রাতটা কোনো রকমে কাটলেও ভোর হতে চায় না সহজেই। বিছানায় পড়ে থেকে এপাশ ওপাশ করাই সার। কিন্তু তবুও একভাবেই শুয়ে থাকে রহিমা। শরীরের ব্যথায় দু-চোখের পাতা এক করতে পারেনি সারা রাত। পাশে নাক আর মুখ দিয়ে বিশ্রী ভাবে পাশবিক গর্জন করতে করতে ঘুমাচ্ছে স্বামী নামের স্বার্থপর মানুষটা। সমাজ আর পরিবার মিলে হাত-পা বেঁধে যার পায়ের নিচে ছুঁড়ে দিয়েছে নিরন্তর দলিত হওয়ার জন্য। আর সেই অধিকারেই নিত্যদিন শারিরীক আর মানসিক অত্যাচারের সনদ পেয়ে গেছে লোকটা। বাবা-মা জেনেও রা করে না। পড়শীরা দেখেও জোর প্রতিবাদ করতে পারে না। কারণ বউ হচ্ছে স্বামীর সম্পত্তি।
নারী হয়ে জন্মানোটা কি তার এত বড়ই অপরাধ? আর পুরুষ হয়ে জন্ম নেবার কারণে তার ইচ্ছের কাছে বিক্রি হয়ে যাবে তার যাবতীয় নারী স্বত্তা? হায়রে পুরুষ! সে যখন অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে শ্বশুর-শাশুড়ির দিকে ফিরে অসহায় আকুতি জানিয়েছিলা, ওরা বাধা দেবার বদলে বরং উসকে দিয়েছে তাদের ছেলেকে।
ষাঁড়ের নাড়াইয়ের সময় দু পক্ষের ষাঁড়কে যেমন আরো তেজী আর মরিয়া হয়ে উঠার জন্য লোকজন নানাবিধ দূর্বোধ্য শব্দ করে, তেমনি ওরা লেলিয়ে দিয়েছিলো মানুষটাকে। অথচ মধ্যরাতে কোনো রকম অনুশোচনা ছাড়াই উপগত হয়েছে লোকটি। একবার অনুতাপ না। বিন্দু মাত্র ইতস্তত না। এমনকি সামান্যতম সমবেদনা প্রকাশ করার কথাও ভাবেনি। ক্ষমা প্রার্থনা তো দূরের কথা। অথচ মেয়ে হয়ে জন্মাবার অপরাধেই কি না লোকটি তার মনের কোনো সংবাদ কিংবা সুবিধা অসুবিধা অন্বেষণের প্রয়োজন বোধ করে না। যার সমস্ত ইচ্ছার কাছেই তাকে সমর্পিত থাকতে হবে মুখ বুঁজে। কারণ সে হচ্ছে নারী। একমাত্র নর যার অধিকারী। নিজের প্রতি যে আজন্ম অধিকারহীনা।
এত কষ্টের ভেতরও তার চোখ দিয়ে পানি বের হয় না। বুকের ভেতরটা হুহু করলেও কোনো আক্রোশ কাজ করে না মনের ভেতর। শুধু একটিই ভয়- যে পবিত্র প্রাণটি তার জঠরে দিনে কয়েকবার করে নড়েচড়ে উঠে নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়, হয়তো তার মনের ভেতরকার উত্তাপ টের পেয়েই অব্যাক্ত স্বরে বলে উঠতে চায়- মা, আর যাই করস, আমারে মারিস না!
আর এ কথা মনে হলেই রহিমার যাবতীয় ক্রোধ আর রাগ কোন আড়ালে গিয়ে থিতু হয়ে বসে থাকে। তখন তার মনে অনাগত শিশুটির নিরাপত্তাই প্রধান হয়ে দাঁড়ায়। প্রধান হয়ে দাঁড়ায় যে কোনো মূল্যে নিজকে বাঁচাতে হবে। নিজে না বাঁচলে যে এ শিশুর মৃত্যুও অনিবার্য!
কদিন আগে দিন মজুর বাবার কাছ থেকে দু-শ টাকা এনে অত্যচারের হাত থেকে সাময়িক রেহাই পেয়েছিলো সে। কিন্তু এবার জানোয়ারটি বলে দিয়েছে দশহাজার টাকা না হলে জ্যান্ত মেরে ফেলবে। কথাটি রহিমাও বিশ্বাস করে। এ পরিবারে বাবা-মা থেকে আরম্ভ করে ছেলে-মেয়ে সবগুলোই এক একটা জানোয়ারের হাড্ডি। যেমন একটি শৃগালিনী হাঁসের বাচ্চা অথবা মুরগীর বাচ্চা মেরে এনে নিজের বাচ্চাকে খাওয়ায়। এরাও নিজেদের জন্যে মমতা বোধ করে ঠিকই। কিন্তু অন্য কারো স্থান নেই তাদের হৃদয়ে।
ভোরের আলো আরো পরিষ্কার হয়ে ফুটে উঠবার অপেক্ষা করে না রহিমা। এই ঘিনঘিনে লোকটির পাশ থেকে যতটা তাড়াতাড়ি সরে যাওয়া যায় আর যতটা দূরে থাকা যায় ততই মঙ্গল। স্বামীর বাম উরুর হাঁড় থেকেই যদি স্ত্রীকে তৈরী করা হবে, তাহলে সেই স্ত্রীর প্রতি স্বামীর আচরণ কেন এমন বৈরী হবে? না কখনো এমন হওয়া উচিত? সে আলগোছে বিছানা থেকে উঠে বাইরে বেরিয়ে আসে। ভোরের মিহি হাওয়া যেন একটু আদরের পরশ বুলিয়ে যায় তার বেদনাহত দেহে। আর তখনই পেটের ভেতর নড়েচড়ে উঠে শিশুটি।
একহাতে আলতো করে নারীর অহংকার নিজের গর্ভস্ফীত পেটটিতে চাপ দিয়ে সে অনুভব করে শিশুর নড়চড়া। মসৃন পেটের চামড়ার উপর দিয়েই অনুভুত হয় শিশুটির হাঁটু অথবা মাথার পরশ। যদিও দিনরাত নিজের শরীরেই তাকে বইছে রহিমা, তবুও এতটুকু স্পর্শ তাকে স্বর্গীয় আবেশে বিবশ করে দেয়। অকস্মাৎ সে তার পারিপার্শ্বিক নিষ্ঠুরতাকে যেন বিস্মৃত হয় ক্ষণকালের জন্য। আর সেই সঙ্গে একটুকরো হীরক যেন দ্যুতি ছড়ায় তার ফ্যাকাশে ঠোঁট জুড়ে। অদৃশ্য সেই শিশু-প্রাণটির সঙ্গে অস্ফুটে কথা বলে উঠে সে, অভয় দেওয়ার মত বলে- বাবা, আর কয়ডা দিন!
গর্ভস্থিত শিশুটি কি অনুভব করে জননীর হৃদয়ের আকুতি? হয়তো অনুভব করতে পারে। আর তাই অকস্মাৎ যেন সে মাতৃজঠরের প্রাণরসে স্থির হয়। হয়তো পাশ ফিরে নিশ্চিন্তে ঘুম দেয়। আর সঙ্গে সঙ্গেই রহিমার শরীরও যেন ফিরে পায় পূর্বেকার সেই প্রশান্তি। তার কাছে এখন মনেই হয় না যে তার পেটটি ফুলে আছে ঢাউস ভাবে। কিংবা নিজের ভেতরেই সে বয়ে চলেছে আরেকটি শরীরের অস্তিত্ব।
নিয়ম মাফিক কিংবা বিবাহিত জীবনের অভ্যাসবশেই বাড়ির কাছে ডোবার মত ছোট্ট পুকুরটায় নেমে গিয়ে বুক সমান পানিতে দাঁড়ায় রহিমা। ভোরের দিকে পুকুরের পানি বেশ নাতিশীতোষ্ণ বোধ হয়। অপার্থিব এক ভালোলাগায় পানিতে ভেসে যেতে মন চায়। আর তখনই তার বুকের ভেতর বিগত রাতের জমে থাকা চরমভাবে অপমানিত হওয়ার কষ্টটা দ্বিগুণ উষ্ণতা নিয়ে দুচোখ ছাপিয়ে উঠতে থাকে। সে কোনো রকম চেষ্টা করে না নয়নের দুকূল ছাপিয়ে উঠা অশ্রুকে বাধা দিতে।
পুরো গ্রামের ভেতর এই একটি মাত্র নিরাপদ স্থান তার জন্যে। যেখানে কারো রক্তচক্ষু নেই, নেই বিকৃত মুখের কোনো নারী দৃষ্টির কুটিল চাহনী। এখানেই এই জলাধারের মূকজলরাশির বুকেই সে ঢেলে দেয় তার যাবতীয় দুঃখ-বেদনার পূঁজ-রক্ত। জলে ভাসিয়ে দিয়ে যায় তার বঞ্চনা আর হতাশার গ্লানি। কৈশোর থেকে বোধ অবোধের ধোঁয়াচ্ছন্নতায় সাজিয়ে তোলা তার অস্পষ্ট স্বপ্নের ঘরটিও।
একটি ডুব দিয়ে উঠতেই পুকুরের পানি আর চোখের পানি একাকার হয়ে যায় তার মুখে। সুযোগ পেয়ে সে আরো বেশি করে ঝরায় চোখের পানি। যেন এখনই শুকিয়ে ফেলবে সব অশ্র“। ছোট্টছোট্ট ডুমুড়ের মত মরার দুটি চোখে কতটা পুকুরের পানিই না ধরে, জীবনভর কাঁদলেও যা ফুরায় না?
তবুও আপাতত তার কান্না থামে। বুকের কষ্ট যেন কিছুটা হলেও হালকা হয়। গোসল সেরে গায়ের কাপড় গায়ে রেখেই নিঙড়িয়ে সে ঘরে ফিরে আসে। এখানে সেখানে সেলাই করা পুরোনো শাড়িটা পরে ভেজা কাপড়টা নিয়ে সে ফেলে আসে পুকুর ঘাটে পেতে রাখা গাছের গুঁড়িটির উপর। সকালের কাজগুলো শেষ করে পরে এসে ধুয়ে দেবে কাপড়টা। এমনটি প্রায়ই হয়। তার নিজের নয়, নয় কোনো ব্যক্তিগত কাজ, পরিবারের অন্যান্যদের জন্য কাজ করাটাই প্রধানত মূখ্য। যেমন ঘুষ দিয়ে মানুষ চাকরি নেয়, তেমনি তার মা-বাবা আকবরকে ঘুষ দিয়ে তার সংসারে মেয়ের স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছে। অবৈতনিক। অন্ন-বস্ত্র আর আশ্রয় যদিও মিলেছে, বিনিময়ে হতে হয়েছে যৌনদাসীও।
রান্নাঘরে ঢুকে চুলোর ভেতর খড়-লতাপাতা দিয়ে আগুন ধরায় রহিমা। কলস থেকে হাঁড়িতে পানি নিয়ে চুলোয় বসায়। আলু সেদ্ধ না করলে আজ সকালের খাওয়া হবে না। ক্ষুধাও পেয়েছে বেশ। একটি অদ্ভূত ব্যাপার সে লক্ষ্য করেছে যে, তার ক্ষুধা লাগলে পেটের ভেতর শিশুটিও যেন অস্থির হয়ে পড়ে। কম-বেশি কিছু একটা খাওয়ার পরই ফের শান্ত হয়ে যায়। পেটের শিশু কি মায়ের সঙ্গে সঙ্গে খায়? না হলে এমন তো হওয়ার কথা না।
চারদিক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন করে দিয়ে রহিমা সূচনা করে আরেকটি অনিশ্চিত আর নিরানন্দময় দিনের। তখনই উঠোনে শোনা যায় আকবরের কন্ঠস্বর। শ্লেশ্মাজড়িত কন্ঠে ঘড়ঘড়ে শব্দ তুলে সে বলে, পাকঘরে হান্দাইছস ক্যান? তরে না কইলাম তর বাপের বাইত্যে যাইতে?
আকবরের সমানে কন্ঠের পর্দা না চড়ালেও সে বিড়বিড় করে বলে, হেঁহ, আমার বাপের বাইত্যে না কত জমিদারী আছে!
রহিমার কন্ঠস্বর আকবরের কর্ণগোচর না হলেও সে রান্নাঘরের দরজার মুখে এসে দাঁড়িয়ে বলে, কি কইলাম কানে গ্যাল না?
এবার যেন রুখে উঠে রহিমা। কইলেই অইলো? আমার বাপে কি গাছেরথনে ট্যাকা পাইড়া দিবো?
আকবর সক্রোধে ঢুকে পড়ে রান্নাঘরে। রহিমার ভেজাচুল মুঠো করে ধরে মাথাটাকে প্রায় ঠেসে ধরে চুলোর মুখে। বলে, আগে তর বাপের মনে আছিলো না? তাইলে কোন মুহে কইছিলো দশহাজার ট্যাকার কতা?
রহিমা যেন কিছু বলতে চাইলো। কিংবা বললোও। কিন্তু আকবর তার চুল ধরে মাথাটা এমনভাবেই ঝাঁকাচ্ছিলো যে, রহিমার কন্ঠনিসৃত কথামালা কম্পিত আর দূর্বোধ্য শব্দমালা হয়ে জ্বলন্ত চুলোর আশে পাশেই যেন হারিয়ে গেল বিবর্ণ ছাইয়ের মত।
তারপরই রহিমার পিঠের উপর ডানহাতের কনুই দিয়ে একটি আঘাত করে তাকে মাটিতে পেড়ে ফেলে চুলের গোছা ধরে ছেচড়াতে ছেচড়াতে বাইরে বের করে আনে আকবর। সেই সঙ্গে ক্রমাগত লাথি-উষ্ঠা মারতে মারতে উঠোনে এনে ফেলে। আর এভাবেই উঠোনের মৃত্তিকার সঙ্গে বুঝি সখ্য হয়ে যায় রহিমার। মাটি যেন তাকে অভয় দিয়ে চুপি চুপি জানায় যে, আর বেশিক্ষণ নয়। খুব দ্রুতই সে ঠাঁই পাচ্ছে তার কোমল, শীতল আর অন্ধকার বুকে।
পাশেই ছিলো শিম বা লাউয়ের পুরোনো মাচা। সেখান থেকে একটি বাঁশের টুকরো তুলে এনে এলোপাথারি মারতে আরম্ভ করলো আকবর। রহিমা নিজকে বাঁচাতে কোনো চেষ্টাই করেনি তা হয়তো বলা সঙ্গত হবে না। তবে তার চেষ্টা ছিলো, পেটের উপর যেন কোনোভাবেই আঘাত না পড়ে। তাই গর্ভের সন্তানকে নিরাপদ রাখার জন্য সে হাত-পা গুটিয়ে কচ্ছপের মতই উবু হয়ে পড়ে থাকে উঠোনে। পিঠের উপর দিয়ে যে কত শত আঘাত চলে গেল সেই বোধ তার ছিলো না। একটি বোধই তখন কাজ করছিলো তার মনের ভেতর- যে করেই হোক অনাগত শিশুটিকে রক্ষা করতেই হবে। আর এই ভাবনা থেকেই হয়তো সে কোনোরকমে নিজকে মুক্ত করে ছুটে যায় বাড়ির বাইরে। কোনোক্রমে দৌড়ে যদি সে বাপের বাড়ি গিয়ে একবার উঠতে পারে তো এই জীবনে আর স্বামী নামের হায়েনাটির মুখে এসে পড়বে না। অথচ অদৃষ্ট যার পরিণতি আগেভাগেই লিখে রেখেছে, কী করে সে পরিত্রাণ পাবে তার হাত থেকে? আদৌ কি তার মুক্তি আছে? না কি কোনো চেষ্টা ফলবতী হতো?
বাড়ি থেকে সে এক দৌঁড়ে ছুটে গিয়েছিলো ঠিকই। রাস্তায় উঠেও পড়েছিলো। এ রাস্তা দিয়ে বরাবর ছুটে গেলেই হলো। সোজা বাপের বাড়ির উঠোন। কিন্তু তার পা যে চলতে চায় না। কৈশোর থেকেই যে কন্যাটি শিক্ষা পেতে থাকে যে, মাইয়ারা দৌড়াদৌড়ি করলে গুনাহ অয়। বেপর্দা চললে দোজখে যাইতে অয়। কবরে মাথার চুল সাপ অইয়া কামড়ায়। শিশুমন তাই বিশ্বাস করে অবলীলায়। যে কারণে পরিণত হবার পর সে ভুলে যায় কিভাবে দৌঁড়ুতে হয়। কিভাবে মাথা উঁচু করে নাক বারাবর তাকাতে হয়। তাই রহিমাও তেমন ছুটতে পারে না। পা দুটো কেমন জড়িয়ে আসে।
কিন্তু লোভী আর বিবেক বর্জিত কোনো মানুষ যখন তার দাবী থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করে, তখন তার ভেতরকার কোনো মানবিক বোধ বিন্দুমাত্র অবশিষ্ট থাকলেও হয়তো কাজ করে না। কাজ করে না এমন ভাবনাও যে, এহেন কৃতকর্মের জন্য তার নিজেরই বিপদ হতে পারে!
কোনো কোনো মানুষ এভাবেই পৃথিবীতে বাঁচে- উদ্দেশ্যহীন, ভবিষ্যত পরিকল্পনা হীন। যে কারণে কিছুই তাদের জন্য শঙ্কার সৃষ্টি করতে পারে না।
তেমন কোনো আশঙ্কা ছিলো না রহিমার স্বামী আকবরেরও। তাই সে বাপের বাড়ির দিকে যাওয়ার রাস্তা থেকে ধাবমান অবস্থায় ধরে এনে স্ত্রী নামক জড়বস্তুটির উপর মনের যাবতীয় ক্রোধ পুনরায় উজাড় করে ঢেলে দিয়ে যখন শ্রান্ত আর ক্লান্ত হয়ে হাতের বাঁশটি ফেলে দিয়ে পরিতৃপ্তি আর বীরত্বের শ্বাস ফেলে তাকালো ভূলুন্ঠিতা নগদপ্রাপ্তির হাতিয়ারটির দিকে, সেখানে কোনো স্পন্দন পরিলক্ষিত হয় না। শঙ্কিত হয়ে তাই সে তাকায় মায়ের দিকে। মা তাকে অভয় দিয়ে বলে, মাইয়া মানষ্যের জান, হকুনের চাইয়াও বড়। ছুতা ধইরা পইড়া রইছে!
কিন্তু কোনো না কোনো সময় অপরাধীর অনুশোচনা আসবেই। তার চোখেও একদিন আলো পতিত হবে। এমনটি না হয়ে পারে না। নয়তো প্রকৃতি কবেই বিলীন হয়ে যেতো। আকবরও শঙ্কিত হয়ে লক্ষ্য করে রহিমাকে। মরমর প্রায়। হায় হায়! আমার বাইত্যে মরলে তো জেল ফাঁসি না অইয়া উপায় নাই। এই কে আছস, ল আমার লগে! এইডারে হাসপাতালে লইয়া যাই!
এদের কাছে রহিমা এবং তার গর্ভজাত শিশুটির বেঁচে থাকার চেয়ে নিজেদের নিরাপত্তার ব্যাপারটিই প্রধান হয়ে দাঁড়ায়। তাই তারা তৎপর হয় রহিমাকে বাড়ি থেকে সরিয়ে নিতে। কিন্তু তার চেতনায় তখনো কাজ করে চলেছে, গর্ভস্থীত শিশুটির নিরাপত্তা। আনমনে শিশুটির সঙ্গে সে কথা বলে। হাসে। কল্পনায় ছোট্টছোট্ট হাতপা নিয়ে খেলা করে। দোলনায় শুইয়ে দোলায়। সঙ্গে সঙ্গে নিজেও দোলে।
আসলে তখন সে তার স্বামী আর দেবরের মাঝখানে শুয়ে ভ্যানে চড়ে যাচ্ছে হাসপাতালের দিকে। অথচ সেই বোধ তখন পুনঃ বাস্তবতায় ফিরিয়ে আনতে পারে না তার অচেতন দেহকে। সে ক্রমাগত লীন হতে থাকে বোধ অবোধের দোলাচলে। যেন চরম ক্লান্তির পর একটি ঘুমঘুম ভাব তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলছে ক্রমশ।
যদিও শেষ পর্যন্ত রহিমা নামের সন্তান সম্ভবা এই মেয়েটি নিজের অজ্ঞাতেই পৌঁছে গেল হাসপাতাল নামক নিরাপদ স্থানটিতে। কিন্তু তখন সে এই পৃথিবীর যাবতীয় ব্যবস্থা অব্যবস্থার বাইরে। তাই সে জানতেও পারে না যে, তারই স্বজন, যার হাতে তার পিতামাতা আত্মীয়রা মিলে একদিন তাকে তুলে দিয়েছিলো বাকি জীবন ভালোবাসা আর আদর দিয়ে আগলে রাখার নিরুচ্চার্য প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে, সেই মানুষটিই তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে গেছে।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী
মন্তব্য
ভালই লাগল ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী
এই জন্যই তথাকথিত বিয়ের সিস্টেম টা বাতিল ঘোষনা করা উচিত। নারী নির্যাতন কিংবা বঞ্চনা এমনকি পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টির সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো এই বিয়ে।
আমরা যে সভ্য তার আরেকটি চিহ্ন হচ্ছে বিবাহ প্রথা। কিন্তু তারপরও যারা সভ্যতার তকমা এঁটে অসভ্যতা করে, তাদের দেখে ভয় পাবেন কেন? আমরা সম্মিলিত ভাবে রুখে দাঁড়াতে চাই তাদের।
সভ্যতাহীন মানুষের বড় পরিচয় "অসভ্য।"
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী
কিছু বলার নেই।
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
আমাকেও কি চুপ থাকতে হবে?
-জুলিয়ান সিদ্দিকী
আমার ঠিক এ কথাই মনে হচ্ছিল কিছুই বলার নেই ---- তবে এখন যুক্ত হয়েছে রহিমাদের পাশে মিসেস রায়হান ও ---------
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........
সবাই যদি চুপ করেই থাকি তাহলে কি প্রতিকার হবে? তাহলে যে আকবররা আরো ক্ষমতাবান হয়ে উঠবে দিনদিন।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী
ভালোই
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী
নতুন মন্তব্য করুন