দুপুরবেলা। বাইরে কড়া রোদ। গা পুড়ে যায়। এমন গা পুড়ানো রোদে একা একা হাঁটছি। হাঁটা একদমই উদ্দেশ্যবিহীন। এই যে একা একা হাঁটা, এই অভ্যাসটা আমার বেশ পুরনো। কার কাছ থেকে পেয়েছি, তা জানা নেই। আমাদের ফ্যামিলিতে কারও এমন অভ্যাস কোনোকালেই ছিল না। আমিই ব্যতিক্রম হয়েছি। তবে ব্যতিক্রম নিয়ে তারা কখনো কোনো উচ্চবাক্য করেনি। দুপুরে সবাই খেয়েদেয়ে যখন আয়েশের ঘুম দিচ্ছে সেসময় আমি কীনা বাইরে ঘুরতে বেরিয়েছি। সবাই এটাকে একটু নিরপরাধ পাগলামী ভেবে মেনে নিতো। আর আড়ালে একটু হাসতো।
তবে আজকে হাঁটার ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। রুম থেকে বের হয়েছিলাম উদ্দেশ্য নিয়েই। উদ্দেশ্যবিহীন হাঁটাহাঁটি করতে নয়। রিক্সাওয়ালা এই উদ্দেশ্যবিহীন হাঁটাহাঁটির মুখ্য অনুঘটক। রিক্সা ভাড়া বেশি চেয়েছিল। ভাড়া বেশি চাওয়াটা বাড়াবাড়ি কিছু নয়। সে চাইতেই পারে। কিন্তু একটু বাড়াবাড়ি রকমের বেশিই চেয়ে বসেছিল বেচারা। আবার বেশি চাওয়া কেন জানতে চাইলে- যান গিয়ে, যা গরম' বলে একটু ছোটখাট চ্যালেঞ্জ জানায়। কিন্তু বেচারা জানে না, হাঁটা,আমার খুবই প্রিয় একটা কাজ। ফলে গোল্লায় গেল আমার গন্তব্য। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, আজকে হাঁটার দিন। সেই পুরনো পাগলামীটা আরেকবার ফিরে এলো।
আচ্ছা, আর কেউ কি আমার মতো এমন উদ্দেশ্যবিহীন হাঁটে? আমি নিজেই এমন হাঁটি কেন? নিজের কাছে কখনো অবশ্য আমি এ ধরনের প্রশ্ন করিনি। হাঁটতে ভালো লাগে, তাই হেঁটে বেরিয়েছি। মনে আছে, একবার শীতের ভোরে গায়ের মেঠোপথে শিশিরে পা ভিজিয়ে হাঁটছি। হঠাত্ স্কুলের সামাদ স্যারের সাথে দেখা। স্যার সেদিন আমাকে অনেকটা রাস্তা হেঁটে রাস্তার আশেপাশে অবহেলা অযত্নে বেড়ে উঠা অনেকগুলো গাছ চিনিয়ে দিয়েছিলেন। আবার কোন গাছটা কোন কাজে লাগে, তারও বিস্তারিত বলেন। হায়, সময়ের পরিক্রমায় সেইসব গাছের নাম আজ কিছুই মনে নেই।
আমার এক বন্ধু ছিল আহমেদ। পাখি শিকারের তার হাতযশের খ্যাতি ছিল এলাকাজুড়ে। প্রায়ই বাটাল-গুলতি নিয়ে বেরিয়ে পড়ত। সঙ্গী জুটতাম তার। হুরাসাগর নদী, ধানী বিল, ভাঙ্গাবাড়ি বিল কতো বিলে যে যেতাম আমরা। ওর সাথে বেরিয়েই কতো গ্রাম যে চিনেছি। অথচ একসময় মনে হতো, ওই গ্রামটিতে যে কত দূরের দেশ।
রাস্তায় একা একা হাঁটতে আমার সবচেয়ে বেশি মনোযোগের কেন্দ্রে থাকে, মানুষের গন্তব্য পৌঁছার তাড়া। কেউ কাউকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছে, কোনো রিক্সা পাশ কাটাতে আরেকটার লাগিয়ে দিয়েছে, কোনো অটো হুশ করে বেরিয়ে যেতেই ট্রাফিক পুলিশের বকা খাচ্ছে, জ্যামে আটকেপড়া গাড়িতে কোন হকারটি আগে উঠবে তাদের পাল্লা -সবই আমি মনোযোগ দিয়ে দেখি। শুধু আমিই কেমন গন্তব্যবিহীন নির্লিপ্ত হাঁটি।
গন্তব্যবিহীন অনিশ্চিত হাঁটা শেষ হবে যে কবে!
পান্থ রহমান রেজা
মন্তব্য
মিল পেলাম নিজের সাথে---------
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........
এই হাঁটার আরেকটি বড় দিক হচ্ছে নিজকে নিজের মত করে পাওয়া।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী
ভাল্লাগছে। তবে ব্লগরব্লগর হিসেবেই ঠিকাছে।
---------------------------------
- হুমম
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
পান্থ,
আসলেই গল্প হতে পারতো, তবে ব্লগর ব্লগরের মলাটটাও কিন্তু অনেক আরামদায়ক!
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
ভালো লাগলো আপনার ব্লগর ব্লগর। ছোটবেলায় আমারো একা হাটার স্বভাব ছিল। এখনো হাটি মাঝে মাঝে। তবে ছোটবেলার সে হাটার সাথে এর তুলনা চলে না।
কীর্তিনাশা
নতুন মন্তব্য করুন