এক বাল্যবন্ধুর করুণ কাহিনী

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: রবি, ১৩/০৪/২০০৮ - ২:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক
ভালো ছাত্ররা এত গাড়ল হয়, নিঝুম বিশ্বাস করতে পারছিল না। অঙ্ক পরীক্ষা চলছে। তার সামনেই বসেছে মাহমুদ, তাদের ফার্স্ট বয়। নিঝুম একটা অঙ্ক পারছিল না, মাহমুদকে বেশ কয়েকবার ফিসফিস করে ডেকেছে সে, ব্যাটা শুনেই না। অবশেষে যখন পেন্সিল দিয়ে একটা সেইরকম গুতা মারলো, তখন কট্মট করে পিছনে তাকালো।
-কি হইছে?
- ৫ নম্বর অঙ্কটা একটু দেখাবি?
মাহমুদ ঠোঁট বেকিয়ে বললো, পারি না।
হারামজাদা, মনে মনে গালি দিল সে মাহমুদ কে। ব্যাটা তুই ফার্স্ট হস প্রতি পরীক্ষায়, তুই না পারলে পারবে কে? সোজা বললেই পারিস, বলব না। নাকি বলার সাহস নাই? ব্যাটা চামচিকা কোথাকার।

মাহমুদ ব্যাটা আসলেই ত্যান্দড়। সেদিন ইংলিশ পরীক্ষার দিন নিঝুম জিজ্ঞেস করেছিল, আসারের গর্জন তর্জন সার ইংলিশ কি, মাহমুদ তাকে অবাক করে দিয়ে তাকে উত্তরটা বললো, empty vessels sound much. উত্তর ব্যাটা একটা বলেছে বটে, তবে এটা সঠিক উত্তর কিনা তা নিয়ে নিঝুমের মনে যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে। মানলাম, আমি ট্রান্সলেসন টা পারি না, তাই বলে ২/১ তা শব্দের ইংলিশ তো জানি? গর্জন ইংলিশ যে roar, এ বিষয়ে সে ১০০% শিওর। অথচ empty vessels sound much এর মধ্যে roar কই?

যাহোক, নিঝুমের এত মাথা ব্যাথা নেই পরীক্ষা নিয়ে। পাশ করলেই হল। তারচেয়ে পরীক্ষার পর স্কুলের মাঠে ফুটবলের প্র্যাকটিস আছে , সেটা নিয়েই সে বেশি উত্তেজিত। খালি নজর রাখতে হবে মাহমুদ ব্যাটা কখন মাঠের পাশ দিয়ে যায়। ওকে দেখা মাত্রই জোরসে একটা কিক করলেই হল।

দুই
মাহমুদের পরীক্ষা আজকে মোটেই ভাল হয় নি। কেউ বললে হয়তো বিশ্বাস করবে না, আজ সে ৭০ নাম্বারের উত্তর দিয়েছে। বাকিগুলো সে পারে না। তখন নিঝুম যে অঙ্কটা দেখতে চেয়েছিল, সেটা সে আসলেই পারতো না। কিন্তু নিঝুমের চাহনি দেখেই সে বুঝেছে নিঝুম তার কথা বিশ্বাস করেনি। অবশ্য ওদের দোষ দিয়ে কি হবে, সে এতদিন পারলেও কাউকে দেখায় নি।

তার সমস্যার কথা সে কাকে বলবে? কে আছে তার কথা শোনার জন্য? কেউ নেই। সে বড় নিঃসঙ্গ। ছোট বেলা থেকেই সে এরকম। বাবা মার একমাত্র ছেলে সে। বাবা মা দুজনই ডাক্তার। তাদের ও আশা, সে ডাক্তার হোক। ছোটবেলা থেকেই সে অনেকটা বন্দি জীবন কাটিয়েছে। বাবা মার অতি আদরের সন্তান। তারা তাকে কোথাও একা ছাড়েন না। স্কুল থেকে বাসা ৫ মিনিটের রাস্তা, তাও তাকে হয় তার বাবা, নাহয় মা স্কুলে নিয়ে আসেন। এত বড় হয়ে গেছে, তারপর ও। ক্লাসের অন্যরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। তার নিজের ও লজ্জা লাগে, কিন্তু উপায় নেই। বাবা মা তাকে ছাড়বেন না।

এমনকি বিকেল বেলা বাসার সামনের রাস্তায় যখন সবাই খেলে, তখন ও সে খেলতে পারে না। তাই আশে পাশের ছেলেদের কারো সাথেও তার তেমন খাতির নেই। কারো সাথে না মিশতে মিশতে এখন সে হঠাত অপরিচিত কারো সাথে কথা বলতে কেমন যেন সঙ্কোচ হয়। বলার কোন কথা খুঁজে পায় না সে।

তার সমস্যা শুরু হয়েছে মাস খানেক ধরে। এর আগে কোন সমবয়সী মেয়ের সাথে কথা বলেনি সে। হঠাত আমেরিকা থেকে তার খালাত বোন আসল। নূরেন। আহ দেখতে কি সুন্দর। ওর সাথে ২/১ দিন কথা বলার পর থেকেই ওর মাথা খারাপ হবার দশা। সারাক্ষণ ওর কথা ভাবে সে। মনে মনে সে কত কিছু কল্পনা করে সারাক্ষণ। সে আর নূরেন হাত ধরাধরি করে হাটছে। মেয়েদের হাত এত নরম হয় আগে ওর জানা ছিল না। আরো কত কিছু সে কল্পনা করে, কাউকে কিছু বলতে পারে না লজ্জায়।

এক সময় নূরেন চলে গেল আমেরিকায়। যাওয়ার দিন ও নূরেন কে বলার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পারে নি। ও চলে যাবার পর থেকে আর কিছুই ভাল লাগে না। কেবলই ওর কথা মনে হয়। পড়তে গেলে খালি ওর চেহারা ভেসে উঠে। কি করবে বুঝতে পারে না সে।

তিন
রেনেটের পরীক্ষা শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। ভালই হয়েছে। কারো সাথে উত্তর মিলাতে হবে। মাহমুদ বা রাজীবকে খুঁজছে সে। মাহমুদকে দেখা গেল সিড়ির কাছে। ভ্যাবলার মত দাঁড়িয়ে আছে। যাক, ওর সাথেই তবে উত্তর মিলানো যাক।
-কি খবর মাহমুদ সাহেব, কেমন পরীক্ষা দিলেন?
-ভালো না রে।
- ভালো না মানে কত পাবি? ৯৮? ২ নাম্বারের জন্য মন খারাপ?
-না। আমি ৭০ এর এনসার করেছি।
রেনেট কিছুটা অবাক হয়ে গেল। মস্করা করছে নাকি ব্যাটা?
-৭০ মানে?তুই তো না পড়লেও ৭০ পাবি।
-সেরকমই, না পড়েই পরীক্ষা দিয়েছি।
- মানে?
-রেনেট, আমার কিছু কথা বলার ছিল, শুনবি?
- কি কথা?
- চল হাঁটতে হাঁটতে বলি।

ওরা হাঁটতে শুরু করে। রাস্তায় রাজীবকে ও পেয়ে যায়। তিনজন হাটতে থাকে।
হ্যাঁ মাহমুদ সাহেব, বলেন কি বলতে চাচ্ছিলেন? রেনেট বলে।
-ব্যাপারটা গোপনীয়। কাউকে বলিস না।
- আচ্ছা ঠিক আছে বলব না। কি বলবি বল।
- আমি না প্রেমে পড়েছি...
শেষ করার আগেই রেনেট আর রাজীব হাসা শুরু করে দিল। বলে কি মাহমুদ। জীবনে কোন মেয়ে মাহমুদ দেখেছে কিনা সেটা নিয়েই তাদের যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে, আর এখন বলছে ব্যাটা প্রেমে পড়েছে?
-তা এজন্যই তোর পরীক্ষা খারাপ হয়েছে?
-হ্যাঁ।
- আরে ও কিছু না। প্রেমে পড়লে কত কিছু হয়! তারপর আরো কিছুক্ষণ হাসাহাসি করে ওরা বিদায় নিল। মাহমুদের আম্মাকেও দেখা গেল গেটের কাছে।

.................................................................................

রেনেটের জবানীতেঃ
এটি একটি সত্য ঘটনা। ঘটনার বিবরণ না দিয়ে গল্প আকারে বলতে চেয়েছিলাম, যেন অনেকেই পড়ে। কিন্তু ঘটনা এত বড়, যে এভাবে লিখতে থাকলে কোন দিন ও শেষ হবে না। মাহমুদ ছিল আমাদের স্কুলের ফার্ষ্ট বয়, ক্লাস ফাইভ থেকে ক্লাস এইট পর্যন্ত। ইংরেজীতে খুব ভাল ছিল ও। বিতর্কে ও। স্কুল বিতর্কে টিভিতে গিয়ে ও শ্রেষ্ঠ বক্তাও হয়েছিল। আর স্কুলেও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় ও ছিল ওর সরব অংশ গ্রহণ। তারপরই এ ঘটনা ঘটে। ক্লাস নাইনে। এর পর থেকে আস্তে আস্তে ওর পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কমতে থাকে, সারাক্ষণ নূরেন নূরেন করতে থাকে।
ওর বাবা মা এক সময় এ কথা জেনে যান। জানার পরে তারা মাহমুদকে আরো কড়া শাসনে রাখতে থাকেন, ঘর থেকে বেরুতে দেন না, কারো সাথে মিশতে দেন না। ওদিকে মাহমুদের খালা ও তার বোনকে জানিয়ে দেন, একটা বাঁদরের সাথে তারা তাদের মেয়ের কোন সম্পর্ক হতে দিবেন না। প্রেমের যন্ত্রনা আর একাকীত্বের যন্ত্রনা আস্তে আস্তে মাহমুদকে অপ্রকিতস্থ করে ফেলতে থাকে। প্রায়ই অসুস্থ হত ও।

অবশেষে মেট্রিক পরীক্ষায় ৪ টা পরীক্ষা দেয়ার পর পরীক্ষা ড্রপ করে ও। আমরা সবাই উঠে যাই কলেজে। ওর সাথে যোগাযোগ ও কমে যায় সবার। পরের বছর ও পরীক্ষা দেয় নি ও। দিয়েছে এর পরের বছর। কিছুই নাকি মনে থাকে না ওর।সবসময় ঔষুধের উপর থাকে ও। ঔষুধের প্রতিক্রিয়ায় ওর স্মৃতি শক্তি আরো লোপ পেতে থাকে। স্কুল ছাড়ার পরে এক মাত্র আমার সাথেই যোগাযোগ ছিল ওর। কিন্তু ওর সাথে একমাত্র আমার ই যোগাযোগ হয় বলে ওর বাবা মা ভাবতে থাকেন আমিই ওর মাথা খারাপ করছি। এরপর অনেকদিন আমি ফোন করলে ওর বাবা বা মা প্রথমে নাম জিজ্ঞেস করেন, তারপর আমার নাম শুনে বলেন মাহমুদ বাসায় নেই। প্রথম প্রথম তাই ভাবতাম। কিন্তু টানা অনেকদিন এরকম হবার পর আমার কেন জানি সন্দেহ হতে থাকে। কারণ ওর বাবা মা আমার সাথে কেমন যেন শীতল ব্যবহার করেন।

এখানে বলে রাখা ভাল, বেশির ভাগ সময়ই মাহমুদই আমাদের বাসায় ফোন করত...একবার করলে আর রাখতে চাইত না। ঘন্টার পর ঘন্টা ওর প্যাচাল শুনতাম। অনেক সময় বিরক্ত হয়ে ওকে লাইনে রেখে আমি ৫-১০ মিনিট এদিক ওদিক ঘুরে ও এসেছি। ফিরে এসে দেখেছি, ও এখনো কথা বলে যাচ্ছে, একা একা।

একদিন আমি বাসায় নেই, ফিরে শুনি ও বেশ কয়েকবার ফোন করেছিল। আমি কাল ব্যাক করলাম, যথারীতি ধরলেন ওর আম্মা। আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন, বললাম। তারপর আমাকে ধমকের সুরে জিজ্ঞেস করলেন, মাহমুদকে কেন ফোন কর? কি দরকার তোমার ওর কাছে?

শুনে আমার মাথায় আগুন ধরে গেল। আরে মহিলা, আমার ওর কাছে কোন দরকার নেই। বরং ওই রোজ আমাকে ফোন করে বিরক্ত করে। আপনার আমাকে ধন্যবাদ দেয়া উচিত, যে আমি এখনও দিনের পর দিন ওর প্যাচাল শুনি। এসবের কিছুই বললাম না অবশ্য। শুধু বললাম, মাহমুদ আমাকে ফোন করেছিল, আমি বাসায় ছিলাম না, তাই কল ব্যাক করলাম। আচ্ছা ঠিক আছে রাখি। এই বলে রেখে দিলাম।

রাগে দুঃখে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এরপর রাগ করে অনেক দিন ওর বাসায় ফোন করি নি। কিন্তু ও ঠিক ই প্রায়ই ফোন করত। মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করতো, আমি ই খালি তোকে ফোন করি, তুই আমাকে কখনো করিস না, আর সবার মত তুই ও আমাকে ভুলে গেলি?

জবাবে আমি কিছু বলি না। বিভিন্ন ব্যাস্ততার অজুহাত দিই। অনেক সময় সত্যি সত্যি ব্যাস্ত থাকি ও। কিন্তু ও ঠিক ই প্রতিদিন ফোন করে। কারণ ওর ফোন করার আর কোন জায়গা নেই। ওর জন্য মায়া ও লাগে, কিন্তু প্রতিদিন এক প্যাচাল শুনতে কার ভালো লাগে? তাও কিছু বলিনা।

ওর ফোন করার মাত্রা বাড়তে থাকে। সকাল নেই, রাত নেই। যখনই ওর কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করে, আমাকে ফোন করে। জড়িয়ে জড়িয়ে কথা বলে, মাঝে মাঝে কাঁদে, আবার মাঝে মাঝে গান ও গায়।

এরপর শুরু হল নতুন উতপাত। ও মাঝে মাঝেই রাত ৩ টা, ভোর ৫ টা ইত্যাদি সময় ফোন করত। রাত ৩ টার সময় ফোন করে বলে,তোর বন্ধু এদিকে ঘুমাতে পারছে না, আর তুই ওদিকে ঘুমাচ্ছিস? ইত্যাদি।

আমরা যখন ফার্ষ্ট ইয়ার ফাইনাল দেই, তখন হঠাত একদিন ফোন করে বলে ওর বিয়ে। ওর ভয়ানক রকম সেক্স করতে ইচ্ছে করে, ব্লু ফিল্ম টিল্ম দেখে মাথা আরো গরম। সেই জন্য বাবা মাকে বলে বিয়ের ব্যবস্থা করেছে। যে বাবা মা কোন দিন ওকে স্বাধীনতা দেয় নি, তারাই এখন ছেলের বিয়ে দিতে রাজি। এখনো কলেজে উঠেনি, মাথা উন্মাদ প্রায়, সে ছেলেকে তারা এখন বিয়ে দিবেন। কারন, তাদের মনে হয়েছে বিয়েই এখন এক মাত্র চিকিতসা।

বিয়ে হল, মেয়ে ঢাকার বাইরের, বোধ করি ছেলে সম্বন্ধে কিছুই জানত না। মাহমুদদের মোহাম্মদপুরে নিজেদের বাড়ি আছে, অবস্থা সম্পন্ন। অতএব মেয়ে জোগাড় করা কোন ব্যাপার হল না।
কিন্তু বিয়ে ২ মাসের বেশি টিকলো না। টিকার কথা ও না।

এবারের পরিণতি হল আরো ভয়াবহ। মাহমুদ বাসায় ভাংচুর শুরু করল। ওকে উত্তেজিত দেখলেই ওর বাবা মা ধরে বেঁধে ওকে ইঞ্জেকশন দিয়ে শান্ত করে ফেলেন।

এর মধ্যে মাহমুদ, ওর বাবা মা একদিন আমাদের বাসায় এসে হাজির। আমার পরের দিন ইন্টারের প্র্যাক্টিকাল পরীক্ষা, এর মধ্যে তারা এসে হাজির। ছেলে কাঁদে, ছেলের মা ও কাঁদে, ছেলের বাবা অপ্রস্তুত হয়ে বসে থাকেন ড্রইং রুমে। মাহমুদের মা আমার কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চান, তিনি চান আমি যেন তার ছেলের সাথে আবার নিয়মিত মিশি, তাকে সুস্থ করে তুলতে সাহায্য করি।

তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করি। কথা দেই, মাহমুদকে আবার নিয়মিত সঙ্গ দিব।

মাহমুদ এর পর ও স্বাভাবিক হয় নি। গত বছর দেশে গিয়ে শুনতে পারি ও ২য় বিয়ে করেছে।

এই হল আমাদের মাহমুদের কাহিনী। যাদের সাথে ও এক সময় পড়াশোনায় পাল্লা দিত, সেই রাজীব আজ চিটাগাং মেডিকেল থেকে পাস করে প্রাক্টিস শুরু করেছে, আমি আমেরিকায়, নিঝুম ইংল্যান্ড এ, এরকম প্রায় সবাই ই কোথাও না কোথাও সেট হয়ে গেছে। আর হতভাগা মাহমুদ টেনেটুনে কোনমতে ইন্টার পাশ করেছে আমরা ইন্টার পাস করার ৪ বছর পরে।

ও আজো কাঁদে এসব কথা মনে করে। সান্তনা দিতে দিতে আজ আর সান্তনা দেয়ার ও ভাষা নেই।

এত শিক্ষিত , ডাক্তার অভিভাবক হয়ে একমাত্র ছেলের জীবনটা তার বাবা মা কিভাবে আস্তে আস্তে ধবংস করে ফেললেন?
কি হত মাহমুদকে আর দশটা ছেলের মত সাধারন জীবন যাপন করতে দিলে? ঘরে বন্দি করে না রেখে সবার সাথে মিশতে দিলে? কিংবা ভুল সময়ে বিয়ে না দিলে?
ওর জন্য সত্যিই আমার খুব দুঃখ হয়।

(রেনেট)

ranet_usa@yahoo.com


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

দুঃখজনক ।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

কী আর বলব?
লেখা সম্পর্কে বলি- খুব ভালো।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

মুশফিকা মুমু এর ছবি

ইস বেচারা ..

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

বিপ্লব রহমান এর ছবি

তোমাদের সন্তানেরা তোমাদের নয়!


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

নিঝুম এর ছবি

রেনেট সময়ের অভাবে অনেক কিছু লিখতে পারেনি।লেখা পড়ে বুঝা যাচ্ছে।আসলে মাহমুদের ব্যাপারটা এতই দুঃখজনক আর কষ্টের যা নিজের চোখে না দেখলে বোঝা অসম্ভব।আমি ক্লাসে খুব একটা ভালো ছাত্র ছিলাম না। আর মাহমুদ ছিল আমাদের ফার্স্ট বয়। ফলে ঐতিহ্যগত ভাবেই ভালো আর খারাপ ছাত্রের যে দুরত্ব থাকে তা স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের মধ্যে ছিল।কিন্তু কোন এক অদ্ভুত কারনে মাহমুদ একদিন রাত তিনটায় আমাদের বাসার ঠিকানা চিনে চলে আসে। রাত তিনটায় কারো বাসায় আসা সঙ্গত কারনেই বাংলাদেশে খুব একটা স্বভাবিক ভাবে নেয়া হয় না।কিন্তু আামার মা-বাবা,ভাই-বোনে মাহমুদের ব্যাপারটা আমার কাছে শুনে তার প্রতি মমতার হাত বাড়িয়ে দিল।আমার মা হয়ে গেল তার খুব কাছের বন্ধু।ওকে নিয়ে অনেক ঘটনা অনেক কষ্টের স্মৃতি আছে।আজ সেগুলো নিয়ে আর লিখতে মন চাইছে না।বরং চ একটা মজার ঘটনা বলি-

মাহমুদ তখন আমাদের বাসায় নিয়মিত আসা শুরু করেছে।আন্টি মানে মাহমুদের মা আমাকে ফোন করে বার বার জেনে নিচ্ছেন সব ঠিক আছে কি না।আর বার বার লজ্জিত হতে লাগলেন এই বলে যে, মাহমুদ আমাদের অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলছে।আমরা যেন কিছু মনে না করি।

আমি হাসি।আন্টি তার ছেলে বলে এই কষ্ট পাচ্ছেন।আমার একজন বন্ধুর এই করুণ উপাখ্যান দেখে আমিও যে ভালো নেই, আমার মা যে মাহমুদের জন্য রাত দিন নামাজে দোয়া করে যাচ্ছেন এই কথা আর আন্টিকে কেন যেন বলতে ইচ্ছা হয় নি।যাই হোক মাহমুদ কাজী আমাদের বাসায় এসে একটু নরমাল থাকে।এই বা কম কি!!

আমার বাবা প্রচন্ড রাগী আর বদমেজাজী মানুষ।(আড়লে তাঁকে আমরা টাইগার ,বস,বিগ ড্যাডি,ডিক্টেটর ইত্যাদি নামে ডেকে থাকি)রেগে যাওয়া তার হবি।ধরা যাক তিনি কোন একদিন রেগে যাবার মত কিছু পেলেন না, তখন ব্যাপারটা হয়ে যায় আরো ভয়ানক। কারন রাগ করবার মত কিছু না পাওয়াতে তার রাগ বেড়ে যেত আরো তিন গুণ বেশী।তাই আমরা সব সময় চাইতাম তার রাগ আর মেজাজটা নিয়মিত থাকুক।অবশ্য এই ব্যাপারে বলির পাঁঠা হতে হোতো আমার কিংবা ছোট ভাই নিলিম কে। তো ,মাহমুদ কাজী'র এইরকম অবস্থা শুনে বাবা তাচ্ছিল্যের একটা হাসি হেসে বললেন," ডাক তোর ফ্রেন্ড কে। ও কোন পাগল টাগল কিছুই না। এইসব ভবের পাগল বহু দেখেছি।ডাক এক্ষুণি..."

আমি বাবাকে বোঝানোর অপঃচেষ্টা চালালাম, "বাবা। বাদ দেন।অন্য আরেক দিন "

বাবা আমার দিকে তাকালেন।এই দৃষ্টির নাম আগুন দৃষ্টি না।এর নাম ফায়ার ধিকি ধিকি দৃষ্টি। যা মানুষ কে শুধু পোড়ায় না।ছিন্ন ভিন্ন করে দেয়ও বটে!!!

যাই হোক মাহমুদ কে ডাকলাম।বাবা তাকে সামনে পেতেই হেসে দিলেন।বাবার হাসি আমি খুব বেশী দেখিনি বলে আমার মনে হতে লাগলো, বাবা মনে হয় ইদানীং মুখের অংগভঙ্গি বদলিয়ে কথা বলছেন।

বাবা মাহমুদ কে অনেক নসিহত করলেন।
" দেখ বাবা মাহমুদ, আমি জানি তুমি একটা ভং ধরে আছ।তোমার কিছুই হয় নি।খামাখা বাবা মা কে কষ্ট দাও কেন? শোনো ,আজকে তুমি আমাকে বল তোমার সমস্যার কথা।সব কিছু খুলে বল।কোন সমস্যা নাই।আমি তো তোমার বন্ধুর মতন।"

মাহমুদ স্বাভাবিক ভাবেই বলে, " না আংকেল।আমার কোন সমস্যা নাই।বিশ্বাস করেন।সবাই আমাকে ভুল বোঝে।আপ্নি অন্তত বিশ্বাস করেন!"
আমার বাবা তারপরেও হাল ছাড়েন না। বলেন, "আমি জানি তুমি বলতে চাচ্ছ না।কিন্তু তোমাকে বলতেই হবে।মনের গোপন কথা গুলো বলে তুমি হালকা হও।"

অনেক পীড়াপিড়িতে মাহমুদ তার সমস্যা বলতে রাজী হয়।

বাবা মাহমুদের সামনে ঝুঁকে আসেন..."হ্যা বল। বাবা মাহমুদ...বল...বল।।স্পিক আউট..."

মাহমুদ বলে, আংকেল...আংকেল...

-আরে আংকেল, আংকেল কি? বল, কি সমস্যা?
মাহমুদ এবার বলেই উঠে...
আংকেল ...আমার না... সেক্সুয়াল প্রবলেম। আপনার কাছে অষুধ আছে আংকেল???

মাহমুদ উত্তরের জন্য বাবার দিকে তাকিয়ে থাকে।

পরিশিষ্টঃ
আমার বাবা এখন আর মাহমুদ কে "ভবের পাগল" কিংবা "ভং ধরেছে" এই জাতীয় কথা বলেন না।শুধু মাহমুদের কথা উঠলেই আমার টাইগার বাবার মুখটা গম্ভীর থেকে গম্ভীরতর হয়ে যায়...

রেনেটের পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।মাহমুদকে আজকে আবার খুব মনে পড়ে গেলো।
--------------------------------------------------------
শেষ কথা যা হোলো না...বুঝে নিও নিছক কল্পনা...

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

মাহবুব লীলেন এর ছবি

অনেক বাবা-মাই আছেন যারা ছেলেমেয়েদেরকে ফার্মের মুরগির মতো খোপের মধ্যে রেখে বড়ো করেন
আর ওগুলো বড়ো হয়ে একেকটা হয়ে উঠে তুলতুলে পার্ভার্টেড..

সিরাত এর ছবি

এটা আমাদের স্কুলেও হয়েছে রে ভাই।

ওয়াইল্ড-স্কোপ এর ছবি

দুঃখজনক কিন্তু আপনার লেখার স্টাইল দেখে হাসি চাপিয়ে রাখতে পারলাম না

আরে মহিলা

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

সাফি [অতিথি] এর ছবি

অবাক ব্যপার, আমাদের এক বন্ধুর ও কাছাকাছি অবস্হা, সেও এক মাত্র সন্তান এবং তার বাবাও চিকিৎসক। তবে এক বন্ধুর সাহায্যে ময়মনসিংহ মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়ে যায় আর বাবার প্রভাবে পাশ করে যায়। তবে এখন সে কি করছে আমার ঠিক জানা নেই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।