নারী নীতি ও আমাদের মোল্লারা

অতিথি লেখক's picture
Submitted by guest_writer on Sat, 12/04/2008 - 8:37pm
Categories:

বেশ কয়েক মাস ধরেই বাংলাদেশে অস্থির অবস্থা যাচ্ছে। ঠিকই ধরেছেন সম্প্রতি মোল্লারা সরকার গৃহীত নারী নীতির প্রতিবাদে যা করছে আমি তার কথাই বলছি। তদারকি সরকার জাতিসংঘের সিডো নীতিতে সাক্ষর করেছে। সেই নীতিতে ঠিক কী আছে আরো অনেকের মতোই আমি জানি না, আমার বিশ্বাস যারা আন্দোলন করছেন তাদেরও অনেকে জানেন না। সে যাই হোক, সব কিছু যে জেনে বুঝে করতে হবে তার কী কোন কথা আছে? মোল্লাদের বক্তব্য হলো সিডো সনদে নারী পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা আছে। এ সমান অধিকার নারীর মানবিক অধিকার থেকে শুরু করে পিতৃ সম্পত্তির ভাগ পর্যন্ত আছে। মোল্লারা যার বিরোধিতা করছে সেটা বিশেষত পিতার সম্পত্তিতে নারীর পুরুষের সমান অধিকার। এ ক্ষেত্রে তারা কোরানের প্রসঙ্গ আনছে।

তাদের মনে যাই থাক আন্দোলনের দাবি হলো, কোরানে সম্পত্তি ভাগের সময় নারীকে পুরুষের চেয়ে অর্ধেক সম্পত্তির অধিকারী করে আয়াত আছে, কাজেই সম্পত্তি ভাগের সময় অন্য কোন কিছু করলেই তা কোরানের বিরোধিতা করা হয়। সিডো নীতির আর কোন বিশেষ অংশে তাদের জোড়ালো আপত্তির কথা শোনা যায়নি।

সিডো সনদ স্বাক্ষর করার পর পরই মোল্লারা আন্দোলনে নেমেছে। ভাঙচুর হয়েছে, এখনও হচ্ছে, তবে সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি (যিনি কদিন আগে ইসলামি আইন ও শাসনের গুণগান করেছেন) নারীর সমঅধিকারের বিষয়টি প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে অনেককে বিপদে ফেলে দিয়েছেন। মোল্লাদের মতে, নারী নীতি গ্রহণ করে তদারকি সরকারের উপদেষ্টারা ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেছেন, তাদের তওবা না করে ফিরে আসার উপায় নেই। সে যু্ক্তিতে প্রধান বিচারপতিও একই গোত্রে পড়লেন। ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারাম, তারা সে ফতোয়াও দিয়েছিল। কিন্তু খালেদা জিয়া সরকারের অংশাদারী হতে কোন সমস্যা ছিলো না তাদের।

প্রথম পর্যায়ের আন্দোলনের পর সরকার মোল্লাদের আশ্বাস দেয় যে এটা কেবল একটা খসড়া নীতি, সরকার কোন আইন তৈরি করেনি। এটর্নি জেনারেল মোল্লাদের সাথে মোলাকাত করে নিশ্চিত করেন সরকার ইসলাম বিরোধী কোন আইন করবে না। এরপর তদারকি সরকারের চার উপদেষ্টা বায়তুল মোকারম মসজিদের খতিবসহ অন্যান্য নেতাদের সাথে মিলিত হয়ে নারী নীতি পর্যালোচনা করার জন্য একটা কমিটি করে দেন। কমিটিতে একজন সরকারি কর্মকর্তা ছাড়া বাকী সবাই ধর্মীয় নেতা, যাদের কেউ কেউ আন্দোলনে যু্ক্ত। যারা নারী নীতির পক্ষে ছিলেন তারা নিঃসন্দেহে বড় একটা হোচট খেয়েছেন সরকারের এই কাণ্ডে। কিন্তু তদারকি সরকারের অন্যান্য কার্যকলাপ তারা দেখেছেন, তাই বিশেষ কিছু আশা করেননি। একজন নারী নেত্রী ছাড়া আর কেউ সরকারের এ কাজের সমালোচনা করেননি। সময়টা খুব খারাপ কি না।

এতক্ষণ যা বললাম তা খবরের কাগজে কম বেশী সবাই দেখেছে। এবার আমার নিজের কথা বলি। বাংলাদেশের ধর্মীয় নেতারা বা মোল্লারা দেশের স্বার্থে বা মানুষের স্বার্থে কোন আন্দোলন করেছে এমন নজির নেই। দেশ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেলেও তারা কিছু বলেনি, তেল-গ্যাস বিদেশীদের হাতে তুলে দিলেও কিছু বলেনি, সবশেষ মানুষ ষখন খেতে পাচ্ছে না, ৩৫টাকা কেজির মোটা চাল লাইন ধরেও মিলছে না, তখনও তারা কিছু বলেনি। কারন কী হতে পারে? এসব বিষয় কোরানের আয়াতে নেই?

গত সিডরে পাঁচ হাজার মানুষ মারা গেল, শতকোটি টাকার সহায় সম্পত্তির ক্ষতি হলো। মোল্লারা না কোন সহানুভুতি প্রকাশ করেছে, না সাহায্য করার জন্য কোন উদ্যোগ নিয়েছে। কোরানে কী আছে আমি জানি না।

মু্ক্তিযুদ্ধের সময় জামাত মানুষ খুন করেছে ধর্মের নামে। জামাত বিরোধী ইসলামি একাধিক গোষ্ঠী আছে বাংলাদেশে, তারাও কখনও জামাতের এই কাজের বিরোধিতা করেনি। এখন যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা হচ্ছে তখনও তারা নিজেদের অবস্থানটা পরিষ্কার করেনি। এক্ষেত্রে কোরান কী বলে?

বাংলাদেশে ৮৫ ভাগ বা তারও বেশী মানুষ মুসলমান, ধর্ম-কর্ম করুক বা না করুক। নারী নীতি তাদের কত অংশের ঈমানে আঘাত করেছে সেটা বোঝা সম্ভব না। তবে যেখানে মানুষ পেটে ভাত দিতে পারছে না সেখানে তারা নীতি দিয়ে কী করবে!

আমার দুটি প্রশ্ন, একটা মোল্লাদের কাছে, আরেকটা সরকারের কাছে।
মোল্লাদের কাছে প্রশ্নটা হলো, দেশে ইতিমধ্যে অনেক আইন আছে যা কোরানের সাথে সংগতিপূর্ণ না, তাদের কথায় "সাংঘর্ষিক"। সেসব ক্ষেত্রে কী হবে? যেমন, কোরানের কথা হলো, ঋতুবতী হওয়ার পরই মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করা। বাংলাদেশের আইনে তো সেটা অন্যরকম আছে। কোরানে স্ত্রী কথা না শুনলে শাসন করা এমনকি মারধর করার অধিকার দেয়া হয়েছে স্বামীকে; বাংলাদেশে তো সেটা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে অপরাধ। পুরুষের চার বিয়ের অধিকারও তো বাংলাদেশে সীমিত করা হয়েছে। এরকম আরো অনেক উদাহরণ দেয়া যায়। এসব বাতিলের আন্দোলন কি খুব শীঘ্রই শুরু হবে?

সরকারের কাছে প্রশ্নটা হলো, কেবল নীতি করেই কী নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়ে গেল? এক দিন, মাস বা বছরে পাল্টে যাবে আমাদের শত বছরের প্রচলিত ধারা? এরশাদ জন্মনিয়ন্ত্রণ চালু করার জন্য মোল্লাদের কী পরিমাণ খাতির করেছে তা অনেকের মনে আছে। সেটা বিবেকের দৃষ্টিতে ভালো না হলেও আমরা কী তার সুফল দেখিনি? মোল্লাদের না ক্ষেপিয়ে অন্য কোন ভাবে কী নারীদের অবস্থার উন্নতির জন্য কাজ করা যেত না?

আলমগীর


Comments

অতিথি লেখক's picture

auto

এই হলো অবস্থা!

দিগন্ত's picture

ছবিটা দেখতে পারছি না, আপনি যদি একটা লিঙ্ক দেন।
---------------------------------
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

guest's picture
অতিথি লেখক's picture

তাবলীগ পার্টি সবখানে।

-----------
কুচ্ছিত হাঁসের ছানা

অতিথি লেখক's picture

দিগন্ত wrote:
ছবিটা দেখতে পারছি না, আপনি যদি একটা লিঙ্ক দেন।

http://www.e-bangladesh.org/wp-content/uploads/2008/04/pr.jpg

অতিথি লেখক's picture

অতিথি লেখক wrote:

তাবলীগ পার্টি সবখানে।

এখানে তাবলীগের কী আবিষ্কার করলেন? একটু ব্যাখ্যা দিন দেখি।

সংসারে এক সন্ন্যাসী's picture

Quote:
‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍মোল্লাদের না ক্ষেপিয়ে অন্য কোন ভাবে কী নারীদের অবস্থার উন্নতির জন্য কাজ করা যেত না?

তার মানে, মোল্লা-তোয়াজ করে যেতে হবে সারা জীবন?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
কী যে করি! আবার ফোন করেছিল মাদাম ত্যুসোর মিউজিয়াম থেকে... হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

অতিথি লেখক's picture

সংসারে এক সন্ন্যাসী wrote:

তার মানে, মোল্লা-তোয়াজ করে যেতে হবে সারা জীবন?

করতে না হলে খুবই ভাল হত। কিন্তু সারা পৃথিবী জুড়ে কি তাই হচ্ছে না? কোন তন্ত্রই তো কাজ করছে না মানুষের জন্য। দেশের সব মোল্লাদের কি সাফ করে ফেলা যাবে রাতারাতি? আপনার আমার মধ্য থেকেই নিত্য জন্ম নেয় এ রকম মানুষ। অভাব একটা বড় কারন।

আলমগীর

অতিথি লেখক's picture

একমতঃ

"কেবল নীতি করেই কী নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়ে গেল? এক দিন, মাস বা বছরে পাল্টে যাবে আমাদের শত বছরের প্রচলিত ধারা?"
-নিরিবিলি

ধুসর গোধূলি's picture

- চীনের মানুষেরা হলো ঐতিহাসিক ভাবে বেলাইনের পাবলিক। এই বেলাইনড পাবলিক গুলাও কিন্তু লাইনে চলে আসছে। প্রশ্ন করতে পারেন 'ক্যামনে জনাব?' জবাব হলো, পুটকীর দুই পাশের মাংশল জায়গায় ডান্ডাঘাত। কাঠমোল্লা আর টেকমোল্লাদের রাতারাতি সাফ করার তো কোনো দরকার দেখি না। খালি পুটকি বরাবর ডান্ডার আদর। বাজী ধরতে পারেন, দুইমাসে বাংলাদেশে নজীরবিহীন শান্তি চলে আসবে। হাটহাজারী আক্রমন! সেটা কল্পনাও করতে পারবেন না।

আর সিডো সনদ নিয়ে তাদের জানার পরিধির কথা বলছেন তো! আমি জানি আন্দোলনরত শতকরা পঁচানব্বই ভাগই জানেনা এইটা কি মাথায় দেয় না পুটকিতে লাগায়। তসলিমা নাসরীনের বিরুদ্ধে রক্ত গরম করা শ্লোগান দেওয়া দুই পাবলিক, একজন লালবাগ মাদ্রাসার ছাত্র, আরেকজন তামিরুল মিল্লাতের ছাত্র। জিজ্ঞেস করেছিলাম, তসলিমার কোনো বই পড়েছে কীনা! জবাব দিয়েছে ঋণাত্বক! এই দুজন আমার পরিচিত। আপনার, আপনার বন্ধুর পরিচিত এমন দু-একজন পেয়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক না। এখন, এই আন্দোলনেও যে তারা নেই সেটা কী করে শিউর হই! আর তারা থাকা মানেই তো পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি।

যে সরকারের পেটুয়া বাহিনী সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে ঢুকে নৃশংস আঘাত করে শিক্ষার্থীর ওপর, তারা কেনো এখন নিশ্চুপ হয়ে বসে হিন্দি চুলের গোড়ায় অলিভওয়েল মাখছে! হোগা বরাবর কেনো তারা সমানে কাঁচা জিংলা দিয়া পিটায় না?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

সংসারে এক সন্ন্যাসী's picture

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍এই মন্তব্যে (বিপ্লব) আর জাঝা না দিয়ে পারা গেল না!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নিজেকে জয় করার অর্থ বিজয় না পরাজয়? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

আলমগীর১১'s picture

জিংলা দিয়া কয়জনরে পেটাবে আর কে পেটাবে? আওয়ামীলীগ ফতোয়ার বৈধতা দিয়া গেছে। বদরুদ্দোজা খালেদা জিয়ার অল্পশিক্ষাকে নবীর উম্মিতার সাথে তুলনার পর সব লীগার মোল্লাদের নিয়ে মাঠে নামছিলো- মনে আছে?

আর চীনের কথা কন? খেমেরুজ ৫০০,০০০ এর মতো সাফ করেও তো ভিয়েতনাম ঠিক করতে পারে নাই।

আলমগীর

অনিকেত's picture

আরে ভাই, 'ফাটিয়ে' দিয়েছেন!

আপনার নাম তো 'ধুসর গোধুলী' রাখা ভুল হয়েছে। রাখা উচিৎ ছিল ' প্রখর মধ্যাহ্ন'!!

অনুভুতির খাপখোলা প্রকাশ.........

অতিথি লেখক's picture

ক্যামেলিয়া আলম

তাবলীগ- কাঠমোল্লা-জামাত সবই পাপের বিভিন্ন কোটা। এর যে কোন একটিকে মহৎ ভাবাটা সে কোটার
অন্তর্ভুক্ত হওয়া। আমার জ্ঞান অবধি এদের কোন ভাল কথা আর নীতি কথা শুনিনাই। হয়তো বলেছে তবে আমার কান পর্যন্ত পৌঁছায় নাই। তাই সুহৃদ হিসেবে পাবার জন্য লেখককে অভিনন্দন।

আর হক কথা বলার জন্য ধূসর গোঁধূলীকে বিশেষ বিশেষ ধন্যবাদ।

Post new comment

The content of this field is kept private and will not be shown publicly.