*********************উলুম্বুশ*************************
********kamrultopu@yahoo.com**************
*****************************************************
আজ ঘুম থেকে উঠলাম ই ফোনটা পেয়ে। শুভ ফোন দিয়ে বলল জাহিদের একটা দুঃসংবাদ আছে। আমরা তিনজন জাপানের একই জায়গায় পড়ি আবার একই ডর্মে থাকি। জাহিদের সাথে আমার সম্পর্ক আজ ১২ বছর আর শুভর সাথে জাপান এসে পরিচয়। জাহিদের দুঃসংবাদ কি হতে পারে সেটা মাথাতেই আসল না। শুনলাম ওর আব্বা মারা গেছেন। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম। ভাবলাম কি বলব। জাহিদ কে ফোন দিব কিনা ভাবছি। কিই বা বলা যায় ওকে। জিজ্ঞেস করলাম দেশে যাবি কিনা। যাবে না ও। গতকাল রাতে মারা গেছেন আঙ্কেল আজ দুপুরেই মাটি দিয়ে দিবে গিয়েও পাবে না। বিদেশে থাকি আমরা যে কোন সময় এইরকম পরিস্থিতিতে পড়তে পারি আমরা যে কেউ। এরপর আমি আর শুভ মিলে চুপ করে বসে থাকি অনেকক্ষণ। মনে পড়ল আজ থেকে ১১ বছর আগের কাহিনী। কি দ্রুত সময় যায়।
১৯৯৭ সাল তখন। ক্যাডেট কলেজে পড়ি। কলেজের হাবিজাবি করতে করতেই দিন যায়। আমার আব্বু তখন অসুস্থ। যে কোন দিন একটা দুঃসংবাদ আসতে পারে কিন্তু ক্যাডেট কলেজে এত ঝামেলে সেসব আমার মনে থাকেনা একদমই। আর বয়সটাও তখন এসবের জন্য উপযুক্ত নয়। ১২ বছরের বালক তখন আমি। বাসায় আব্বু অসুস্থ তাই বলে কলেজে আমার খেলাধুলা, দুষ্টামি কিছুই থেমে থাকেনা। প্রতি সপ্তাহে একটা চিঠি পাঠাই বাসায় তাতে জিজ্ঞস করি আব্বু কেমন আছে। আব্বুর সম্বন্ধে আমার খোঁজখবর সেটুকুই। আমাদের পাক্ষিক পরীক্ষা চলছে তখন। সকালে উঠে ক্লাসে গেলাম। পরের পিরিয়ডে বোধ করি সমাজ পরীক্ষা হবে। আমরা সবাই পড়ছি। আমার ক্লাস টিচার তখন ক্লাসে। উনি ডেকে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমার লোকাল গার্জিয়ান কে। আমি আর অত পাত্তা দিলাম না । আমার তখন পরের পিরিয়ডের পরীক্ষা নিয়েই চিন্তা। পরীক্ষা শুরু হওয়ার একটু আগে এসে ভিপি স্যারের দফতরীর ডাক ," কামরুল ১০৪৭ কে? আপনাকে ভিপি স্যার ডাকে" । আমার মাথায় আসল কি ব্যাপার এমন কোন ফল্ট তো করিনি যে ভিপি আমাকে ডাকবে। চিন্তা করতে করতে গেলাম ভিপি অফিসে। গিয়ে দেখি আমার খালাত ভাই বসে আছে। তখনই ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম। আব্বুর কোন সংবাদ। আমি ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যাপার আব্বু কেমন আছে। ভাইয়া বলল আব্বু একটু বেশি অসুস্থ আমাকে দেখতে চেয়েছে। ওভাবে বলাই বুঝি নিয়ম। বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা না আমার কিন্তু কেন যেন আমি বুঝেও না বোঝার চেষ্টা করতে থাকলাম। বসে আছি ভিপির অফিসের পাশে আর ভাবছি কখন এরা আমাকে ছাড়বে। ৯টা থেকে ১১টা বাজিয়ে দিল তারা অফিসিয়াল কাজ সারতে সারতে। কলেজ থেকে বেরিয়ে বাস স্টেশনে গেলাম। সিলেট থেকে ফেনীর তখন কোন ভাল বাস নেই। যেতেই লাগবে ৭-৮ ঘন্টা। তাও কুমিল্লা হয়ে যেতে হবে। যত তাড়াতাড়ি রওনা হওয়া যায়। ঢাকায় থাকা আব্বু কেন ফেনীতে আমাকে দেখতে চাইল সেটা ভেবেই আমি কনফার্ম হয়ে গেলাম আব্বুকে দাদাবাড়ি নিয়ে গেছে । তাও আমি যাচ্ছি। সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। পড়ে জানতে পেরেছিলাম আব্বু মারা গেছেন তার আগের রাতে ১১ টায়। সাথে সাথে রাতের ২টার দিকে আমার কলেজে ফোন করা হয়েছিল কিন্তু কেউ ধরেনি। সকালে আমার খালাত ভাই এসেও অনেক আগেই বসে ছিল কলেজে কিন্তু স্যারদের অফিস টাইম শুরু হয় নি বলে তাড়াতাড়ি কিছু করা যায়নি।
বিকেল ৫টায় আমি এসে ফেনী নামলাম। কেন যেন আমি আমার দাদাবাড়ি না গিয়ে নানার বাসায় আসলাম। এসে দেখি কেউ নেই। এক খালা শুধু আছেন। এসে বোকার মত আমি জিজ্ঞেস করলাম আব্বু কই? আব্বুর দাফন হয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। আম্মু আসল আরো ২ ঘন্টা পর। এই দুই ঘন্টা আমি ভেবেছি আম্মুর সাথে কি বলব আমি?
আব্বুকে আমি আর দেখতে পারিনি। আম্মু আমাকে পরে বলেছিল তুই বুঝিস নি ? কেন সরাসরি গ্রামের বাড়িতে যাসনি? ১২ বছরের একটা ছেলের তখন এই বুদ্ধি হওয়ার কথা কি?
আমার তাই আমার আব্বুর মৃত চেহারার কোন স্মৃতি নেই। শেষ যে চেহারা মনে আছে তা হল তার আগের বার কলেজে যাওয়ার সময় আমি বাসা থেকে বের হলাম আব্বু বারান্দায় চেয়ারে বসে আমার দিকে চেয়ে আছে। এটাই আমার আব্বুর শেষ দেখা। এরপর থেকে আমি কতবার আব্বুকে স্বপ্নে দেখি। আব্বুক স্বপ্নে দেখাটা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। আজ ১১ বছর পরেও তা কমেনি এখনো সপ্তাহে একবার হলেও আব্বুকে আমি স্বপ্নে দেখি। মনে হয় শেষ দেখা হয়নি বলেই। আমার অন্য ভাইরা দেখে না শুধু আমিই।
মন্তব্য
মাঝে মাঝেই একটা কথা মনে হয়... এই যে বাবা মার থেকে এতো দূরে দূরে থাকি একদিন তারাও মরে যাবেন...মনে রাখার মতো কোন ভালো স্মৃতিও থাকবে না মনে...লেখাটি পড়ে অনেক মন খারাপ হয়ে গেল।
বাবার সাথে আপনার শেষ দেখা হয়নাই এইটা একদিন দিয়ে ভালো। অনন্ত শেষ স্মৃতিটা জীবিত বাবাকে দেখা...
---------------------------------
আপনার লেখা পড়ে খুব কষ্ট লাগল এর বেশি আর কিছু বলতে পারছিনা
-------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
ভালো লাগলো... বাবা বিষয়ে আমারও দারুণ দূর্বলতা আছে। তাঁর জন্য একটা ব্লগ আছে... আব্বুকে মনে পড়ে... কিন্তু আমি লিঙ্ক দিতে পারি না।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ সবাইকে মন্তব্য করার জন্য। আসলে অনুভূতি গুলো এখন ফিকে হয়ে গেছে। আগে জেমস এর বাবা গানটা শুনলেই চোখ ঝাপসা হয়ে যেত। এখন কত দিন পার হয়ে যায় মনেই পড়ে না স্বপ্ন না দেখলে।
তবে আমি আমার আব্বুর কথা সেভাবে বলতে পছন্দ করি যেভাবে উনি বেঁচে থাকলে বলতাম। সবাই বেশ অবাক হয়।
-উলুম্বুশ
মনটা ভার হয়ে গেলো
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
নতুন মন্তব্য করুন