প্রাচীন কালে আমাদের দেশে বঙ্গ, বরেন্দ্র, সমতট, হরিকেল ইত্যাদি জনপদের অস্তিত্ব ছিল । কালের বিবির্তণে বঙ্গ নামটাই এক সময় সারা দেশের নামে পরিনত হল । বঙ্গ নামের আরো রেফারেন্স দেয়া যেতে পারে । যেমন মহাভারত থেকে জানা গেল, সেসময় ভারতবর্ষে অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ প্রভৃতি রাজ্য ছিল । এই বঙ্গ নামটি কিভাবে আসল ? এই ব্যাপারে আমার আগ্রহ অনেক, কিন্তু জ্ঞান হাল্কা-পাতলা । ভুল কিছু লিখে ফেললে ক্ষমা করবেন এবং সঠিক তথ্যটি জানিয়ে আশীর্বাদ করবেন, এই অনুরোধ থাকল ।
যতদূর মনে পড়ে, নৃবিজ্ঞানীদের মতে, অনেক প্রাচীন কালে বং নামের একটি প্রোটো-অস্ট্রালয়েড জাতি এখানে বসবাস করত । প্রোটো-অস্ট্রালয়েড মানে হল অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে মানব বসতি স্থাপনেরো আগের কথা আর কি । সম্ভবত এই বং জনগোষ্ঠির নাম থেকেই এলাকার নাম হয়ে যায় বঙ্গ । যাই হোক, এই ঘটনারো আর অনেক পর যখন মোটামুটি ভাল রকম মানব বসতী গড়ে উঠেছে সারা বঙ্গ জুড়ে, দেখা গেল বঙ্গের লোকেরা চাষাবাদ করে খায় আর ক্ষেতের আশেপাশে আল তথা উঁচু ভূমিতে বাড়ি বানিয়ে থাকে । বঙ্গের আলে থাকে বলে লোকগুলোর নাম হয়ে গেল বঙ্গ-আল, কালের বিবর্তণে বাঙ্গাল, আরো পরে বাঙ্গালি । দেশের নাম বাংলা, তাদের ভাষা-টাষার নামও বাংলা ।
যাই হোক এপর্যন্ত ছিল আদি-সত্য-দ্বাপর যুগের কাহিনী । ঐ আমলে নামকরনের পিছনে ভাল গ্রহনযোগ্য যুক্তিও থাকত । এরপর আসল কলি কাল । কলিকালে দেশ ও জাতির নামের বিবির্তণ প্রক্রিয়াটা শুরু হল ইউরোপিয় দের আগমন এর মাধ্যমে ।
সেই কবে কোন একজন বা একদল ইংরেজ (নাকি ইউরোপিয়) লোক প্রথম এই দেশে এসেছিল কে জানে । তার বা তাদের মোটা আড়ষ্ঠ জিহ্বা দিয়ে আমাদের দেশ বা জাতির নাম ঠিকমত উচ্চারন করতে পারেনি, 'বাঙ্গালি' না বলে বলেছে 'বেঙ্গলি' সেই থেকে আমাদের দেশের নাম হয়ে গেল বেঙ্গল আর আমরা বেঙ্গলি । খোঁজ নিয়ে দেখেন ঐ শালা ইংরেজ গুলা কিন্তু ঠিকি পাশের দেশ ফ্রান্সে গেলে 'লে প্যঁদানি দ্যু লা পুঁউ' জাতীয় উদ্ভট জিনিস শুদ্ধ ভাবে উচ্চারন করে নিজেদেরকে সংস্কৃতিমনা বলে জাহির করবে । এদের যত বংশধর ছিল, তারাও মা-বাপের কাছ থেকে ভাল কিছু শিখে নাই, ওরাও বেঙ্গলি দিয়েই চালিয়ে যেতে থাকল । ততদিনে আবার গোটা ভারতবর্ষ তাদের পরাধীন, বাংলার কথা বাদই দিলাম । পরাধীন দেশে জান-মান নিয়ে বেঁচে বর্তে থাকাই দায়, নাম ঠিক করার বাতিক কারো চাপেনি, চাপলেও সেই বাতিক নিয়ে খুব একটা তেলেসমাতি করার সুযোগ হয়নি । যাইহোক ২০০ বছর প্রায় এরকম চলার পর ভারবর্ষ স্বাধীন হল, দেশ থেকে ইংরেজরা গেল । কিন্তু আমরা এক শকুনের হাত থেকে আরেক শকুনের হাতে পড়লাম । আগে তো তাও নাম বাংলা থেকে বেঙ্গলি হয়েছিল, লেভেনস্টাইন দূরত্ব অল্পই-মাত্র দুই একটা অক্ষরে পার্থক্য । এইবার একেবারে F2 চেপে 'রিনেম' করে দিল । আরো কয়েকদশক পরাধীনতার পর অবশেষে আমাদের দেশ স্বাধীন হল । আগের নাম restore করা হল, তবে ভালবেসে অনেক যত্ন করে নামের সাথে 'দেশ' কথাটা জুড়ে দেয়া হল । তারো প্রায় দেড় দশক পর আমার জন্ম হল । আরো প্রায় দেড় দশক পর আমি দিন দুনিয়ার খোঁজ খবর নেয়ার মত 'কাবিল' হইলাম । মানে দিন-দুনিয়ার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করলাম ।
দেখলাম ক্রিকেট খেলার সময় বিদেশী ধারাভাষ্যকারেরা আমাদের দেশের নাম বলে 'ব্যাং-লা-ড্যাশ' আর আমরা 'ব্যাং-লা-ড্যাশি' । বুঝলাম কলির বিবর্তণ আবার শুরু হয়েছে । এই 'ব্যাং-লা-ড্যাশ' ভাল নাকি এদের পূর্বপুরুষদের উচ্চারণে 'ব্যাং-গলি' ভাল ছিল স্থির করতে পারলাম না । খোঁজ নিয়ে দেখেন এই ব্যাটারা কিন্তু বিশ্বায়নের এই যুগে স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, পর্তুগীজ সব ভষা গড় গড় করে বলতে পারে । কেউ কেউ তো আবার বেশি কাবিল, চীনা জাপানী ভাষাও পারে । কিন্তু তাদের জিহ্বার যত আড়ষ্ঠতা আমাদের দেশের নাম উচ্চারণ করতে গেলেই । বিদেশিদের কথা আর কী বলব, আমাদের স্কুল কলেজ গুলাতেও দেখি যখনই ইংরেজিতে লিখে, বিষয়ের নাম লেখা আছে Bengali, আমি নিজে স্কুল কলেজে পড়তে কোন কালেই বিষয়ের নাম Bangla লিখতে দেখি নাই । তবুও আমরা যারা বাংলা মাধ্যমে পড়তাম সবাই বিষয়ের নাম 'বাংলা' বলেই জানতাম এবং মানতাম । ভুলেও কোনদিন জিনিসটাকে 'bengali' ডাকার কথা মাথায় আসেনি । মাথায় আসল প্রথম ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্রদের সাথে পরিচয়ের পর । প্রথম যার সাথে পরিচয় হয়, তখন আমার মাধ্যমিক পরীক্ষার একমাস বাকি, একথা শুনে ছেলেটি বলল "তোমাদের তো physics chemistry তে অনেক bengali terms শিখতে হয় তাইনা ?"
এই ব্যাপারটা আমার মহা বিরক্ত লাগে । নামটা কেন বেঙ্গলি হবে, ওরা দুইশ বছর আগে উচ্চারণ করতে পারেনি তাই ? সেটা তো ওদের ব্যার্থতা । আমি নিজে যখন বিদেশি কারো সাথে কথা বলি, মানে ঐ chat করি আরকি, সবসময় বলি "I speak bangla", 'bengali' ভুলেও লিখি না কখনো । আমার দুইটা বিদেশি বন্ধু আছে । ওরাও জানে আমার ভাষা বাংলা, কাজেই আমার কাছে ওরা মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ইংরেজি শব্দের বাংলা জানতে চায়, bengali জানতে চায় না কখনো । এই ব্লগটা লিখছিলাম যখন, Google এ একটু ঘাঁটলাম 'bangla lanuage processing' এবং 'bengali lanuage processing' নিয়ে । দুইরকম দিকেই অনেক গবেষনাপত্র আছে দেখা গেল । অন্তত কম্পিউটার বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞরা যারা বাংলা ভাষার কম্পিউটারায়ন নিয়ে কাজ করছেন তারা অনেকেই 'bangla' ব্যবহার করছেন । এটা প্রসংশনীয় বলে আমি মনে করি । অন্যেরাও ব্যপারটা নিয়ে হয়তো ভেবেছেন, বা ভাবছেন । সবার সাথে এটা নিয়ে কথা বলার জন্যই প্রসঙ্গটা তুললাম ।
- এনকিদু
মন্তব্য
আপনার লেখার শিরোনাম দেখে মনে পড়ছে "বং থেকে বাংলা" নামে একটা (গবেষণাধর্মী?) উপন্যাস আছে। অনেক আগের দেখা তবে মনে পড়ছেনা। গুগলে সার্চ দিয়ে এই সাইট পেলাম। সেখানে লেখা আছে ফজলুর রহমান এই উপন্যাসের রচয়িতা। লেখকের নামটা আমার কাছে অপরিচিত মনে হচ্ছে। যদিও আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগে আমি বইটি দেখেছিলাম, আমার মনে হয় রচয়িতা ছিলেন নারী। আর শিরোনামটাও সম্ভবত ছিল বঙ থেকে বাংলা। দুটো নিশ্চই ভিন্ন বই।
যদি ভুল না করে থাকি তবে লেখিকার নাম রিজিয়া রহমান । আমার খুব পছন্দ ছিল বইটা ।
- এনকিদু
বাংলার ইতিহাস থেকে একেবারে ব্লগকথন, চ্যাটিং! ভাল্লাগলো লেখাটি।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
বাংলার ইংরজী যে Bangla সেটা আমি কলেজে পড়ার সময় নিশ্চিত হয়েছি। আগে অহংকার থেকেই Bengali বলতাম না, নটরডমের ইংরেজী ভাষায় লেখা ট্রান্সক্রিপ্টে বাংলা বিষয়কে Bangla উল্লেখ করা খেকে নিশ্চিত হয়েছিলাম।
বং থেকে বাংলা এসেছে এটা সত্যি
তবে বং শব্দটা চৈনিক শব্দ
যার অর্থ হচ্ছে নদী
আদিতে বাঙালি বসতি নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠতো
এবং বাঙালিদেরকে চায়নারা নদী পারের মানুষ হিসেবেই গণ্য করত
আমার যতদূর খেয়াল হয় বং>বংলী> বাঙালি
এইভাবে শব্দটা তৈরি হয়েছে
(এই মুহূর্তে রেফারেন্স মনে করতে পারছি না। কিন্তু বং মানে নদী এবং বংলী মানে নদী পারের মানুষ। এটা মোটামুকি কনফার্ম)
কিন্তু চীনারা এসে আমাদের বং বললো আর আমরা মেনে নিলাম? কেমন না ব্যাপারটা?
হাঁটুপানির জলদস্যু
নিজেকে ডাকার জন্য তো আর কারো নামের দরকার পড়ে না?
তাই কেউই নিজের নাম নিজে রাখে না
(বুদ্ধি হবার পরে অনেকে বদলায়। যেমন কঙ্গো>জায়ার>কঙ্গো কিংবা বোম্বাই>বোম্বে>মুম্বাই কিংবা রেঙ্গুন>বার্মা>ইয়াঙ্গুন কিংবা পিকিং>বেইজিং)
যারা ডাকে তারাই ঠিক করে কী নামে ডাকবে
তারপর তারাই আকারে ইঙ্গিতে ইশারায় কিংবা বারবার ডাকতে ডাকতে বুঝিয়ে দেয় ওটা তোমার নাম
ওটা শুনলে বুঝবে তোমাকে ডাকা হচ্ছে
যেমন আপনার হিমু নামটা তো আর আপনি রাখেননি। কিন্তু এক সময় বুঝে গেছেন কেউ হিমু বলে আওয়াজ দিলে আপনাকেই বলতে হবে- কী দরকার বলেন?
নামের ক্ষেত্রে পুরো ব্যাপারটাই ওরকম
যাকে ডাকা হয় সে শুধু অভ্যস্ত হয়
মানুষের নামের ক্ষেত্রে আপনার যুক্তি সঠিক। তবে আমার নামটা লোকে তখনই জানে যখন আমি সেটা জানাই। আপনি আজকে আমাকে লক্ষবার লীলেন নামে ডাকলেও আমি সাড়া দেবো না, নিজেকে লীলেন হিসেবে পরিচয় দেয়া তো দূরের কথা।
আর সম্ভবত "বাঙালির ইতিহাসঃ আদি পর্ব"-এ পড়েছিলাম, বিভিন্ন চৈনিক পর্যটকের বঙ্গবিহারের বর্ণনা। সেখানে, মনে পড়ছে, করতোয়াকে বিশাল একটি নদী হিসেবে বর্ণনা করে গিয়েছিলেন কোন একজন চৈনিক (ফা হিয়েন নাকি হিউয়েন সাং মনে নেই)। করতোয়াকে সেই চৈনিক বর্ণনা করেছিলেন "ক-লু-তুয়াহ" হিসেবে, অং বং চং কোন চৈনিক নামে নয়। একজন আক্কলমন্দ পর্যটক যখন কোথাও ভ্রমণে যান, সেখানকার মানুষের মুখে সেসব জায়গার ব্যবহৃত নাম তিনি লিপিবদ্ধ করেন, লিভিংস্টোনের মতো জলপ্রপাতের নাম ভিক্টোরিয়া রাখেন না সবসময়। যদি বঙ্গ অঞ্চলকে বং বলে কোন চিঙ্কু বর্ণনাও করে থাকেন, তাহলে তিনি তা করবেন নিজের ভাই বেরাদারদের কাছেই। জনবহুল এই অঞ্চলে গুটিকয়েক চৈনিক এসে বং বলবেন, আর এলাকার নাম বং হয়ে যাবে, এ রীতিমতো কল্পবিজ্ঞানের মতো হয়ে যাচ্ছে। চৈনিকরা যদি পরবর্তীতে বঙ্গদেশে রাজ্যবিস্তার করতো, তাহলেও একটা কথা ছিলো। বরং রিকশা, চা, চিনি আর লিচু ছাড়া আর কোন চৈনিক শব্দ আমরা গ্রহণ করিনি (নাকি আরো আছে কোন ফুং ফাং?)। এ থেকেই বোঝা যায় চীনের সাথে আমাদের সাংস্কৃতিক যোগাযোগের মাত্রা আর কাল।
মণিপুরী বা অন্য মোঙ্গলয়েড যারা আছেন এ অঞ্চলে, তাঁরা যতদূর জানি যতটা না চীন, তারচেয়ে বেশি তিব্বতের সাথে সম্পর্কিত।
হাঁটুপানির জলদস্যু
এই জিনিসটা আজকে নতুন শিখলাম , ধন্যবাদ মাহবুব ভাই । রেফারেন্স মনে পড়লে জানানোর অনুরোধ করছি ।
বং+আল তত্ত্বের চাইতে বং>বংলী তত্ত্বটা আমার কাছে বেশি যুক্তিসঙ্গত মনে হচ্ছে । রেফারেন্স জানা থাকলে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করতে পারতাম ।
তবে একটা প্রশ্ন আছে । চীনারা ঐ আমলে আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে চিনল কেমনে ? হিমালয় পর্বতশ্রেনী পার করে এতদূর আসা যেইসেই কথা না । তারপরেও কথা থেকে যায় । প্রাচীন কালে ত প্রায় সবসময় নদীর আশে পাশেই মানব বসতী গড়ে উঠত । এই নামটা শুধু আমাদেরকে কেন দিল ?
নামের ক্ষেত্রে সবচে চিরন্তন এবং মজার বিষয়টি হলো যার নাম সে কিন্তু তার নাম রাখে না
বরং যারা ডাকে তারাই ঠিক করে তাকে কী নামে ডাকা হবে
পরে তাকে শুধু বুঝিয়ে দেয়া হয় আমরা এই বললে বুঝবে তোমাকে ডাকছি...
পৃথিবীর কোনো প্রাচীন জনপদ এমনকি কোনো গ্রামের নামও নিজেদের রাখা না
দূরবর্তীরা ওই অঞ্চল কিংবা জনগোষ্ঠীকে যে শব্দ বা প্রতীক দিয়ে চিহ্নিত করত পরবর্তীতে তাই হয়ে উঠে তার নাম
পৃথিবীতে সবচে বেশি নাম বোধহয় রেখেছে গ্রীকরা
সিন্ধু নদীর পারের মানুষ>সিন্ধু>হিন্দু>হিন্দুস্তান>ইন্ডিয়া
আজিজিয়া>ইজিপ্ট
তিন নদীর মোহনা> মেসোপটেমিয়া
মধ্যপ্রাচ্য
আরো বহু বহু নাম
০২
বাংলা এবং বাঙালি শব্দটা আমার হিসেবে খুব প্রাচীন না
রামায়ণ মহাভারতের যুগে বাংলা ভাষা হয়তো ছিল কিন্তু বাঙালি নামে কোনো জাতি কিংবা বাংলা কিংবা বঙ্গ নামে কোনো জনপদের কথা আমর নজরে পড়েনি
এটা আরো পরের
বাঙালি এবং বাংলা কথাগুলো দানা বেঁধেছে আরো বহু পরে
মহাভারত-রামায়ণে বাংলা অঞ্চলের বহু জায়গা এবং জাতির নাম উল্লেখ থাকলেও সেগুলো অন্য বিভিন্ন নামে উল্লেখ করা আছে
০৩
শুধু বাংলা অঞ্চল নয়। এই অঞ্চল দিয়ে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় প্রাচীন কাল থেকেই চায়নাদের যাতায়ত ছিল
বাণিজ্য ছিল
পুরো উপমহাদেশে মোঙ্গলয়েড জাতিগোষ্ঠীগুলো চায়না অঞ্চল থেকেই ছড়িয়ে পড়ে
এবং সেই যাতায়াতের মধ্যেই তারা অতিক্রম করে নদী (বং) পারের মানুষদের
শুধু তাই না
মণিপুরি জাতি নিজেদেরকে বলে মৈতৈ। মৈতৈ শব্দটি এসেছে মী থিস থেকে
মি= মানুষ
থিস= চীন
মৈতৈ= চীন দেশের মানুষ
মণিপুরি জাতি কোনোভাবেই বাঙালি জাতি থেকে কম প্রাচীন না
০৪
মহাভারতে চায়নাদের বর্ণনা আছে এবং গুরু দ্রোণাচার্য সম্ভবত নিজেই ছিলেন চায়নার মানুষ
মানুষের নামের জন্যে কথাটা সত্যি, দেশের নামের জন্যে না। আর্যরা সিন্ধুনদকে সিন্ধু বলে না ডাকলে গ্রীকটা সেটার গ্রীক সংস্করণ ইন্ডাস রাখতো না নিশ্চয়ই। সিন্ধুনদের নাম আর্য বা তারও আগের হরপ্পীয়দের রাখা সম্ভবত। আর কোন ধরনের সাংস্কৃতিক জবরদখল ছাড়া গুটিকয়েক পর্যটক বা কদাচিৎগামী ব্যবসায়ীদের দেয়া নামে একটা দেশের নাম সেই দেশের অধিবাসীরা ব্যবহার শুরু করবে, এটাও একটু ফার-ফেচড শোনায়। এমন হলে আজও ঝিলম নদীর নাম বিতস্তা বা হাইডাস্পেসই থাকতো।
ধরা যাক আজ কোন চিঙ্কু আপনার বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণ করলো, আপনাকে বং বলে ডাকা শুরু করলো, আপনি কি কাল থেকে নিজের নাম বং বলে পরিচয় দেয়া শুরু করবেন বন্ধুদের কাছে? অবশ্যই না। আপনার নাম তখনই বং বলে রটতে পারে, যদি সেই চিঙ্কু আর তার দোস্তরা আপনার মহল্লা দখল করে মৌরসীপাট্টা গেড়ে বসে। আর বঙ্গ বা বঙ্গাল সম্ভবত এ অঞ্চলের সাধারণ কোন বৈশিষ্ট্য নির্দেশকারী শব্দ, কারণ বাংলা অনেক ভাগে বিভক্ত ছিলো। বং শব্দটার মূল ওঁরাওঁ বা সাঁওতালদের মতো কোন গোষ্ঠীর ভাষায় আছে হয়তো।
হাঁটুপানির জলদস্যু
রেগে যাওয়ার কারণ নেই ভাইজান
মানুষ হোক আর নদী হোক আর দেশ হোক
সব নামই রাখে তারা যারা তাকে ডাকে
তিস্তা নদীর নাম তিস্তা নিশ্চয়ই নদী নিজে রাখেনি?
রেখেছে অন্যরা
০২
পর্যটকরা ছোট ছোট জিনিসের নাম লোকাল লোকজনের মুখ থেকে শোনে লেখে
কিন্তু সাধারণ বণিকরা তার দেশের মানুষের কাছে পরিচয় করায় কোনো একটা বৈশিষ্ট্য দিয়ে
মহাভারতে যেমন দৈত্য (যারা দ্বীপে বাস করে। কৃষ্ণ দৈপায়ন নিজেও ছিলেন একজন দৈত্য) - নিষাদ (শিকারী) এগুলো কারো নিজের দেয়া নাম না
ভদ্রজনরাই তাদরে এমন নামে ডাকতো এবং আমরাও পরে তাদেরকে সেই নামে ডাকা শুরু করেছি
০২
মাত্র বছর তিন চার আগে আমেরিকান ডিকশনারিতে ফিলিপিনো শব্দটা ঢোকানো হয়েছিল গৃহপরিচারক শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে
সৌদিতে দীর্ঘদিন আমাদের পরিচয় করানোর জন্য মিসকিন শব্দ ব্যবহার করা হতো
এবং সাম্প্রতিক সময়ে মালেশিয়াতে একটা শব্দ খুবই পরিচিত তা হলো- বাংলা
মানেন বা না মানেন
এগুলো নামই
ফিলিপিনোরা আন্দোলন করে যেমন ডিকশনারি থেকে ওই শব্দটা বাদ দিয়েছে
তেমনি বাদ না দিলে ওগুলো লেগেই থাকে কপালের সাথে
লীলেন ভাই, রাগ করার তো কোন প্রশ্নই আসে না। আমি শুধু আপনার হাইপোথিসিস খন্ডনের চেষ্টা করছি যুক্তি দিয়ে।
তিস্তা নদীর নাম নদী নিজে রাখেনি, তার আকিকা হয়নি, এ কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু তিস্তা নদীর নাম চীন থেকে কেউ এসে রেখে যায়নি। একটি দেশের নাম সেই দেশের অধিবাসীরাই প্রথমে রাখে, অন্যান্য দেশের লোকের এসে নিজেদের সুবিধামতো নামে ডাকে সে দেশকে। চীন দেশের নাম যেমন চুংনিয়া (বাংলায় এর অর্থ দাঁড়ায় মধ্যরাজ্য), ইংরেজরা একে চায়না করেছে নিজেদের জিভের সুবিধার জন্যে, আমরা করেছি চীন।
এখন আপনার হাইপোথিসিস হচ্ছে, বঙ্গের নাম এসেছে চৈনিক ভাষা থেকে। চীনের সাথে বঙ্গের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক যোগাযোগের মাত্রার কথা একটু ভেবে দেখুন। চৈনিক বণিক বা পর্যটকরা বহুদিন যাবৎ এইদেশে আনাগোনা করেছে এ কথা ঠিক, কিন্তু তাদের রাখা বা ডাকা নামে এই দেশের অধিবাসীরা এই দেশকে ডাকা এবং দলিলদস্তাবেজ থেকে শুরু করে পৌরাণিক কাহিনীতেও সেই নাম ব্যবহার শুরু করবে, এই যুক্তি ধোপে টেকে না। বরং এটাই ধরে নেয়া স্বাভাবিক যে এ অঞ্চলের আদিবাসীদের কাছেই এই এলাকা বঙ্গ বলে পরিচিত ছিলো।
আপনি যে ফিলিপিনো বা মিসকিনদের উদাহরণ দিলেন, সেটি অপ্রাসঙ্গিক এই কারণে, আজকের ফিলিপাইন আমেরিকার একটি ক্লায়েন্ট স্টেট। আজকের সৌদি আরবের ওপর আমাদের অনেকেই অর্থনৈতিক কারণে নির্ভরশীল। চীনের সাথে তৎকালীন বঙ্গের এই মাত্রার সম্পর্ক ছিলো, এমন সূত্র কি দিতে পারেন?
চীনা ভাষায় বং মানে নদী হোক, কিন্তু বংলি মানে নদীর পারের মানুষ, এই সিদ্ধান্তে আমরা কিভাবে আসতে পারি, যেখানে আপনি নিজেই বলছেন যে চীনা ভাষায় মানুষকে "মি" বলা হয় (মৈতৈ বিষয়ে আপনার অনুসিদ্ধান্ত দ্রষ্টব্য)?
পরিশেষে অনুরোধ করি, আপনার হাইপোথিসিসের স্বপক্ষে কিছু রেফারেন্স যোগ করতে। বিষয়টি বেশ আগ্রহোদ্দীপক, আমি এর ওপর আরো পড়তে ইচ্ছুক।
হাঁটুপানির জলদস্যু
ভাল লাগল ।
খুবই সইত্য কথা । শালার আংরেজ জাতি।
eru
-------------------------------------------------
pause 4 Exam
ভাগ্যিস আজকে মাতব্বরি করে এই জিনিস লিখসিলাম, নাইলে এত জ্ঞানের কথা শুনতে পাইতাম না
ধন্যবাদ মাহবুব ভাই ।
তবে মোঙ্গলয়েড জাতির উপমহাদেশে আগমন নিয়ে যা বললেন, তা থেকে অনেকদিন আগে শোনা কিছু কথা মনে পড়ে গেল ।
এক লোক আমাকে যুক্তি দিয়ে বোঝানর চেষ্টা করছিল যে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীরা নাকি আসলে 'আদিবাসী' না । বাঙ্গালিরাই আদিবাসী, ওরা এসেছে পরে ।
কাজেই ওদেরকে দেশছাড়া করা কর্তব্য
- এই ছিল তার বক্তব্য
(একটু পদ্য করলাম আর কি )
সেদিন আমি ঐ লোককে "দূর মিয়া যান তো, এখন সময় নাই এসব কথার" - এই ধরনের কিছু একটা বলে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম । কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তার তথ্যটা সঠিক ছিল, মনোভাবটা যদিও বাজে ।
- এনকিদু
এটা কিন্তু ঠিক
এদের মূল আদিবাস বর্তমান ভারত এবং বার্মার লাগেয়া অঞ্চলগুলোতে
বাংলাদেশ অঞ্চলটা মূলত এদের মূল ভূখন্ডে এক্সটেনশন
বাংলাদেশের ভূখন্ডে ওরা মূলত সিজনাল মাইগ্রেশন করত জুম চাষের জন্য
ফসল তুলে আবার ফিরে যেত মূল ভূখন্ডে
এদের মধ্যেই কেউ কেউ আস্তে আস্তে স্থায়ী বসতি গড়ে তোলে এই অঞ্চলে
০২
তবে দেশ ছাড়া করার ব্যাপারটা আমি সমর্থন করি না মোটেও
কারণ বাংলাদেশের নিয়ম অনুযায়ী কেউ এই মাটিতে জন্ম নিলেই দেশের নাগরিক
আর এরা আছে জেনারশেন আফটা জেনারেশন ধরে
এরা বাংলাদেশেরই মানুষ
অন্য কোথাও যাবে কেন?
কোন উপজাতীয়দের বাংলাদেশ অন্চলে সিজনাল মাইগ্রান্ট বলা হল?
হাঁ, দেশ ছাড়া করাটা কোন কাজের কথা না ।
আর এভাবে দেখতে গেলে তো কেউই কোন দেশের আদিবাসী না । নদীপাড়ের বংলি যারা ছিল, তারাও নিশ্চয় অন্য কোথাও থেকে মাইগ্রেট করেই এসেছিল আরো অনেক বছর আগে ।
আদিবাসী না হলেই যদি দেশ ছাড়া লাগে তাহলে ককেশিয়ানদের আমেরিকা আর অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ করতে হবে । রুশদের রাশিয়া ছাড়তে হবে, কারন রাশিয়াতে সর্বপ্রথম বসতি গড়ে নর্ডিকরা । আজকের রুশেরা সবাই তাদের বংশধর । আর্যদেরও ভারত ছাড়তে হবে । বিরাট তেলেসমাতি লাগবে আর কি ।
আপনি যদি বিবর্তনবাদে বিশ্বাস করেন তাহলে জানার কথা যে বিবর্তনের ধারায় মানুষের আবির্ভাব ঘটে আফ্রিকা মহাদেশে প্রথম । সেখান থেকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে মানুষ । তো সেই হিসাব অনুযায়ি দুনিয়ার সব লোকের এখন আফ্রিকায় চলে যাওয়া উচিত ।
- উইণ্ডোজ এবারই প্রথম ভিস্তায় বাংলাদেশ-বাংলা সংযোজন করেছে। এবং এর দায়িত্বে ছিলেন এক পাবলিক যিনি বাংলাকে "বেঙ্গলী" হিসেবে তুলে দিয়েছেন ভিস্তার সঙ্গে।
এই নিয়ে একদিন কথা হচ্ছিলো অন্য কোথাও। বাংলা যে আসলে Bangla, সেটা তিনি মানতে নারাজ। পরে বাংলাদেশ সরকারের ওয়েবে Bengali বাদ দিয়ে Bangla-কে প্রতিষ্ঠার যে প্রমাণ মিললো সেটা সেই জনৈক ব্যক্তিকে দেখাতে বাধ্য হই।
বিদেশীদের মুখে ড্যাশ-ডোশ শুনলে এমনিতেই মেজাজ খারাপ হয়। তারওপর যদি নিজের দেশের আল-বাল-চেটরা ভালো করার সুযোগ পেয়েও পুটকি মারার দিকে আগে বাড়ায় তখন মেজাজটা আর ধরে রাখা সম্ভব হয় না।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
লেখার বিষয় ভাল, লেখা ভাল, আলোচনাও ভাল। তবে এই লেখাটার মন্তব্যে আরেক পদের বেঙ্গলীর খোঁজ পাবেন।
http://sachalayatan.com/aah/13317
মন্তব্যের মন্তাজ-৩ | সচলায়তন
শ্রদ্ধেয় মাহবুব লীলেন কী বলেন?
পড়লাম
এবং আমার একটা গল্প বোকাসূত্র থেকে একটা প্যারা তুলে দিলাম
ওটাই ওই পোস্টের কমেন্ট
দেখতে পারেন
কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ।
দারুন লিখেছ! প্রথমে ইতিহাস দেখে পড়তে ভয় পাচ্ছিলাম। কিন্তু প্রানবন্ত লেখা। ভাল লাগলো। এমনিতেই আশরাফুল দের খেলা দেখলে বেশির ভাগ সময় মেজাজ খারাপ হয়। তার উপর অই ইংরেজ দের কমেন্ট্রী তে "ব্যাং-ল্যা-ড্যাশ" শুনলে মনে হয় শালা গুলারে ধরে ...
---
স্পর্শ
“আদিবাসী”, “উপজাতী”, “পাহাড়ী” এইসমস্ত নাম বা উপসর্গগুলো কি বাদ দেয়া যায় না? কে কবে এসেছে এই প্রশ্ন এখন অবান্তর এবং অপ্রয়োজনীয়। সংখ্যায় কম হলেই ভিন্ন নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ের কাউকে “আদিবাসী” বা “উপজাতী” বা “পাহাড়ী” ইত্যাদি বলে সম্বোধন করা ঠিক না। ত্রিপুরারা ভারতে থাকলে জাতি আর বাংলাদেশে থাকলে উপজাতী?! এমন হাস্যকর ব্যবস্থা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। ঢাকা শহরে তিন পুরুষ ধরে সেটেল্ড একজন চাকমা না ঢাকার “আদিবাসী” না “পাহাড়ী”। সাঁওতালদের একটা বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরে সমতলে বাস করছেন। তাদেরকেই বা কি যুক্তিতে “পাহাড়ী” বলি?
আসলে সংখ্যাতত্ত্ব দিয়ে না মেপে প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ের মানুষকে আলাদা আলাদা জাতি হিসাবে মানাটাই যুক্তিযুক্ত।
প্রাচীন চৈনিক পর্যটকরা সুলতান গিয়াস উদ্দীন আযম শাহ-এর নাম লিখেছেন “ইয়া-সু-তিন” (বাংলাদেশে কার সাধ্য আছে “ইয়া-সু-তিন” থেকে গিয়াস উদ্দীনকে খুঁজে পাবে?!)। সুতরাং চৈনিকরা আমাদের “বং” বললে যৌক্তিকভাবেই তার পিছনে আমাদের প্রকৃত আরেকটি নাম থাকার কথা। সেটি কি শ্রদ্ধেয় মাহবুব লীলেন জানাবেন? চীনা ভাষায় “বং” মানে যদি “নদী” হয়, আর নদীর পাড়ে বাস করলে বংলী বা বাঙালী হয়, তাহলে যে কোন দেশের মানুষকে (মায় চীনারাশুদ্ধ) বংলী বা বাঙালী বলা যায়।
একটা ছোট তথ্য, বানানের দিক দিয়ে বাঙলা, বাঙালী, বাঙলাদেশ সঠিক। তবে “বাঙলা” কে “বাংলা” লেখার ব্যাপারে বাংলা একাডেমী তাদের উচ্চারন সংক্রান্ত বুকলেটে যুক্তি দিয়েছে, যেহেতু বাংলাদেশের সংবিধানে “বাংলা” লেখা হয়েছে তাই “বাংলা” লেখাও সঠিক বলে ধরতে হবে।
বাংলাদেশের সংবিধানের বাংলা ভাষ্য নিয়ে কথা বলাই অহেতুক। বাংলার মহাপন্ডিতদের করা এই ভাষ্যে “secularism” -এর বাংলা করা হয়েছে “ধর্মনিরপেক্ষতা”। নূন্যতম ইংরেজী জানা মানুষ জানেন এই অনুবাদ ভুল। দেশের শুরুতে দেশের মূলনীতিতে গলদ দিয়ে শুরু করেছেন পন্ডিতরা।
ষষ্ঠ পান্ডব
মনে হয় শালা গুলারে ধরে ড্যাশ করে দেই, তাই না
- এনকিদু
হে হে হে!! আবার জিগায়!!
---
স্পর্শ
হ ভাই কিছু রেফারেন্স দেন, জিনিস গুলা বেশ আগ্রহোদ্দীপক । পড়ে কিছু বিদ্যা বাড়ুক, বিদ্যার কচ-কচি দিয়ে আরেকখান ব্লগ লিখুম
- এনকিদু
নতুন মন্তব্য করুন