[নিজেকে নিয়ে একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে গিয়ে এই সিরিজের সূচনা। দুই হাতে লেখার এক্সপেরিমেন্ট! যথারীতি আব্জাব গল্প। বিশেষত্ব হচ্ছে আমি ঘন্টায় কয়টা গল্প লিখতে পারি এটা তার একটা স্ব-পরীক্ষা। গল্পের মান সম্পর্কে তাই কোন নিশ্চয়তা দিতে পারছিনা। হিসেবের জন্য মোবাইলে টাইমার অন করেছি। টিক্ টিক্ টিক্ ... গল্প শুরু হল!]
ক্লান্তি
হারুণ কারিগরের মেজাজ খারাপ। অবশ্য হাতের যে কাজটা এখন সে করছে, সেটাতে মেজাজ খারাপ হলেও তেমন কিছু আসে যায়না। উল্টা ভালই হচ্ছে মনে হয়। টূকরা গুলা মিহি হচ্ছে। এইসময় কুত্তাডা ঘাউক করে উঠে! শুনে তার চেয়ে জোরে খেই করে উঠে সে নিজেও। শালার কপালডাই খারাপ যাচ্ছে ইদানিং। নাইলে কামের সময় এই কুত্তা মুত্তা নিয়া মাথা ঘামানো লাগে নাকি?
হারুণ কারিগরের আসলে সময় খারাপ যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরেই। হুঠ করে দেশে কি সব র্যাব যৌথ বাহিনী চালু হলো আর তার কাম গেল কমে। আর এই বন্দরটাতো মরেই গেছে! জাহাজই ভিড়েনা তেমন। মংলা বন্দরের সেই পুরাতণ দিনের কথা ভাবতে থাকে সে। আহ্হা রে! কি দিনডাই না আছিল। আইজ অবশ্য কামের উপর কাম পাইছে। ডাবল কাম। প্রথম কামডা দিলো জমির শেখ। সুরুজরে বানাইতে হইবো। ওয়ার্কশপে আটাকায়েও রাখছিল সুরুজরে। সন্ধ্যায় যেই বানাতে যাবে অমনি বাইরে শব্দ, খট্ খট্। কি ব্যপার ? কামের সময় তো কেউ ডীস্টার্ব দেয়না তারে । এইটা আবার কোণ আবাল। মহুয়ার বতলডা নামায়ে রাখে সে। বাইরে উকি দেয়।
-কিডা? বাইরে কিডা??
-হারুন আছো নাকি?
বিরক্ত কন্ঠে কেউ একজন হাক ছাড়ে।
ভাব শুবিধের না। তার কাছে কেউ আসলেতো ভয়ে ভয়ে থাকার কথা। এই শালা অন্য জিনিস মনে হচ্ছে। এইসময় একটা কুত্তাও ঘাউক করে উঠে! হারুন কারিগর একটূ ভয় পায়। ডগ স্কোয়াড হতেপারে! বেরিয়ে আসে সে। দেখে সামনে দাঁড়িয়ে আছে এ,এস,আই শরীফ। তবে ডিউটিতে নেই মনে হচ্ছে। গায়ে সুতির পাঞ্জাবী। সারাদিনের ধক্কলে পাঞ্জাবীর অবস্থা কাহিল। অস্ফুট স্বরে কুকুরটারে একটা খিস্তি করে সে।
শরীফেরও দিনটা খুব খারাপ গেছে। গত দুই দিন ধরেই এই অবস্থা। শালার এক উপদেষ্টার নাতী আর তার দোস্তরা আসছে বেড়াতে। ব্যস! সবার ঘুম হারাম করে ছাড়ছে। তার দায়িত্ব পড়ছে সেই চুতমারানীর পুলার সাথে সাথে ঘুরা। রোদের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে জান কাবাব। কাইল সকালে ফিরবে এই বালছালরা। একটু হাফ ছাড়বে ভাবছিল। না, তা হবে না, এই সন্ধার সময় তার মায় নাকি ফোণ করে বলছে হরিণের মাংস নিয়ে যেতে। আরে হরিণ কি এত সস্তা নাকি? দুই দিন আগে বলে রাখলে তো ব্যবস্থা এমনিতেই করা যেত। এখন এই দুই ঘন্টার নোটিশে পাবে কৈ। এসপি সাহেব আবার বলে দিয়েছে এই পুলার সব খায়েস যেন পুরোন করা হয়। এখন হরিণের মাংস কই পায়? এই গুতানীতে যখন মাথা খারাপ অবস্থা তখনই হাবিলদার সিদ্দিক বুদ্ধিটা দিল! একটা কুত্তা বানায়া দিতে। এর পর কই থেইকা জানি একটা নেড়ি কুত্তা ধইরাও আনছে। কুত্তা পাওয়া সহজ, কিন্তু কুত্তা বানাবে কে? কোন কসাই হারামজাদাই রাজি হয়নাই। পুলিশের ডর দেখানোর পরেও না!! এর পর সিদ্দিকই কইলো হারুণ কারিগরের নাম। পুলিশের লোক হওয়ায় কে কি কাম করে তলে তলে তার সব খবরই থাকে। সেই ট্রাই দিতেই আসছে সে এই ওয়ার্কশপে। শরীফ বলে,
-ঐ মিয়া তোমার তো হাতে নাকি কামকাজ নাই। এই কামডা কইরা দেও।
এর পর কাজের বৃত্তান্ত বলে সে। হারুণের আসলেই কাজের ঘটতি যাচ্ছিল। তারপরও, অন্য কেউ এই অফার দিলে, সে ফ্রীতেই সেই শালারে বানায়া ফেলতো। কিন্তু পুলিশের লোক ঘটানো উচিৎনা। কাম কাজের রিলেশন থাকলে বরং শুবিধা। হারুণ ভাবল বলে যে, আইজ তার হাতে কাম আছে। পারবে না। কিন্তু তার কামের যে ধরণ সেই কাম হাতে থাকার কাহিণী পুলিশরে কওয়ার মত আবাল সে না। মুখ বিষ করে রাজি হয়ে যায় তাই। কুত্তা রেখে তড়ি ঘড়ী চলে যায় শরীফ। তার এখন আবার নতুন কাজ হইসে। মাগী পাড়ায় যাইতে হবে। সেই চুদনা আবার সেইটাও নাকি চায়! ফোন করছিল সিদ্দিক।
হারুন আবার ওয়ার্কশবে ঢোকে। মহুয়ার বতলটা হাতে নিয়ে আবার সুরুজরে বানাতে শুরু করে। কুত্তাটাও বেধেঁ রাখে পাশে। তার পর এক সময় হাতের কাজ শেষ হয়। কুত্তার উপর রাগ করে একটূ মনে হয় বেশীই জোর দিয়ে ফেলেছিল। বড্ড হাফ লেগে যায় তার। ঘাটে ছোট ডিঙ্গিটা লাগানোই আছে। এখন নিয়ে ফেলতে হবে পশুর নদীতে। ভেটকি মাছ আর কামটে খেয়ে ফেলবে সব। অবশ্য একটু একটু করে বিভিন্ন যায়গায় ফেলতে হবে। এক যায়গায় ফেলা যাবেনা। কুত্তাডাও জালাচ্ছে। ঘেউ ঘেউ করে আবার লোকজন না ডেকে আনে!
কুত্তাডারেও সাইজ করে রাখা যায়। পরে ফিরে এসে না হয় বানাবে। কিন্তু বড্ড ক্লান্তি লাগে হারুনের। বিশাল প্লাস্টীকের বস্তাটা টেনে নিতে থাকে ডিঙ্গির দিকে। একসময় ডিঙ্গি নিয়ে রওনাও হয়ে যায়। আজ পশুরের ঢেউ বড্ড বেশি। প্রচন্ড পরিশ্রম হয়ে যায় একটু যেতেই। তার পরও এদিক ওদিক গিয়ে হাতের কাজটা প্রায় শেষ করেই ফেলেছিল। তখনই টহল বোটের আলো!! এই সময় এমনিতে এদিকে টহল দেয়না কেউ। সেই কার নাতী না কেডা জানি আইছে তার জন্যেই মনে হয় এই এক্সট্রা সিকুরিটি, ভাবে হারুন। কাজ মোটে অর্ধেক হইছে। প্রচন্ড বিরক্তি আর ক্লান্তি নিয়ে ফিরে আসে তার ওয়ার্কশপের ঘাটে। রাত বাড়লে আবার যেতে হবে। বস্তাটা টেনে আবার ডিঙ্গি থেকে ঘাটে তোলে। কুত্তাটা আবার ঘাউক করে উঠে। বিরক্তি আরো বেড়ে যায়। কিন্তু কিছু একটা হাক ছেড়ে যে সেই বিরক্তি প্রকাশ করবে, সেই বল আর পায়না। মহুয়ার বতলটা টেনে নেয় কাছে। তার পর ‘ধুস শালা’ বলে ছুড়েও দেয় এক দিকে। খালি হয়ে গেছে। কুত্তাটার দিকে তাকায়। তার পর কি যেন ভাবে। উফ্... বড্ডো ক্লান্তি লাগতিছে!
এদিকে বিভিন্ন ফাই ফরমায়েশ খাটতে খাটতে শরীফের অবস্থাও কাহিল। ক্লান্তি তে মাথা ধরে গেছে। পিঠের কাছেও ব্যথা হয়েছে মনে হয়। বাড়িতে ফিরেই বউ কে বলতে হবে কিলায়ে দিতে। তবে বৌ ঘুমায় গেছে মনে হয়। শালী যদি ঘুমায় তাইলে হালার যেই মাগী ডারে রেস্ট হাউসে দিয়া আসছে, তার বইন রে দিয়া কিলায়া নিব। এইসব ভাবতে থাকে সে। বড় প্যাকেটটা ডান হাত থেকে বাম হাতে নেয়। পিঠের ব্যথা আর ক্লান্তি মিলে তাকে অবশ করে ফেলে যেন। মনে হয় ছুটেই যাবে হাত থেকে। এইসময় পাশেই, একটা কুত্তা ঘাউক করে উঠেই দৌড় দেয় সামনের দিকে।
প্রচন্ড ক্লান্ত বলেই হয়তো, সেটা খেয়াল করার ফুসরত পায়না শরীফ।
===
স্পর্শঃ১৬
মন্তব্য
হা হা হা!! পোষ্ট করেছি সেই সকালে। তার পর রিফ্রেশ বাটনে ক্লিক করতে করতে আমার ফায়ার ফক্সের রিফ্রেশ বাটনটাই ফুটা করে ফেলেছি। এখন বিকেল... অবশেষে তারে পাইলাম!!
----
স্পর্শ
হা পড়ছি। একটানে। তবে মাথা কম কাজ করে বিধায় লাস্ট এর দুইটা লাইন কয়েকবার পড়তে হলো...
র্যাব টা ড়্যাব করে লিখতে পারেন।
---------------------------------
জ্ঞানীরা ভাবলেন খুব নাস্তানাবুদ করে ছাড়া গেছে...আআআহ...কি আরাম। বিশাল মাঠের একটি তৃণের সাথে লড়াই করে জিতে গেলেন।
ছোট্ট তৃণের জন্য অপরিসীম ঘৃণা।
হুম লাস্ট দুইটা লাইন একটূ অস্পষ্ট রাখতে চেয়েছিলাম। একটূ বেশীই অস্পষ্ট হয়ে গেছে। অবশ্য অন্যভাবে একটু লিখেছি পরে।
কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ!
---
স্পর্শ
- শেষমেশ হরিণের মাংস চাইয়া সুরুজরে পাইলো মাননীয়ের নাতি!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
এইতো বুঝতে পারছেন দেখতেছি!!
তবে সেইটা কিন্তু শিওর না। মানে হয়তো অইটা কুকুরের মাংসও হইতে পারে! কিছুই ক্লিয়ার করাহয়নাই।
আমার কয়েক ফ্রেন্ড গল্প পড়ে নাকি বুঝেনাই আপনি বুঝসেন দেখে মনে শান্তি লাগতেছে।
---
স্পর্শ
- কুত্তার মাংস হইবো না এইজন্য যে শরীফ মিয়া তার পাশ দিয়া চইলা যাওয়া কুত্তাডা ক্লান্তির ঠেলায় খেয়াল করে নাই। এই কুত্তাডা যদি (শরীফ কাকুর) আলোচ্য কুত্তাই না হইবো তাইলে সেইটা শরীফ দাদু দেখলো কি দেখলো না তাতে পাঠকের কী আসে যায়!
আর ঐদিকে বানাইন্যা সুরুজরে সাইজ করতেও টেক মোল্লার (বেচারার নামডা জানি কি রাখছিলেন?) জানখানদান অবস্থা। একেতো রাইত তারউপর ক্লান্তি, অতো ঝামেলায় না গিয়া সুরুজরে ব্যাগে ভইরা হরিণ নামে চালায়া দেওয়াটাই সোজা বুদ্ধি।
এই কারণে এই নাদান পাঠক মোটামুটি শিউর হইয়া গেছে।
বাকিটা আপনের মর্জি আর তেনার ইচ্ছা...
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হে হে হ!!!
আপনিতো দেখি শার্লক হোমস্ এর মত বস!!
---
স্পর্শ
স্পর্শ - দুই হাতে লিখলে 'হাতের লেখা' তো খারাপ হবেই কিন্তু 'লেখার হাত' তো দেখি যে কে সেই - বে এ এ শ ?
উফ্ফ্ফ্, আপনারা শুরু করলেন কি - শেষমেষ হয়তো ক্যানিবলিজমও স্বাভাবিক লাগতে আরম্ভ করবে.........
হা হা হা!!
ভাল লাগতে শুরু করলে সমস্যা নাই। আমাদের দেশে দারুন সাপ্লাই আছে এই 'ফুড'এর। মানে 'চাল'এর চেয়ে অনেক কম দামে অনেক বেশি পাবেন।
আর আলুর চেয়ে টেস্টি মনে হয়।
সমস্যা কোথায়?
---
স্পর্শ
চমৎকার। প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিলেন। বহুবছর আগে পড়া ছোটগল্প "মানুষের মেটে"(সম্ভবত সমরেশের) মনে করিয়ে দিলেন।
ভাল লেখকের কিন্তু তুচ্ছ খুঁটিনাটিও মিস করার কথা না, তাই এটুকু বলা; খুলনা-মংলার জন্য "মহুয়া" খাটেনা... চোলাই বা বাংলার কোনো স্থানীয় প্রতিশব্দ থাকলে ভাল হতো।
অনেক ধন্যবাদ!
আসলে গোলপাতার রস আর কেওড়া থেকে এক ধরনের জিনিস বানায় ওরা। সেইটার নাম ঠিক মনে করতে পারিনি! তাই এইরকম নাম ভেবেনিয়েছি। আপনি যখন বললেন পরে জেনে নিয়ে শুধরে নেব!
---
স্পর্শ
আগের রিপ্লাই টা পোস্ট হয়েছেকিনা বুঝতে পারছিনা। তাই আবার লিখলাম।
ওখানে গোল পাতার রস আর কেওড়া দিয়ে কি যেন বানায় ওরা। নামটা ঠিক খেয়াল নাই। তাড়াহুড়ায় লেখা তাই একটু জেনে নিয়ে শুধরাবো সে ফুসরত পাইনি।
কমেন্টের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। "প্রত্যাশার চাপ" অবশ্য বাড়িয়ে দিলেন
---
স্পর্শ
হুম
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বিপ্রতীপ ব্লগ | ফেসবুক | আমাদের প্রযুক্তি
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
যাক কমেন্ট করলি তাইলে!!
পরিনতিটা বুঝতে আসলেই একটু সময় লেগেছে। তবে উপস্থাপন ভালো লেগেছে। অল্প লেখার মাঝে বিশাল প্রাপ্তি ।
অভী আগন্তুক
পরিনতিটা ইচ্ছা করেই একটূ অশচ্ছ রেখেছি। তবে আরেকটু যত্ন নিলে হয়তো ভাল ভাবে লেখা যেত।
এক্সপেরিমেন্টাল লেখা। ভাল লেগেছে জেনে খুবই খুশি আমি।
কমেন্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
---
স্পর্শ
যে লেখা মনে দাগ না কাটে বা যে লেখা পড়ে একটু ভাবতে না হয় তা একটু হালকাই মনে হয় আমার কাছে (আমি কিন্তু মোটেই ভারী লেখক নই)। সেদিক থেকে ঠিক আছে বোঝাতেই কথাটা লিখেছিলাম।
তারাতারি যেন সচল হতে পারেন তার জন্য শুভ কামনা রইল।
অভী আগন্তুক
আবারো অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
ঘটনা দুম করে শেষ হয়ে যাওয়াতে শেষের দুই প্যারা দুইবার পড়লাম। তারপর মাথায় আসল.....
জটিল হইছে!
- ফেরারী ফেরদৌস
হা হা!
শেষের দুই প্যরা দুই বার পড়ার জন্যই লেখা!
ভাল লেগেছে জেনে খুব ভাল লাগছে।
---
স্পর্শ
নতুন মন্তব্য করুন