আমি একজন বাঙ্গালি। বাংলা ক্যালেন্ডারের দিকে কখন ও ফিরে ও তাকাই না। শুধু জানি ১৪ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখ। তাই ১৪ই এপ্রিল এলে উঠে-পড়ে লেগে যাই নববর্ষ পালন করার জন্য। বাংলা কত সাল চলছে তাও আমি জানি না। তাতে কি? পায়জামা-পাঞ্জাবী পরে রমনার বটমূলে গেলেই হল। আহারে, পান্তা ভাত কতদিন খাই না! শেষ খেয়েছিলাম গত পহেলা বৈশাখে।
সকাল সকাল চলে যাই বটমূলে। সাথে থাকে এক পাল বন্ধু বান্ধব,যাদের মধ্যে অনেকেই বেনসন ছাড়া সিগারেট খায় না। অথবা নিয়ে যাই বান্ধবীকে, শাড়ি পরে যার একটু ও অভ্যাস নেই, কিন্তু পহেলা বৈশাখে শাড়ি না পরলে কি চলে?
অন্যদিন আমি আর মিলা ঘুরি এসি গাড়িতে করে। আজকে আর গাড়িটা বের করলাম না। রিক্সায় চড়া হয় না অনেকদিন। ঐতো এক রিক্সা আসছে। দেখি ব্যাটাকে জিজ্ঞেস করে।
রিক্সাওয়ালা খুব একটা জোরে চালাতে পারে না। আরে ব্যাটা জোরে চালা...দেরী হয়ে যাচ্ছে তো।
যাক, পৌছে গেলাম বটমূলে। বাহ, কি ফ্যান্টাস্টিক লাগছে সবাইকে।
কথায় কথায় ইংরেজি বলে আমার অভ্যাস, আপনারা আবার বিরক্ত হয়েন না। রিক্সা থেকে নেমে হাটলাম একটু। জিজ্ঞেস করলাম এক লোককে, এক্সকিউজ মি ব্রাদার, এখানে ভালো পান্তা কোথায় পাওয়া যায় বলতে পারেন?
যাকে জিজ্ঞেস করেছি, সে ব্যাটা একটা আবুল। বলতে পারল না। জিজ্ঞেস করলাম আরেকজনকে, হ্যালো ব্রো, একটু পান্তা খুজছিলাম যে...
যাহোক, শেষ মেষ পান্তা পাওয়া গেল। এক প্লেট ৫০ টাকা। সাথে কাঁচামরিচ আর পিয়াজ ফ্রি। আমার বান্ধবী আবার ব্যাগে করে মিনারেল ওয়াটার নিয়ে এসেছে। বাইরের পানি ওর পেটে একদম সহ্য হয় না। আমি ও বুদ্ধি করে হজমের ঔষুধ নিয়ে এসেছি। গত বছর পান্তা খেয়ে পেট খারাপ হয়েছিল। এবার আর সেই রিস্ক আর নিচ্ছি না।
দুজনে মিলে খেলাম ভরপেট পান্তা। না, পান্তা জিনিসটা মন্দ না। দুজনে মিলে ঢেকুর তুলতে তুলতে বের হচ্ছি, দেখা হয়ে গেল এক ফ্রেন্ডের সঙ্গে। আরে রিঙ্কু, হ্যাপি নিউ ইয়ার! হুয়াটস আপ ম্যান?
-আরে বেকুব, আজকের দিনে বলতে হয় শুভ নববর্ষ। তুই আর বদলালি না।
-ও হ্যা, তাইতো! শুভ নববর্ষ!
কিছুক্ষ্ণ প্যাচাল পেরে চলে যায় রিঙ্কু। ভালই লাগছে আজকে ওকে দেখতে। খাঁটি বাঙ্গালি।
নাহ, এই গরম আর সহ্য হচ্ছে না। ড্রাইভারকে কল করলাম তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে আসতে। ব্রিটনি স্পিয়ার্সের একটা নতুন সিডি কিনেছি কালকে। যেতে যেতে শোনা যাবে।
আবার আসিব ফিরে, এই রমনার তীরে।
নেক্সট ইয়ার বেবী!
(রেনেট)
মন্তব্য
হাহাহা মজা করে লিখেছেন। দেশে থেকেও এই অবস্থা, আমরা দেশের বাইরে বড় হয়েও তো এর চেয়ে অনেক বাঙালি। মনেহচ্ছে বাইরের চেয়ে দেশেই এখন "বাংলা প্রশার কমিটি" করা উচিৎ।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
গল্পের "আমি" মানেই লেখক, সেরকম কোন কথা নেই। আর ঘটনা যে কোন সত্যি ঘটনা, তার কোন স্বীকারোক্তিও এখানে নেই। বাকীটা আপনার বিবেচনা।
~রেনেট
আমিও তো সেটা বলিনি বা ভাবিনি। শুধু বলেছি মজা করে লিখেছেন।
আমি সিওর সবাই বুঝতে পারছে এটা কোনও সত্যি ঘটনা নয়। আপনার এই স্টেটমেন্ট এর দরকার ছিলনা।
আমি সিম্পলি যা বলতে চেয়েছি তা হল দেশে থেকেও যদি বাঙালি কালচার ধরে রাখা নিয়ে ভাবতে হয় তাহলে বাইরে যারা বড় হয় তাদের জন্য কতটা হার্ড চিন্তা করে দেখেন।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম, মাথা কাজ করছে না এখনো পুরোপুরি। কি বলতে কি বলি!
~রেনেট
মজা পেলাম।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নিজেকে জয় করার অর্থ বিজয় না পরাজয়?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
একদিনের বাংগালীপণা'- পুরো নেগেটিভ অর্থে দেখতে পারিনা । আজকের দিনে কারো পক্ষেই ৩৬৫ দিন নিজের সংস্কৃতিতে ডুবে থাকা কি সম্ভব? আর সংস্কৃতি মানে তো কেবল পোষাক আশাক ,খাবার নয়-তার সাথে আচরন,মুল্যবোধ,চিন্তা সবকিছু মিলিয়ে ।
বছরে অন্ততঃ একদিন নিজেদের ঐতিহ্যে উৎসবের আদলে ফিরে যাওয়া-মন্দ কি? এরকম সবাইকেই তো দেখি ।
স্কটিশরা বছরের বিশেষদিনগুলোতেই জাতীয় পোশাক টারটান পরিধান করে ।
xxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxx
...অথবা সময় ছিলো;আমারই অস্তিত্ব ছিলোনা
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
নির্দিষ্ট কাউকে ব্যঙ্গ করে লেখাটি লিখিনি। সামগ্রিক অর্থেও লিখিনি। সব বাঙ্গালিই এভাবে বর্ষবরণ করে, তাও বলিনি। তবে কেউ কেউ যে একেবারেই এই মানসিকতা নিয়ে করে না, তা কিন্তু নয়।
আমরা ৩৬৫ দিন বাংলা ঐতিহ্যে ডুবে থাকতে না পারি, কিন্তু চাইলে আর একটু সচেতন তো হতে পারি!
নিদেনপক্ষে বটমূলে যাবার আগে কত সাল শুরু হচ্ছে, তাও যদি জানতে চেষ্টা করি, তাই বা কম কি!
~রেনেট
হাসান মোরশেদ ভাইয়ের সমস্যা কি?
আজ যেখানেই যা বলতে যাচ্ছি দেখি হাসান ভাই আগেই বলে দিয়েছেন।
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
এখনকার দিনে তো আর ৩৬৫ দিনেই বাঙালীপনা দেখানো সম্ভব নয়, তাই বিশেষ দিনগুলোর জন্যই তুলে রাখতে হয়। আর বাকি সময়টা দৌড়, দৌড় আর দৌড় ...
---------------------------------
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
শব্দটা বাঙালি । বাঙ্গালি বা বাঙ্গালী বা বাংগালী নয়। এটাই মনে হয় প্রথম ঠিক করে নেওয়া দরকার।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
অতিথি লেখক হয়ে সম্পাদনা করার অবকাশ নেই। তাই ঠিক করতে পারছি না।
আর বাংলা বানান যেভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে, তাতে সবরকম বানানই কোন না কোন সময় ঠিক ছিল। আমি নিশ্চিত, বাঙালি বাঙ্গালি, বাঙ্গালী, বাংগালি সব ধরনের বানানই আমি বিভিন্ন বইয়ে পেয়েছি। তবে আমার বাঙ্গালি লেখার পিছনের কারন হচ্ছে অভ্র। ইংরেজিতে বাঙ্গালি টাইপ করাতে যেটা এসেছে, সেটাই চালিয়ে দিয়েছি।
তবে হ্যাঁ, সঠিক বানানটি হচ্ছে বাঙালি। কাগজে কলমে লিখলে এই বানানই লিখি।
~রেনেট
লেখা ভালো।
চলুক...
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
রেনেট জিন্দাবাদ। লেখা চলুক।
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
হা হা। এমনিতেই নাচুনে বুড়ি, তার উপর ঢোলের বাড়ি!
~রেনেট
আমি কিন্তু এটাকে মোটেই খারাপভাবে দেখি না
যে দেশে স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটিতে বাঙালিত্ব বাদ দিয়েই সভ্য বানানের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়
এবং যে দেশের পরিবারগুলোতে বাঙালিত্বকে গ্রাম্যতা ভেবে বর্জন করার চেষ্টা করা হয়
সেই দেশে ছেলেমেয়েরা যদি একদিনের জন্যও নিজেকে বাঙালি হিসেবে বিশ্বাস করতে চায় তবে তার কৃতিত্ব ১০০% তার নিজের
তা সে যে ভাষাতেই হোক
(বাঙালিদেরকে কি এখন বাংলা শেখানো হয় যে তারা তা বলবে?)
নতুন মন্তব্য করুন