ঘুমিয়েছি সকাল ৭ টার দিকে। ঝরঝরে একটা ঘুম দিয়ে উঠলাম দুপুর ২ টার দিকে। ঘুম থেকে উঠেই যে কাজটা করি, মুঠোফোনটা হাতে নিয়ে দেখি কোন মিসকল আছে কিনা। হুমম, আছে। একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে। ব্যাপার কি?
হাত-মুখ ধুয়ে এসে কলব্যাক করলাম। পরিচিত কন্ঠস্বর। বন্ধু আশরাফ।
- কিরে? তোরে ফোন করলাম। ফোন ধরিস না কেন্?
- ঘুমাইতেছিলাম। খবর কি তোর?
- খবর ভালই। ডিভি লটারির ফার্স্ট লেটার পাইছি!
- ডিভি পাইছোস! খাইছে! কয়দিন পর উড়াল দিবি?
- প্রসেসিং এর জন্য সময় যতদিন লাগে আর কি।
- সত্যি সত্যি যাবি নাকি?
- হুমম। ওইখানে গিয়ে দেখি কি করতে পারি।
- তোর পড়াশোনাও তো প্রায় শেষের পথে।
- হুমম। ভালই হইছে।
- তো দেশে তোর জমিজমা-সম্পত্তি এইসব দেখবে কে?
- সব ছেড়েছুড়ে চলে যাবো। আমেরিকায় গেলে পোষায়ে যাবে।
- তুই যা ভাল মনে করিস।
এই হল কথাবার্তার সারকথা। কথা শেষ হবার পর কেমন যেন স্মৃতিকাতর হয়ে উঠলাম।
আমার বেড়ে ওঠা মফস্বলে। ক্লাস নাইনে ভর্তি হয়েছিলাম নতুন স্কুলে। স্কুল আবার বাসা থেকে অনেক দূরে। কাজেই হোস্টেলে থাকতে হয়েছিল। দু বছরের হোস্টেল জীবনে আশরাফ ছিল আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। এরপর আমি ঢাকায় চলে আসি। যোগাযোগ কমে যায়। মুঠোফোনের দয়ায় এখন অবশ্য নিয়মিত যোগাযোগ হয়।
আমার বন্ধুটি প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময়ে বাবা-মা দুজনকেই হারায়। বড় একটা বোন আছে, বিয়ে হয়েছে। দুলাভাই সুবিধার না, তক্কে তক্কে আছে সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য। নানার বাড়িতেই সে বড় হয়েছে। পড়াশোনার খরচ মামারা দিত। বাবা-মার সম্পত্তি থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে বাকিটা চলে যায়।
আশরাফ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র। স্বভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে খানিকটা বেশি পাগলামো আছে। দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় হঠাৎ তার মাথায় টাকা-পয়সা কামানোর ভূত চাপে। আমাকে ফোন করে বলে, “দোস্ত, সৌদি চলে যাব। এতো পড়াশোনা করে কি হবে?”
- মানে? আমি আকাশ থেকে পড়ি।
- চিন্তা করে দেখলাম, সবকিছুর মূলে টাকা। আমার যে যোগ্যতা তাতে শারীরিক পরিশ্রমের কাজ আমাকে করতে হবে না। লাইন ঠিকমত ধরতে পারলে অন্য ভাল কাজ পেয়ে যাবো। টাকা-পয়সাতো ওখানে ভালই দেয়। পাস করে দেশে আমি কত টাকা বেতনের চাকরি পাবো তুই বল্? আর পড়াশোনা করে এখানে সময় নষ্ট করার মানে হয় না!
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো সে ঝেড়ে দেয়। কন্ঠে ক্ষোভের ছাপ স্পষ্ট টের পাচ্ছিলাম। কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। উপায় না দেখে তথাকথিত শিক্ষার মূল্য বিষয়ে তাকে একটা নাতিদীর্ঘ বক্তব্য দিয়ে দেই। তাতে বিশেষ একটা লাভ হয়েছিল বলে মনে হয় না। এর কিছুদিন পর অবশ্য এই ভূত তার মাথা থেকে নেমেছিল।
বস্তুবাদী আর ভোগবাদী এই পৃথিবীতে আমাদের স্বপ্নগুলো যখন টাকা দিয়ে বোনা হয়, টাকার অভাবে যখন আমাদের স্বপ্নগুলো একের পর এক মার খায়, টিউশনির খোঁজে যখন শহর চষে বেড়াতে হয়, মেস খরচ কিভাবে চালাবো সে চিন্তায় অস্থির হতে হয়, তখন ডিভি লটারি প্রাপ্তি খোদার বিশেষ রহমতই বলা চলে। ঠিক বললাম কি?
ফেরারী ফেরদৌস
মন্তব্য
আজ অনেকদিন পর ডিভি শব্দটা কানে এল। এর কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম।
নাফে মোহাম্মদ এনাম
ভুলে যাবার গল্পটা কি বলা যায়? বছর বছর তো এই ডিভি লটারির হুজুগ ঘুরেফিরে আসে। সাইবার ক্যাফেগুলোও জমজমাট ব্যবসা করছে সেই সুবাদে। ভুলে যাবার তো কথা না....
ফেরারী ফেরদৌস
অনেকদিন আগে মনে হয় কোথাও সেলিনা হোসেনের একটা লেখায় পড়েছিলাম, 'ভিনদেশে তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে থাকার চাইতে নিজের দেশে প্রথম শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে বাস করা অনেক ভাল' (আক্ষরিক হল না হয়ত, তবে মূল কথাটা এরকমই ছিল অনেকটা)
এটা ছাড়া কিই বা আর বলার আছে! তবে এটাও ঠিক, মুখে অনেকেই যে যাই বলি আমরা, 'স্বপ্নের দেশে' যাওয়ার হাতছানি উপেক্ষা করা আসলেই খুব কঠিন!
আপনার বন্ধুর জন্য শুভকামনা।
- সেলিনা হোসেনের কথাটা কেনো জানি আপাদমস্তক পুস্তকী কথা শোনালো। এটমিস্ট এখনকার ক্রাইটেরিয়া গুলো বিবেচনায় ধরলে।
প্রথম শ্রেণীর নাগরিকের চিন্তা বাদ দেন। মৌলিক যে চাহিদার প্রথমটা, সেই খাবার। এই খাবারের অভাবটা কীভাবে সামাল দিচ্ছে আমার দেশের প্রথম শ্রেণীর একজন নাগরিক যে কিনা দিনমজুর? আর ধরুন মধ্যপ্রাচ্যে যে ভাই কষ্ট করে ফোর্থক্লাশ নাগরিকের জীবন যাপন করছে সে ঠিক কতোটা বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ হিসেবে তার মৌলিক চাহিদা মেটাতে?
মাঝে মাঝে আবালচোদা বুদ্ধিজীবিগো কথায় হিন্দি চুলের আগা পর্যন্ত জ্বলতে শুরু করে। দয়াকরে ভাববেন না সেলিনা হোসেনকে এ্যাটাক করছি। কিন্তু এই টাইপের কথা সবসময় ভালো লাগেনা শুনতে!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
এখন তো স্বপ্নের দেশ মনে হচ্ছে, আপনার বন্ধুরে আসতে দেন, কত ধানে কত চাল, টের পাবে তখন। এক প্রবাসী আমাকে একবার বলেছিলেন, তার একজন জানী দুশমন আছে, দুশমনীর প্রতিশোধ নিতে তিনি তার শত্রুকে টাকা পয়সা খরচ করে আমেরিকায় নিয়ে আসতে চান, এখানে এসে তার শত্রু যখন হা-পিত্যেশ করবে, তখন তিনি যে আনন্দ পাবেন, তার চেয়ে আনন্দের নাকি আর কিছু হতে পারে না।
** আপনি হয়তো প্রশ্ন করবেন আমি তাহলে কেন এখনো বিদেশে পড়ে আছি? দেশে গিয়ে কিছু করার যোগ্যতা নেই তাই বিদেশে পড়ে আছি। ****
সক্রেটিসের প্রশ্ন "which is better"-এর উত্তর কেউ কি জানে?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি তুষ্ট আত্মপ্রেমেই। এর সুবিধে হলো, প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
ভদ্রমহিলা বিখ্যাত পয়সাঅলা মানুষ, প্রথম শ্রেণীতো হবেনই। মেয়েকে বৈমানিক বানানোর স্বপ্নও তিনি দেখছিলেন। আমি ভাই দেশে প্রথম শ্রেণীর ছিলাম না, পরবাসে তৃতীয় শ্রেণীতেও নাই।
আমি জানি, সন্ন্যাসীব্রত (যদি সেটা আমেরিকার মাটিতে হয়)।
প্রত্যেকবার ভাবি ডিভি ফরম ফিলাপ করবো...কিন্তু এখন পর্যন্ত একবারও করতে পারি নাই...
---------------------------------
জ্ঞানীরা ভাবলেন খুব নাস্তানাবুদ করে ছাড়া গেছে...আআআহ...কি আরাম। বিশাল মাঠের একটি তৃণের সাথে লড়াই করে জিতে গেলেন।
ছোট্ট তৃণের জন্য অপরিসীম ঘৃণা।
পকেট ভরা না হোক ব্যাঙ্ক ভরা টাকা থাকলে ও বাংলাদেশের মত দেশ দুনিয়াতে আর একটা ছিলো না হবেও না ।
দেশে আমাদের মত মধ্যবিত্ত শ্রেনীর পোলাপান পদে পদে ঘাটে ঘাটে লাথথি উষ্ঠা খাইয়া তারপরে ডিসিশন নেয় পায়ে হাইটা সাহারা মরুভুমি পাড়ি দেয়ার আর পারলে সাতরায়া আটলান্টিক পাড়ি দিইয়া গিয়া ঊঠে আমেরিকায় সেই তুলনায় ডিভি ত ভালো কথা ।
আপনের বন্ধুর দেশের অবস্থা যদি ভালো হয় তাইলে আইসা আফসোস করবো ।
আর যদি আমাগো মতন লেখা পড়া করে যে গাড়ী ঘোড়া চড়ে সে এই স্বপন দেইখা পড়াশুনা শেষ করছে আর বাস্তবে বাস ভাড়া দিতে হয় পকেট ঝাইরা আর রিকশারে মনে হয় বড়লোকের বাহন তাইলে খামোখা নিষেধ কইরেন না ।
শুধু এইটুকু বইলেন যে আমেরিকা তে প্রথমে অন্তত কিছুদিন কস্ট করতে হইবো তারপরে সব কিছু ঠিক হয়া যাইবো ।
জটিল বাস্তবতা।
দেখুন টাকার প্রয়োজনীয়তাটা বাস্তবতা। অবশ্যই টাকা প্রয়োজন। তবে কার কতটুকু। কে কোথায় থামবে। কার কোথায় ক্ষান্ত দেওয়া উচিত তা অনির্ধারিত। কারো টাকা ভালো আবার কারো টাকা কালো।
একটা কথা শুনেছি মানুষের তিন অবস্থাকে তিন অবস্থার আগে কদর করা উচিত। এক, যৌবনকে বার্ধক্যের আগে। দুই, সুস্থতাকে অসুস্থতার আগে। তিন, জীবনকে মৃত্যুর আগে। এখানে আরো একটা জিনিস যোগ করি তা হলো - স্বদেশকে কদর করুন প্রবাসের আগে। সেলিনা হোসেনের লেখায় সত্য উঠে এসেছে। চেখে দেখুন যার ইচ্ছে।
জিজ্ঞাসু
আমার বন্ধুর অবস্থা টেনেটুনে চলে যায় এই আর কি! আমেরিকা গেলে হয়ত তার জন্য ভালই হবে।
ফেরারী ফেরদৌস
আমেরিকা যাইতে পারলে কার ভালো না হয়?ডিভি পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার।দেখি আমিও একটা ফিল আপ করবো।
-নিরিবিলি
নতুন মন্তব্য করুন