উস্কো খুশকো চুল, মলিন মুখায়ব, একটি ছেড়া গামছা, ময়লা লুঙ্গি, এক্সারসাইজ গেঞ্জি আর হাতে হয় কাস্তে, কোদাল অথবা যেকোন কৃষি উপকরণ। এই আমাদের কৃষক। আমাদের প্রাণ। মাটির গন্ধে, মাটির সরব ছন্দে তার প্রতিটি পদক্ষেপ দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। ঘামের গন্ধই তার কাছে বেহেশতের খুশবু। নিতান্তই সহজ সরল আর মাটি মনস্ক এই মাটির মানুষদের জীবনে ঘটে নানা উত্থান পতন। বিন্দু বিন্দু ঘামে ইঞ্চি ইঞ্চি জমি সিক্ত করে ফসল বুনে। আসে ঝড়, শিলা, বন্যা, সিডর; জপতে থাকে স্রষ্টার নাম বারংবার। সমস্ত চিন্তা তার শস্যের মাঠে। দূর্যোগের সম্ভাবনায় তার গলা শুকিয়ে আসে, চোখ বড় বড় করে উপরে তাকিয়ে থাকে। কখনও বেঁচে যায় আবার কখনওবা ভেসে যায় ফসল, স্বপ্ন। তবু সে থামেনা, বিপুল বিক্রমে ঘুরে দাড়ায়। আর এই ঘুরে দাড়ানোর সংবাদ মিডিয়ায় দেখে/শুনে বিত্তবানেরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
প্রাণ বিনে জীব বাঁচেনা, কৃষক চাড়া বাংলাদেশ ও বাঁচবেনা। আমরা কি পারবো, ১টি বার্গার খেয়ে দুপুরের খাবার সেরে ফেলতে, অথবা নুডুলস খেয়ে রাতেরটা ? কখনওইনা। ভাত ছাড়া বাঙ্গালীর তৃপ্তি আসেনা। কিন্তু আমাদের কৃষকরা কি সুখে আছে? তাদের জন্য কি পেরেছি কৃষিবান্ধব বানিজ্য অথবা সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে? তাদেরকে পিষে যাচ্ছে মধ্যস্বত্তভোগী আর দাদন ব্যবসায়ীরা। নয় ছয় বুঝিয়ে তাদেরকে ঠকাচ্ছে ব্যাপারীরা। লুটে নিছে কাড়ি কাড়ি টাকা।
এবছর, সারা দেশে কৃষি ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে। মাঠভর্তি ফসল দেখে কৃষকের খুশি কে দেখে। কর্তন পরবর্তী বিক্রয় কালীন সময়ে এই খুশি আর থাকেনা। টাকা হাতে নিয়ে শুকনো মুখে মাথাটাকে ডানে বাঁয়ে নাড়িয়ে আফসোসের সুরে বলে, "নাহ হলোনা"। কিন্তু হলোনা কেন? হবেইনাবা কেন? দেশের মাটি আঁকড়ে ধরে রেখে সেই মাটির বুক ছিরিয়ে ফসল বুনে ফোটাফোটা ঘামে অর্জিত ফসলের নায্য মূল্য কেন পাবেনা আমাদের মাটির শেষ্ঠ সন্তানরা? বাম্পার ফলন এত এত শুনি তবুও কেন ১০০ টাকা দিয়ে তরমুজ কিনে খাব? কৃষকতো পায় মাত্র ৩০/৩৫ টাকা। বেপারীদের বাজারজাতে খরচ হয় কত?
দেশের উপকূলী জেলা নোয়াখালীতে এবার ধান ও তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। খুবই খুশির কথা। কিন্তু এই খুশির নেপথ্য নায়ক যারা, তারা কতটুকু খুশি? জেলা কৃষি সম্প্র্রসারন অফিস সুত্রে জানা যায়, এবার নোয়াখালী জেলায় প্রায় ৫২হাজার হেক্টর জমিতে বরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। কিন্তু আবাদ করা হয়েছে ৫৩ হাজার ১৩৮ হেক্টর জমি এর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ লক্ষ ১৭ হাজার মেট্রিক টন চাল।
এদিকে ফসল কাটার সময় এখন দেখা যাচ্ছে কোথাও কোথাও হাইব্রিড ধান হেক্টর প্রতি ৭/৮ মেট্রিক টন পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে। ফলে লক্ষমাত্রার চেয়ে উৎপাদিত ফসলের পরিমান অনেক বেশি। এ হলো নোয়াখালীর অবস্থা, সারাদেশের রূপও এরূপ।
বাম্পার ফলন হলেও কৃষকের ঘরে এখনো পৌঁছেনি ভুর্তকির টাকা। ধান কাটা শেষ হবার পূর্বে আদৌ তারা ভুর্তকির টাকা পাবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে কৃষকদের মাঝে ক্ষোভের কমতি নেই।
এ বছর পটুয়াখালী এবং নোয়াখালীতে তরমুজ উৎপাদনে রেকর্ড হয়েছে। নোয়াখালী কৃষি সম্প্র্রসারন অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, চলতি মওসুমে জেলার চরাঞ্চলে ৪ হাজার ২’শ একর জমিতে তরমুজের আবাদ করা হয়। এতে উৎপাদিত তরমুজের পরিমান ২ লক্ষ ১০ হাজার মেট্রিক টন।
কৃষক ও পাইকাররা জানায়, উৎপাদকের কাছ থেকে খুছরা ক্রেতা পর্যন্ত ৪ হাত বদল হয়ে একটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে তিনগুনের বেশি দামে। জমি থেকে কৃষকের ৩০/৩২টাকা দামে বিক্রি করা তরমুজ শহরে বিক্রি হচ্ছে ১শ থেকে ১২০ টাকায়। গতবছরের তুলনায় তরমুজের উৎপাদন ব্যায় বেড়েছে তিনগুন ফলে কৃষকের লাভের পরিমান কমে গেছে ২৫ শতাংশেরও বেশি। অন্যদিকে লাভের বিরাট একটি অংশ চলে যাচ্ছে মধ্যসত্ত্বভোগীদের পকেটে। এভাবে চলতে থাকলে কৃষক বাঁচবে কি করে? জীবিকার তাড়নায় হয়তো চাষ করে যাবে, কিন্তু বাঘার বল কতদিন?
উন্নত প্রযুক্তি, আধুনিক চাষ ব্যবস্থাপনা, আর্থিক সহায়তা আর দাদনের দৌরাত্বে কৃষকরা কোনঠাসা হয়ে যাচ্ছে। নোয়াখালীর কৃষকদের নিয়ে আমরা এটি কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। যার সাফল্যের উপর নির্ভর করবে পুরো দেশে এর সম্প্রসারণের কাজ। "পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড এ্যাকশন নেটওয়ার্ক-প্রাণ'র" উদ্যোগে ই-ভিলেজ নামক এই আইটি প্রতিষ্ঠান কৃষকদের উন্নয়নে কাজ করে যাবে। যে যে বিষয় নিয়ে আমাদের এগিয়ে যাওয়াঃ
১. চাষ ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া।
২. উন্নত প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া।
৩. স্বমন্বিত চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করা।
৪. আঞ্চলিক বিশেষায়িত পণ্য সমূহের লাভজনক বাজার সৃষ্টি করা। যেমন সূবর্ণচর এলাকার তরমুজ, রামগতির দই, লক্ষীপুরের সুপারি ইত্যাদি।
৫. কৃষিজ পণ্যের বাজারজাতকরণে প্রত্যক্ষ সহায়তা করা। প্রয়োজনে উম্মুক্ত বিক্রয় কেন্দ্রের ব্যবস্থা করে দেয়া।
৬. সার ও কীটনাষক ব্যবহার কলাকৌশল। এবং আরও কিছু বিষয়।
এ বিষয়ে সম্মানিত ব্লগারদের পরামর্শ আহবান করছি। আপনাদের যেকোন পরামর্শ এবং তথ্য আমাদেরকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।
/
sobak.
dateof birth-30-07-1985
dist: Noakhali
Bangladesh
contact no. +8801732 31 48 41
email. .
মন্তব্য
আপনাদের উদ্যোগের কথা শুনে ভালো লাগলো। তবে কৃষকরা মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের হাত থেকে কিভাবে মুক্তি পেতে পারে, প্রসঙ্গ উত্থাপক হিসেবে সেই বিষয়ে আপনার কাছ থেকে প্রয়োগসিদ্ধ সামধানের প্রস্তাব আশা করছি। আপনাদের উদ্যোগে যে সচেতনতা ছড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তাকে সাধুবাদ জানাই। তবে চেতনাপ্রাপ্ত কৃষক কি করে ন্যায্যমূল্য পেতে পারেন সেই বিষয়ে পরিস্কার বক্তব্য পেলে ভালো লাগতো।
তরমুজের বাম্পার ফলন খুবই সুখবর। তবে চালের দুর্দিনে তরমুজ ফলনের গল্প কিছুটা হলেও বিরক্তি উৎপাদন করছ। চালের উৎপাদনে যে ঘাটতি গত বছর পাঁচেকে দেখা দিয়েছে সেইখানেও পর্যাপ্ত আলোকপাত প্রয়োজন।
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
এই মূহুর্তে আর এডিট করার ইচ্ছে নেই। তবে পরামর্শগুলোর ভবিষ্যতে প্রয়োগ ঘটাবো।
মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
এডিট না করে, মন্তব্যের ঘরে জানাতে পারেন।
ভালো উদ্যোগ...।
-নিরিবিলি
নতুন মন্তব্য করুন