ফুটবল ফুটবল

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২৯/০৪/২০০৮ - ১:৫০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ফুটবল ফুটবল !!!

অনেকদিন ধরেই নানা কারনে লেখালেখি বন্ধ। সময়ের অভাব এর একটি প্রধান কারন আর এর সাথে যুক্ত আছে নানারকম অপ্রধান কারন। অপ্রধান কারনের একটি হলো লেখার পর যদি নিজে সেই লেখা পড়ি তাহলে মনে হয় কিছুই হয়নি, এটা কোথাও পাঠানোর মানে হয় না, চলে যায় লেখা কোনদিনও কোথাও না পাঠাবার খাতায়। বন্ধু মামুন সেদিন ফোন করেছিল খোজ খবর নিতে, কথায় কথায় মুক্তমনা আর লেখালেখির কথাও এলো। মামুনের কথা মুক্তমনায় লিখে লাভ নেই, এখানে যারা লেখা পাঠায় কিংবা পড়ে, এদের জীবন সম্বন্ধে একটা সম্যক ধারনা আছে। এই লেখাগুলো আসলে যাদের কাছে যাওয়া দরকার তারাতো লেখাপড়াই জানে না। যারা জানে তাদেরকে জানিয়ে কি হবে। বরং যারা জানে না তাদের জন্য কি করা যায়, সেটা ভাবার সময় এসেছে এখন। মামুনের কথাটাও আমার বেশ মনে লাগলো। দৈনিক সুপ্রভাতের চীফ রিপোর্টার নাসির ভাই অবশ্য নিয়ম করে প্রতি সপ্তাহে একবার করে লেখার জন্য তাগাদা দিয়ে যান। তাগাদার সাথে দেন নানা রকম আশ্বাস - প্রশ্বাস। নিয়মিত কলাম লিখলে কি কি উপকার ভবিষ্যতে হতে পারে তার সুন্দর স্বর্নালী বর্ণনা। কি করে বুঝাই উইকলি করার সময়ের বড্ড অভাব। মাঝে মধ্যে আমাদের মুক্তমনার ফরিদ ভাইও তার স্বভাব সুলভ মিষ্টতার মধ্যে দিয়ে লেখার তাগাদা দেন। কিন্তু নিজের মধ্যে থেকে এতোদিন লেখার কোন তাগাদা অনুভব করিনি। সেদিন বিবিসি’র হাসান মাসুদ ভাই ফোন করেছিলেন, প্রচন্ড খেলাধূলা পাগল একজন মানুষ। তারমধ্যে ফুটবল হলো তার প্রথম পছন্দ। আর আমার খেলাধূলা তথা ফুটবল জ্ঞানের পরিসর কম বর্ণনা করাই ভালো। তার সাথে ফুটবল নিয়ে কথা বলতে বলতেই হঠাৎ মনে হলো এটাই কেনো লিখি না আপাতত। তাতে নাসির ভাইয়ের কথাও থাকে, তিনি প্রধানত চান, ইউরোপীয়ান লাইফ আর বাংলাদেশের লাইফের নানা রকম বিষয় তুলে ধরে এদের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা ভিত্তিক লেখা।
দেশে আধা পরিচিত কারো সাথে দেখা হলে ছোটবেলার কিংবা ছুটে যাওয়া পরিচয় আবার রিফ্রেশ = তাজা করতে হয়। যেমন এখন কোথায় থাকো, কতো বছর আছো, কেমন লাগে, দেশে ফেরার কোন পরিকল্পনা আছে কিনা ইত্যাদি প্রভৃতি। এদের মধ্যে যারা আবার একটু
নতুন জেনারেশন কিংবা দেখায় যে বাংলাদেশে পরে থাকলেও দেশ - বিদেশের শিল্প - সংস্কৃতির অনেক খবরই তাদের জানা। তারা আবার একটু ডিটেলে জিজ্ঞেস করেন। কোন শহরে থাকি, এন্ডহোভেন শুনলে তাদের মধ্যে আবার যারা অতি বিশেষজ্ঞ তারা পেই - এস - ফেই’র খবরাখবর জিজ্ঞেস করতে শুরু করেন। কিংবা এ্যাজ়াক্স বা পি - এস - ভি’র মধ্যে কোনটাকে সাপোরট করি। খেলা দেখতে যাই কিনা ইত্যাদি। এ্যাজ়াক্স বা পি - এস - ভি’ দুটো শব্দই কানে লাগে। ডাচদের এ্যালফাবেট পুরোই আলাদা। তাদের কাছে কোন “জ” আবার “ভ” অ নেই। সুতরাং এটা হলো “এ্যায়াক্স” আর “পেই - এস - ফেই”। লিখে অবশ্য এই বানানে কিন্তু উচ্চারন আলাদা আর কান আজকাল এতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছে। আমাদের দেশের আবাহানী - মোহামেডান ব্যাপার হলো এই এ্যায়াক্স আর পেই - এস - ফেই । এ্যায়াক্স হলো এ্যামষ্টারডাম আর পেই - এস - ফেই হলো ফিলিপ্স এর তৈরী এন্ডহোভেন এর দল। খেলা - ধূলায় আমার দক্ষতা হলো এক্কা - দোক্কা, লুডু, ক্যারাম। পুতুল খেলাকে যদি খেলাধূলা ক্যাটাগরীতে ধরা হয় তাহলে ছোটবেলায় সিগারেটের খালি বাক্স জমিয়ে তার মধ্যে পুতুলের ঘর সংসার। এসব চিরাচরিত অহিংস খেলার কেন যে কোন প্রতিযোগিতা হয় না কে জানে ? অথচ বাংলার ঘরে ঘরে অসংখ্য কোমলমতি বাচ্চা এগুলো আজো খেলছে। এর বাইরে অবশ্য আর একটা খেলা ছিল। সেটা শীতের দিনে বড়ো ভাই - বোনেরা আমাদের ছোটদের আত্মা কাপিয়ে দিয়ে আমাদের স্বপ্নের নায়ক - নায়িকা হয়ে ব্যাডমিন্টন খেলে, তাদের রেকেট যখন ফেলে দিয়ে যেতো সেই রেকেট নিয়ে সাথে ছাল উঠা কর্ক দিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলা। কিংবা সেই কোটে প্রানপাত ঝাপাঝাপি করা। শীতের দিনে বড়রা বাইরে লাইট জ্বালিয়ে উঠোনের মধ্যে নেট টানিয়ে পাড়ার সব এক বয়সীরা এক হয়ে বিরাট হৈ চৈ করে ব্যাডমিন্টন খেলার সেই কালচার আজ আর ঢাকার কোথাও আছে কিনা কে জানে? ফ্ল্যাট কালচারেতো সবাই ফার্মের মুরগীর মতো হয়ে থাকে। আমাদের সময় সেগুলো ছিল অতি সাধারন ব্যাপার। যখন অন্য বাড়িতেও খেলা হতো, নিজেদের বাড়ির দাওয়া থেকে রেকেটের চাপের আওয়াজ কিংবা শট শট শাটলের আওয়াজ পেতাম, হৈ চৈ এর কথাতো বাদই দিলাম। দু চোখ জুড়ে স্বপ্ন থাকতো কবে ওতোটা বড় হবো, বড় বোনদের মতো কোমড়ে ওড়না পেচিয়ে, কেডস পড়ে ভাইদের সাথে পাল্লা দিয়ে হৈ হৈ খেলবো? খেলতে খেলতে এই শীতের সন্ধ্যায়ও ঘেমে নেয়ে যাবো, পয়েন্ট নিয়ে আকাশ - পাতাল এক করা ঝগড়া করবো? সেই ঝগড়া পড়ে বহু দিকে মোড় নিবে, কতো দিন কথা বন্ধ থাকবে, ভাইদের শার্ট ইস্ত্রী করে দেয়া বন্ধ, গল্পের বই এনে দেয়া বন্ধ বাইরে থেকে ইত্যাদি। যদিও ভাইরা শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে বোনদের থেকে নমনীয় ছিল।
এই বড় ভাইবোনদের বদৌলতেই আর একটু জ্ঞান ছিল আবাহানী - মোহামেডান নিয়ে। জানতাম এরা বিরাট কিছু। এরা বীরদর্পে মাঠে খেলবে, সেই নিয়ে বাসায় টিভিতে খেলা দেখতে দেখতে প্রচন্ড লাগালাগি এবং ক্ষেত্র বিশেষে ভাঙ্গাভাঙ্গিও হয়ে যাবে। সব ভাঙ্গাভাঙ্গি যে সজ্ঞানে হবে তা না। হয়ত খেলা দেখতে দেখতে চা খাওয়া হয়েছিল, কাপটা তখনো তোলা হয়নি, আছে কাছে - পিঠে, ওদিকে বল নিয়ে ইউসূফ দৌড়াচছে এদিকে উত্তেজনায় ছোট চাচা কিংবা মেজ ভাইয়া চিৎকার করছে ‘গোল - গো ও ও ও ল’ সাথে তাদের পাও প্রাকৃতিকভাবে ক্রিয়া করছে, ফলশ্রুতিতে কাপ শেষ, বড়চাচী কিংবা মেজচাচীর চিৎকারে রস ভং। মাঝে মাঝে আজানের জন্য
কিংবা বিজ্ঞাপনের জন্য টিভিতে হয়তো খেলার বিরতি কিন্তু তখন রেডিওতে খেলার বিবরনী
হয়তো শোনা যাচ্ছে। ঢাউস সাইজের রেডিওটাকে টিভির উপর বসিয়ে চরম উত্তেজনা সবার
মধ্যে। যে রেডিওতে ধারা বিবরীনি দিচ্ছে তিনিও ভীষন উত্তেজিত সাথে যারা শুনছে তারাও।
হয়তো বল নিয়ে সালাহউদ্দিন দৌড়াচ্ছে সাথে ভাষ্যকার চিৎকার করছে আর এদিকে চাচারা
কিংবা ভাইয়ারা সাথে চিৎকার করছে “ দে -- দে -- দে --। পাও নড়ছে ওই দিকে
লাথির ভঙ্গীতে আর আমরা যারা বড়দের ভাষায় গুড়া - গাড়া তারা নিশ্বাস বন্ধ করে আছি
লাথি না টিভিতে যেয়ে পড়ে আর টিভি ভাঙ্গে। একবার টিভি ভাংগলে কমপক্ষে দশদিনের
মামলা, কে ঠিক করবে কি করবে এই দশ ভূতের সংসারে তারতো কোন ঠিক নেই। যদিও
টিভি দেখার সুযোগ পাই আমরা খুবই কম। শুধু কারটুন ছাড়া আর কিছু ভাগে পড়ে না
আমাদের। মা চাচীরা দেখবে নাটক , বাবা চাচারা খবর, আর সমস্ত কিছুই নিষিদ্ধ আমাদের
জন্য।

আমরা সেই পাচ / ছয় বছর বয়সে টিভির খেলা আর কি বুঝবো আর কি দেখবো, বাসার খেলা তার চেয়ে ঢের ঢের আকর্ষনীয় এবং সুন্দর। আহা কি সে মধুময় সেই সময় ছিল। জনম জনম ধরে সেই সময়কে ফিরে পেতে চাইবো। যদিও আমি ফুটবল, আবাহানী - মোহামেডান কিছুই বুঝতাম না কিন্তু ক্লাশ থ্রীতে পড়ার সময় আমি পাক্কা আবাহানীর সাপোর্টার হয়ে গেলাম, আমার কলেজে পড়া মেজ বোন মনি আপার কারনে। সেই যে সাপোর্টার হ্লাম তা আর বদলানো গেলো না, নৈতিকতার কারনে। শুধুতো ফুটবল না তার সাথে অনেক জাগতিক বিষয় জড়িত, লয়ালিটির ব্যাপারও আছে। সেই বয়সে কলেজে পড়া বোনদের প্রভাব এড়ানোর কথা ভাবাই যায় না। বোনেরা তখন সেই দিনের হার্ট থ্রব রেখার মতো চুলে দুই বিনুনী ঝুলিয়ে কলেজে যায়, চোখে কাজল পড়ে, রেখার সাথে বিনোদ মেহরার ঘর ভাঙ্গা নিয়ে খুবই আলোচনা হয় বাসায়। আমার চোখে ঘোর। মনি আপা যেদিকে ঘুরে আমি ঘড়ির কাটার মতো সেদিকে ঘুড়ি। বাসায় পিঠাপিঠি বড় বোনদের মধ্যে ঝগড়া হয় নানাবিধ বান্ধবী সংক্রান্ত, গল্পের বই, সাজগোজ সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে। আমরা ছোটরা যে যার আইডিয়ালের দলে ভীড়ে যাই এবং নিজেরাও ঝগড়া করি। কি নিয়ে ঝগড়া করি বুঝি না, সুন্দর লাগে ওরা করে তাই আমরাও করি। আজ কোন বোন এ্যামেরিকা, কেউ কানাডায়, কেউ সুদূর কুয়েতে, কিন্তু সেদিন আজো সবার বুকে তোলপাড় করে। এক আধ সময় ছুটিতে কারো সাথে দেখা হয়ে গেলে কতো কথা মনে পড়ে। আমাদের অনেক সাঙ্কেতিক মজা আছে যা আর কেঊ জানবে না, বুঝবে না। সেই নিয়ে আমরা যখন হেসে গড়িয়ে পড়ি তখন বড় বোনের মেয়েরা কিংবা আমার ছোটবোনেরা মুখ কালো করে বলে, কি নিয়ে এতো হাসো আমাদেরকে বলো না। কিন্তু এগুলো কি শুধু বাংলায় বললেই কেউ বুঝতে পারবে? তাকে যেতে হবে সে সময়ে ফিরে। শুধু কথা কি সময়কে ধারন বা উপস্থাপন করতে পারে?
যাক ধান বানতে শীবের গীত অনেক হলো। যে কথা লিখতে বসেছিলাম “ফুটবল”। তো যার জ্ঞান হলো বল নেটে ঢোকা মানে হলো গোল তার কাছে কেউ যখন নেদারল্যান্ডস তথা এন্ডহোভেন এর ফুটবল নিয়ে প্রশ্ন করে, তার চোখে ফুটবল কেমন হতে পারে? তখন নাসির ভাইয়ের কথানুযায়ী বাংলাদেশ তথা ইউরোপ বা নেদারল্যান্ডসের ফুটবল সংক্রান্ত তুলনামূলক আলোচনাই ভালো। তেমন কোন ফুটবলজ্ঞানহীন ব্যাক্তির দৃষ্টিতে আজকের ফুটবল বৃত্তান্ত। ফুটবল খেলার অতি প্রয়োজনীয় একটা অংশ হলো ঠোলা বাহিনী। বাংলাদেশের ঠোলা বাহিনীকে কারনে অকারনে জনগনের সাথে অনেক কুস্তী করতে হয়। গারমেন্টস সমস্যা পিটাও শালা, ইউনিভারসিটি - ছাত্র সমস্যা দাও পিটা, বন্যারত চাল চেয়েছে দাও খুলী ফুটিয়ে, ফরদা ফাই করা ছাড়া জনগনরে এরা আর কিছুই করে না। এরা সমস্ত ইস্যুতে মারামারি করে সারাক্ষন এতো টায়ার্ড থাকে যে খেলার মাঠে আয়েশী ভঙ্গীতে হাটাচলা করে, টিভিতে খেলা দেখার সময় দেখলে অন্তত তাই মনে হয়, এরা মাঠের মধ্যে এদিক সেদিক দাঁড়িয়ে থাকে খুব একটা নড়ে চড়ে না। এদের তখন বিশ্রাম নেয়ার সময়। হয়তো বড় স্যারের প্রিয় ঠোলারাই এই মহান আনন্দময় দ্বায়িত্ব পায়, খেলাধূলার ডিউটি দেয়ার। এরা মনের আনন্দে সহ পুলিশদের সাথে বুক ফুলিয়ে ঝাল্মুড়ি আদান - প্রদান করে খায় আর বাড়ির বউ - ঝিদের খবর বা কুশলাদি বিনিময় করে কাটায় খেলার সময় । এবার ইউরোপের পোতানো পুলিশদের দেখা যাক। এরা সাধারনতঃ কেউ এ্যাক্সিডেন্ট করলে, গুরুতর আহত হলে তাকে হাসপাতালে পৌছানো, না গুরুতর হলে কার দোষ সেটার রিপোট লিখে ছেড়ে দেয়া, ভুল পার্কিং এর ফাইন লেখা, দোকানে কেউ চুরি করলে তার ফাইন লেখা ছাড়া আর ঝিমানো ছাড়া জনগনের তেমন কোন ধর ধর, মার মার টাইপ রক্ত গরম করা সেবার সুযোগ পায় না। থাকতি আমাদের দেশে তাহলে জানতি সেবা কাহাকে বলে? সেই তারা যখন ফুটবল খেলার ইস্যু পায় তখন তাদের কে রুখবে ? বিরাট রয়েল বেংগল টাইগার সাইজের কুত্তা পাশে ঝুলিয়ে বীর বিক্রমে সমস্ত যন্ত্রপাতি নিয়ে ট্রেনিং এর সময়ের শেখা সমস্ত কায়দা রিভাইস দিতে লেগে পড়ে। আমার অফিস ঠিক ফিলিপস ষ্টেডিয়ামের পিছনে। অফিসের দিন মানে বিরাট জ্যাম, আর ছুটির দিন হলেতো রক্ষা নাই। আশে পাশে কয়েক জন ভাসমান বিয়ারের দোকান দিয়ে বসবে মানে বেশ কটা রাস্তাও বন্ধ থাকবে। যাবেতো যাও দেখি একখানা ভাবের খেলা হবে। সমস্ত রাস্তা গুলো বন্ধ করে দিয়ে ওয়াকিটকি নিয়ে হাটবে আর কতথা বলবে। এমন এক পরিস্থিতি তৈরী করবে ফুটবলতো যেনো নয় প্রেসিডেন্ট বুশ প্লেন থেকে এখন অবতরন করবেন। আর আমরা যেনো বোমা নিয়ে তার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। পুলিশ দেখলেই আমার ভয় লাগে হোক দেশী পুলিশ কিংবা বিদেশী। হয়তো মনের মাঝে এদেরকে পারমানেন্ট অপছন্দ করার একটা চোর চোর ভাব আছে বলেই মন পুলিশ পুলিশ ডরায়। গাড়ী থামিয়ে যখন এক অন্তর্ভেদী দৃষ্টি দিয়ে তাকায়, তখন শিশুকালে কবে মায়ের কাছে স্কুল ফিরে মিথ্যে কথা বলেছিলাম ভয়ে সেটাও মনে পড়ে যায়।
আর সাথের কুকুরের কুত্তাভেদী দৃষ্টির কথা না হয় বাদই দিলাম। আমাদের দেশের কুকুরের মতো থোড়াই নিরীহ ভদ্র চেহারার, গোবেচেরা কুকুরতো এগুলো নয়। যে লেজ নেড়ে নেড়ে রাস্তার আর একপাশ দিয়ে হেটে যাবে মানুষের ভীড় ভাট্টা এড়িয়ে চলবে। বরং এম। টি । ভির মিউজিক ভি। ডি। ওতে দেখায় যে রকম গাট্টা - সাট্টা সাইজের আফ্রিকানদের মতো ভোস্মা পালোয়ান চেহারা আর ব্যবহার (প্রিয় পাঠক, আমি বর্ণ বিদ্বেষী না, কিন্তু পালোয়ান সাইজের কাউকে দেখলেই আমার ভয় লাগে)।দেখলেই আত্মারাম খাচা ছাড়া টাইপ। অবশ্য এদেশের কুকুরদের স্ট্যান্ডারড ওফ লিভিং এর সাথে আমাদের দেশের দরিদ্র কেরানী টাইপ কুকুরদের স্ট্যান্ডারড অফ লিভিংই এই চেহারা আর স্বভাবের জন্য দায়ী। যাহোক অনেক মানুষের থাকে কুকুর ভীতি আর আমার যেটা আছে সেটা হলো ‘ফোবিয়া’। দু একটা ঘটনা উল্লেখ করলেই ধারনা করা যাবে। একবার আমি আর আমার বর পার্কে হাটছি আর গল্প করছি। কোন এক পর্যায়ে আমি খুব রেগে গেছি আর ওর পাশ থেকে বেশ একটু দূরে হাটছি। ও অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে হাল ছেড়ে সামনে হাটছে। হঠাৎ কোন একটা শব্দ শুনে আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সজাগ হয়ে উঠলো। দেখি আমার পাশেই রয়েল বেংগল টাইগার সাইজের কেউ তার প্রাকৃতিক কর্ম সারতে বের হয়েছে। আমি দ্বিগবিদ্বিক জ্ঞান শূন্যে হয়ে দৌড়ে স্বামীকে যেয়ে ধরতেই তিনি অবাক হয়ে পেছনে তাকানো মাত্রই ঘটনা কি বুঝতে পারলেন। আর বারবার বলতে লাগলেন, না হবে না, বিপদে পড়লেই আমাকে ইউজ করবে সেটা চলবে না। আর একবার রাস্তায় আমরা দুই খুব প্রিয় বান্ধবী হাটছি আর গল্প করছি খুবই মগ্ন হয়ে, আশেপাশে কোথায় কি হচ্ছে, সে খেয়াল বাদ দিয়ে। চোখ ছিল মাটির দিকে। হঠাৎ একটা কেমন যেনো শব্দ পেয়ে মাথা তুলে দেখি আমার সামনে একটা হাতী সাইজের কুকুর এক বিঘৎ জীব বের করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি জানি না আমার কি হোল, এক সেকেন্ডের মধ্যে আমার বান্ধবীকে আমার পাশ থেকে টেনে এনে কুকুরের মুখের কাছে ঠেলে দিলাম। আমার মাথা করেছে এটা না আমার হাত করেছে আমি জানি না এখনও। যদিও ইউরোপীয়ান সভ্য কুকুর। ভদ্রতা জানে, আমাদেরকে শুকেই চলে গেছে, কিন্তু আজ প্রায় দশ বছর ধরে আমার বান্ধবীর খোটা আমি খেয়ে যাচ্ছি। বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধুর নামে আমি যে কলঙ্ক সেটা আমি নিজ হাতেই প্রমান করে দিয়েছি। যদিও এখনও আমি ক্ষীন গলায় বলার চেষ্টা করি যে কুকুর বাদ দিয়ে অন্য সব ব্যাপারেই আমি প্রকৃত বন্ধু হওয়ার যোগ্যতা হয়তো রাখি, কিনতু কে শোনে কার কথা । তো সেই কুত্তা যখন আমার গাড়ির জানালার পাশে দাঁড়িয়ে এক হাত লম্বা জীব বের করে, পুলিশের মতো উনিও রুম থেকে বের হতে পাওয়ার বিমল আনন্দে উৎসাহে হ্যা - হ্যা - করে শব্দ করে, মাঝে মাঝে আবার দুই পা আমার গাড়ীর জানালায় দিয়ে আমার সাথে চোখাচোখি করার চেষ্টা করে, কিংবা গাড়ীর ভিতরে উকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করে। আমি তখন শুধু ভাবি নাইট রাইডারের গাড়ির মতো উপড় থেকে কিছু খুলে যেতো আর আমি যদি উড়াল পংখী হইয়া উড়ে যেতে পারতাম। শীতের মধ্যেও ভয়ে আমার অন্তর আত্মা শুকিয়ে কাষ্ঠ প্রস্তরবত মূর্তি সমবেত হয়ে যায়। গাড়ির জানালা আড়াল আমার আর কুকুরের মধ্যে যথেষ্ঠ লাগে না, সারাক্ষন মনে হয় জানালা ভেদ করে দিল দাত বসিয়ে। এ সমস্ত যন্ত্রনা পোহন করে জ্যাম ঠেলতে ঠেলতে অফিসে ঢুকি। কখনও আধ ঘন্টা লেটতো কখনো তার বেশী যা আমাকে কখনো না কখনো অফিসে থেকে পুষিয়ে দিতেই হবে। কোথায় কে বল লাথথি দিবে কি না দিবে সে জন্য আমার জীবনের আধ ঘন্টার ফাউ অপব্যবহার।
আর যদি খেলা ইন্টারন্যাশনাল না হয়ে, ন্যাশনাল হয় তাহলে সকালের বদলে এই চেক আপ পরব শুরু হবে দুপুরের পর থেকে, সুতরাং যাওয়ার পথ না আসার পথের পাচালী এখন। সেই ই জ্যামে গাড়ি ঢুকিয়ে বসে থাকো। এদিক সেদিক রাস্তা বন্ধ করে এ্যারো দিয়ে রেখেছে কিন্তু এ্যারো মিস করলেও কোন অসুবিধা নেই। সামনের গাড়ী আর পিছনের গাড়ীই আপনাকে বের হবার আপন জায়গায় নিয়ে ফেলবে। আমি গাড়ীতে বসে বসে শুধু ভাবি আজকে আমার বাসার সমস্ত রুটিন লেট হলো। মেয়েকে খাওয়ানো লেট, গোসল দেয়া, পড়ানো সবই লেট। এসব ভাবতে ভাবতেই ঝটিতে মনে পড়ে জেডা’র মা এসে কি জেডাকে নিয়ে গেছে ক্র্যাশ থেকে তাহলেতো আমার মেয়ে ভ্যা ভ্যা কেদে সারা ক্র্যাশ মাথায় করবে আর আজ সারা সন্ধ্যা যাবে কাদতে কাদতে “মা তুমি কেনো আমাকে নিতে আসছিলে না? কেনো এতো দেরী করছিলে?” এই সংলাপের উপড় দিয়ে। বেশী কান্না কাটি করলে অবশ্য ক্র্যাশ থেকেই ফোন দেবে আমাকে, বলবে, তুমি তোমার মেয়েকে একটু নিজের ভাষায় বুঝিয়ে দাওতো যে তুমি ওকে শিগগীরই নিতে আসছো। ওর বাবাকে ফোন দিয়ে লাভ নেই, উনি আসতে আসতে আরো সন্ধ্যা। যখন শেষ বেলা ক্র্যাশে যেয়ে পৌছবো, মোটামুটি সব আলো নেভানো, সবাই দিনের খেলা শেষ করে যার যার গন্তব্যে চলে গেছে, আমার মেয়েকে সম্পূর্ণ বিদেশী কেউ বুকের মধ্যে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরে করিডোরের এ মাথা ও মাথা হাটছে আর সান্ত্বনা দিচ্ছে, আমার মেয়ে তার গলা নিশ্চিত নিরভরতায় দুই হাত দিয়ে প্যাচিয়ে ধরে রেখে মায়ের জন্য হাপুস নয়নে কেদে গঙ্গা - যমুনা এক করছে। এ দৃশ্যটা দেখলেই বুকের মধ্যে কি একটা অনুভূতি হয় সেটা কাউকে ব্যাখা করে বোঝানো যাবে না। এরকম পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাকে মাঝে মাঝেই যেতে হয় সে ধরনের কারো কাছে কেউ যখন জিজ্ঞেস এন্ডহোভেন এর ফুটবল কিংবা পি। এস। ভি এর কি অবস্থা, পেপারে দেখলাম ব্লা ব্লা ব্লা ........................।
এর উত্তর কি হতে পারে? সবই কি আমার দোষ?
তানবীরা তালুকদার
০১.০৪.০৮


মন্তব্য

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

লেখাটা খুব ভাল্লাগছে, কারণ কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য নাই, মনে হয় কেউ যেন নিজের মনে কথা বলছে ... আমার এই টাইপ ভালো লাগে হাসি

আয়াক্স আর পিএসভি (আপনার ভাষায় পেই-এস-ফেই) দুইটা টিমই আমার পছন্দ ... কারণ এরা খুব ভালো কিছু প্লেয়ার তৈরি করে প্রতিবছর, যারা পরে ইংল্যান্ড-স্পেন বা ইতালিতে পাড়ি জমায় ...
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার কথা একদম ঠিক। আমার লেখার নিরদ্দইষ্ট কোন উদ্দএশ্য নেই। যা মনে আসে তাই লিখি, মনের আনন্দটাই আমার জন্য বড়
কথা। বিরাট লেখিকা হওয়া নয়।

ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য এর জন্য।

তানবীরা

রায়হান আবীর এর ছবি

আমার জীবনের একটা বিশাল অংশ জুড়ে ফুটবল...ফুটবল খেলা, ফুটবল দেখা...

এই ফুটবল নিয়ে কত ঘটনাই না ঘটেছে জীবনে। মাঝে মাঝে লিখার ইচ্ছা হয়, কিন্তু সাহস হয়না। আপনার লেখাটি বেশ লেগেছে...
---------------------------------
জ্ঞানীরা ভাবলেন খুব নাস্তানাবুদ করে ছাড়া গেছে...আআআহ...কি আরাম। বিশাল মাঠের একটি তৃণের সাথে লড়াই করে জিতে গেলেন।

ছোট্ট তৃণের জন্য অপরিসীম ঘৃণা।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

তানবীরা লিখেছেন " যা মনে আসে তাই লিখি, মনের আনন্দটাই আমার জন্য বড় কথা। বিরাট লেখিকা হওয়া নয়। "

এটা আমারও কথা। যা চিন্তা আসে ,হাবিজাবি তাই শেয়ার করি সচল বন্ধুদের কাছে হোক তা' ভাল বা মন্দ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- লেখিয়েকে নিয়েঃ অবশেষে অরিন্দম কহিলা বিশদে।
সচলায়তনে পদার্পন আনন্দময় হোক।

লেখার স্টাইল নিয়েঃ প্যারা আকারে দিতে পারলে পাঠকের চোখ আরাম পায়। নয়তো অনেক কষ্ট করে পড়তে হয়। মন খারাপ

লেখা নিয়েঃ আম্রিকা কানাডা সুদূর না হয়ে কুয়েত আপনার কাছে সুদূর হলো ক্যামনে? চিন্তিত

এবং... অবশেষেঃ অভিনন্দন তানবীরা আপনাকে। এসেছেন, লিখতে থাকুন নতুন সব লেখা, কমেন্টাতে থাকুন নতুন সব ভাবনা। সচল হোন। বেশ জমিয়ে সময় কাটানো যাবে সচলায়তনে।
শুভকামনা। দেঁতো হাসি
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

ধুসর গোধূলি'র মন্তব্য পেয়ে আশ্বস্ত হলাম , আমার বন্ধু তানবীরাকে সচলায়তনে এনে তাহলে ভুল করিনি ।

"আম্রিকা কানাডা সুদূর না হয়ে কুয়েত আপনার কাছে সুদূর হলো ক্যামনে? " কারন ওর আবাস নেদারল্যান্ড এ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেক দিন পর সচলায়তনে ঢুকে লেখাগুলোতে চোখ বুলাতে গিয়ে আমার প্রিয় তানবীরাকে পেয়ে মনটা ভাল লাগায় ভরে গেল ঃ-)।
লেখাটি আগেই পড়া ছিল। ভালো লেগেছিল খুব...।
অনেক অনেক লেখা চাই তানবীরা। মানিক-কেও ধন্যবাদ বন্ধুকে এনেছেন বলে।
নন্দিনী

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- নেদারল্যাণ্ডস থেকে আম্রিকা দূরে নাকি কুয়েত? বৃটেন হলে একটা কথা ছিলো চোখ টিপি

আপনার মাধ্যমে (কিংবা সরাসরি) তানরীরা তালুকদারকে অনুরোধ করতে চাই, তিনি যেনো আমাদেরকে তাঁর নতুন নতুন সব লেখা পাঠ করার সুযোগ দেন।

আর তানবীরা তালুকদারের মতো কেউ সচলায়তনে এলে সেটা বোধকরি সচল পাঠকের জন্য অনেক ভালো একটা দিক। তিনি লিখবেন এখানে, আমরা যারা পাঠক আছি তা চেটেপুটে খাবো, এমনটাই তো সচল পাঠকেরা চায়। হাসি
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

অতিথি লেখক এর ছবি

ধূসর আপনাকে দেখতে পেয়ে আমিও খুব আনন্দিত, পরিচিত মুখ থাকলে নিজেকে আর একা একা লাগবে না তাহলে। অন্য সবাইকেও শুভ কামনার জানানোর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

লেখাটা আসলে প্যারা করাই ছিল, আমার ধারনা পোষ্টিং এর সময় হয়তো টেকনিক্যাল কিছু হয়ছে। আমি আন্তরিক ভাবে পাঠকদের অসুবিধার জন্য দুঃখিত। আপনার মন্তব্য পড়ে আরো ভালো লাগল যে লেখাটি আপনি সত্যিই মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন।

এ্যামেরিকা আমার কাছে অনেক কাছে, কুয়েত থেকে কারন সেখানে স্বচছতা - জবাবদিহিতা, স্বাধীনতা অনেক বেশী কুয়েত থেকে। একজন এ্যামেরিকারন মেয়ের জীবনের সাথে আমার জীবনের অনেক সাদৃশ্য পাওয়া যাবে, যা হয়তো একজন কুয়েতী সুদূরিকার জীবনের সাথে পাওয়া যাবে না ।।।।।।।।।।। একজন মেয়ের জন্যতো বদ্ধ কুয়েত অনেক সুদূ্র এর ই ব্যাপার, নয় কি?

ধন্যবাদ আবারো।

তানবীরা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।