দুই হাতে লেখা ১

স্পর্শ এর ছবি
লিখেছেন স্পর্শ (তারিখ: সোম, ২৮/০৪/২০০৮ - ১২:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[ নিজেকে নিয়ে একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে এই সিরিজের সূচনা। দুই হাতে লেখার এক্সপেরিমেন্ট! যথারীতি আব্‌জাব গল্প। বিশেষত্ব হচ্ছে আমি ঘন্টায় কয়টা গল্প লিখতে পারি এটা তার একটা স্ব-পরীক্ষা। গল্পের মান সম্পর্কে তাই কোন নিশ্চয়তা দিতে পারছিনা। হিসেবের জন্য মোবাইলে টাইমার অন করেছি। টিক্‌ টিক্‌ টিক্‌ ... গল্প শুরু হল!]

শির শির!

প্রায় সন্ধ্যা। রিক্সা চলছে পুরান ঢাকার আগামসি লেন দিয়ে। আশেপাশে প্রচুর অলিগলি রাস্তা। এই লেনও কম অলিগলি না। রিক্সা চালক আমিন মিয়া। প্রায় শেষ যৌবনে পৌছে গেছে। বয়স বত্রিশ হবে (বত্রিশি পাঠক হার্ট হবেন না। মনে রাখবেন এটা আব্‌জাব গল্প।তার উপর দুই হাতে লেখা!!)। মাগুরার ছেলে। ঢাকায় এসেছে নতুন। পুরাণ ঢাকার গোলক ধাঁধা এখনো বুঝে ঊঠতে পারেনি। আরোহী ছেলেটার মধ্য যৌবন, বয়স এই চব্বিশ হবে। আমিন মিয়ার গেঁও সরলতা এখনো কাটেনি। আরোহীর সাথে গল্প জুড়তে চাইছে। আরোহী বিরক্ত ডিকটেশন দিতে দিতে। এই আবাল রিক্সাওয়ালা কিছুই চিনে না! তার উপর খালি আজাইরা প্যাচাল পাড়ে।
[এই সময় আমরা ক্যামেরা আরেকটু জুম করি। মাইক্রোফোনের ভলিউমও বাড়িয়ে দেই]

-আজিব এক ঘটনা দেখলাম স্যার! মাথাডা পুরা ঘুইরা গেছে! পুরা বেসম্ভব ব্যাপার!!
-ডাইনে যাও।
রিক্সা ডাইনের লেনে ঢুকে পড়ে।
-রিক্সায় উঠছিল এক পোলা আর এক মাইয়া! বঝলেনতো? জীবনে এইরম মাইয়া দেখিনাই। পুরা ডাকাইত!
মেয়ের কথা শুনে ছেলেটা একটু খেয়াল করে মনে হয়।
-কি করেছে?
-প্রথমে আমি কিছুই বুঝিনাই। হেরা দুইজন উঠলো কইলো ফুলার রোড যাইবো। আমি নিয়া রওনা দিসি। একটু পর পোলাডা মায়াডারে কয়, “ঐ গায়ে হাত দিবানা!!” আমি ভাবি...
-সামনের বামের গলিতে ঢুকো।
রিক্সা বামে ঘুরে।
-বঝলেন, তারপর মায়াডা খালি পোলাডার এদিক ওদিক হাত দেয়! আর হাসে!! এমন সুময় আইলো বৃষ্টি! ...
-এইবার ডানে।
রিক্সা ডানে ঘুরে।
-আমি পর্দা বাইর কইরা দিলাম। তখন শুরু হইলো কিয়ামত!! পোলাডাও এদিক ওদিক হাত দেয়। আর হাসে। মায়াডাও হাসে!! সেই হাসি শুনলে...
-ঐ মিয়া রিক্সা ঘুরাও ঘুরাও! বায়ে ঘুরবা না? চিনোনাতো আমার বালডাও খালি প্যাচাল!
রিক্সা বায়ে ঘুরে। আমিন মিয়া সেই হাসির কথা মনে করে কেমন যেন শির শির অনুভব করে মেরুদন্ডে। এই গল্প সে শুনিয়েই ছাড়বে। নাছোড় বান্দা! আবার শুরু করে।
-... ভাগ্যিস বৃষ্টির আইসিলো। ঝম ঝমানির মধ্যে অত কিছু শুনবার পারিনাই। খালি কিচ্ছুক্ষন পর পর চাকুম চুকুম শব্দ আর...
-রাখ রাখ, বায়ে ঐ দোকানের সামনে রাখ।
রিক্সা থামে। একটা মোটামুটি চেহারার মেয়ে উঠে পড়ে রিক্সায়। আমিন মিয়ার গল্পের গুড়ে বালি পড়ে। আরোহী ছেলেটার এখন আর ঐ গল্প শোনার টাইম নাই। সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে। ছেলেটা রিক্সাওয়ালা কে বলে
-ফুলার রোড চল।

[ক্যামেরা জুম আঊট হয়।]

আবারো আমিন মিয়ার শিরদাঁড়া বেয়ে একটা পরিচিত শির শিরানি চলে যায় তার নিম্নাঙ্গের দিকে। আরোহীর সিট থেকে কিছু অদ্ভুত শব্দের একটা অর্কেস্ট্রা সেই শির শিরানিতে তাল দিতে থাকে। তার পর এক সময় সেই অদ্ভুত অর্কেস্ট্রার বাদ্যকারদের সে রেখে আসে উদয়ন স্কুলের সামনে। যেখানে অনেক আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল একটা কাঠগোলাপের গাছ। ফুটপাথে কিছু শুভ্র ফুলের বাসর সাজিয়ে...

-----
স্পর্শ


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

গল্প হয়েছে মোট ৫ টা!! ইয়ে, মানে...
গুনগত মান তথৈবচ!!
তবে মজা পাওয়া গেছে!!
বাকি গুলাও পোস্ট করে দিব ভাবতেছি!

--------
স্পর্শ

শামীম এর ছবি

বিশেষত্ব হচ্ছে আমি ঘন্টায় কয়টা গল্প লিখতে পারি এটা তার একটা স্ব-পরীক্ষা।

একটা ছোট ঝরণা থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে বড় একটা পাত্রে পানি পড়ছে অনেকক্ষণ ধরে। পাত্রটার নিচে একটা কল আছে ... সেটা বন্ধ করা।

চুঁইয়ে পড়তে পড়তে পানি প্রায় ভরভর অবস্থা। এই সময়ে কেউ যদি নিচের কলটা খুলে দেয় তবে সেটা দিয়ে জমা পানি কলকল করে বেরিয়ে আসবে। পরিমানের উপর নির্ভর করে এই ধারা চলতে পারে কয়েক ঘন্টা।

পানি বেরোনোর হার কিন্তু চুঁইয়ে এসে জমা হওয়ার হারের চেয়ে অনেক বেশি। তাই দ্রুত পাত্রের ভেতরের পানির গভীরতা কমতে থাকবে। কয়েক ঘন্টা পরে সমস্ত পানি বের হয়ে গেলে তখন চুঁইয়ে আসা পানির সমান হারে কল থেকে পানি বের হবে।

সুতরাং ঝরণা থেকে কী বেগে/হারে পানি বের হয় সেটা পরীক্ষা করতে চাইলে পাত্র খালি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা ভাল। তা' না হলে মাপটা সঠিক মাণ নির্দেশক হবে না।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

হুমম,
আপনার কথাটা বুঝতে পেরেছি। না ঐভাবে লিখিনি। এমনিতে গল্প একটু যত্ন করেই লিখি। এইটা একটা ভিন্ন পরীক্ষা ছিল। হুঠ করে সকালে এসে টাইমার অন করে যা মনে আসে লিখে ফেলেছি। আগের কিছু আইডিয়াও ছিল। ঐ গুলা লিখিনি।

আপনার কথাটাও মাথায় থাকল। যদি নেক্সট কয়েক দিনের মধ্যে এরকম আরো কিছু "রাইটিং সেশন" করতে পারি তাহলে সঠিক ব্যপার টা বুঝা যাবে। হাসি
আমি নিজেও ফলাফলটা জানার জন্য উদ্গ্রীব।

গল্পটা পড়েছেন দেখে খুশি হয়েছি।
আর অনেক ধন্যবাদ কমেন্টের জন্য। হাসি
এই সিরিজের পরের গল্প গুলোতেও আপনার কমেন্ট আশা করছি।

শুভেচ্ছা

--------
স্পর্শ

বিপ্রতীপ এর ছবি
রায়হান আবীর এর ছবি

রেস্ট্রিকটেড...

লেখা ভালো হইছে, তবে আগেরগুলার মতো বেশী জোশ না। মন খারাপ
---------------------------------
জ্ঞানীরা ভাবলেন খুব নাস্তানাবুদ করে ছাড়া গেছে...আআআহ...কি আরাম। বিশাল মাঠের একটি তৃণের সাথে লড়াই করে জিতে গেলেন।

ছোট্ট তৃণের জন্য অপরিসীম ঘৃণা।

অতিথি লেখক এর ছবি

এই সিরিজের গল্প গুলো এর চেয়ে ভাল হববার আশা নাই ! ইয়ে, মানে...
এক্ষেত্রে গুনগত মানের চেয়ে পরিমানই মুখ্য। হাসি
তবে কিছুটা যত্ন করে লেখা কিছু গল্পও হয়ত পোস্ট করতে পারি। ভালো লাগবে কিনা জানিনা।

কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ!! হাসি

পরিবর্তনশীল এর ছবি

বাহ!

---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

অতিথি লেখক এর ছবি

হাসি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

বেচারা আমিন মিয়া! চোখ টিপি

অতিথি লেখক এর ছবি

আরে বেচারা বলেন কেন? দেঁতো হাসি

আসলে রাস্তায় এরকম কিছু দৃশ্য দেখার পর একটা থট এক্সপেরিমেন্ট করলাম রিক্সাওয়ালার অনুভুতি নিয়ে।
তাড়াহুড়া করে না লিখলে আরেক্টূ ডিটেইলে যাওয়া যেত। খাইছে

ধন্যবাদ।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

রিকশাওয়ালা আসোলেই নতুন
নাহলে সে খুশি না ভয়ে চিৎকার করত রিকশার ধাপাধাপি করে রিকশার হুড এবং চাকার আয়ু কমিয়ে দেবার জন্য

০২
হুড ভেঙে পড়ার কাহিনীও কিন্তু আছে বৃষ্টির দিনে

০৩

গল্পের স্টাইল চমৎকার

অতিথি লেখক এর ছবি

হুডও ভেঙ্গে পড়ে নাকি!!! অ্যাঁ

গল্পের স্টাইল ভাল লেগেছে জেনে আমি খুবই খুশি।

আপনার গল্পের স্টাইল অসাধারণ। আমি আপনার একজন নিয়মিত পাঠক। হাসি

আপনার কমেন্ট পেয়ে যারপরনাই খুশি হয়েছি!
অনেক ধন্যবাদ।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আমি কাঠগোলাপের গাছ চিনি না।
তয় গল্প ভালো লাগছে। হাসি
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

অতিথি লেখক এর ছবি

কাঠ গোলাপ চিনেন না!!
হায় হায়!

আজই ফুলার রোডে ঊদয়ন স্কুলের সামনে চলে যান। ঐখানে যে কাঠ গোলাপ গাছের কথাটা বলেছি সেটা এখন পুর্ণসাজে সেজে আছে! অসংখ্য সাদা ফুলে!!

--------
স্পর্শ

আকতার আহমেদ এর ছবি

গল্পটা পড়লাম
আপনার লেখার স্টাইলটা বেশ সাবলীল । যত্ন নিয়ে লিখলে পাঠক অনেক চমত্কার গল্প পাবে আপনার কাছ থেকে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় । শুভ কামনা থাকল আপনার জন্য

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ ভাই! হাসি

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍বেশ লাগলো।

পুনশ্চ. শুধু দুই হাত কেন? পা কী দোষ করলো? দেঁতো হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব দেবো। কিন্তু কী পাবো তার বদলে? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

অতিথি লেখক এর ছবি

খাইছে
পা কোন দোষ করেনি। ভরসা দিলে সেটাও ট্রাই করতে পারি চোখ টিপি

আর বস্‌ আমি আসলে এই লেখায় ঢুকিনি আর। তাই খেয়ালই করিনি যে নতুন কমেন্ট এসেছে!!

অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ! আপনার কমেন্টের জন্য। হাসি
এক্সপেরিমেন্টালি লেখা গল্প, ভাল লেগেচে যেনে আমি প্রচন্ড খুশি। হাসি

----
স্পর্শ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।