হঠাৎ উটকো একটা ছুটি পেয়ে বেকায়দায়ই পড়ে গেছিলাম প্রায়। এমনিতে কাজের মধ্যে থাকলে সব সময় মনে হয়। ইশ্ একটা ছুটি যদি পেতাম তাইলে হেন করতাম তেন করতাম। কিছু না করলেও অন্তত ঘুমাতাম নাকে তেল দিয়ে। কিন্তু এখন ঘুম তো উড়ে গেছেই। সেই হেন-তেনও কিছুই করা হচ্ছেনা! ছুটিতে এসেছি বাড়ি। কিন্তু দোস্তদের কোন শালারই ছুটি হয়নাই। একেকটা একেক কাজে ব্যস্ত। বেশির ভাগই তো থাকে ঢাকায়। এই যশোরে যারা থাকে তাদেরও নাকি পরীক্ষা! মন খুলে দুটি কথা বলতে গেলেই পাংশু মুখে বার বার পকেট থকে মোবাইল বের করে টাইম দেখে। সেই দুঃখেই বাড়ি বসে ছিলাম। সময়ও একরকম কেটে যাচ্ছিল ঘড়ির কাটার টিকটিকানি গুনতে গুনতে। এই সময়ই উদ্ধার করলো বরকত আর আলম...
এসব কথাই ভাবছি মটরসাইকেলের পিছনে বসে। চালাচ্ছে বরকত। অবশ্য গাড়ি টা আলমের। নতুন কিনেছে তাই এখনো ঠিক মত চালাতে পারেনা। আমার দৌড় বাইসাইকেল পর্যন্ত। তিন জন নিয়ে ট্রাপলিং করার জন্য তাই বরকত কেই বসতে হয়েছে হ্যান্ডেল ধরে। এদের দুইজনের সাথে পরিচয় ছিল প্রাইমারী স্কুলে থাকতে। পরে আর দেখা হয়নাই। আলম সেই যে ক্লাস এইটে থাকতে পড়াশুনা ছেড়ে বাপের রড সিমেন্টের ব্যবসা ধরল, সেই তার পড়া শুনার শেষ। বরকত অবশ্য ডিগ্রী পড়ছে। তার আসল কাজ হল কলেজে মাস্তানী করা। শুনেছি কলজের সুন্দরী মেয়েপেলে মাঝে মাঝে গার্ড রূমে আটকায়া ফেলে সে। এইটা নিয়া কেউ উচ্চবাচ্চ করেনা। যেতে যেতে সেইসব কাহিণী বলছিল। শুনে আমার আর আলমের আফসোসের শেষ নাই। ফিরতেছি আলমের গ্রামের বাড়ি থেকে। জমিজমা নিয়ে কি জানি ক্যাচাল হইসিল। বরকত আর আলম গিয়ে সেইসব মিটিয়ে ফেলেছে। অবশ্য আমি ভার্সিটির তকমা লাগানো ভদ্র পোলা। আমারে কিছুতে জড়ায়নাই। এমনিতেই তারা আমারে যে বাসার সেই টিক টিকানী ঘড়ি থেকে উদ্ধার করেছে, তাতেই আমার দিল খুশ! এখন একটু ভদ্র পোলা কইয়া গাইল দিলেও আমার আপত্তি নেই। এখন ফিরতেছি গ্রাম্য এক রাস্তা দিয়ে। চার পাশে আখের খেত। এই হাশিমপুর জায়গাটা আখ চাষের জন্য বিখ্যাত। কেন যে, সেটা বোঝা যাচ্ছে।
আমাদের বাইক চলছে দুলকি চালে। বরকতের গার্ড রুমের গল্পতে আমরা তিন জনই একটু গরম হয়ে আছি। আমি আর আলম গল্প শুনে। আর বরকত তার নিজের স্মৃতি রোমন্থনে। এই যায়গাটা বিশাল এক মাঠ। তবে দেখে এখন বন মনে হচ্ছে। আখ গাছের কল্যানে। আশে পাশে বাড়ি ঘর তেমন নাই। তেমন বাতাস ও নেই। অবশ্য মটর সাইকেলে বসে গরম লাগছেনা। নির্জন মেঠো পথ। হালকা ধুলা উড়িয়ে যাচ্চে আমাদের বাইক। হুঠ করে একটা পাখি উড়ে গিয়ে বসলো একটা আখের ঝোপের উপর। আমি বললাম, “দেখছিস, ঐটা ফিঙে!” বরকত ফিঙের দিকে তাকায়। এই সময় আলম বলে। ধুস! রাখ তোর ফিঙ্গে-মিঙ্গে । এই দিকে দেখ। মাল একখান!! সেদিকে দেখেই বরকত কোশে একটা ব্রেক করে। আসলেই তো!! একটা মেয়ে যাচ্ছে। গোসল করে উঠেছে মনে হয় কাছেরই কোন পুকুর থেকে। চুল ভেজা। আর হাতে ভেজা কাপড়। দেখতে লাগছে সেইরকম!!
এমনিতেই মাথা গরম হয়ে আছে। তার উপর এই দৃশ্য দেখে মাথা ঠিক রাখা মুশকিল। বলি, “মনে হইতাছে একটু ধইরা...”। ‘হইতাছে’ বলা শিখেছি ঢাকায় গিয়ে। এই টান নিয়ে এলাকার বন্ধুরা হাসাহাসি করে মাঝে মাঝেই। কিন্তু এইবার আর বরকত আর আলম হাসা হাসি করেনা। তাদের মনেও এইরকম কিছুই ‘হইতাছে’! বরকত ব্যস্ত হয়ে যায়।
-নাম তোরা। তাড়া তাড়ি নাম।
আলম নামে পিছন থেকে। আমিও নামি। বলি,
-কিরে হালায় সত্যিই নাকি?!!
-আবার জিগাস! চল ধরি গিয়া।
আলম এর কুনুই ধরে টান দেয়। মটর সাইকেলটা স্টান্ডের উপর দাঁড়া করাতে করাতে। আলম এর ও মুভমেন্ট বেড়ে গেছে। কিছু মিছু একটা করেই ফেলবে। এতক্ষন বাইকে বসে বসে বরকতের এইসব ‘আলাপ’ শুনতে ভালই লাগছিল। এইবার একটু দমে যাই আমি। আসলে ভয় পেয়ে যাই। বলি,
-কিরে তোদের মাথা খারাপ হল নাকি?! আসলেই ধরবি নাকি শালা?
বরকত বিরক্ত হয়ে তাকায়।
-ধুস শালা আবাল। তোরে দিয়ে কিছুই হইবো না। ভদ্র চোদা শালা।
আমি ফ্যাল ফ্যাল করে আলমের দিকে তাকাই। তার মুখে কোন ভাবান্তর নাই। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছে মনে হয়। নিষেধ করে আর লাভ নাই। আমি বলি,
-দেখ আমি এসবের মধ্যে নাই। তোরা কি করবি কর আমারে টানিস না।
আমাকে নিয়ে এত দেরী করার কারো টাইম নেই। বরকত খালি একবার বলে,
-শালা কাউরা!!
তার পর আমাকে রেখেই রওনা দেয়। আমি মটরসাইকেলের কাছে দাঁড়িয়ে থাকি। চালাতেও পারিনা, যে চালিয়ে চলে যাব। বিড়ি সিগারেট ও খাইনা, যে সেইটা করব। একটা আখ এর ডগা ভাঙ্গার জন্য মুচড়া মুচড়ি করতে থাকি। সেইটাতেও কষ্ট হয়।
[পাঠক চাইলে আমার সাথে হাত লাগাতে পারেন। এই শালার আখের ডান্টিটা ভাঙ্গাই যাচ্ছেনা!! একটা হেল্পিং হ্যান্ড দরকার। আবার চাইলে বরকতদের সাথেও যোগ দিতে পারেন। আমি অবশ্য আপনাকে ঐ দিকে নিয়ে যাচ্ছিনা। ঐতো ওরা ধরেই ফেলেছে মেয়েটাকে। টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে ফিঙে বসা ঝোপটার দিকে। গেলে তাড়া তাড়ি যান। ‘...’টা সাথে থাকলে যোগও দিতে পারবেন ওদের সাথে। আর না থাকলেও চোখ তো আছে। এইসব দৃশ্য দেখতেও আরাম!!]
...হঠাৎ আখের ঝোপটা একটু কেঁপে ওঠে যেন। সেই ফিঙেটা তীক্ষ্ণ একটা শব্দ করে উড়ে যায় আমার মাথার উপর দিয়ে। ফিঙে দেখলেও ফিঙের ডাক শুনিনি আগে!! একেবারেই অন্য রকম! যাক, নতুন একটা অভিজ্ঞতা যোগ হল ভান্ডারে। আমার মত লেখকদের জন্য অভিজ্ঞতার বড়ই দরকার...
===
স্পর্শঃ১৭
মন্তব্য
গল্প থেকে খানিকটা চিত্রনাট্যের আঙ্গিকে চলে যাবার পর বেশী ভাল লেগেছে। আখের ডাঁটি ছেঁড়ার চেষ্টা... যথাযথ চিত্রকল্প।
ধন্যবাদ আপনাকে!
হু আসলে একটু এক্সপেরিমেন্ট করছি। ফলাফল ভাল লেগেছে জেনে আমারো ভাল লাগছে!
---
স্পর্শ
প্রথম দিকে গল্পটা আমার কাছে সত্য ঘটনা মনে হচ্ছিল কিন্তু শেষের দিকে কল্পনা। আসলে কোনটা ?
পুরো ঘটনা সত্য হলে আমান একখান কথা আছে ।
অভী আগন্তুক
আসলে সত্য আর কল্পনা এক পয়েন্টে ইন্টারসেক্ট করেছে। চেষ্টা ছিল পয়েন্ট টা যেন চেনা না যায়। কতটুকু পেরেছি জানিনা।
তবে আপনার 'একখান' কথা টা বলে ফেলেন। শুনতে আমি আগ্রহ আর কৌতুহল দুইটাই বোধ করছি!!
---
স্পর্শ
ভালো লাগছে এইটা আর না বলি। গতরাতের গল্পটার রেশও এখনো কাটেনাই।
সচলত্ব এক্সচেইঞ্জ করা গেলে আমারটা আপনারে দিয়ে দিতাম।
আরও ছাড়তে থাকেন। পড়ে সুখ নেই...
---------------------------------
আরে মিয়া কি যে বল। আমিতো লিখ্তএই আছি।
ইদানিং না লিখলে কেমন যেন মাথা ঘুরায় বমি ব....
আর আমি তো আবার ব্যচ মুডে লিখি। অনেক গুলা লিখে ফেলসি।
ছাড়া শুরু করলে আমার 'অতিথী গিরী' ছুটায়া দিবে!!
তাই আস্তএ আস্তএ ছাড়তেসি।
তুমি পড় বলে লেখার ভরসা পাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ। উতসাহ দেওআর জন্য।
---
স্পশ
কল্পগল্প অথচ মনে হল সত্যি যেন । সত্য কল্পনার সংমিশ্রন । আপনার চেষ্টা সফল । তবে কোন টুকু সত্য আর কোন টুকু কল্পনা বোঝা মুশকিল। তাই 'একখান' কথা আর বলছি না । কারন বলেছিলাম পুরো ঘটনা সত্যি হলে বলব । তবে গল্পটা ভাল লেগেছে।
অভী আগন্তুক
হায় হায় !! কৌতুহলে মরে যাব তো!!
চেষ্টা সফল হয়েছে যেনে খুব ভাল লাগছে
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। কমেন্ট করার জন্য। আসলে ভাল অথবা খারাপ যেকোন ধরণের কমেন্ট পেলেই লেখার উৎসাহ অনেক বেড়ে যায়।
পরের লেখা গুলোতেও আপনার কমেন্ট পাব আশা করি।
---
স্পর্শ
কিন্তু আমার কাছে তো এটাকে 'কল্পনা' না 'সত্যি'ই মনে হলো, তাহলে বুঝতে পারি নি নাকি?
আর স্পর্শ, সবগুলো পড়া হয় নি, তবে আপনার লেখার স্টাইল ছাড়াও যে জিনিষটা খুব ভালো লাগছে তা হচ্ছে আপনার 'এক্সপেরিমেণ্ট' - শুধু কাহিনীর ফরম্যাট নিয়ে না আপনার লক্ষ্য মনে হয় psychologically একটু 'ধাক্কা দেয়া'। দেখি কদ্দূর যেতে পারেন ............ good luck
হায় হায় পুরা সত্যি মনে হয়েছে নাকি? !
তাইলে তো খবর!!
'ধাক্কা দেওয়া'র ব্যপার টা ঠিক ধরেছেন। আসলে ব্লগের লেখা গুলো না চাইলেও ছোট করতে হয়। ঐটূকু সময়ে শুধু "ধাক্কা দেওয়া" পর্যন্তই যাওয়া সম্ভব। ছোট খাটো মেসেজ দেওয়া যায় অবশ্য। তবে খুব বড় কোন মেসেজ রাখা যায় না।
আসলে আমি পারিনা!
আমার আব্জাব লেখা ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। আরো ধন্যবাদ কমেন্ট করার জন্য।
---
স্পর্শ
আরে গল্প ছিল নাকি? আমি তো পড়তে পড়তে মনে হইলো একসময় সিনামা দেখছি। অভিজ্ঞ লেখকের আভাস পাচ্ছি।
-নিরিবিলি
অনেক ধন্যবাদ!!
না, অত বেশী অভিজ্ঞ না!
---
স্পর্শ
নতুন মন্তব্য করুন