িতে বসে Ñ কখনও মাঠে বন্ধুদের জমজমাট আড্ডায় আবার কখনও বা কারও চোখের উদাস চাহনীতে নিজের ডানা দুটো রাখতাম। কি আনন্দ Ñ কি আনন্দ Ñ কি আনন্দ। দীবারাত্রি মুক্তি নাচতো আমারই চোখের তারায়। উচ্ছ্বলতায় আমার জীবনের সব কিছুই কত উজ্জ্বল Ñ কত স্বচ্ছ Ñ কত শুদ্ধ। সেই স্ফটিক ভেলায় চড়ে আমি দুলতাম Ñ দুলতো আমার মন Ñ দুলতো আমার খোঁপার জিনিয়া।
ডানার সেই বাতাসের ঝাঁপটা হয়তো লাগলো পরিবারে। পরিবারের বুদ্ধিদীপ্ত ভালবাসার কথায় আচমকাই লোভের পাকে পরে গেলাম একটা স্বাভাবিক জীবনের। প্রকৃতিকে শুনেছি কষ্ট দিতে নেই তবে নাকি প্রকৃতি নিজ হাতে তার শোধ নেয়। প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে সেই ডানাগুলো গুটিয়ে বসতে চাইলাম। সংসারী হলাম আমি। কিন্তু ডানায় তো লেগেছে বাতাসের স্পর্শ। সেই স্পর্শ চরম কামার্ত মূহুর্তের চাইতেও কামার্ত। চরমভাবে পুড়ছি Ñ চরম আরও চরম। একসময়ে সেই পোড়া গন্ধ যখন নাকে এসে লাগে ছিটকে উঠি। নেমে পরি দীঘির নীল জলে। সেই আগের কৃষ্ণ জলের ছোঁয়া পাই আবারও। ডানাগুলো ঠিক করতে গিয়ে দেখি ওর কিছু গেছে পুড়ে Ñ কিছু পালক গেছে খসে। বাদ বাকি ডানার দিকে তাঁকিয়ে ভাবি কাজ চালাবার মতোন অন্তত আছে। আবারও শুরু করি ওড়া। সেই পুরনো সাথীদের কাছে ফিরে যাই Ñ নতুন আরও সাথী যোগাড় করি। তীব্র আনন্দে বুক ভরে যায় আমার। মনে হয় এই তো ফিরে পেলাম সে--ই পাখির জীবন। আর চিন্তা কি? কে বলে পুরনো সময় হারিয়ে যায়?
পুরনো সময় যে হারায় না ঐ সংসদের সিড়ি তার সাক্ষী Ñ সাক্ষী বেতবনের কাঁচা বেতের গন্ধ Ñ দীঘির কৃষ্ণ জল আর উদাসী চাহনী Ñ ঐ তো ওÑও তার সাক্ষী। আর ওগুলো আবারও পাই আমার এই পাখি জীবনে। তাই কিছুই যায় না আমার নিজের জীবন থেকে সময় আর বয়সটুকু ছাড়া।
সময় আর বয়স Ñ এই দুই না চাওয়া সঙ্গী সর্বক্ষন আমাকে আকড়ে ধরে থাকে। এত অপছন্দের সাথী এরা আমার! আর কি আশ্চর্য আমার এই পাশে না চাওয়া সাথীরাই আমাকে জানিয়ে দিল ‘তুমি কিছুই পাওনি Ñ আগের মতো’
পাইনি? আমি চমকে উঠি। চমকাই আমার সেই উদাস চাহনীর কাছে এসে প্রথম। আমার এই পাখি মনকে খুব বেশি দিন কাঁটতে দিল না সে। তার সেই উদাস চোখে মাঝে মাঝে দেখি লোভ চমকায়। আমি কেঁপে উঠি। বারবার নিজেকে বলি Ñ আমি ভুল দেখেছি Ñ আমি ভুল ভেবেছি। ওর সেই মাদক কথা আমায় তবুও টানে। আমি ভুলে যাই Ñ আমি সংসারী Ñ আমি ভুলে যাই Ñ ওর কথায় আমার বুকের নাচন ভুল। আমি উদাস হই Ñ আমি উদাস হতে চাই। সংসারের গুমোট অন্ধকারে আমার ডানার গন্ধ উৎকট আকারে ঘুরে বেড়ায় Ñ বেঁচে থাকবার তীব্র বাসনায় আমি রঞ্জিত হই। তাই একটা খোলা মাঠ আমার বড় বেশি প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়। যেখানে আছে সপ্তবর্ণের আলো Ñ আছে ঝড়ের তান্ডব Ñ আর সেই তান্ডবের অঝোর ধারা। আমি সিক্ত হই সেই চক্ষু জলে Ñ আমার জীবন সিক্ত হয়। কিন্তু সেই ঝড়ে আমি উড়ে যেতে চাই না Ñ নিজেকে আবিষ্কার করতে চাই না গাছের ডালে আবরণহীন মৃত। কিন্তু সময় আর বয়স আমাকে কিছুদিন যেতেই বোঝায় , এ তোমার সেই কাক্সিক্ষত মাঠ নয় Ñ এ মাঠ মরুভূমির যেখানে ঝড় বালু আর কাঁটা গাছ উপড়ে আনা ছাড়া আর কিছুই আনে না Ñ আনা যায় না। খুব অল্প দিনেই মাঠের মরুতা আমার চোখে পরে। চোখে পরে তখনই যখন ঝড় ওঠে। ঝড়ে সত্যি সত্যিই দেখি ঐ সবুজ মাঠের গাছগুলো ছিল কৃত্রিম Ñ সাজানো Ñ শুধুই চোখ ঠকানো। আবিষ্কার করার পর থেকে আমার সেই কষ্টে মেলা ডানা ঝপ করে বন্ধ হয়ে যায়; আমি মুখ থুবড়ে পরি।
কষ্টে আবার নিজেকে টেনে তুলি। টেনে তোলে আমার সেই পুরনো মানুষেরা। ওড়াওড়ির মাঝে এই প্রথম বিধিনিষেধ তুলি। উদাস চাহনী বাদে পাখির জীবন চালাই আগের মতোন। কিন্তু ওড়ার সেই তৃপ্তি আর পাই না। মাঝে মাঝে থেমে থেমে পরি। থামাটা কিন্তু উদাস চাহনীর জন্য নয় Ñ ভয় পাই এবার সব টাতেই। মনে হয় সংসদের সিড়ি গুলো কি এবার আমায় অন্য চেহারা দেখাবে নাকি ঐ স্বচ্ছ কৃষ্ণ জল?
ক্যামেলিয়া আলম
মন্তব্য
একখানা পুরানা কথা মনে পড়ে গেলো
খেয়াল আছে পয়লা বৈশাখে তোরা শাক-সবজি দিয়ে অলংকার বানিয়ে পরতি?
মূলা-ঢেঁড়স- করলা-কাঁকরোলের বিচি এইগুলা দিয়ে দেড় দুই কেজি অলংকার বানিয়ে পরতি আর বিকেলের দিকে ওগুলো পঁচে গন্ধ বেরোতো?
আহারে আবারো সামনে পয়লা বৈশাখ
কিন্ত সেই মানুষগুলো এখন স্বর্ণের দোকান থেকে কিনে ফরমাল অর্নামেন্ট পরে আর রিকশা নিয়ে সীমিত জায়গায় বৈশাখ করে....
জিজ্ঞেস করলে বলে- ভীড় ভাল্লাগে না
অথচ তখন ফাঁকা জায়গায় আমরা হাঁটতামই না
আর একটা উদাহরণও না লীলেনÑ বিপদে পড়ে যাবÑ তোর স্মৃতিশক্তি নিয়ে কোনকালেই বিভ্রান্তিতে থাকিনা আমি। একদম চুপ। সাহিত্যের মূল্যায়ন কর।
ক্যামেলিয়া আলম
চলুক
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
নতুন মন্তব্য করুন