খুব সকালে কলিং বেল বেজে উঠলো - টুং টাং! ছুটির দিনের সকাল তাই উঠলাম না। যে আসে আসুক এখন উঠতে পারবো না। কিন্তু ব্যাটা দেখি নাছোড় বান্দা। টুং টাং! টুং টাং! বেল বাজিয়েই যাচ্ছে। নাহ্ উঠতেই হলো আমাকে। ঘুম একবার ভেঙে গেছে এখন হাজার চেষ্টা করেও ঘুমানো যাবে না। তার চেয়ে দেখি সূর্য ওঠার আগে কার এমন তাড়া পড়েছে আমার বাড়িতে হানা দেবার। পাশে ঘুমন্ত বউকে দেখে ইর্ষা হলো - বেচারি কানের কাছে বোম ফুটলেও নাক টেনে ঘুমাতে পারবে।
সদর দরজা খুলে দেখি ফজলি আমের মত মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে আমার বন্ধু হারুন। যে কিনা আমাদের বন্ধু মহলে চা-হারুন নামে পরিচিত। ওর এই নামের পেছনে কারন হচ্ছে ওর চা আসক্তি। হেরোইন খোড়দের যেমন একটা নির্দিষ্ট সময় পরে হেরোইন না নিলে চলে না তেমনি হারুনের প্রতি আধঘন্টায় একবার চা না হলে চলে না। এতো সকালে এসেছে বলে আমি কটু কথা বলতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু ওর অবস্থা দেখে সামলে নিলাম। মাথার চুল রুক্ষ-খুস্ক, চোখ দুটো ছলো ছলো যেন এখনি কান্না শুরু করবে। জানতে চাইলাম - কি রে এত সকালে কোত্থেকে? ও ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল - বরিশাল গেছিলাম দোস্ত। আজই ফিরলাম। লঞ্চে এসেছি তো তাই এতো সকালে পৌঁছেছি। একবার ভাবলাম বাসায় যাই। কিন্তু চিন্তা করে দেখলাম, বাসায় তো থাকি একা (হারুন এখনো ব্যাচেলর। থাকে একটা চারতলা বিল্ডিং এর চিলেকোঠার দুটো রুম ভাড়া করে।) আর মনের যে অবস্থা তাতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে ফেলতে পারি। তাই সেই রিস্কে না গিয়ে তোর বাসায় চলে আসলাম।
বুঝলাম খারাপ কিছু একটা ঘটেছে। বললাম - আচ্ছা এসেছিস ভালো করেছিস। কি হয়েছে সব শুনবো। তার আগে তুই একটু রেস্ট নে। আর আমি এই ফাঁকে তোর জন্য চা করে নিয়ে আসি। হারুন সোফায় বসতে যাচ্ছিলো। তড়াক করে লাফিয়ে উঠলো - খবরদার বলছি খবরদার! আমার সামনে আর একবার যদি চা-এর নাম উচ্চারন করেছিস তাহলে তোর সাথে চির জীবনের মতো ছাড়া-ছাড়ি হয়ে যাবে। কোন দিন আর তোর মুখ দেখবো না আমি।
আহা হা, চটছিস কেন এত? বলে ওর হাত ধরে বসালাম আমি। খুব কৌতুহলি হয়ে জিজ্ঞেস করলাম - তা কি হয়েছে বলতো ? যে তোর বিশ কাপ ঐ জিনিস না হলে দিন চলে না, সেই তুই কি করে এমন ঐ জিনিস কিদ্বেসী হয়ে গেলি? (হারুনের অবস্থা দেখে খুব সাবধানে চা শব্দটা এড়িয়ে গেলাম আমি।)
হারুন দুহাতে মুখ ঢেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর বলল - শোন তাহলে। বরিশাল গিয়েছিলাম অফিসের কাজে। সারাদিন হাড়-খাটুনি খেটে কাজ শেষ করে সন্ধ্যায় লঞ্চে উঠলাম ঢাকা আসবো বলে। বিশাল বড় লঞ্চ। তার আবার সবচেয়ে বড় কেবিন গুলোর একটা ভাড়া করলাম আমি। লঞ্চ ছাড়ার পর একটু ছাদে গেলাম ঘুরতে। আহ্ কি যে সুন্দর পরিবেশ ছিল ! মেঘ মুক্ত আকাশে পূর্ন চাঁদ। জোছনায় একাকার চারদিক। তার উপর নদীর জোড়ালো বাতাস। এমন রোমান্টিক আবহে মনটা একদম উদাস হয়ে গিয়েছিল। ভাবছিলাম আমার এ একা জীবনে এখন পর্যন্ত কেউ এলো না। কোন তন্বী তরুনী এসে বলল না - তোমাকে চাই। খুব আফসোস হচ্ছিলো দোস্ত। তাই ছাদ থেকে নেমে কেবিনে ঢুকে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখতে লাগলাম। এমন সময় দরজায় - ঠক্ ঠক্ ঠক্ ! কেউ খুব তাড়াহুড়ো করে দরজায় টোকা দিল। আমি উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই একটি তরুনী মেয়ে আমাকে ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়লো। বলল - আমাকে বাঁচান প্লিজ! আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। যা দেখছি ভুল দেখছি না তো? মেয়েটাকে সুন্দরী বললে দোস্ত কম বলা হয়। যেন আকাশ থেকে স্বাক্ষাত পরী এসে নেমেছে আমার কেবিনে। যেমন তার গায়ের রং, ফিগার তেমন তার মুখের গড়ন। যে কোন পুরুষের হৃদয়ে যে কোন সময় উথাল-পাথাল ঝড় তোলার ক্ষমতা রাখে সে। রূপের সাথে মানানসই সালোয়ার কামিজ পড়ে আছে। ওড়নাটা উঠে আছে গলার কাছে। হাঁফাচ্ছে ভিষণ। আর সেই সাথে দুলে উঠছে আমার পুরো পৃথিবী। এই বলে হারুন একটু থামলো। আমি উদগ্রিব হয়ে জিজ্ঞেস করলাম - তারপর? হারুন বলল - দাঁড়া একটু পানি দে। পানি খেয়ে তারপর বলছি।
আমি তারাতারি গিয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে এলাম। হারুন ঢক ঢক করে এক নিশ্বাসে পানি পান করলো। তারপর আবার বলা শুরু করলো - একটু পরে নিজেকে সামলে নিয়ে মেয়েটাকে প্রশ্ন করলাম - কি হয়েছে? ও হাঁপাতে হাঁপাতে উত্তর দিল - কিছু গুন্ডা আমার পিছু নিয়েছে। আসলে গুন্ডা নয় একটা জঙ্গী গ্রুপের সদস্য। আমাকে ধরতে পারলে মেরে ফেলবে ওরা। কেন আপনি কি করেছেন ? - আমি জানতে চাইলাম। জবাবে সে বলল - আসলে সে একটা গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করে। বরিশালে এই জঙ্গী গ্রুপের ঘাঁটি আছে জানতে পেরে সে তার দুই পুরুষ সঙ্গীর সাথে এখানে এসে ছিলো ঐ ঘাঁটিতে গোপনে হানা দিতে। ওদের আসল উদ্দেশ্য ছিল ওখান থেকে কিছু গোপন দলিল উদ্ধার করা যার মাধ্যমে জঙ্গীদের বড় বড় কানেকশন আর ভবিষ্যত্ প্ল্যান সম্বন্ধে জানা যাবে। কিন্তু অপারেশনের শেষ পর্যায়ে জঙ্গীরা ওদের উপস্থিতি টের পায় এবং ওদের আক্রমন করে। মেয়েটির সঙ্গী দুজন তখন তার কাছে একটি পেন-ড্রাইভ দেয়। যাতে তারা জঙ্গীদের কম্পিউটার থেকে কিছু গোপন ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করেছে এবং তাকে পালিয়ে যেতে বলে। আর নিজেরা পিস্তল বের করে জঙ্গীদের পাল্টা আক্রমন করে। মেয়েটি তখন পালিয়ে লঞ্চঘাটে এসে এই লঞ্চে উঠে পড়ে। এছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না তার। কারন তাকে পালিয়ে আসতে দেখে চারজন জঙ্গী অন্যপথে বেড়িয়ে এসে তার পিছু নেয়। এবং হাতে উদ্দত পিস্তল নিয়ে তাকে তাড়া করে। লঞ্চঘাট কাছে হওয়ায় সে ঘাটের ভিড়ের ভেতর ঢুকে পড়ে আর সুযোগ বুঝে এই লঞ্চে ওঠে। নইলে ফাঁকা জায়গায় গুলি করে জঙ্গীরা এতক্ষণে তাকে মেরে ফেলতো। আমি মেয়েটিকে প্রশ্ন করলাম - (হারুন বলে চলেছে) - আপনি কি শিওর ওরা আপনাকে ফলো করে লঞ্চে উঠেছে। মেয়েটি তখনো দাঁড়িয়ে আছে বলল - হ্যা। এবং আমি যে লঞ্চের কেবিন এরিয়ায় ঢুকে পড়েছি তাও ওরা দেখেছে। আমি সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালাম - তাহলে তো আর দেরি করা যাবে না। এখনি এখান থেকে বেড়িয়ে পড়তে হবে আমাদের। এই বলে গিয়ে দরজা খুলে বাইরে উঁকি দিয়ে দেখলাম দূরে যেখান থেকে লঞ্চের কেবিন শুরু হয়েছে সেখানে চারজন দশাসই চেহারার লোক হাতে পিস্তল নিয়ে একটা কেবিনের দরজায় ধাক্কা দিল। খোলা না পেয়ে একজন লাথি দিয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেল। তারপর আবার বেরিয়ে এসে পাশের দরজায় লাথি চালাল। বুঝলাম অবস্থা বেগতিক। এখন বেরুলেই ওরা আমাদের দেখে ফেলবে। কারন কেবিন এরিয়া থেকে বেরুবার পথ ঐ একটাই। তারাতারি দরজা বন্ধ করে দিলাম। কি করবো মাথায় কিছুই ঢুকছিল না। মেয়েটি দেখলাম তখন বিছানায় বসে পড়েছে। মুখে স্পষ্ট ভয় আর চিন্তার ছাপ। আমার দিকে তাকিয়ে ব্যাকুল গলায় বলল - প্লিজ আমাকে বাঁচান!
আমার মাথায় তখন কোন বুদ্ধি কাজ করছিল না। রাগে মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা হচ্ছিল। ওদিকে বাইরে আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি জঙ্গীরা প্রায় আমাদের কেবিনের কাছে চলে এসেছে। এমন সময় আমার মাথায় বুদ্ধি খেলল। মেয়েটিকে বললাম - তারাতারি, আপনি বিছানায় শুয়ে পড়ুন। ও আমার দিকে অবাক চোখে তাকাল। আমি আবার বললাম - যা বলছি করুন! বিছানায় শুয়ে পড়ুন। এবার সে শুয়ে পড়লো । সাথে সাথে আমি তার গায়ের ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লাম। সে আমাকে বাধা দিতে গেল। আমি বললাম - আমার ওপর বিশ্বাস রাখুন। তারপর পাশে রাখা কম্বল দিয়ে নিজেদের ঢেকে দিলাম। শুধু আমার মাথাটা বের করে রাখলাম। ওকে বললাম - আপনি আমার বুকে মুখ লুকিয়ে রাখবেন। কোন কথা বলবেন না। ওরা ভেতরে আসলে আমি কথা বলবো। সে তখন আমার প্লান কিছুটা বুঝতে পেরেছে। তাই মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। এই বলে হারুন আবার দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আমি তখন ঘটনার ভেতর একেবারে ডুবে গেছি। অধৈর্য্য হয়ে জিজ্ঞেস করলাম - তারপর?
হারুন আবার শুরু করলো - কি বলবো দোস্ত, অমন আতঙ্ককর মুহুর্তেও আমার শরীরে শিহরন বয়ে গেল। যেন রূপকথা থেকে উঠে আসা এক রাজকন্যা আমার বুকের তলায় আমাকে জড়িয়ে শুয়ে আছে। তার গরম নিঃশ্বাস পড়ছে আমার বুকে। আমার জীবনটা ধন্য হয়ে গেল ঐ মুহুর্তে। মনে হলো এতদিনের একাকী জীবন আমার স্বার্থক। এমন করে গোটা জীবন শুয়ে থাকলেও বুঝি আমার ক্লান্তি আসবে না। এমন সময় ধরাম্ করে কেবিনের দরজা খুলে গেল। পিস্তল হাতে একজন জঙ্গী সট্ করে কেবিনে ঢুকে পড়লো। মেয়েটি তার দেহের সমস্ত শক্তি দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার বুকে মুখ লুকালো। আমি জঙ্গীটার দিকে তাকিয়ে ধমকের সুরে বললাম - এইটা কি করলেন ভাই ? ভিতরে ঢুকতে চান তো দরজায় টোকা দিতেন! তা না করে স্বামী-স্ত্রীর অন্তরঙ্গ মুহুর্তে এইভাবে ঢুকে পড়লেন? ডাকাত হইছেন বইলা কি আপনার কোন বিবেক নাই?
জঙ্গী ধমকে উঠলো - চুপ থাকেন! আমি ডাকাইত না। ভিতরে একটা মাইয়া মানুষ ঢুকছে কিনা দেখতাছি। এবার আমি আরো জোরে ধমকে উঠলাম (উত্তেজিত হারুন বলে যাচ্ছে) - ডাকাত না হয়ে যা খুশি তাই হন। আর মেয়ে মানুষ না খুঁজে যা খুশি তাই খুঁজেন। তাই বলে আমাদের এই অবস্থায় রুমে ঢুকবেন ? আপনার বউর সাথে ইয়ে করার সময় কেউ এইভাবে ঢুকে পড়লে আপনার কেমন লাগতো ? জঙ্গীর কন্ঠ তখন একটু নরম হয়েছে। সে তার অন্য সঙ্গীদের ভেতরে আসতে নিষেধ করে বলল - আহা ভাই ক্ষেইপেন না। ভুল হইয়া গেছে। দেখি তো আপনের বউর চেহারাডা একটু? এবার আমি আরো রেগে যাবার ভান করলাম - আর কি বাকি রাখলেন ভাই? এখন আমি আপনাকে আমার নাঙ্গা বউ দেখাই, তারপর আপনি বলবেন আপনে সরেন আমি শুই। এরচেয়ে ভাই আপনি আপনার পিস্তল দিয়া আমাদের গুলি করেন। এই অপমান, এই লজ্জ্বার চেয়ে মরনও ভালো। গুলি করেন ভাই, আমাদের গুলি করেন! জঙ্গীটা তখন একেবারে গলে গেছে। বেরিয়ে যেতে যেতে বলল - আচ্ছা ভাই ভুল হইয়া গেছে। আমি যাইতাছি, যাইতাছি। বলে ঠাস করে দরজাটা বন্ধ করে চলে গেল অন্যদিকে। যেতে যেতে শুনতে পেলাম অন্যদের বলছে সে - ঐ চল! এইখানে নাই মাইয়াডা। উপর তলায় গিয়া দেখি ঐখানে আছে কিনা। পালাইয়া যাইবো কই?
ওদের পায়ের আওয়াজ মিলিয়ে যেতেই আমি উঁচু হয়ে মেয়েটির মুখে তাকালাম। ও তখন ভীত কবুতরের মত আমার বুকের ভেতর কাঁপছে থর থর করে। হাসি মুখে বললাম - কি বাঁচিয়ে দিলাম তো আপনাকে। মেয়েটির মুখেও হাসি ফুটলো তখন। কিন্তু হঠাত্ সে আমার মাথায় ডান হাতের আঙুল দিয়ে ঠক্ ঠক্ করে গাঁট্টা মেরে বলল - চা ! আমি ভিষণ আশ্চর্য হয়ে ওর দিকে তাকালাম। সে তখন আবার আমার মাথায় ঠক্ ঠক্ করে গাঁট্টা মেরে বলল - এই চা ! আমি প্রচন্ড বিস্মিত হয়ে তাকে প্রশ্ন করলাম - কি ? আমার প্রশ্নের উত্তরে সে আবার আমার মাথায় ঠক্ ঠক্ ঠক্ করে জোরে তিনটা গাঁট্টা মেরে কেমন যেন নাকি গলায় বলল - এঁই চাঁ। চাঁ গরম।
ধরমরিয়ে উঠে বসলাম আমি বিছানায়। কিন্তু কোথায় কি? পুরো কেবিনে আমি একা। আর দরজার বাইরে কেবিন বয় ঠক্ ঠক্ করে আওয়াজ করে বলছে - এই চা। চা গরম। বুঝলাম টিভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আর মেয়েটার আসা থেকে শুরু করে সব কিছু ঘটেছে আমার স্বপ্নে। সাথে সাথে পুরো জীবনটা আমার কাছে বিস্বাদ হয়ে গেল। দরজা খুলে কেবিন বয়ের হাত থেকে চা-এর কাপটা নিয়ে সোজা ছুঁড়ে দিলাম নদীতে। তারপর ছেলেটার হাতে একশ টাকার একটা নোট গুঁজে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম। ওর আর দোষ কি ? লঞ্চে ওঠার পরে আমিই ওর হাতে কিছু বকশিস দিয়ে আধঘন্টা পর পর আমাকে চা দিতে বলেছিলাম। আর সেই কথা মানতে গিয়েই সে আমার এমন স্বপ্নটা বরবাদ করে দিল। (হারুন দুহাতে মাথার চুল খামচে ধরে বলতে লাগলো) সারাটা রাত বসে কাটালাম বিছানায়। ঘুম তো দূরে থাক, চোখ ফেটে কেবল কান্না আসছিল। এমন একটা ঘটনা কেন স্বপ্নে ঘটলো কেন বাস্তবে নয়, এই ভেবে। আর যে চা না হলে আমার জীবন চলতো না, সেই চা-এর প্রতি জন্ম নিল প্রচন্ড ঘৃনা।
হারুনের কাহিনী শেষ হলো এখানেই। ওর চোখ তখন আবারো ভিজে উঠেছে। মনে মনে আমি হাসছিলাম ওর ছেলেমানুষি দেখে। কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারছিলাম না । আমি স্বান্তনা সূচক কিছু বলতে যাবো, দেখি আমার বউ ঘুম ভেঙে উঠে এসেছে। বলল - আরে হারুন ভাই? এত সকালে যে? বসুন, আমি আপনার জন্য চা নিয়ে আসছি।
ব্যাস, আমার বউর কথা শেষ হবার আগেই হারুন ঝট করে উঠে দাঁড়ালো। পাশে রাখা তার ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বলল - দোস্ত আমি চললাম। যেখানে চা আছে, চা-এর নাম আছে সেখানে আমি থাকতে পারবো না। আমি চা ঘৃনা করি। চা-র নাম শুনলে আমার বমি পায়। বলে আমি বাঁধা দেবার আগেই সে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। বউ কিছু বুঝতে না পেরে আমার দিকে তাকালো। আমি কি বলবো? আমি কি কিছু বুঝেছি না কি ? কাঁধ ঝাকিয়ে বাথরুমের দিকে হাটাদিলাম হাত-মুখ ধুতে।
কীর্তিনাশা
মন্তব্য
হে হে হে!
-জুলিয়ান সিদ্দিকী
চমৎকার লাগল।
- ইয়া হাবিবি
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
ধুগো ভাই, সন্ন্যাসী দা, অনিন্দিতা, জুলিয়ান আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ পড়া ও মন্তব্যের জন্য।
কীর্তিনাশা
খুব ভালো হইছে। অনায়সে জমজমাট টিভি নাটক হতে পারে। মাঝখানের ঘটনাটা যে স্বপ্ন সেটা প্রথম ধরতেই পারি নাই।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
কীর্তিনাশা
আরে! অত্যন্ত মজাদার একটি গল্প! আপনি কীর্তিনাশা তো নন, পুরো একটা পেয়ারা ডাঁশা! একটি ভালো রকমের টুইস্ট আছে গল্পের শেষে... আমি ধরে নিয়েছিলাম মেয়েটি একটি ছিনতাইকারী দলের অথবা প্রতারক চক্রের সদস্য... ভাবলাম, হারুণকে সেক্সের আমন্ত্রণ জানিয়ে পুরো ন্যাংটো করে ছেড়ে দেবে! সেখানে চায়ের কী সম্পর্ক থাকতে পারে, সেটাই ভাবছিলাম... কিন্তু আপনার গল্পের ছুরি দিয়ে আমার হাত কাটল খুব সন্তর্পণে... ভালো! আপনি খুব বেশি একটা লেখেন না কেন? মতির জ্বিন দেখার চেয়ে বিশ গুণ ঝরঝরে গদ্য ছিল এই লেখাটায়। দিলাম পাঁচতারা আপনাকে... এই লেখার জন্যই, তবে এটাকে অ্যাডভান্স হিসেবেও নিতে পারেন ভবিষ্যতের ভালো লেখার জন্য...
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
ধন্যবাদ মৃদুল ভাই আপনাদের উত্সাহ আমার পথ চলার পাথেয়।
কীর্তিনাশা
আমরা এখন ভালো নাকি মন্দো সেটা অনেক চিন্তা ভাবনা করে বলি কারন আপনাকে ভালো বললে আমাকে আবার কেউ মন্দ বলতে পারে কিংবা উল্টাটা। আমি ঐ সব মারপ্যাচে গেলাম না, আপনার লেখা সুন্দর হয়েছে, একটানে/ একবারে/ বিরতিহীন/ গেটলক ভাবে পড়েছি। আরো লিখলে ভালো। আমার মতে অদ্ভুদ ও জটিল কিছু শব্দ দিয়ে কিছু একটা লিখলেই (কিছুটা বোঝা যাবে কিছুটা যাবে না/ কেউ বুঝবে কেউ বুঝবে না/ একেক জন একেক ভাবে বুঝবে) সেটা ভালো হয়ে যায় না। অসুবিধা কি আপনার মতো সহজ করে সুন্দর কিছু লিখলে??
ধন্যবাদ মামুন-উর-রশিদ আপনাকে।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
কী আশ্চর্য, এটা দেখলাম না কেন আগে! দারুণ!!! *****
হাসিই থামাতে পারছিনা.... এমন ভাবে কত রাজপুএই তো দেখলাম কপালে কোন হতভাগা আছে কে জানে!!ধন্যবাদ এমন সুন্দর গল্পের জন্য।
(জয়িতা)
মচৎকার একটা চা-কাহিনী জীবনে এই প্রথম পড়লাম। বড্ড ভাল লাগল। কারন কীনা আমি নিজেও স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি।।।।।।
নতুন মন্তব্য করুন