বাইরে কড়া রোদ। রোদ ভেঙ্গে আমি হাঁটি। দু'চোখ ফেটে আমার কান্না আসে। অনেক কষ্টে কান্না থামাই। লোকজনের ভিড়ে হাঁটি। এমনিতেই আমি নির্জনতাপ্রিয় মানুষ। যথাসম্ভব লোকজন এড়িয়ে চলা আজন্ম স্বভাব। আমার কী হয়, সেই আমি গায়ে পড়ে লোকজনের সাথে আলাপ করি। চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে আজাইরা রাজনৈতিক বিতর্কে যাই। বুঝতে পারি, বন্ধু ফারুকের ফোনটা... আমি ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ি। নতজানু হই পুরনো স্মৃতির কাছে।
ফারুকের সাথে কতোদিন যোগাযোগ নাই! মনে পড়ে না শেষ কবে কথা হয়েছিল ওর সাথে। অথচ একসময় ওই ছিল খুব কাছের বন্ধু। সময় কোথা দিয়ে চলে যায়। কাছের বন্ধুও হারিয়ে যায় স্মৃতি থেকে। আজ ফারুক যেমন ধুসর থেকে ক্রমশ: ধুসরতর।
দুপুরবেলা। রাস্তায় হাঁটছি। এমন সময় ফোন বেজে উঠে। অপরিচিত নম্বর। রিসিভ করি। ওপাশ থেকে অপরিচিত একটি কন্ঠ। পরিচয় দেয় ফারুক বলে। একটু দ্বিধায় ভুগি। ফারুকের কন্ঠ এতো অপরিচিত! ফারুক বলে যায়, ভালো লাগছিল না। তোর কথা বেশ কয়েকদিন হলো মনে পড়ছিল খুব। কথা বলতে ইচ্ছে করছিল। তাই ফোন করলাম। এখন অনেক ভালো হয়ে গেছিরে। আর ওসব খাই না। বাড়িতেই কিছু করার চেষ্টা করছি।
আমরা কলেজে পড়ার সময়ই ফারুক খারাপ হয়ে গিয়েছিল। নানারকম বাজে নেশা করতো। তখন থেকেই ওর সাথে আমাদের যোগাযোগ বন্ধ। আমরা বন্ধুরা ওকে পরিত্যাগ করেছিলাম। যদিও আমাদেরকিছু বন্ধু মিলে ওকে নেশার জগত্ থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল। একবার অনেকটা কন্ট্রোলে এসেছিল। তারপর আবার যা তাই। বাড়ির সব জিনিষপত্র বিক্রি করে নেশা করতো। এক পর্যায়ে বাড়ি ছাড়া হয়। তারপর অনেকদিন খবর নেই। আমিও পড়তে ঢাকায় চলে আসি। মাঝে মাঝে ফারুকের খোঁজখবর পেতাম। তবে কোনোটিই ভালো নয়। বরং কোনো কোনোটিতে আমাদের লজ্জায় মাথা কাটা যেত। একসময় ফারুককে একেবারেই ভুলেই গিয়েছিলাম যদি না ও ফোন করতো।
ওর ভালো হওয়া নিজের মুখে বলে যাওয়া... অনেকদিনের কথা না হওয়া বন্ধুর সাথে কথা বলার ব্যাকুলতা... আমার আবেগকে অসম্ভব নাড়া দেয়। আমার দু'চোখ চেপে কান্না আসে। অনেক কষ্টে কান্না থামাই। ফারুক অন্যান্য বন্ধুদের কথা জিজ্ঞেস করে। কেউই নাকি আজ ওর সাথে যোগাযোগ রাখতে চায় না-ব্যথিত সুরে জানায়। অথচ স্কুলে আমাদের গ্রুপের সে ছিল নেতা। আমাদের যাবতীয় সুকর্ম-কুকর্মের মুল পরিকল্পনাকারীও ছিল ও। তাকে ঘিরেই আমরা সবকিছু করতাম। বন্ধুদের মধ্যে কোনো ঝগড়াঝাটির বিচারের মাতব্বরীও করতো ফারুক।
আজ সে বন্ধুদের সবকিছু থেকে দূরে নেশার কারণে। নেশা ফারুককে নিয়ে গেছে বন্ধুদের স্মৃতিময় অধ্যায় থেকে বিস্মৃতির ধুসর অন্ধকারে।
পান্থ রহমান রেজা
মন্তব্য
তোমার লেখা ভালো লাগলো। আরো ভালো লেখাগুলো কই?
আমার হাইস্কুল বন্ধুদের বেশ কজন এই দলে। এদের মধ্যে অন্তত তিনটা ডাক্তারও আছে। খুবই খারাপ লাগে।
পান্থর মতো হাসিখুশি ছেলের চোখে পানি... ব্যাপারটা ভাবতেই পারছি না!
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
লেখা ভাল লাগলো।
---------------------------
থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
নতুন মন্তব্য করুন