আগুন্তুকের হাতে জ্বলন্ত সিগারেট, ধোঁয়ার গন্ধে বলে কমদামী, কাচি টাচি হবে । হাতের সিগারেটটা টানে কি টানে না, মুখে একটা বিরক্তিকর হাসি ঝুলে আছে তখন থেকে । আমার পাশে বসেই সে বলল,
"স্যার এক কাপ চা খাওয়াতে পারেন ?"
ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলাম, এত যা ভেবেছিলাম তার থেকেও বেশি বিরক্তিকর ।
"চা তো আমি বানাই না, চা ওয়ালাকে বলুন"
আমার চাছাছোলা রসিকতায় সে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে পুরোপুরি সামলে নিল অদ্ভুত দক্ষতায়, আমাকে চমকে দিয়ে বলল,
"স্যার মজা করলেন ? আমি কিন্তু মজা করিনি, টাকা নেই তাই আপনাকে অনুরোধ করেছিলাম আপনি এক কাপ চা খাওয়াতে পারেন কিনা, আপনি না বললেই হত"
আমি কিছু না বলে শব্দ করে আমার চা খেতে লাগলাম।
আমি এরকম না, অন্যসময় হলে হয়ত আর কয়টি মানুষের মত বোকা বোকা মুখে আমিও ওকে চা খাওয়াতাম । মাঝে মাঝে আমার এরকম হয়, আর তখনকার ব্যাপারগুলি আমি খুবই উপভোগ করি । কিন্তু ওর কথা শুনে আমার মেজাজ বেশি খারাপ হয়ে গেল । ওর উচিত ছিল আমার কথা শুনে বোকা হেসে এখান থেকে চলে যাওয়া, আর আমার উচিত ছিল কোন আড্ডায় আমার এই গল্পটি বলে একটু মজা নেয়া। ঘাগু মাল!
"এই যে ভাই, উনারে এক কাপ চা দেন" বিরক্তমুখে বললাম দোকানীকে ।
"হে হে অনেক ধন্যবাদ ভাই হেহে ।"
"আপনার নাম কি"
"জ্বি শফিক স্যার"
"কি করা হয় ?"
"কিছু করিনা স্যার"
"এভাবেই ঘুরে ঘুরে চা টা খান সবার থেকে ?"
" হে হে ... হে হে"
শফিকের কথা
---------------
লোকটারে এইখানে আগে দেখি নাই । হালার লগে কোন ব্যাগবুগ কিছু নাই, এই বাস স্টেশনে দেখতাসি তখন থিকা। পাগল ছাগল নাকি ? আইজকাল ভদ্রকিছু পাগল ছাগল বাইর হইসে দেখছি, সারাদিন বলদের লাহান ঘুরে, রাইত নামলে বাড়ি যায়, আর গিয়া মনে হয় কবিতা টবিতা লেখে । হালাগো পয়দা করছিল কোন আম্মারা ! একটু পরেই স্টেশনটা খালি হইয়া যাইব, দেখি হালায় কই যায় । ওইরকম বোকাচোদা হইলে হালারে আজকা ন্যাংটা কইরা সব লইয়া যামু, এহ! আমার লগে ফাপর লয়, নাহ! আইজকা তোরে খাইছি, তোরে আজকে আমি চা বানান শিখামু, খাড়া !
আমি
---------
"কথাবার্তায় তো ভদ্রলোকই মনে হয়, নাকি এইটাই নিয়ম? টাউটগিরি কদ্দিন?"
আমার কথায় দোকানী হাসে, বলে, "স্যার এডিরে কইয়া কিছু লাভ নাই, এডির লগে কথা কইয়েন না, হাঊয়ার পোলারা মাইনষের জাত না"
"ওই ফকিরনির পো এত কথা মারাস কেন, চা বেচতাসোস চা বেচ" খেঊড়ে উঠে ভদ্রলোক শফিক ।
"তোরে কইয়া বেচুম নি রেন্ডি মাগীর পোলা ?"
নাহ এইখানে আর বেশিক্ষন টেকা যাবে না । আমি উঠে পড়লাম, এমনিতেও সময় হয়ে এসেছে ।
আবার শফিক
---------------
হালায় কই যায় ? না ওরে আইজকা ছাড়ন যাইব না, চুতমারানী দুই টাকার চাওয়ালারে পরে ধরুম, আগে ওরে খাই । হিহি হালায় গলিতে গিয়া ঢুকসে, হালায় বোকাচোদা, হিহি...
এবং আমি...
-------------
গলির অন্ধকারে দাড়িঁয়ে দেখছিলাম ছিচকে শফিক কে, এই অন্ধকারে ও আমাকে দেখতে পাবে না । একটা ছোরা বের করে এদিক ওদিক তাকিয়ে আসছে গলির দিকে। শালা ছিনতাই করবে ভেবেছিল, হেহ! শফিকের প্রতি পদক্ষেপে আমি উত্তেজিত হয়ে উঠি, আমার রক্ত টগবগ করে ফুটে, রাগে আমি কাঁপতে থাকি অসহায়, অস্থির ।
গলিতে ও ঢোকামাত্রই আমি টেনে নেই ওকে, ঝাঁপিয়ে পড়ি সেই ভয়াবহ হিংস্রতায়, এক হাতে মুখ চেপে আরেক হাতে ছিনিয়ে নেই ওর হাতের চাকুটা, নিয়েই গলায় টেনে দেই ওর, গভীর গাঢ় মিহি ঘ্যাসঘ্যাসে শব্দে। পুরো ঘটনাটা ঘটতে সময় নেয় দুই সেকেন্ড, অন্ধকারে ওর চোখ জ্বলজ্বল করতে থাকে। দুই পা টলে পিছনে গিয়ে সে চোখ দেখতে থাকে আমাকে অবাক দৃষ্টিতে। ফিনকি দিয়ে রক্ত এসে পড়ে তখনই, আমি সরে দাঁড়াই। বিষণ্ণ চোখে দেখতে থাকি ওকে, ওর বড়বড় অবাক চোখে নিজেকে দেখার খুব ইচ্ছা করে, খুব। পারিনা, কালও পারিনি, কোনোদিনও পারব না ।
পথচারী
---------
লোকটা হেঁটে আসছিল, কাছে আসতে দেখলাম কাঁদছে, সার্টের হাতা দিয়ে চোখ মুছে দ্রুত রাস্তা পার হল । হাতায় লাল লাল কি? রক্ত ?
মন্তব্য
সবার কাছে আবারও একবার ক্ষমা চাইছি, গল্পের সাথে নিজের নাম দিতে ভুলে যাবার জন্য !
- খেকশিয়াল
লেখা ভাল্লাগসে
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, একদমই তাড়াহুড়ায় লিখসি, দ্বিতীয়বার তাকাই নাই লেখাটার দিকে, আরো ভাল করা যাইত
- খেকশিয়াল
- খাইছে, মাথার চুলহর্ষক!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
লেখায় নতুন টেষ্ট পাইলাম। ধন্যবাদ।
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
ধুসর গোধূলি, থার্ড আই, আপনাদের মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।
- খেকশিয়াল
ক্যামেলিয়া আলম
অ-নে-ক ভাল। দারুন এক নতুনত্ব পেলাম লেখায়। অভিনন্দন আপনাকে।
এরকম আরও কয়েকটি লেখা প্লিজ-----------।
অনেক ধন্যবাদ
- খেকশিয়াল
খেকশিয়ালজী,
ভাল্লাগসে। আরো কোপাকুপি করেন!!
---------------------------
থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
শুইনা আনন্দিত,
হ দাও লইয়া ধার দিতাসি
- খেকশিয়াল
ক্রিমিনোলজি নিয়ে বাংলায় খুব একটা লেখালেখি হয়নি
এরকম দুর্দান্ত গল্প দিয়ে শুরু হতে পারে সেই পাঠ
চমৎকার এবং মেদহীন একটা গল্প....
অনেক ধন্যবাদ লীলেনদা ।
- খেকশিয়াল
দোস্ত এই লেখাটার সিরিজ অবশ্যই করতে হবে। অসাধারন কন্সেপ্ট! অতিথি হিসেবে লিখসস দেখে আগে খুযে পাইনাই। জটিল!
___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা
নতুন মন্তব্য করুন