কিভাবে আন্ডারগ্রাডে রিসার্চ করতে হয়?
[আবারো সেই পুরান কথা, সবার মতামত ও পরামর্শ শেয়ার করাই প্রধান উদ্দেশ্য]
প্রতিবছর দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে [পাব্লিক,প্রাইভেট]প্রায় প্রিতিটি বিষয়েরই চতুর্থ বর্ষের ছাত্ররা একটা থিসিস করে। চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মানে তার জানাশোনা হলো তিন বছরে পাশ করে আসা অনেক গুলা কোর্স। সেই সাথে ল্যাব/সেশোনাল, টার্ম প্রজেক্ট টাইপের কিছু ছোট ছোট কাজ করতে হয়েছে। তিন বছর পার করে চতুর্থ বর্ষে এসে সব কোর্সের সাথে থিসিসটাও একটা ৩-৪ ক্রেডিটের কোর্সই মনে হয়।
আন্ডার গ্রাডের বাচ্চাপোলাপান দিয়ে রেভুল্যাশনারি কিছু করা যাবে না এটা আমি মানতে নারাজ। যেমন ধরুন এসিএম টাইপের প্রোগ্রামিং কন্টেস্টে ছাত্রদেরকে বলা হয়না যে বাবারা এ সেমিস্টারে প্রোগ্রামিং কন্টেস্টে তোমাদের ৪ ক্রেডিটের কোর্স। ছাত্ররা নিজেরাই রাতের পর রাত জেগে প্রব্লেম সল্ভ করে। কেঊ এটা গ্রেডের জন্য করে না। ক্যারিয়ার/চাকুরিও তখন টার্গেট থাকে না। তাইলে পাগলের মত খাটে কেন? রাগিব ভাই ভাল বলতে পারবে। আমার কথা হল আন্ডার গ্রাড রিসার্চে এরকম কিছু করা চাই। সবার মাঝে এ চরম উদ্দীপনা চাই। সবাই বলেন এটা কেম্নে করা যায়? ক্লাসের প্রথম ১০-১৫ জনের কথা বাদ দেন। প্রত্যেক ক্লাসেই কিছু ছাত্র থাকবেই যারা Self-Motivated.আমি এদের কথা বলছি না। আমার কথা হল যারা ওভারাল সাধারন ছাত্রদের কথা।
থিসিসে সাধারণত একজন সুপারভাইজার এর আন্ডারে কাজ করতে হয়। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই অধ্যাপকেরা থিসিস টপিক অফার করে,আর ছাত্ররা সেসবে কাজ শুরু করে। একজন ভাল সুপারভাইজার পাওয়া যে কত ভাগ্যের তা "নামেই সুপারভাইজার" টাইপের শিক্ষকদের সাথে যারা কাজ করছেন তারা ভালই জানেন। আর একজন ভাল টিচার বা ভাল রিসার্চার মানেই ভাল সুপারভাইজার নয় এটা চরম সত্যি কথা।
আর প্রথম থেকেই থিসিসের ফলাফলকে অবশ্যই পাব্লিকেশনে রুপ দেয়ার টার্গেট রাখা ঊচিত । তাই বলে সাপ লুডু না। তাই লিটারেচার রিভিঊ (এর আগে আপনার রিসার্চে এরিয়াতে কি কি কাজ হয়েছে) তা বের করে জানাটা খুব জরুরী। নইলে চাকা পুরাবিষ্কার হবে। তাই ফাহিমের মত বলি Google Scholar ইঊজ করা শিখতে হবে।
রাগিব ভাই, ফারুক হাসান ভাই এবং আরো অনেকে "রিসোর্স নাই" এর সমাধান বিস্তারিত দিয়েছেন এখানে। সব হয়ত পাবেন না। যা চাইবেন সেটাই শুধু পাবেন না। তাই বলে হতাশ হবেন না। সিনিয়রদের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। Google এ একটু ধৈর্য নিয়া বসলে অনেক পেপার ফ্রি পাওয়া যায়।
Google থেকে আপনার যে পেপারটি ভাল বলে মনে হল তা সাইটশীর বা সায়েস্নডিরেক্ট এ ফ্রি না পেলে, Author এর নাম বা তার ল্যাব বা তার ভার্সিটি দিয়া গুগুলে সার্চ দেন। অথবা ডিরেক্ট Author কে মেইলও দিতে পারেন। একান্ত না পেলে লিংক দিয়ে সিনিয়র কাউরে (যার Access আছে) মেইল দিন। পরিচিত কেঊ না থাকলে সচলায়তন থেকে একজনাকে চোখ বন্ধ করে বাছাই করে নিন।
আমি শুধু ভাবি আজ থেকে মাত্র দশ বছর আগে যখন Google ছিল না তখন মানুষ লিটারেচার রিভিঊ করতে কি পরিমান কষ্ট করতে হত।
আপনারা অনেকেই আন্ডারগ্রাড এ থিসিস করেছেন, এখন মাস্টার্স বা পিএইচডি করছেন। আপনাদের কি আমার মত মনে হয় না যে ইশ যদি ঐভাবে ট্রাই করতাম, ইশ আগে জানলে থিসিসটা কত চমতকার করা যেত। আমাদের এসব যখন আমরা বুঝতে পারি তখন হয় আমদের জুনিয়র ব্যাচের পোলাপান আমদের মত নাভিশ্বাস ফেলে, হাহুতাশ করে। কি করা যায় বলেন তো?
মন্তব্য
আসলে সকল বিষয়ে একধরনের পরিপক্বতা লাগে না। কিছু বিষয়ে আন্ডারগ্র্যাজুয়েটরাও গবেষণায় ভালো করতে পারে। ব্যাপারটা নির্ভর করে তার কতটা সময়, সুযোগসুবিধা আছে এবং সে কতবেশি পড়েছে এবং যিনি সুপারভাইস করছেন তিনি কতটা ভালোভাবে গাইড করেন। যে করতে চায় সে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট হলেও করতে পারবে। ইচ্ছা এবং সুযোগের সমন্বয় হতে হবে। আর কম্পিউটার, ইন্টারনেট গুগল যাই বলুন ব্যবহারকারীর দক্ষতার উপর নির্ভর করে এগুলো কতটা helpful হবে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিগুলোতে প্রচুর নতুন প্রকাশনা আসে যা আমরা ক্যাটালগিং ও লাইব্রেরির প্রশাসনিক অকর্মন্যতার জন্য সময়মত পাই না। প্রতিদিন হাজার হাজার পাবলিকেশন আসে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে। সময়মত ওসব বই, সাময়িকী, জার্নাল ছাত্রদের জন্য available করা হয় না, যা খুবই দুঃখজনক। অনেক পাঠকের স্বার্থপরতার জন্যও হারিয়ে যায় অনেক লিটারেচার।
জিজ্ঞাসু
আন্ডার গ্রাডের বাচ্চাপোলাপান দিয়ে রেভুল্যাশনারি কিছু করা যাবে কি যাবে না, সে প্রশ্নের আগে আমার কাছে মনে হয় আহামরি কিছু করার টার্গেট নেয়াই অবাস্তব এক্সপেক্টেশন। ব্যাচেলর থিসিস মানে আমার কাছে শুধু মাত্র কিভাবে গবেষণা করতে হয়, তার প্রথম পাঠমাত্র। সে গবেষণার ফলাফল জার্নালে পাবলিশ করাটা অতি-উচ্চাশা। ব্যাচেলর থিসিসের রেজাল্টের পাবলিকেশন হয় না, এমন নয়, তবে তার মান নিয়ে তীব্র সন্দেহ আছে। এগুলোকে পরিপক্ক রিসার্চ রেজাল্ট বলা যায় না কোনোভাবেই। আরেকটা সাইড ইফেক্ট হলো, এই অপরিপক্ক রেজাল্ট পাবলিশড হলে পরবর্তী রিসার্চ কোয়ালিটির ওপরে তার একটা খারাপ প্রভাব পড়ে।
ব্যাচেলর পর্যায়ের গবেষণা অপরিপক্ক হওয়ার মূল কারণ শুধুমাত্র অনভিজ্ঞতাই নয়, এর প্রধান কারণ সময়। থিসিসের জন্য ডেডিকেটেড কোনো সেমিস্টার নেই। অন্যান্য কোর্সওয়ার্কের পাশাপাশিই থিসিস করতে হয়। এতে সারাবছরে যত ঘন্টা গবেষণার কাজে দেয়া যায়, তাতে স্টেইট-অফ-দ্য-আর্ট জানতেই কেটে যাওয়ার কথা, তাকে সামনে বাড়িয়ে নেয়া প্রায় অসম্ভব। অতএব, বাস্তববাদী হয়ে বরং গবেষণার নিয়মকানুন জানা প্লাস ওই বিষয়ের ওপর এক্সিস্টিং জ্ঞানার্জনটাই পরবর্তীতে বেশি কাজে লাগে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
"আরেকটা সাইড ইফেক্ট হলো, এই অপরিপক্ক রেজাল্ট পাবলিশড হলে পরবর্তী রিসার্চ কোয়ালিটির ওপরে তার একটা খারাপ প্রভাব পড়ে।" -- এটা একটা বিরাট সত্য ,,,,
আরো অনেক কিছু বলার ছিলো ,,, একটু সময় নিয়ে লিখতে হবে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
ভালো টপিক।
যাঁরা জানেন, তারা সবাই মিলে লিখলে তো ভালোই হয়। আমরাও কিছু শিখলাম।
কালকে একটা ইন্টারভিউ আছে পরে ডিটেইলস লেখার ইচ্ছা রইল। এখন শুধু আপটুডেট রিভিও আর্টিকেল পাওয়া যায় না সেই বিষয়ে বলি।
কে কোন অথর/এডিটর রে বাই পোস্ট/ই-মেইলে যদি তার আর্টিকেল রিকোয়েস্ট করা হয় তাইলে ৯৯% অথর/এডিটর তার রিপ্রিন্ট/পিডিএফ পাঠায় বিনা পয়সায়।
লেখকে ধন্যবাদ ভাল একটা ইস্যুর জন্য।
বাপ্পী
কে কোন অথর/এডিটর রে বাই পোস্ট/ই-মেইলে যদি তার আর্টিকেল রিকোয়েস্ট করা হয় তাইলে ৯৯% অথর/এডিটর তার রিপ্রিন্ট/পিডিএফ পাঠায় বিনা পয়সায়।[i]
এই বিষয়ে আমার সফলতা ৫০% এরও কম।
কারো কোনো পেপার লাগলে আমি চেষ্টা করে দেখতে পারি সাধ্যমত, যেখানে আমাদের সাবস্ক্রিপশন আছে।
৫০% বা কম কিসে @ ইফতেখার
আমি একবার ছাড়া সব বারই সফল তাই ৯৯% লিখেছিলাম, তাও সেবার ডিপার্টমেন্টের বদলে বাসার ঠিকানা দিসিলাম বলেই হয়ত পাই নি।
যতদূর মনে পড়ছে এই পোস্টে অনেক গুলো কমেন্ট ছইল। বাকী কমেন্টগুলো কোথায়?
বাপ্পী
চরম ভাবে সহমত । আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝছি এখন । আমি অন্য ভার্সিটির, বুয়েট এ আমরা থিসিস করছি, সিভিলের নামকরা এক টিচার ,তার নামের লোভে তার কাছে গিয়েছি , তার সাথে কাজ করতে যাচ্ছি ভেবেই কত যে লাফ দিয়েছি , এখন খালি কপাল চাপড়াই ।
-পরিবেশবাদী ঈগলপাখি
নতুন মন্তব্য করুন