অন্য রকম ভালবাসায় মেঘে ঢাকা শশী

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শুক্র, ১১/০৪/২০০৮ - ৩:২৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

-নিরিবিলি

নিরব এমনভাবে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে যেন কিছুই হয় নি।কেন যেন খুব স্বাভাবিক মনে হতে থাকে সব কিছু।এরকমই কোন ঘটনা যেন তার জীবনে ঘটার কথা ছিল।কেন এত পরিচিত মনে হচ্ছে পরিবেশটাকে?

নিরব খুব বাস্তব চিন্তা ধারার মানুষ, আবেগের সাথে খেলাধুলা খুব কম,কথাও বলে খুব মেপে মেপে।এমন কি মানুষকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষাও তার জানা নেই।লতা নিরবের কাছে এসে কখন দাঁড়িয়েছে সে বলতেও পারবে না।খুব আলতোভাবে কাঁধে হাত রেখে ডাকে
-ভাইয়া...।
সম্বোধনে কোন পার্থক্য খুঁজে পায় না নিরব।সেই আওয়াজ 'ভাইয়া আমি কিন্তু বিয়ের পর আপুকে ভাবী ডাকব।তুমি আমার sweet,innocent broghter সবসময়ের জন্য।'
অবাক না হয়ে ফিরে তাকায় নিরব।লতার চোখ দিয়ে পানি পরছে অথচ ঠোঁটের কোনে ছোট্ট একটা হাসি ধরে রেখেছে।
-ভাইয়া আম্মু তোমাকে ভেতরে যেতে বলেছে আপুকে যদি দেখতে চাও......।
-তুই যা আমি কাছে যাব না।
নিরব হাসপাতালের লম্বা বারান্দার একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ধীরে ধীরে হেটে যেতে থাকে কেবিনটার কাছে এসে দাঁড়িয়ে যায়।নিজের অজান্তেই ভেতরে পা বাড়ায় দূর থেকে আবছা আলোতে মৌয়ের নিথর দেহটা দেখতে পায়।দূর থেকেও মনে হলো সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে মৌয়ের মুখে খেলে যাওয়া আলো আঁধারের খেলা।অসাধারন কোন কিছুই ছিল না মেয়েটার মধ্যে তারপরও কেন যেন সবার মন কেড়ে নিত।
কেউকে কিছু না বলেই বাড়ির দিকে হাটতে লাগলো নিরব।ঘরে ঢুকে এক কাপ কফি নিয়ে জানালার কাছে এসে দাঁড়ায়। কাপে চুমুক দিয়ে মনে হলো প্রয়োজনের চেয়ে বেশীই তিতা হয়েছে জিনিসটা।বিরক্তি নিয়ে কাপটার দিকে তাকিয়ে
কেমন শান্ত হয়ে যায়।মৌ কফি নামক বস্তুটা একদম পছন্দ করত না।ওকে রাগানোর জন্য কল্পনায় কফির ফ্যাক্টরী বানিয়ে ফেলতাম।নিরবকে স্নৃতি কখনো তাড়া করে না এখন কেন যে এমন হচ্ছে...?
আয়েস করে সোফায় বসার সাথে সাথে কোলিং
বেল বাজলো ঘরে কেউ নেই তাই বাধ্য হয়ে নিরবকেই উঠতে হলো।দরজা খুলে লতাকে দেখে একটু অবাক হয় সে।
-ভাইয়া এভাবে কিছু না বলে চলে এলে যে?ধরো আপু কোরিয়ারে তোমাকে এটা পাঠিয়ে ছিল।তোমাকে না পেয়ে ফেরত এসেছে।
নিরব লতার হাত থেকে প্যাকেট টা নিল প্যাকেটের উপরে বড় বড় করে তার যোশর অফিসের ঠিকানা লিখা।লতাকে বিদায় দিয়ে প্যাকেটা খুলে নিরব একটা কালো ডাইরি বের করে।ডাইরিটা খুব পরিচিত মনে হয়।অনেক দ্বিধা নিয়ে ডাইরিটা খুলে প্রথম পাতায় তিনটা লাইন

'দিন যায় কথা থাকে......
মন পাখি তুই থাকরে খাঁচায় বন্দী
আমি ত করেছি দুঃখের সাথে সন্ধি'
লাইনগুলোও খুব পরিচিত মনে হয়।কোথায় যেন দেখেছে...।পাতা উল্টালে আরও কয়টি লাইন-

'আমি ঘর হইতে বাহির হইয়া
জোছনা ধরতে যাই
হাত ভরতি জোছনার আলো
ধরতে গেলে নাই...'
কথাগুলো খুব আপন মনে হচ্ছিল নিরবের।অপর পাতায় লিখা-খুব পরিচিত লাগছে,কিন্তু মনে করতে পারছ না।তোমার ডাইরিতে তোমারই লিখা কথা।তুমি আসলে বাস্তবের সাথে খুব বেশী মিশে গেছ।নিজের অজান্তেই হোক আর ইচ্ছাকৃত হোক তুমি সবার কাছ থেকে অনেক দূরে।আবেগ বলে যে জিনিসটা ছিল,এখন তোমার মধ্যে কেউ চাইলেও হয়ত ফিরিয়ে আনতে পারবে না।জীবন গড়তে
হলে বুঝি আবেগ থাকতে নেই?
বিয়ের দিন,তারিখ ঠিক হওয়ার পর যে যোশর গেলে আর কোন যোগাযোগ করলে না।এক মাস হয়ে গেল...মোবাইল বন্ধ থাকে,অফিসে ফোন করলে পাওয়া যায় না।এদিকে সবাই অস্থির।মা আমার জন্য সেদিন মেরূন বিয়ের শাড়ী কিনে এনেছে।বিয়ের শাড়ী পড়লে আমাকে কেমন মরা মরা লাগে।মনে পরে,এক জোতিষি আমার হাত দেখে বলেছিল আমার বিয়ের রেখা নেই।এসব হাত দেখায় কেউ বিশ্বাস করে নাকি?কিন্তুবিয়ের শাড়ী পরলে বিয়ের কনে মনে হবে তা না মরা মানুষ মনে
হয়।তুমি কাছে থাকলে খুব ভাল যমুনার পারে বেড়াতে যেতাম অনেক দিন বাইরে বেড়াতে যাই না।একবারের জন্যও কি আসা যায় না?বাসার মানুষ ত আমি যতটুকু না অসুস্থ তারচেয়েও বেশী অসুস্থ বানিয়ে রেখেছে।ডাক্তারের কড়া নির্দেশ বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না।আমার আয়ু রেখা কত বড়!এত সহজে মরবো নাকি আমি?

বাসায় দিন দিন মানুষ বেড়েই যাচ্ছে কিন্তু আমার খুবই একা লাগে। কেমন যেন একা এক দ্বীপের বাসিন্দা মনে হতে থাকে নিজেকে।যে দ্বীপ পৃথিবী থেকে ক্রমেই দূরে সরে আসছে।আর এক তুমি দিন দিন উদাসিনতার চরমে চলে যাচ্ছ।জানি না হয়ত তোমাকে আর উদাসীনও হতে দিব না।হয়ত তোমার অন্য রকম ভালোবাসার রূপ আর দেখতে হবে না।দূর থেকে শব্দহীন,অনুভূতি বিলিন ভালোবাসা...বোঝার মতো হয়ত কেউ আর থাকবে না।


মন্তব্য

রায়হান আবীর এর ছবি

এইডা কি ল্যাখছেন? অ্যাঁ
---------------------------------
এভাবেই কেটে যাক কিছু সময়, যাক না!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।